উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
১৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ১৮)
আরাফ গাড়ির গেট খুলতেই নবনি ছুটে যায় আরাফের দিকে।আরাফের অবস্থা খুবই শোচনীয়। নবনি আরাফের মাথা কোলে নিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে চাইলে আরাফ নবনি মুখে হাত দেয়।
আরাফঃনবনি।ওরা বেশি দূর যায় নেই।তুমি চিৎকার করলে ওরা ফিরে আসবে। আমি মারা গেলেও তুমি চিৎকার করো না পাখি।ওরা অমানুষ। ওরা তোমাকে ছাড়বে না।
নবনিঃআমি কি করবো আরাফ।গাড়ির ফিউল শেষ হয়ে গিয়েছে। এতো রাতে আমি কার কাছে সাহায্য চাইবো।
আরাফঃআল্লাহর কাছে।আল্লাহ চাইলে আমি এইখান থেকে ফিরে যেতে পারবো তুমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আরাফ জ্ঞান হারায়।
নবনিঃআরাফ কথা বলছেন না কেন!!আরায়ায়ায়ায়াফ।আরায়ায়ায়ায়াফ কথা বলেন আরাফ।প্লিজ চোখ খুলেন।
নবনি আরাফের শার্ট খুলে বুকে রক্ত বের হওয়া জায়গায় বাধে।
আরাফের হাত টা ঠান্ডা হয়ে আসছে।নবনি দিশাহারা হয়ে যায়।নবনির মনে পরে আরাফের দেয়া লকেটের কথা। নবনি তার শশুড়কে এমার্জেন্সি লোকেশন পাঠায়।আল্লাহ সহায় ছিল বলে আরাফের বাবা আদর চৌধুরী মাত্রই বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।মেসেজ পাওয়ার সাথে তিনি দেখেন লোকেশনটি শহর থেকে দূরে জংগলে কাছে। তিনি দেরী না করে প্রাইভেট হেলিকপ্টার এ রাওনা দেন।আর এম্বুলেন্স কল করে সেই জায়গার লোকেশন দেয়।
নবনি আরাফের হাত পা মালিশ করছে কিন্তু আরাফের শরীর ক্রমান্বয়ে ঠান্ডা হয়ে আসছে।নবনি গাড়ি থেকে তার ব্যাগটা আনে।ব্যাগে এমার্জেন্সি কিট ছিল।সেখান থেকে তুলো বের করে রক্ত থামানের চেষ্টা করছে।কিন্তু গুন্ডারা আরাফের সারা শরীর নির্মম ভাবে মেরেছে।এক জায়গার রক্ত থামালেও আর এক স্থান থেকে রক্ত পরছে।
নবনি দোয়া পরে আরাফের গায়ে ফু দিচ্ছে।কাদতে কাদতে হিচকি উঠে যাচ্ছে।কিন্তু এখানে একটা প্রাণী ও নেই এই আর্তনাদ শোনার মতো।নবনির চোখের পানি আরাফের গালে পরছে।আরাফ এখনো পুরোপুরি জ্ঞান হারায় নেই।তার কানে নবনির আর্তনাদ পৌছাচ্ছে।কিন্তু সে আজ অসহায়।আরাফ অনেক কষ্টে নবনির হাত ধরলো।নবনি যেন ভরসা আর সাহস খুজে পেল।নবনি আরাফের সারা মুখে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগলো।
নবনিঃআরাফ বাবাকে মেসেজ দিয়েছি।বাবা আসছে। আপনি চোখ খুলে রাখেন।আপনি জ্ঞান হারাবেন না।এটা আমার অনুরোধ।
আরাফ খুব কষ্ট করে নিভু নিভু চোখ গুলো খুলে রাখছে।
আরাফঃআর মনে হয় তোমাকে দেখা হবে না। নবনি পাখি।আমি আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।জীবনটা এতো ছোট কেন আমার।আমি বুঝি তোমাকে নিয়ে বাচতে পারবো না।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি এই যাত্রা থেকে ফিরতে পারবো না।খুব ভালোবাসি কলিজা।আমি জান্নাতে তোমার অপেক্ষা করবো।(মনে মনে)
আরাফ এর চোখ গুলা বন্ধ হয়ে আসলো।
নবনিঃআরায়ায়ায়ায়ায়ায়াফ।
নবনি হেলিকপ্টার এর শব্দ শুনতে পেল।নবনির শশুর নবনির কাছে এসে দাড়ালো।
নবনিঃবাবা।বাবা। উনি কথা বলছে না। বাবা উনাকে বলেন কথা বলতে। আমি উনার সব কথা শুনবো। উনাকে একবার বলেন চোখ খুলে তাকাতে।বাবায়ায়ায়ায়া।
আজ এক বাবা ও অসহায়।ছেলের এই অবস্থা দেখে তার কলিজা পুরে যাচ্ছে।কিন্তু সে যে বাবা।বাবাদেরতো কাদতে হয় না।
আদর চৌধুরীঃনবনি মা শক্ত হও।তুমি সাধারন কেউ না।তোমার চোখে পানি মানায় না।কারন তুমি বাংলাদেশ আর্মির প্রধান অফিসার আরাফাত চৌধুরির স্ত্রী।
নবনি স্তব্ধ হয়ে গেল।সে এতদিন একজন আর্মি অফিসার এর সাথে ছিল।তাও বাংলাদেশ আর্মির হেড।
আদর চৌধুরীঃআরাফ এমন কিছু এর আগে সহ্য করে এসেছে।এগুলো তার কাছে কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু আজকে তোমার চোখের পানি ওকে দূর্বল করছে।সবাই এসে পরবে।আরাফের কিচ্ছু হবে না।এটা আমার ওয়াদা।তুমি মাথায় কাপড় দাও।আরাফ কখনো এটা মানবে না তার জন্য তার স্ত্রীর পর্দা নষ্ট হয়েছে।
নবনি তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ায় বোরখা আনে নেই।তাই নিজেকে ওড়না দিয়ে পুরোটা আড়াল করে নেয়।আদর চৌধুরী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের মাস্ক খুলে নবনিকে দেয়।মুখ ঢাকার জন্য।
আকাশপথ হেলিকপ্টার দিয়ে ছেয়ে গিয়েছে।এখান থেকে৷ হাসপাতাল দূর হওয়ায় হেলিকপ্টার এ করে আরাফকে হাসপাতালে নেয়া হয়।নবনি এক সেকেন্ডের জন্য আরাফের হাত ছাড়ে নেই।
হাসপাতালে ভীড় জমা হয়েছে।সাংবাদিকরা নবনিকে ঘিরে দাঁড়ায়।আদর চৌধুরী খুব সাবধানে নবনিকে সেখান থেকে ভিতরে নিয়ে যায়।দেশের নামকরা ডাক্তাররা আরাফ এর চিকিৎসা নিয়ে তোরজোর শুরু করেছে। আরাফকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।অপারেশন থিয়েটারের লাইট জ্বলছে।নবনি বাইরে বসে আছে।
আজকে সকালের ঘটনা নবনি মাথায় ঘুরছে।
নবনিঃআজকে আরাফ এর এই অবস্থা আমাকে ঘিরে।না আমি আরাফকে সন্দেহ করতাম না আরাফ রাগের মাথায় বের হতো না এগুলো কিছু হতো।আরাফ আমাকে বার বার বলেছিল তার উপর বিশ্বাস রাখতে আমি পারি নেই।আমি পারি নেই আরাফের ভালো স্ত্রী হতে।
ডাক্তাররা বের হয়ে আসে।
আদর চৌধুরীঃআরাফ কেমন আছে?ডাক্তার।
ডাক্তারঃগুলি আরাফাত চৌধুরীর হার্টের ঠিক নিচে দিয়ে গিয়েছে।হার্ট এ লাগলে বাচাতে পারতাম না।এখন ও উনার অবস্থা আশংকাজনক।অনেক ব্লাড লস হয়েছে।উনার বডি রেসপন্স করছে না।এখন আল্লাহ ছাড়া তাকে আর কেউ ফিরিয়ে আনতে পারবে না।আপনারা দোয়া করেন উনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে। না হলে ১ শতাংশ চান্স আছে বেচে ফিরার আর ৯৯ শতাংশ চান্স উনি কোমায় চলে যাবেন।
নবনি ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।পাগলের মতো কান্না করতে লাগলো।একটা সময় নবনি ছুড়ি নিয়ে নেয়।
নবনিঃআরাফ না থাকলে আমি কেন থাকবো।আমি মরে যাবো।কেউ সামনে আসবে না খবরদার আমি হাত কেটে ফেলবো।
রাজ নবনিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।নবনি পাগলের মতো হাত ছুটাছুটি করছে।কেউ নবনিকে থামাতে পারছে না।
নবনিঃআমি আরাফ এর কাছে যাবো।আরায়ায়ায়ায়ায়াফ।এরা আমাকে আপনার কাছে আসতে দিচ্ছে না।আপনি কোথায় আরায়ায়ায়াফ। কেন আসছেন না।এদেরকে বলেন আমাকে ছাড়তে। আমি সব শেষ করে ফেলবো।আমার দুনিয়া আপনাকে ঘিরে।আপনি না থাকলে আমি থাকবো না।
নবনি কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারায়।নবনিকে ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
১৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
অসাধারন লিখনী।।পরবর্তী পাঠের অপেক্ষায় ।।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন