উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৫)
ফ্ল্যাশব্যাকঃ
ওয়ারদা আসার আগেই সিসিটিভিতে ফুটেজ দেখে ফেলেছিল তারা।সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নবনি তার ফোন চা এর টেবিলেএ রেখে চা order করতে গিয়েছিল।তখন ওয়ারদা ফোনটা নিজের কাছে রেখে দেয়।
_ওয়াট!এখানেতো ও এটা ইচ্ছে করেই করলো।তাহলে মিথ্যা কেন বলল।আর কেনই করলো।
_যাতে আমাদের কাছে ধরা না খায়।আর আমি নবনির ফোন ট্রেস না করতে পারি।বাকি কথা ওয়ারদাই বলতে পারে।
_হুম।
তারপর দুইজনই ফুটেজ দেখতে লাগলো।নবনি চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আসে।পাশেই এম্বুলেন্স দাঁড়ানো ছিল।এরপর একটা কালো গাড়ি এসে থামে চায়ের দোকানে। এই ২ টা গাড়ীর জন্য নবনিকে দেখা যাচ্ছে না।তারপর প্রথমে এম্বুলেন্সটা চলে যায়।এর কিছুক্ষন পর গাড়িটাও চলে যায়।তারপর রাস্তা ফাকা।নবনিকে আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি ২ টা যাওয়ার পর নবনি গায়েব।
নিলয়ঃতার মানে।গাড়িটাতেই নবনী ছিল।
আরাফঃকিভাবে?
নিলয়ঃকারন নবনি আসার পর গাড়িটা আসে। আর গাড়িটা যাওয়ার পর নবনিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।তার মানে আমাদের গাড়িটাকে ট্রেস করতে হবে।
আরাফঃনা।
নিলয়ঃমানে!
আরাফঃএখানে যা দেখানো হচ্ছে তুই তাই দেখছিস।ভালো করে খেয়াল কর।গাড়িটা পরে এসেছে।কিন্তু এম্বুলেন্স আগে থেকেই ছিল।কিন্তু কেন একটা University রোডে এম্বুলেন্স কি করছে?!!আর গাড়িতে থাকলে গাড়িটা দ্রুত ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে পরতো।কিন্তু গাড়ির আগে এতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা এম্বুলেন্স বের হয়ে যায়।তারমানে এম্বুল্যান্স অপেক্ষা করছিলো নবনি আসার। আসতেই বেড়িয়ে পরলো।খুব প্লান করে এই কাজটা করা হয়েছে।
নিলয়ঃহ্যা তাইতো। এভাবেতো ভেবে দেখি নি।
You Are A Genius Bro.
_Genius তো তবে হবো। যখন নবনীকে খুঁজে পাবো।
_এখন কি করবো?!
আরাফঃআগে ওয়ারদাকে থামাতে হবে।কারন ওয়ারদা সব খবর শত্রুর কাছে দিচ্ছে।
নিলয়ঃআমরাতো ওয়ারদাকে বন্দী করে সব জানতে পারি।
আরাফঃনা। এমন করলে শত্রু এলার্ট হয়ে যেতে পারে।আমরা রিস্ক নিতে পারবো না।আর আমার মনে হয় না।ওয়ারদা কিছু জানে।কারন যে এম্বুলেন্স ব্যবহার করতে পারে সে কখনো ওয়ারদাকে সব কিছু জানিয়ে আমাদের আশেপাশে রাখবে না।
নিলয়ঃতাহলে কি ওকে ছেড়ে দিবো?
আরাফঃনা। আমরা অন্যভাবে কাজটা করবো।তুই সবার আগে ওকে গাড়িতে নিয়ে যাবি আর অজ্ঞান করে ফেলবি।তারপর এখানে ফিরে আসবি।আমি এখানে ওই এম্বুলেন্সকে ট্রেস করছি।
নিলয়ঃওকে ফাইন।
কথার মাঝখানেই ওয়ারদা চলে আসে।।আর ওর সামনে নাটক করা হয়।
ওয়ারদা নাটকের কিছু না বুঝে সিয়ামকে মেসেজ দিয়ে বলে দেয় যে আরাফ গাড়িটাকে খুজছে।আর এম্বুল্যান্সকে সন্দেহ করেনি।এরপর_
ওয়ারদাঃনিলয় আমরা ভাইয়ার অপেক্ষা করি একসাথে যাবো।
নিলয়ঃআচ্ছা। গাড়িতে উঠি। তারপর না হয় অপেক্ষা করি।
ওয়ারদা গাড়িতে ওঠার পর নিলয় সামনে না বসে পিছনের সিটে বসে।
ওয়ারদাঃকি করছেন।আপনি পিছনে কেন?বলতে না বলতে নিলয় ক্লোরোফোম দিয়ে ওয়ারদাকে অজ্ঞান করে ফেলে।
নিলয় ওকে অজ্ঞান করে আরাফকে মেসেজ দেই কাজ হয়ে গিয়েছে।
আরাফ বাকি সিসিটিভিতে এম্বুল্যান্সকে ফলো করে।
_খুব চালাক তুই তাই না।তুই খুব ভালো করেই জানতি বাবা সব গাড়ী আটকালেও এম্বুল্যান্স আটকাতে পারবে না।আর তাই তুই এই বেটার অপশন খুঁজে নিলি।
আরাফের ফোন বাজতেসে।
_হ্যালো বাবা বল।
_আরাফ নবনিকে এম্বুল্যান্স এ করে নিয়ে গিয়েছে।
_এটাতো আমিও জানি। নতুন কিছু বলো।
_জানো মানে।আর জানলে আগে বলো নাই কেন?আমিতো সব গাড়ী আটকে রাখলেও এম্বুল্যান্স ছেড়ে দিয়েছি।
_মাত্রই জানলাম বাবা।কিন্তু বুঝতে পারছি না।নবনিকে এম্বুল্যান্স এ নিলে কেউ কিছু বল্লো না কেন?
_নবনি চা খাওয়ার পর sense হারায়।তারপর তাকে এম্বুল্যান্স এ নিয়ে যাওয়া হয়।সবাই ভাবে অসুস্থ কাউকে নেয়া হচ্ছে তাই কেউ কিছু বলে নাই।কিন্তু এম্বুল্যান্স হাসপাতালে না যেয়ে গায়েব হয়ে যায়।
_তুমি কিভাবে জানলা?
_চায়ের দোকানে লোক পাঠিয়ে ছিলাম।ওরা জানালো।
_ওহ।
_সিসিটিভিতে ভালো করে দেখো। আর কিছু পাও কি না।
_আচ্ছা আমি দেখছি বাবা।রাখো।
এতবড় মাস্টার মাইন্ডকে তো বের করতেই হবে।
এম্বুল্যান্স যে রোডে যেয়ে থামছে।ওই রোডে আরো তিনটা এম্বুলেন্স।তিনটা তিন রোডে চলে যায়।
_আরাফ কিছু পেলি।
_হ্যা।মাস্টারমাইন্ড পদে পদে প্ল্যান করে রেখেছে।এখন এখান থেকে কোন এম্বুল্যান্স এ গিয়েছে কিভাবে বের করি।
পুলিশঃঅনেক সময় লেগে যাবে।এভাবে খুজতে।
আরাফঃসব ছুটিতে থাকা অফিসারকে আনান।যত পুলিশ লাগে আনান।আমার আজকেই নবনিকে লাগবে।আজকে মানে আজকেই।দেশের কোনায় কোনায় পুলিশ লাগান।এই এম্বুল্যান্স এর লোকেশন আমি চাই চাই।
নবনির খুব কষ্ট হচ্ছে।
_আরাফ এখনো কেনো আসছেন না।আমার খুব ভয় করছে।জায়গাটা অনেক অন্ধকার।খুদায় মাথা ঘুরাচ্ছে। আপনি কি বুঝতে পারছেন না মিস্টার আরাফ চৌধুরি । চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।অভীমানে বুক ভারী হয়ে গেল।আমি জানি আপনিও অনেক কষ্টে আছেন।আমি আপনাকে অনুভব করতে পারছি।অনুভব করতে পারছি আপনার ভালোবাসা।আমিও বুঝি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।এখন আমিও অনুভব করতে পারছি আমার সবটুকু ও যে তোমায় ঘিরে।এরা আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে আরাফ। অনেক। পায়ের ব্যাথায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।কিছুক্ষন পর এখান থেকে নিয়ে যাবে।কি করবো আমি।না আমার হারলে হবে না।আমার অপেক্ষা করতে হবে আরাফের। আমি যে উনার বাঘিনি।এখান নিয়ে আসার সময় পায়ের আঙুলে যে ব্যাথা পেয়েছি।খুব রক্ত বের হচ্ছে।আইডিয়া আরাফ এই পর্যন্ত আসবে আমি জানি।কিন্তু যদি দেরি হয়ে যায়। আমি এখানে ক্লু রেখে দেই।
নবনি রক্ত দিয়ে মাটিতে কিছু লিখতে লাগলো। খুব ব্যাথা পেয়েছে লিখতে যেয়ে। দাতে দাত খিচে সব ব্যাথা সহ্য করেও লিখলো।পা থেকে আরো রক্ত ঝড়তে লাগলো।লিখে চেয়ার টা আস্তে আস্তে আগে বারালো। যাতে শত্রুরা না দেখতে পায়।কিন্তু চোখ খুলে রাখতে পারছে না।পা থেকে অনেক রক্ত পরছে।
নবনি খেয়াল করলো পায়ের আওয়াজ আসতেসে।নবনি অজ্ঞান হওয়ার ভান করে।
সিয়ামঃওয়ারদা মেসেজ করেছিল।কিন্তু তাও এখানে বেশিখন থাকা যাবে না।ওকে নিয়ে বের হ তোরা।আর শোন ওই এম্বুলেন্স নিস না।যদি আরাফ জেনে যায় এম্বুল্যান্স এর ব্যাপারটা কোনো রিস্ক নেয়া যাবে না।পিছনে লাল গাড়ি আসে ওইটা বের কর।
বলে সিয়াম চলে গেল।
গুন্ডারা সবাই নবনিকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
এখানে আরাফ আর নিলয় পুলিশের সাহায্যে এম্বুল্যান্স এর লোকেশন খুজে যেখানে নবনিকে রাখা হয়েছিল ওখানে এসে পরে।
_আমরা এসে পরেছি।তাড়াতাড়ি চল।বলেই আরাফ ছুটে গেলো।
পুলিশ হন্য করে পুরোতে খুজলো।কিন্তু কাউকেই পেল না।
পুলিশঃভিতরে কেউ নেই স্যার।
_ওহ নো।আমাদের দেরি হয়ে গিয়েছে।ওরা নবনিকে নিয়ে বের হয়ে গিয়েছে নিলয়।বলে মাটিতে বসে পরলো আরাফ।আরাফের কলিজা ছিড়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে।
আমি হেরে গেলাম।আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।এখন কোথায় খুজবো। কোথায় পাবো তোমাকে।নবনিইইইইইইইইইইই_বলে চিতকার দিল।
আরাফের চিতকারে উপস্থিত সবাই কেপে উঠলো।
আরাফের হাত মাটিতে রাখতেই খেয়াল করলো ওর হাত ভিজা লাগছে।লাইট দিয়ে দেখে রক্ত। রক্ত দেখে আরাফ এর কলিজা কেপে উঠলো।ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো ওখানে কিছু লিখা আসে।রক্ত দিয়ে লিখা
৷ সিলেট ট্রেন।
লেখাটা পরার মাত্র আরাফ উঠে দাড়ালো।
আরাফঃধন্যবাদ নবনি পাখি এমন সময়েও তুমি হেরে যাও নাই। তুমি আসলেই আমার বাঘিনি (মনে মনে)। নিলয় এখান থেকে ট্রেন স্টেশন কত দূরে?
নিলয়ঃ ৩ ঘন্টা। আমাদের এখানে পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।এখন আমরা যেতে যেতে ওরা চলে যাবে।
_বাবাকে কল দিয়ে বল প্রাইভেট হেলিকপ্টার পাঠাতে। ফাস্ট।উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে আসে।
_তুই কি সিরিয়াস?
আরাফ নিলয়ের দিকে তাকায়।নিলয় খেয়াল করে আরাফ এর চোখ লাল হয়ে আছে।এ যেন আগুন ঝড়সে।
_আমার নবনির রক্ত এটা।আর আমি অপেক্ষা করবো?এখনই যাবো।ফাস্ট কর।বলে মাটিতে ঘুষি দিলো।ঘুষিটা এতো জোরে দিল যে হাত থেতলে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে।আমি আসছি নবনি।
চলবে ...
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন