উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

১৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ১৯)

আজ তিন দিন হয়ে গেল। সময় তার আপন গতিতে চলছে।সে যে থেমে নেই।শুধু থেমে আছে চৌধুরী পরিবারের জীবন।আরাফের অবস্থা ঠিক আগের মতোই। ডাক্তার ধরে নিয়েছে আরাফের মৃত্যু অতি নিকটে।কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে পারছে না।আরাফের বাবা আদর চৌধুরী খুব রেগে আছেন ডাক্তারদের উপর। কেন তারা তার ছেলেকে ঠিক করতে পারছে না।নিলীমা চৌধুরীকে অনুশোচনা খুরে খুরে খাচ্ছে।সে না পারছে কাউকে কিছু বলতে না পারছে ছেলের জন্য কিছু করতে।তার কানে আরাফের বলা শেষ কথাটা বারি খাচ্ছে।
আরাফ~যে বাসায় বিয়ের পর আমার বউকে থাকতে দিলে না সে বাসায় আমি আর ফিরবো না। 
আরাফ অভিমান করে না হয় নাই ফিরতো মায়ের কোলে  তাই বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে।এটাতো তিনি কখনো চান নি।তিনিতো আরাফকে সুখে দেখতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তার এই অতিরিক্ত সুখের চাওয়াই তাকে ছেলের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিল।আজ তার নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কেন সে দিন রাগের বশে এই কাজটা করলেন।তিনি এমনটা না করলে আরাফ নবনি এখন তার বাসায় থাকতো। এগুলো কিছুই  হতো না।নিলীমা চৌধুরী নিজেকে অন্ধকার রুমে বদ্ধ করে রেখেছেন।
নবনির অবস্থা খুব একটা ভালো না।তিন দিন যাবত না খেয়ে দিন পার করছে।স্যালাইনের উপর দিয়ে সে বেচে আছে।ঘুম থেকে উঠলেই আরাফকে খুজে পাগলামি করে।বার বার সুইসাইড করতে যেয়ে ও বেচে গিয়েছে। ডাক্তার তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিয়ে  রাখে। 
আসাদ খান আর রাজ সারাক্ষণ নবনির পাশে বসে থাকে।আদর চৌধুরী উপর থেকে নিজেকে যতটা শক্ত দেখাচ্ছেন ভিতর থেকে ততটাই ভেঙে পরেছেন।
আদর চৌধুরী আরাফের কেবিনে যান।
আদর চৌধুরীঃখুব ভালো লাগছে না তোর? এভাবে শুয়ে শুয়ে সেবা নিতে।তুই জানিস তোর শশুর Father প্রত্যেক রাকাত নামাযে তোর ফিরে আসার দোয়া করছে।তোর জন্মদাত্রী মা নিজেকে চার দেয়ালে বদ্ধ করে রেখেছে।শত্রুরা খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে তোর পরিবারের ক্ষতি করার জন্য।একটা বার ভাবলি না তোর বুড়ো বাবা কত দিকে সামলাবে।কেন ভাববি কেই বা হই আমি তোর। আর এ নবনিকে তো তুই নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসিস। তাহলে ওই মেয়েটার সাথে এমন কেন করলি।বার বার সুইসাইড এটেম্পট করছে। কতো বার আটকাবো?বল।কতবার?  কবে উঠবি তুই? ওর মারা যাওয়ার পর?ফুলের মতো মেয়েটা ঝড়ে পরেছে শুধুই তোর জন্য।তুই যখন ওর সাথে থাকবি না তাহলে কেন জড়ালি ওকে নিজের সাথে।কেন ওর জীবন নষ্ট করলি।কেন?
আদর চৌধুরীর চোখের পানি আরাফের হাতে পরে।
আদর চৌধুরীঃআরাফ আমার লক্ষী আব্বুটা। উঠে পরো। আমি আর পারছি না।আব্বু।নবনি মরে যাবে।ওর জন্য হলেও উঠো।উঠে পরো লক্ষী।তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে।ছোটোকালে যখন বাইরের থেকে এসে আব্বু বলে ডাকতাম তুমি ছুটে আসতা ঠিক তেমনি এখন ছুটে আসো।আমার বুকে ফিরে এসো।আব্বু।ফিরে এসো।
আরাফের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আদর চৌধুরী ডাক্তারদের ডাক দিলেন।
ডাক্টারঃআপনি বাইরে যান আমরা দেখছি।
আদর চৌধুরী বাইরে চেয়ারে এসে বসে পরলেন।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আদর চৌধুরীকে ডাকেন।
ডাক্তারঃCongratulation Mr Ador Chowdhury. 
 আরাফ এর বডি মেডিসিন এ রেসপন্স করছে।আমরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু আপনার জন্য আরাফ আবার ফিরে এসেছে।আপনার বিশ্বাস জিতে গিয়েছে।সবকিছু ঠিক থাকলে কিছুক্ষণ এর মধ্যে আরাফ এর জ্ঞান ফিরে আসবে।
আদর চৌধুরীঃ Thank you doctor. Thank you so much.😊
৪ ঘন্টা পর আরাফের জ্ঞান ফিরে।আরাফ চোখ খুলে তার বাবাকে দেখে।
আরাফঃনবনি কোথায় বাবা।
আদর চৌধুরীঃওর অবস্থা ভালো না।ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে রেখেছে।তুমি কেমন আছো?এখন কেমন লাগছে।
আরাফঃআমি একদম ঠিক আছি বাবা।আমাকে নবনির কাছে নিয়ে চলো।
আদর চৌধুরীঃআমি নবনিকে নিয়ে আসছি।
আদর চৌধুরী নবনির বেড আরাফের পাশে লাগায়।
আরাফঃএটার কি দরকার ছিল।আমার বেড এই নবনি এসে পরতো। আবার আলাদা বেড লাগানের কি ছিলো।
নার্সঃআপনার বাবা বলেছেন।


আরাফঃবাবা তো বলবেনই।উনি যে আনরোমান্টিক। 
আদর চৌধুরী মাত্রই প্রবেশ করছিলেন রুমে আর শুনে ফেলে।
আদর চৌধুরীঃআমি আনরোমান্টিক হলে কি আর তুই দুনিয়াতে আসতি হতচ্ছারা।
আরাফঃউফ বাবা।তুমি রোমান্টিক হলে কি এখানে আমাকে ডিস্টার্ব করতে। দেখছো কত দিন পর বউকে দেখছি এসে পরেছো জ্বালাতে।
নবনি মিটমিট করে আরাফকে দেখে কিন্তু ওষুধের রেশ কাটে নেই বলে চোখ খুলতে পারছে না।
আদর চৌধুরীঃযাবো আমি অবশ্যই।আগে আমাকে এটা বল তুই কেন গার্ড ছাড়া বের হলি।আবার নিজের রিভোলবারটা ও সাথে নিলে না।কেন করলি এমন?তুই একটাবার নবনির সেফটির কথাও ভাবলি না।তোর এই একটা ভুলের জন্য নবনির কত বড় ক্ষতি হতে পারতো তুই জানিস?তুই নিজেই মরতে মরতে বাচলি!ওরা যদি একবার নবনিকে দেখে ফেলতো তখন তুই কি করতি?তুই কোন আক্কেলে এই কাজটা করলি!!
আরাফঃI m sorry.আমি খুব রেগে ছিলাম।তাই ভুলটা করে ফেলি।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।I m really sorry.
আদর চৌধুরীঃসরি!! তোর সরি দিয়ে কি সব ঠিক হবে?আমাকে একটা কথা বল তুই আর্মিতে কি সত্যিই নিজের যোগ্যতায় ঢুকেছিস?না কি আমার টাকার জোরে ক্ষমতা অর্জন করেছিস।নবনি কিছু না জানলে ও তুই খুব ভালো করে জানতি। তুই একটা সিকরেট মিশনে ছিলি।তোর ওর যেকোনো একটা হামলা হতেই পারে তাহলে তুই কি করে কাজটা করলি?
আরাফঃএকটু বেশি বলে ফেলছো বাবা।তুমি আমাকে অপমান করো আমি মেনে নিবো।কিন্তু আমার প্রফেশনকে অপমান করতে পারো না।এই প্রফেশন এর স্বপ্ন আমি ছোটকাল থেকে দেখেছি।দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রমে আমি আজকে এই জায়গায়।আমি নবনির সাথে ও গোপনীয়তা রক্ষা করেছি।কারন আমার সিনিয়রদের থেকে নিষেধ ছিল।যাতে আমি কাউকে এই কথা না বলি।আমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে তুমি কল্পনা ও করতে পারবানা।
আদর চৌধুরীঃSorry.রাগে বেশি বলে ফেলেছি।
আরাফঃIts ok.
আদর চৌধুরীঃলিজার বাবা যে গান গুলো পাচার করতে চেয়েছিল সেই গান গুলো পেয়েছো?
আরাফঃআমার কাছেই আছে।৩৪৫ টা বক্স।তুমি বাংলাদেশ আর্মির সাথে যোগাযোগ করো।আমি ডিলেভারি দেয়ার ব্যবস্থা করছি।
আদর চৌধুরীঃআচ্ছা।
আসাদ খান প্রবেশ করে কেবিনে।
আসাদ খানঃকেমন আছো আরাফ?
আরাফঃআমি ভালো আছি।কিন্তু আপনার এমন চোখের নিচে কালি কেন বাবা?
আসাদ খানঃছেলেমেয়ে এমন অবস্থায় থাকলে বাবা কি করে ভালো থাকে বলো।
আরাফঃআপনি এখন বাসায় যেয়ে রেস্ট নেন।রাজ উনাকে নিয়ে যাও।আমি উঠে পরেছি তো। এখন সবটা আগের মতো সামলে নিব।


আসাদ খানঃহ্যা বাবা। নবনিকে নিয়ে যাই?
আরাফঃনা না কেন।ওকে নিয়ে গেলে আমাকেও নিয়ে চলেন আমি একা কি করবো?
আসাদ খানঃতোমাকে তো ডাক্তার ডিসচার্জ দিচ্ছে না।আর নবনিও অসুস্থ ওকে তো দেখতে হবে। আমি ওকে নিয়ে যাই।
আরাফঃআমিই দেখবো নবনিকে।আমার থেকে ভালো তাকে ডাক্তারও করতে পারবেনা।আপনি টেনশন নিয়েন না বাবা।আপনি যান নবনিকে আমি দেখছি।
আসাদ খানঃতুমিই তো অসুস্থ ওকে কিভাবে দেখবা?
আরাফঃআমি পারবো বাবা।
আসাদ খান আরাফের জিদ এর কাছে হার মেনে চলে যান।সবাই যাওয়ার পর আরাফ নবনির দিকে তাকায়। নবনি পাশের বেড এ।আরাফ এর ব্যাপারটা ভালো লাগলো না।সে একটানে হাতের ক্যানেলা খুলে ফেলে।আরাফ এর হাত থেকে রক্ত পরছে।তার সেদিকে খেয়াল নেই সে নবনিকে কোলে করে নিজের বেডে আনলো।
তারপর কোলে নিয়েই বসলো।নবনির মাথা আরাফের বুকে।আরাফ নবনি কে জড়িয়ে ধরলো।
আরাফঃএইবার শান্তি লাগছে।
নবনির চুল গুলো খুব হিংসে করছে আরাফের জড়িয়ে ধরা দেখে তাই বারবার মুখে চলে আসছে।আরাফ নবনির চুল গুলো ঘাড়ের পিছনে দিকে দিয়ে দিলো।হঠাৎ  খেয়াল করলো নবনির ঘাড়ে খামচির দাগ।আরাফ অবাক হয়ে গেলো।
আরাফঃএটা কি করে হলো।নবনি করেছে!নবনি কেন নিজেই নিজেকে খামচি দিবে।
আরাফ ওই জায়গায় মলম লাগানোর জন্য পাশ থেকে মলমটা নেয়।তারপর দেখে খামচির দাগটা আর নেই।
আরাফঃআমি কি ভুল দেখলাম!
আরাফ এর কাছে ব্যাপারটা খটকা লাগলো।মনে পরে গেল।জংগল দিয়ে আসার সময় আরাফের গাড়ির এক্সিডেন্ট এর ঘটনা।আচ্ছা অশুভ কিছু কি আমাদের পিছু নিয়েছে।আরাফ নবনিকে গভীরভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।

লেখিকার অনুরোধ: কেমন হয়েছে সবাই একটু কমেন্টে জানাবেন। তাহলে লেখার অনুপ্রেরণা পাবো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


২০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন