উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

১২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ১৩)

নবনি নিজের রুমে বসে আরাফের অপেক্ষা করছে।আরফ রুমে ঢোকার জন্য কথা কাটাকাটি করছে।তবুও রাজ আর ওয়ারদা আরাফকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।সাথে নিলয় ও আছে।
নিলয়ঃওয়ারদা। তুমি এমনটা করতে পারো না।গেট ছাড়ো।
ওয়ারদাঃকেন করতে পারবো না!!আরাফ ভাইয়া আমার বান্ধুবির জামাই।আমি উনার একমাত্র শালী।
রাজঃআর আমি একমাত্র শালা।
ওয়ারদাঃ২০ হাজার টাকা না দিলে।গেট ছাড়ছি না।
আরাফঃআমার কাছে সত্যিই এতো টাকা ক্যাশ নেই।আজকে যেতে দাও কালকে সকালে দিয়ে দিবো।
রাজঃনা Av. বাকির নাম ফাকি। টাকা দিবেনে আজকে।বাকি নিয়া খান কে!!?
আরাফঃপ্লিজ আজকে ছেড়ে দাও।
নিলয়ঃওয়ারদা।সরে এসো বলছি।
ওয়ারদাঃআপনি যদি আর একটা কথা বলছেন।তাহলে আপনাকেও আজকে রুমে ঢুকতে দিবো না।
নিলয়ঃ দোস্ত আর কিছু বলার নেই।নিজে বাচলে বন্ধুর নাম।
আরাফঃপল্টি মারলি!!ধুর!!
আরাফ পকেট থেকে কার্ড বের করে ওয়ারদার কাছে দিল।
আরাফঃকালকে নিজের যা ইচ্ছা শপিং করে নিলয়ের কাছে দিয়ে দিও।
রাজঃআমার কিন্তু কার্ড দিলে হবে না।
আরাফঃতাহলে কি দিবো??!!
রাজঃআমার আপুইকে কখনো কষ্ট দিবা না।উনাকে ভালো রাখার প্রমিজ দাও।
আরাফ রাজকে জড়িয়ে ধরে বলল
আরাফঃআমি বেচে থাকতে নবনির গায়ে একটা আচড়ও পরতে দিবো না।বলে পকেট থেকে চাবি বের করে রাজের হাতে দিল।সাবধানে চালাবে।বাইক বাসার নিচেই আছে। সকালে দেইখো।
রাজঃYou are the best. Av.
আরাফঃthank you.এখন আমি যাই?!! 
রাজঃঅবশ্যই।
আরাফ ভিতরে চলে গেল।
নিলয়ঃআপনি কি যাবেন?!!নাকি সারারাত পাহারা দিবেন?!
ওয়ারদা মুখ ভেংগিয়ে চলে গেল।নিলয় পিছনে পিছনে গেল।
আরাফ নবনির কাছে যেয়ে বসলো।
নবনিঃআসসালামু আলাইকুম।
আরাফঃওয়ালাইকুম আসসালাম।বউ।
বউ কথাটা শুনে বুক ধক করে উঠলো নবনির।
আরাফ পকেট থেকে কিছু বের করে নবনির হাতে দিল।
আরাফঃতোমার দেনমোহর।
নবনি দেখলো একটা স্বর্নের লকেট।
নবনিঃলকেট!!
আরাফঃএটা কোনো সাধারণ স্বর্ণের লকেট না।
নবনিঃমানে?
আরাফঃএটাতে স্পাই ক্যামেরা আর ট্রাকার আসে।যখম তুমি কিডন্যাপ হয়েছিলা তখনই বানিয়ে ফেলেছিলাম।
লকেট এ আরাফের ছবির নিচে একটা বাটন আছে।
আরাফঃআমার ছবির নিচের বাটনটায় ক্লিক করলে তোমার লোকেশন আমার কাছে চলে যাবে।আর তোমার ছবির নিচের বাটনে ক্লিক করলে লোকেশন বাবার কাছে চলে যাবে।আমাকে না পেলে বাবাকে লোকেশন পাঠাবে।কারন তোমার জন্য আমার পর বাবাই সেফ।তোমার হাতের আংটিতে মিনি মাইক লাগানো আছে।সেটা দিয়ে তুমি কথা বলতে পারবে।
নবনিঃএতো কিছু!!কেনো?সিয়ামতো চলেই গেসে।আর তো কোনো বিপদ নেই।
আরাফঃতোমার স্বামীর শত্রুর অভাব নেই বউ।তাই সব সময় সর্তক থাকবে।যা দেখবা তা নাও হতে পারে। আবার যা দেখছো না ওইটাই হবে।


নবনিঃআপনি এগুলো কি বলছেন!!আপনার শত্রু কেন থাকবে?
আরাফ নবনির হাত এ ঠোঁট ছোয়ালো।
আরাফঃনবনি তুমি জানো না। আমি কি কাজ করি।আর আমি তোমাকে এখন বলতেও পারছি না।শুধু এতটুকু মনে রাখবা আমার কোনো কথাই ফেলনা ভাববা না। আরাফ চৌধুরী কোনো কথাই অযথা বলেনা।আজকের বলা প্রত্যেকটা কথা মনে রাখবা।আর আমাকে আর বাবাকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করবা না।i repeat কাউকে না।
নবনিঃকিন্তু মার কথা বললেন না কেন?!!উনাকেও বিশ্বাস করা যাবে না?!
আরাফঃনা। মা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার জন্য উনি তোমাকে ভালোবাসে।আবার আমার জন্যই উনি তোমার ক্ষতিও করতে পিছপা হবেন না।তাই তুমি বাবা আর আমাকে ছাড়া কাউকেই ভরসা করবে না।
নবনিঃবাবা আপনাকে ভালোবাসে না?!!
আরাফঃবাবা আমাকে মার থেকে বেশি ভালোবাসেন আর চেনেন।তিনি খুব ভালো করে জানেন আমি হাজার আঘাত সহ্য করেও ফিরে আসবো কিন্তু তোমার উপর কোনো আঘাত আসলে আমি বাচবো না।তাই উনি নিজের জীবন দিয়েও তোমাকে রক্ষা করবে।
নবনিঃআপনি এমন কি কাজ করেন!!
আরাফঃতোমাকে সময় আসলে অবশ্যই বলবো পাখি। তুমি আমার উপর বিশ্বাসটা রেখো।আমি যাই করি না কেন।অন্যায় কিছু করবো না আর হতেও দিবো না।
নবনিঃ I trust u. Araf.
আরাফ ওযু করে এসো।নামায পরতে হবে তো। আল্লাহকে শুকরিয়া করতে হবে না এত বুঝদার বউ দেয়ার জন্য।
নবনি মুচকি হেসে ওযু করতেই যাচ্ছিল।আরাফ ডাক দিলো।
আরাফঃনবনি।
নবনিঃহুম।
আরাফঃআমাদের মাঝে যা কথা হয়েছে কাউকে বলবা না।আর আজকে কি সব সময়ের কথাপকথোন কারো সাথে শেয়ার করবা না।আমি আশা করি তুমি স্বামী স্ত্রীর মাঝের গোপনীয়তা রক্ষা করবে।
নবনিঃহুম। 
আরাফ আর নবনি নামাযে দাড়ালো।
নবনি নামায শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করল~
আল্লাহ আপনি আমার স্বামীকে জানা না জানা সকল বিপদ থেকে রক্ষা করিয়েন।তাকে ও তার সম্মানকে হেফাজত করিয়েন।আপনার দরবারে হাজার হাজার  শুকরিয়া আমাকে এমন একটা স্বামী দেয়ার জন্য।আমীন।
নবনি মোনাজাত শেষে দেখলো আরাফের চোখ ভেজা।নবনি আরাফের চোখ মুছে দিল।
নবনিঃকাদছেন কেন আরাফ?!
আরাফঃঅনেক ভালোবাসি কলিজা।আজকে আমি অনেক অনেক খুশি।দীর্ঘ চার বছর তাহাজ্জুদের নামায পরে আল্লাহর কাছে চেয়ে তোমাকে পেয়েছি।জানি না কেন এক দেখায় তোমায় ভালোবেসে ফেলি।হয়তো তোমাকে আমার বাম পাজরের হাড্ডী দিয়ে বানিয়েছে তাই এতো টান।
নবনির চোখ ভিজে আসলো।একটা মানুষ কি করে এতোটা ভালোবাসতে পারে তা আরাফকে না দেখলে কখনো জানাই যেত না।
আরাফ নবনিকে কোলে নিল।
নবনিঃকি করছেন।নামান আমাকে!
আরাফ নবনিকে বিছানায় নিয়ে নামালো।
আরাফ বলল~
আমি তোমাকে এতো যত্ন করে ভালোবাসবো যে সে ভালোবাসায় তুমি কোনো ব্যাথা পাবে না।যা পাবে তা  শুধুই সুখ।
মানুষতো ভালোবাসি বলে কিন্তু আমিই ভালোবেসে দেখিয়ে দিবো।
যে ভালোবাসা দেখে প্রেমিক প্রেমিকারাও বলে উঠবে ভালোবাসতে হলে আরাফ নবনির মতো ভালোবাসো।
আরাফ নবনির ঘাড়ে মুখ গুজলো।নবনির চুলের ঘ্রাণে ছিল মাতাল করার মতো সুগন্ধ।
আরাফঃনবনি।
নবনিঃহুম।
আরাফঃঅনুমতি দাও।
নবনি আরাফের বুকে মুখ গুজলো।
আরাফঃচুপ থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ।
নবনি লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে।
আরাফ নবনির ঠোঁট আকড়ে ধরলো।নবনির সারা গায়ে আরাফের হাত বিচরণ করছে।নবনির সারা শরীর দিয়ে বয়ে গেল এক অদ্ভুত শিহরণ। আরাফ নবনির মাঝে ডুবে গেল।নবনিও হারিয়ে গেল আরাফের সুখময় ভালোবাসার মাঝে।পূর্ণতা পেল আরাফ নবনির ভালোবাসা।সুচনা হলো তাদের নতুন এক সম্পর্কের।যা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর হালাল সর্ম্পক।যার মাঝে নেই কোনো খাদ।আছে শুধুই আল্লাহর দেয়া অন্তর ভরা ভালোবাসা আর বিশ্বাস।
সকালবেলাঃ
নবনির ঘুম আগে ভেঙে যায় ।নিজেকে আরাফের বুকে এমনভাবে দেখে খুব লজ্জা পেল।তাকিয়ে রইল আরাফের নিষ্পাপ চেহারা দিকে।সিল্কি চুল গুলো কপালে পরে আছে।ঠোঁট গুলো মেয়েদের মতো গোলাপি।চোখের পাতায় ঘন ঘন পাপড়ি।বুকের মাঝে একটা ছোট্ট  কালো তিল।যা খুব কাছে না গেলে বোঝা যাবে না।আর এতটা কাছে নবনি ব্যতীত আর কেউ যেতে পারবেনা।
নবনি উঠে আসতে নিলে আরাফ হাত টান দেয়।নবনি আরাফের বুকে পরে।
নবনিঃকি হচ্ছেটাকি?!! সারা রাত জ্বালিয়ে মন ভরে নেই?!!
আরাফঃআমি মোটেও জ্বালাই নেই।ভালোবেসেছি। তুমি বুঝতে পারো নাই বুঝি।তাহলে আবারো বেসে দেখাচ্ছি।


নবনিঃআযান দিয়েছে নামায পরতে হবে। আরাফ।আপনিও উঠেন।
আরাফ হুট করে উঠে নবনিকে কোলে নিয়ে নিল।
নবনিঃকি করছেন!!কথায় কথায় কোলে নিয়ে নেন কেন!!
আরাফঃতুমি যে আমার একমাত্র আল্লাদি বউ।আমি যতক্ষন বাসায় থাকবো।তুমি এক পাও মাটিতে ফেলবা না।এভাবেই কোলে কোলে ঘুরবা।আমি না থাকে যা ইচ্ছে কইরো।
নবনি বুক ধক করে উঠলো।সে আরাফে ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিল।সেখান থেকে রক্ত পরা শুরু করলো।
আরাফঃআহ।খেয়ে ফেলবা নাকি আমাকে!!
নবনিঃহ্যা খেয়েই ফেলবো।খবরদার উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।আপনি থাকবেন না কেন। আপনি না থাকলে আমিও থাকবো না।
আরাফ নবনিকে ঝরনার নিচে দাড় করালো।তারপর কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
নবনি ঝরনার পানি মুখে নিয়ে আরাফ এর মুখে ছেড়ে দিচ্ছে। আর খিলখিল করে হাসছে।আরাফ মুগ্ধ হয়ে সময়টা অনুভব করছে।
আরাফ রেডী হয়ে নবনিকে বললঃ
আরাফঃমসজিদ থেকে নামায পরে আসতেসি।কলিজা।
নবনির কপালে ঠোঁট ছুয়ে চলে গেল।নবনি নামাজ পরে সবার জন্য নাস্তা বানাতে চলে গেল।
আসার পথে আরাফের ফোন আসলো।
আরাফঃকিহ!!কোথায় আমি এখনই আসছি।
নবনির ফোনে একটা মেসেজ আসলো~
আরাফকে বাচাইতে চাইলে এখনই নিলয়ের বাসায় এসো।
নবনি নিলয়ের বাসায় গিয়ে যা দেখলো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না।
রাতে ওয়ারদা আর নিলয় ও নবনির বাসায় ছিল।কিন্তু আরাফ নবনির বিয়ের পরপরই তিশা বাসায় চলে যায়।ওর নাকি এখানে ঘুম আসবে না।নিলয়ের বাসা সম্পূর্ণ খালি ছিল।
কিন্তু এখন আরাফের বুকে তিশা শুয়ে আছে।আর আরাফ ঘুমিয়ে আছে।তিশার মুখে প্রাপ্তির হাসি।
নবনির ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলো। আরাফ স্তব্ধ হয়ে গেল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


১৪তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন