উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১১)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১২)
বিছানায় বসে দুপুরের ঘটনা ভাবছে মিসেস কবিতা। দুপুরে তিনি নামাজ শেষ করে কাব্যের রুমে যাচ্ছিল। কাব্যকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে। এতোদিন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিল ছেলেটা। ঠিক মতন বাসায় আসেনি। কোথায় কি খেয়েছে তার ঠিক নেই। তাই আজকে ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে তিনি। কাব্যের রুমের সামনে এসেই থমকে যায় তিনি। কুহু কাব্যের টি-শার্ট চেপে ধরে কাব্যকে বলছে, "এই তোর সাহস তো কম না। তুই আমাকে না জানিয়ে অন্য মেয়ের সাথে ডেটিং এ যাস। আবার আমার কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেই পেত্নীর সাথে হেসে হেসে কথা বলিস। এই তোকে মানা করেছিলাম না, এমন করে কারো সামনে হাসতে। তাহলে কোন সাহসে তুই ওই মেয়ের সামনে এমন করে হেসেছিস? বল আমাকে? আবার গাড়ির দরজাও খুলে দিয়েছিস, ওই পেত্নীর জন্য। কত বড় সাহস তোর! তোকে তো আজ আমি খুন করে ফেলবো।" এই দৃশ্য দেখে আর কুহুর বলা কথাগুলো কানে যেতেই মিসেস কবিতা আর রুমের মধ্যে ঢুকে না। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথপোকথন শুনতে থাকে। কুহু বের হয়ে যাওয়ার আগেই তিনি সেই যায়গা থেকে সরে আসে। তখন থেকেই তার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, "কুহু কি কাব্যকে পছন্দ করে?" বিছনায় মিসেস কবিতার পাশে শুয়ে আছে মিষ্টার আতিক। স্ত্রীকে না ঘুমিয়ে, এভাবে বসে থাকতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করল
- কি হলো তুমি না ঘুমিয়ে বসে বসে কি ভাবছ?
স্বামীর কথা কানে যেতেই ধ্যান ভাঙে মিসেস কবিতার। একনজর স্বামীর দিকে চেয়ে কিছু একটা ভাবে সে। তারপর উৎফুল্ল কন্ঠে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল
- কুহুকে এই বাড়ির বড় বউ করলে কেমন হয়?
মিষ্টার আতিক কথাটা শুনেও শিউর হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করল
- কি?
মিসেস কবিতা আগের মতন উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
- আরে আমাদের কাব্যের সাথে কুহুর বিয়ে দিলে কেমন হয়? আমার কিন্তু কুহুকে খুবই পছন্দ।
মিষ্টার আতিক অবাক হয়ে বললো
- কি! কাব্যের সাথে কুহুর বিয়ে! কাব্যের তো এখনো পড়ালেখাই শেষ হয়নি। তাছাড়া ওদেরও তো পছন্দ অপছন্দের বেপার আছে।
মিসেস কবিতা নড়ে চড়ে বসে হাসি হাসি মুখে বললো
- কুহু তো কাব্যকে পছন্দ করে।
মিষ্টার আতিক কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুমি কি করে জানলে যে, কুহু কাব্যকে পছন্দ করে?
মিসেস কবিতা তার দেখা দুপুরের সব ঘটনা মিষ্টার আতিককে বললো। সব শুনে মিষ্টার আতিক বললো
- দেখ কুহুর কোনো ভাই বোন নেই। তাই হয়তোবা কাব্যকে নিজের ভাই বলে মনে করে। সেই হিসেবেই হয়তো ওই মেয়েকে ভাবি হিসেবে পছন্দ হয়নি দেখে সে রাগে কথাগুলো বলেছে। তাছাড়া কাব্যেরও তো পছন্দের একটা বেপার আছে।
মিসেস কবিতা দৃঢ় নিয়ে বললো
- আমি যাকে বললো কাব্য তাকেই বিয়ে করবে। ও কখনো আমাকে না করবে না।
মিষ্টার আতিক অসন্তোষ কন্ঠে বললো
- কাব্য তোমার কথা মেনে কুহুকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে দেখে তুমি তার পছন্দের কোনো মূল্য দিবে না।
মিসেস কবিতা মলিন বললো
- আমি কি তা বলেছি নাকি ,,,,,,,,,,
মিসেস কবিতাকে আর বলতে না দিয়ে মিষ্টার আতিক আদেশের কন্ঠে বললো
- আমি এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না। আর তুমিও এসব নিয়ে কাউকে কিছু বলবে না। আমি চাই না এসব নিয়ে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কোনো জামেলা হোক।
মিসেস কবিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- এতে তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে ঝামেলা কেন হবে?
মিষ্টার আতিক উত্তর দিল
- দেখ কুহু হচ্ছে সাফিকের একমাত্র মেয়ে তার উপর অনেক সুন্দরী। এমন মেয়েকে অনেক ভালো ,,,,,,,
মিষ্টার আতিক আর কিছু বলার আগে মিসেস কবিতা তাকে থামিয়ে দিয়ে ছলছল চোখে রাগী কন্ঠে বললো
- তুমি কি বলতে চাও আমার ছেলে কুহুর অযোগ্য? আমার ছেলের থেকে গায়ের রঙে ফর্সা ছেলে তারা পাবে। কিন্তু আমার ছেলের থেকে ভালো ছেলে তারা পাবে না।
মিষ্টার আতিক শান্ত কন্ঠে বললো
- দেখ এটা আমিও জানি। আর সফিকও কাব্যকে অনেক পছন্দ করে। প্রায় সময়ই আফসোস করে যদি কাব্যের মতো তার একটা ছেলে থাকতো। কিন্তু তাই বলে এটা শিউর হওয়া যায় না যে, সফিক তার মেয়ের জন্য কাব্যকে পছন্দ করবে। সবাই তো তার মেয়ের জন্য সব দিক দিয়ে পারফেক্ট ছেলে চায়। তার উপর তাদের একটা মাএ মেয়ে। তাছাড়া কুহু অনেক যেদি মেয়ে। ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে কেউ বিয়ে দিতে পারবে না। তাই তুমি এই বিষয়টা নিয়ে গাটাগাটি না করে বিষয়টা ওদের উপর ছেড়ে দেও। ওরা একজন অন্যজনকে পছন্দ করলে আমি যেভাবেই হোক আমি সফিককে রাজী করাবো।
মিসেস কবিতা স্বামীর প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করে শুয়ে পড়ে।
স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় পাশে দাঁড়ায় তিথি। কিছুক্ষণ চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে সে। কিন্তু না আয়ান তার পাশে এসে দাঁড়ায় না। আড় চোখে তাকিয়ে দেখে আয়ান গাড়ির মধ্যে বসে সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। সেদিনের পর থেকে আয়ান গাড়ি নিয়ে স্কুলের সামনে আসে ঠিকই, কিন্তু গাড়ি থেকে বের হয়ে তার সামনে আসে না। তার সাথে কথাও বলে না। প্রথম প্রথম ভালোই লেগেছে। কিন্তু ইদানীং সে আয়ানকে মিস করতে শুরু করেছে। তাছাড়া সেইদিন আয়ানকে এতোকিছু বলেছে বলে খারাপও লাগছে তার। তাই সে ঠিক করে আয়ানকে সরি বলবে। তিথিকে আয়ান তার গাড়ির দিকে আগাতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। তিথি আয়ানের কাছে গিয়ে বললো
- ওইদিন আপনাকে এভাবে বলার জন্য সরি। আমার ওইদিক এই ভাবে বলা ঠিক হয়নি। সরি এগেইন। আর থ্যাংকস। ওইদিন বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
আয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বললো
- আরে কি বলছেন তিথি মিস। আমি তো খারাপ ছেলে। খারাপ ছেলেদের এসব সরি, থ্যাংকস বলতে হয় না।
তিথি অপরাধী কন্ঠে বললো
- আমি সত্যিই দুঃখিত।
আয়ান দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বললো
- সেইদিন, আমি জোর করে তোমাকে গাড়িতে উঠিয়েছিলাম। তুমি যদি সত্যিই দুঃখিত হও তাহলে আজ নিজ ইচ্ছা উঠো। তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেই।
তিথি হালকা হেসে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
বিকেল পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট। চিন্তিত মনে স্টাডি রুমে ম্যাথ খাতা সামনে নিয়ে বসে আছে দোলা। অতুল তো কখনো লেট করে না। প্রতিদিন ঠিক পাঁচটা বাজে চলে আসে। তাহলে আজকে কেন আসছে না? তাহলে কি অতুল তাকে আর পড়াবে না? হায় আল্লাহ এখন কি হবে? কি করবে সে এখন? কিভাবে অতুলের দেখা পাবে সে এখন? সে তো অতুলের বাড়িও চিনে না। দূর কেন যে সেদিন তাকে ফট করে গালফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। এখন তার নিজের উপরই নিজের প্রচুর রাগ হচ্ছে। রাগটা কন্ট্রোল করতে না পেরে নিজের ডান হাত দিয়ে নিজের ডান গালে সজোরে বসিয়ে দিল এক চড়। রাগের ঠেলায় চড়টা একটু জোরেই দিয়ে ফেলেছে সে। এতো জোরে নিজের গালে চড় মারার ইচ্ছা তার ছিল না। গালে ব্যথা লাগতে নিজের ডান গাল ডান হাত দিয়ে হালকা ঘষতে ঘষতে নিজেকে নিজেই বললো
- এই দোলার বাচ্চা তোর মাথায় কি কোন বুদ্ধি সুদ্ধি নাই। নিজের গালে নিজে কেউ এতো জোরে চড় মারে। চড় মারতে ইচ্ছা হয়েছে ভালো কথা আস্তে মারবি। তা না ঠাস করে মেরে বসলি। উফ কি ব্যথা।
কথাটা বলে ডান হাত দিয়ে গাল ঘষতে ঘষতে সামনে তাকিয়ে দেখে, অতুল দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অতুলকে দেখা মাএই চট করে দাঁড়িয়ে যায় সে। গাল থেকে হাত নামিয়ে বোকার মতো হেসে বললো
- স্যার মশা মারছিলাম।
দোলার কান্ড দেখে অতুলের হাসি পেলেও সে হাসলো না। চেয়ার টেনে বসে গম্ভীর কন্ঠে দোলাকে বললো
- বস
দোলা বসে পড়লো। আর অতুল দোলার হোমওয়ার্কের খাতা টেনে নিয়ে চেক করতে লাগলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৩)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন