উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১২)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৩)
আবছা আলো আবছা আঁধার চারিদিকে। কিছুক্ষণ আগেই ফজরের নামাজ শেষ হয়েছে। পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দুটি করবের পায়ের দিকে মোনাজাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। কবর দুটি তার বাবা-মা'র করব। আজ তার বাবা-মা'র মৃত্যুবার্ষিকী। তেরো বছর আগে ঠিক এই দিনেই তার বাবা-মা মারা যায়।
তখন শুভ্রের বয়স ছিল মাএ বারো বছর --------
বাবা মিষ্টার আসিফ, মা মিসেস পরি আর শুভ্র এই তিনজন মিলে ঢাকার বাড্ডার ছোট একটা ফ্লাট বাসাতে ভাড়া থাকতো। বনানীর একটা প্রায়ভেট কম্পানিতে চাকরি করতো মিষ্টার আসিফ। ছোট সুখের সংসার তাদের ভালোই ছিল। প্রতিদিন এর মতো সেদিনো মিসেস পরি শুভ্রকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছিল। বাসায় এসে গোসল করে মা ছেলে টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছিলো আর স্কুলে কি কি হয়েছিল মা'কে সব গল্প বলছিল শুভ্র। ঠিক তখনি কলিংবেল বাজে। মিসেস পরি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই, তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকে বাড়ির মালকিন মিসেস নাছিমা। তাড়াহুড়ো করে বললো
- তাড়াতাড়ি চলো।
অবাক হয়ে মিসেস পরি জিজ্ঞেস করল
- কোথায় আন্টি?
মিসেস নাছিমা মিসেস পরির কথার কোন উত্তর না দিয়ে তাড়া দিয়ে বললো
- গেলেই দেখতে পাবে। তাড়াতাড়ি চলো আগে।
বলেই মিসেস নাছিমা শুভ্র আর মিসেস নাছিমাকে পানি খায়িয়ে, রেডি করে একটা হসপিটালে নিয়ে যায়। ভিতরে গিয়ে দেখে সেখানে অনেক মানুষের ভীড়, কান্নার আহাজারি। অবাক চোখে মিসেস পরি মিসেস নাছিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আন্টি আমরা এখানে এসেছি কেন?
মিসেস নাছিমা কোনো কথা না বলে তাদের সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখে মিষ্টার আসিফের বন্ধু মিষ্টার ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে কাঁদছে। মিসেস পরি তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে ইমতিয়াজ ভাই আপনি এমন করে কাঁদছেন কেন?
মিষ্টার ইমতিয়াজ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল
- সরি ভাবি।
বলেই সামনে সাদা কাপড় ঢাকা লাশটার দিকে ইশারা করে। মিসেস পরি ভ্রু কুচকে লাশের মুখের উপর থেকে সাদা কাপড়টা সরাতেই তার পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠে। এটা শুভ্রের বাবা মিষ্টার আসিফ এর লাশ। আজ সকালে মিষ্টার আসিফ যেই অফিসে চাকরি করতো সেখানে আগুন লাগে। আর সেই আগুনেই দগ্ধ হয়ে মারা যায় মিষ্টার আসিফ সব আরো পঁয়ত্রিশ কর্মচারী। স্বামীর লাশ দেখে ছুটে গিয়ে লাশের বুকের উপর মাথা রেখে কান্নায় ভেগে পরে মিসেস পরি। শুভ্রও বাবার এক হাত ধরে কান্না করতে থাকে। মিষ্টার ইমতিয়াজ শুভ্রকে শান্তনা দিতে থাকে আর মিসেস নাছিমা মিসেস পরিকে। কিছুক্ষণ পর মিসেস নাছিমা লক্ষ্য করলো মিসেস পরির কান্নাকাটির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন কি সে নড়াচড়াও করছে না। মিসেস নাছিমা তাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে থাকে কিন্তু সে কোন সারা দেয় না। মিসেস নাছিমা একটু জোড়ে ধাক্কা দিতেই ফ্লোরে পরে যায় মিসেস পরি। মিষ্টার ইমতিয়াজ সাথে সাথে গিয়ে ডাক্তার ডাকে। ডাক্তার পালচ চেক করে জানায় মিসেস পরি মারা গিয়েছে। একইসাথে বাবা-মা'র মৃত্যুতে পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে বার বছরের শুভ্র। তার অবস্থা খারাপ হওয়ার ডাক্তার তাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশন পুশ করার পর পরই সে ঘুমের দেশে পারি দেয়। ঘুম থেকে উঠার পর নিজেকে একটা অচেনা রুমে আবিষ্কার করে শুভ্র। চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই, চোখ পড়ে তার পাশে বসা ছোটা মেয়েটার দিকে। শ্যামলা গায়ে সাদা ফক পরা মিষ্টি দেখতে মেয়েটার বয়স নয় কি দশ বছর হবে। তার ছোট ছোট চোখ দিয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র তাকাতেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা একটা মধ্যেবয়স্ক মহিলা আর একজন বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে রুমে ঢুকে। আস্তে আস্তে সে জানতে পারে সে। এটা তার দাদার বাড়ি। আর সেই পিচ্ছি মেয়েটা তার চাচাতো বোন অনু। মধ্যেবয়স্ক মহিলাটি তার চাচি মিসেস সম্পা। আর বৃদ্ধ মহিলাটি হলেন তার দাদি পারুল বেগম। তার দাদা আজম সাহকে একনামে গ্রামের সবাই চিনতো। তার ছিল দুই ছেলে হাছিব আর আসিফ। বড় ছেলে হাছিব গ্রামে থাকতো। গ্রামের একটা কলেজ থেকে অনার্স পাশ করে বাবার কাজে যোগ দেয় সে। ছোট ছেলে আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে মাস্টার্স শেষ করে। আজম সাহের অনেক স্বপ্ন ছিল তার ছোট ছেলেকে নিয়ে। ছেলে যেহেতু ঢাকা থেকে লেখাপড়া করেছে, সেহেতু ঢাকার কোনো ধনী পরিবারের মেয়েকেই সে পুএবধু করতে চেয়েছিল। তাহলে গ্রামে তার আরও নামডাক হবে। কিন্তু তার সব স্বপ্ন মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে, হঠাৎ একদিন তাদের গ্রামেরই একটা গরিব জেলের মেয়েকে বিয়ে করে আনে আসিফ। রাগে আজম সাহ তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মিষ্টার আসিফ মিসেস পরিকে নিয়ে ঢাকা এসে, একটা প্রায়ভেট কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কিছুদিন পর জন্ম নেয় শুভ্র। বাবা-মা'র আদরে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক আগুনে পুরে যায় তাদের সুখের সংসার।
বর্তমানে ----------------
প্রতিবারের মতো এবারও অতিতের কথা মনে পড়তেই চোখে পানি এসে পরে শুভ্রের। ভালো করে চোখ মুছে নেয় সে। কারণ সে জানে তার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে একজন। প্রতিবছরই দাঁড়িয়ে থাকে। সেই মানুষটাকে সে তার চোখের পানি দেখাতে চায় না। যদিও সে জানে তার পিছনের মানুষটাও জানে যে সে কাঁদছে। তবুও চোখে পানি নিয়ে সেই মানুটার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে হয় না তার। নিজেকে স্বাভাবিক করে পিছনে তাকায় সে। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে প্রতিবারের মতো এবারও তার থেকে ৩-৪ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে অনু। শ্যামলা গায়ে সেই সাদা রং। সূর্য উঠছে মাএ। চারিদিকে সদ্য উঠা সূর্যের মিষ্টি আলোতে সাদা পাঞ্জাবি, পায়জমা আর টুপি মাথায় দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে অনুর সেই ছলছল চোখে দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্র। সাদা সেলোয়ার-কামিজ পরে। মাথায় ওড়না দিয়ে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে, শুভ্রের কিছুক্ষণ আগে কান্নারত থাকা চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনু।
ঘুম থেকে উঠতে লেট হওয়ায় কলেজে আসতে লেট করে দীপ্তির। ফলে ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে। তাই এক প্রকার দৌড়ে ক্লাসে যাচ্ছে দীপ্তি। দোতলায় ক্লাস হওয়ায় কারণে লিফটে না গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠতে থাকে সে। দোতলা সিঁড়ি থেকে ডানে দিকের বারান্দার যেতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নেয় সে। সাথে সাথে এক জোড়া শক্ত বলিষ্ঠ হাত তাকে ধরে ফেলে। দীপ্তি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই বলিষ্ঠ হাতের মালিকের দিকে। সেই বলিষ্ঠ হাতের মালিক তাকে সোজা করালে দীপ্তির ধ্যান ভাঙে। সে মিষ্টি কন্ঠে বললো
- সরি স্যার আসলে ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছিল তাই।
রোদ এক ভ্রু উঁচু করে বললো
- ওহ রিয়েলি! ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছিল তাই! বাট আই থিংক তুমি ইচ্ছে করেই করেছ।
দীপ্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- হোয়াট! আপনি কি বলতে চাইছেন, আমি ইচ্ছে করে পড়ে যাচ্ছিলাম?
রোদ স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- বলতে চাচ্ছি না। ডারেক্টলি সেয়িং।
দীপ্তি রাগী কন্ঠে বলল
- দেখুন আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন না।
রোদ ভাব নিয়ে বলল
- ঠিকই বলেছ। আমাম মতো ভদ্র ছেলেরা যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে না। বাট তোমার মতো একটা নির্লজ্জ মেয়ে, যে কি না ভরা স্টজে একটা ছেলের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে পারে। সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
বলেই সেখান থেকে রোদ চলে যায়। দীপ্তি রাগে কটমট করতে করতে ব্যাগ থেকে কাউকে ফোন করে। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি ফোন রিসিভ করে বললো
- হ্যালো ম্যাম।
দীপ্তি কঠিক কন্ঠে বলল
- রোদ চৌধুরীর সম্পর্কে সব ইনফরমেশন আমার চাই। কোনো কিছু যেন বাদ না যায়। নট আ সিঙ্গেল পয়েন্ট।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৪)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন