উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৮)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৯)
রাতে বাসায় ঢুকে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই, সোফাতে বসে থাকা মিসেস রোমানা গম্ভীর কন্ঠে বললো
- দাঁড়াও রোদ।
মিসেস রোমানার এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে রোদ দাঁড়িয়ে যায়। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে মিসেস রোমান আর বৃষ্টি সোফাতে বসে আছে। রোদ জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে মা?
মিসেস রোমানা উঠে রোদের কাছে গিয়ে কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
- আমরা কি তোমাকে কখনো কোন কিছু করতে না করেছি?
রোদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
- হঠাৎ এই প্রশ্ন করছ কেন, মা?
মিসেস রোমানা কন্ঠ আরও কঠিন করে বললো
- যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দেও।
রোদ শান্ত কন্ঠে বললো
- না, মা।
মিসেস রোমানা প্রশ্ন করল
- আমি তোমাকে ঠিক কতো বছর ধরে দিয়ে করতে বলছি?
রোদ চোখে মুখে বিরক্ত নিয়ে বললো
- মা তুমি ,,,,,,,,,,
রোদকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মিসেস রোমানা কঠিন সরে বললো
- যা জিজ্ঞেস করেছি তা উত্তর দেও।
রোদ ছোট করে উত্তর দেয়
- দুই বছর ধরে।
মিসেস রোমানা উঁচু কন্ঠে বললো
- দুই বছর ধরে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে বলছি। আর তুমি না না করে, নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলেছ? করেছ তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার বউকে লুকিয়ে রেখেছ কেন? আমরা কি তোমার বউকে মেনে নিতাম না। আমার কি তোমাকে কখনো কোনো শর্ত দিয়েছিলাম যে তুমি এমন মেয়ে বিয়ে করতে পারবে না? তাহলে কেন এতো লুকোচুরি তোমার?
মিসেস রোমানার কথা বুঝতে না পেরে রোদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি সব উল্টো-পাল্টা কথা বলছ! আমি বিয়ে করে বউ লুকিয়ে রেখেছি?
মিসেস রোমানা বিষ্মিত কন্ঠে বলল
- এখনো না করছ তুমি!
বৃষ্টি সোফাতে থেকে উঠে মা'র পাশে দাঁড়িয়ে বললো
- ভাইয়া এমন করছ কেন? ভাবিকে বাসায় নিয়ে এসো না। ভাবি কতো মিষ্টি। কি মিষ্টি কন্ঠ। কি মিষ্টি করে কথা বলে।
রোদ রাগী কন্ঠে বলল
- যাস্ট সেট আপ। সেই কখন থেকে এক কথা বলে চলেছে তোমরা। আমি যে বলছি আমি বিয়ে করিনি আমার কথা কেন শুনছো না।
মিসেস রোমানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুমি বিয়ে করোনি! তাহলে ঐ মেয়ে যে বলল?
রোদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কোন মেয়ে? কে?
মিসেস রোমানা উত্তর দিল
- বিকেলে তোমার ফোন থেকে কল আসে। রিসিভ করতেই ,,,,,,,,।
মিসেস রোমানা মেয়েটার সাথে হওয়া সব কথা রোদকে বলে। সব শুনে রোদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- হোয়াট! একটা মেয়ে কল করে বলল আর তোমরা বিশ্বাস করে নিলে!
মিসেস রোমানা জিজ্ঞেস করল
- তোমার ফোন থেকে কল করে বললে বিশ্বাস করবো না! তোমার ওয়াইফ না হলে তোমার ফোন ঐ মেয়ে পেল কিভাবে?
রোদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমার ফোন কোন মেয়ে রিসিভ করবে কিভাবে? আমার ফোন তো আমার কাছে?
বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপে। কিন্তু ফোন অন হয় না। বেশ কয়েকবার চাপে কিন্তু কাজ হয় না। ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটা তার ফোন না। তার ফোনের মতো দেখতে, অন্য একটা ফোন। পকেট থেকে তার অন্য ফোনটা বের করে তার ফোনে কল করে। কেউ রিসিভ করে না। রিং হয়ে কেটে যায়। বারকয়েক ফোন করে কিন্তু ফলাফল শূন্য।
দুপুর দুইটা তিরিশ মিনিট। গরমে নিস্তব্ধ এক দুপুর।কালো গায়ে আকাশী রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে লাইব্রেরির এএককোণে একটা সিঙ্গেল চেয়ারে বসে নিশব্দে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে পড়ায় মগ্ন কাব্য। তখনি একটা পুরুষালি কন্ঠ পাশ থেকে বললো
- আসসালামু আলাইকুম ভাই।
কাব্য মাথা তুলে পাশে তাকিয়ে দেখে, তার পাশে তার জুনিয়র পাপন দাঁড়িয়ে আছে। জুনিয়রদের মধ্যে এই পাপনকে সে সব থেকে বেশি ভালোবাসে। আর এই পাপন ছেলেটাও কাব্য ভাই বলতে পাগল। তাই অতুলের ইনফরমেশন আনার দায়িত্ব পাপনকে দিয়েছে সে। কাব্য বই বন্ধ করে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। অতুলের খবর পেয়েছিস?
পাপন শার্টের পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো
- জ্বি ভাই। এখানে সব ডিটেইস লেখা আছে। আপনি বললে তাকেও নিয়ে আসতে পারি।
কাব্য কাগজটা নিয়ে হালকা হেসে বললো
- না ওকে আপাদত লাগবে না। পরে প্রযোজন হলে বলবো। এখন তুই ক্লাসে যা।
পাপন মিষ্টি হেসে বললো
- আচ্ছা ভাই। আসসালামু আলাইকুম।
কাব্য ছোট করে বললো
- হুম্ম।
ছেলেটি চলে যায়। কাব্য কাগজটার ভাঁজ খুলে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে পড়তে থাকলো। কিন্তু সে কি জানে দূর থেকে কেউ একজনের স্থির দৃষ্টিতে তার এই ঠোঁট নেড়ে পড়া মুগ্ধ নয়নে দেখছে। আর তাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনছে।
হসপিটাল থেকে বাসায় এসে ফ্রেস হয়েই তূবার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য তূবার রুমের দিকে পা বাড়ায় অভ্র। সেদিন পেত্নী বলাতে তূবা রাগ করেছে। প্রতিবার তূবা তার সাথে রাগ করলে ডায়রেক্টলি তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এইবারও তাই হলো। প্রতিদিন তূবা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, সে খেয়েছে কি না। কিন্তু গত কালকে থেকে ফোন করেনি শুধু টেক্স মেসেজ দিয়েছে যেখানে লেখা ছিল, "কেউ যেন না খেয়ে না থাকে। কেউ যেন না খেয়ে থেকে আবার অসুস্থ না হয়ে যায়। কেউ যেন আবার মনে না করে, যে সে ডাক্তার বলে তার কোন অসুখ বিসুখ কিছু হবে না।" মেসেজটা দেখে অভ্র তূবাকে ফোন করছিল। তূবা ফোন রিসিভ করেনি। আবার ফোন করে এবারও তূবা ফোন রিসিভ করেনি। পাঁচবারের মাথায় ফোন রিসিভ করে তূবা। অভ্রকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একদমে বলতে থাকে, " দুঃখিত আপনি যাকে ফোন করছেন সে এই মুহূর্তে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না। অনুরোধ করে তাকে আর ফোন করে ডিস্টার্ব করবেন না। ধন্যবাদ।" বলেই লাইটা কেটে দেয় তূবা। রাতে তূবাকে ফোন করলেও একই কাজ করে। আজকে দুপুরেও সেই একিই কাহিনী করে। এইসব কাহিনী মনে করতে করতে তূবার রুমের সামনে এসে পরে অভ্র। রুমের সামনে এসে দেখে তূবা একমনে পড়ছে। তূবার রুমে ঢুকতে ঢুকতে অভ্র বললো
- আমার তুবাসোনা কতো লক্ষী মেয়ে। কি সুন্দর বসে বসে পড়ছে।
তূবা আড় চোখে তাকিয়ে অভ্রকে দেখলো, কিন্তু কিছু বলল না। অভ্র তূবার কাছে গিয়ে অসহায় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তূবাসোনা কি আমার উপর এখনো রাগ করে আছে?
তূবা এবারও কোনো কথা বললো না। অভ্র মন খারাপের অভিনয় করে জিজ্ঞেস করল
- কেউ যদি কথা না বলে, তাহলে তার জন্য আনা এই চকলেট বক্সটা আমি কাকে দিব?
তূবা চকলেট বক্সের কথা শুনে অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে অভ্রর হাতে একটা চকলেট বক্স। চকলেট তূবার খুব পছন্দের। তূবা হাত বাড়িয়ে চকলেট বক্সটা নিতে চাইলে অভ্র হাত উঁচু করে বললো
- উহুম যে আমার সাথে কথা বলে না তাকে তো আমি চকলেট বক্স দিব না।
তূবা মাথা নিচু করে গাল ফুলিয়ে বললো
- সে আমাকে পেত্নী বলবে। আবার এসে জিজ্ঞেস করবে তূবাসোনা রাগ করেছ? তা রাগ করবো না তো কি, তার মুখ থেকে পেত্নী ডাক শুনে খুশি হব? কথা বলব না আমি তার সাথে। লাগবে না আমার তার গিফট।
অভ্র বাম হাতে দিয়ে বাম কান ধরে বললো
- সরি তূবাসোনা আর বলব না। এই দেখ কানে ধরেছি।
তূবা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- তুমি জান আমি কতো শখ করে কাজলটা দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি বলবে, বাহ আমার তূবাসোনাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
অভ্র চকলেট বক্সটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো
- বৃষ্টির জন্য কাজলটা এমন হয়ে গেছে দেখেই তো ,,,,,,,,,
অভ্রকে আর বলতে না দিয়ে তূবা বললো
- বৃষ্টিতে তো পরে ভিজেছি। তার আগেও তো তুমি আমাকে বলনি যে আমাকে কেমন লাগছিল। বাসায় এসেই তুমি সি.আই.ডি. দের মতোন জেরা করা শুরু করে দিয়েছিলে।
- তোর ঠান্ডা লাগবে দেখেই ,,,,,,,,,,
অভ্র আর কিছু বলার আগেই তূবা রাগ দেখিয়ে বললো
- কই ঠান্ডা লেগেছে? শুধু শুধু চিল্লাও তুমি। তুমি জানো আমি বৃষ্টিতে ভিজতে কতো ভালোবাসি তারপরও। আসলে তুমি আমাকে ভালোবাসা না। যদি ভালোবাসাতে তাহলে আমাকে না না বলে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে।
অভ্র আদুরে কন্ঠে বলল
- কে বলেছে ভালোবাসি না। আমি তো আমার তূবাসোনাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আর আমার তূবাপাখি সব থেকে সুন্দরী।
তূবা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- সত্যিই কি ভালোবাসো? সত্যিই কি আমি সব থেকে সুন্দরী? তাহলে এই সুন্দরী ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে রাখতে চাওনা কেন?
তূবার কথা শুনে অভ্রের মুখে রঙ পাল্টে যায়। সে স্থির চোখে তূবার দিকে তাকিয়ে রইলো কোনো জবাব দিল না। তূবা আবার জিজ্ঞেস করল
- কী কেন চাওনা আমাকে?
অভ্র একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল
- সম্পর্কটা এভাবেই তো ভালো আছে। আর না বাড়ালেই কি নয়?
তূবা ছলছল চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল
- কিন্তু আমি যে তোমাকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সহ্য করতে পারবো না।
অভ্র কোন কথা না বলে তূবার ছলছল চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর তূবা চেয়ারে বসে নিশব্দে কাঁদতে থাকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২০)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন