উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১৯)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২০)

কলেজের দবদবে সাদা ড্রেসের উপরে পরা এপ্রোনটা খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দোলা। বিছানায় পা তুলে বসে ব্যাগ থেকে কুহুর দেওয়া কাগজটা বের করে খুলে। কাগজের বামপাশে সাদা শার্ট পরা অতুলের গম্ভীর মুখে পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবির নিচে অতুলের সম্পর্কে লেখা। দোলা অতুলের ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙিয়ে বললো
- রামগরুড়ের ছানা হাসতে তার মানা।
তারপর খুশি খুশি মুখে কাগজের লেখা পড়তে থাকে। তাতে লেখা -
" আইয়িদ ইসলাম অতুল। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট থার্ড ইয়ার। হাইট পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি। ওয়েট পঁয়ষট্টি কেজি। ফোন নাম্বার ০১*********। ইমেইল এড্রেস A***********@gmail.com। ফেসবুক আইডির নাম A***********। বেষ্ট ফ্রেন্ড রিয়াদ হোসেইন। মেরুল বাড্ডায় বড় বোনের সাথে ভাড়া থাকে। বাবা-মা নেই। দুই বছর আগে অতুলের বড় বোন বিয়ে ঠিক হয় গাজীপুরের এক রিসোর্ট এর মালিকের একমাত্র ছেলের সাথে। বিয়ের একমাস আগে অতুলের বাবা-মা তাদের বাড়ি গাজীপুর যাওয়ার পথে কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। বড় বোন নিজের বিয়ে ক্যানসেল করে দেয়। বর্তমানে বড় বোন একটা প্রায়ভেট স্কুলে চাকরি করে। বড় বোনের চাকরির টাকা আর তার টিউশনি টাকা দিয়েই দুই ভাইবোনের থাকা খাওয়ার খরচ চলে। বাবার ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়েই অতুলের লেখাপড়ার খরচ চলে। চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পরে হাতের সাদা কাগজ ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল হতেই তাড়াতাড়ি করে, কান্না থামিয়ে হাত দিয়ে কাগজটা হালকা করে চেপে ধরে। হাত উঠিয়ে কাগজটা নিয়ে বিছানার এক অংশে ছড়িয়ে পড়া বিকেলের মিষ্টি রোদের উপর রেখে, তাতে ফু দিতে থাকে। তখনই দরজায় টোকা পরে। কাজের মেয়ে লতা দরজায় নক করে বললো
- বড় ম্যাম সাহেব খাবার রেডি।
লতার কথা শুনে দোলা দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, চার‍টা বারো বাজে। পাঁচটায় অতুল তাকে পড়াতে আসবে। তাড়াতাড়ি করে কাগজটা খুব যত্ন করে খাটের ড্রয়েরের মধ্যে রাখে। আলমারি থেকে কাপড় নিতে নিতে লতার উদ্দেশ্যে বললো
- আসছি।
বলেই ওয়াসরুমে ঢুকে যায়।

অর্ধেক ভাত শেষ হতেই আরও এক চামিচ ভাত আর আরও তিন চার টুকরো হাসের মাংস তার প্লেটে দিলো মিসেস সম্পা। তার ভাব খানা এখন এমন যে সে পারলে হারির সব ভাত আর করায়ের সব মাংসই শুভ্রের পেটে ঢুকিয়ে দিত। প্রতিবারই শুভ্র বাড়িতে এলে শুভ্রের উপর এই ছোটখাটো খাওয়া নামট অত্যাচার চালায় তিনি। অসহায় চোখে মিসেস সম্পার দিকে তাকিয়ে শুভ্র বললো
- চাচিআম্মা এতো খেতে পারবো না।
মিসেস সম্পা হালকা ধমকের সুরে বললো
- চুপচাপ খা তো। ঢাকায় থেকে একা একা তো তেমন খাওয়া দাওয়া করিস না। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিস।
শুভ্র মোটেও শুকনো না। তার স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো। ইভেন সে যদি তার খাওয়ার পরিমাণ বাড়ায়, তাহলে তার ভুড়ি বেড়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এই ভুড়ি বাড়ার কথাটা তার চাচিআম্মাকে বলে সে খাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারতো। কিন্তু তার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে তার চাচা খাচ্ছে দেখে, সে কিছু না বলে খুব ধীরে ধীরে খেতে লাগলো। যাতে তার চাচা খাওয়া শেষে চলে গেলে সে তার চাচিকে কিছু একটা বলে কেটে পরতে পারে। যদিও সে তার চাচাকে ভয় পায় না। কিন্তু সে তার চাচার সামনে দাড়িয়ে বেশি কথা বলার সাহসও পায় না। হাছিব খুব গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। আজ পর্যন্ত না সে শুভ্রর সাথে হেসে কথা বলেছে, আর না তাকে বকাঝকা করেছে। না তাকে কাছে ডেকে আদর করেছে, আর না তাকে শাসন করে দু'একটা চর থাপ্পড় দিয়েছেন। প্রয়োজনের বেশি তারসাথে কথাও বলেনি কোনদিন। শুধু শুভ্রের সাথে না নিজের একমাত্র মেয়ে অনুর বেলাতেও তিনি একই। এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে মিষ্টার হাছিব গম্ভীর কন্ঠে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করল
- তা তোমার মাষ্টার শেষ হতে আর কতদিন লাগবে?
শুভ্রর কানে তার চাচার কথাটা যেতেই সে মাথা উঁচু করে তার চাচার দিকে তাকায়। মিষ্টার হাছিব প্লেটে স্থীর দৃষ্টি রেখে ভাত মাখছেন। শুভ্র সাথে সাথে মাথা নিচু করে উত্তর দিল 
- সাত মাস।
মিষ্টার হাছিব আবার জিজ্ঞেস করল
- মাষ্টার শেষ হলে কি করবে বলে ঠিক করেছ?
শুভ্র নিচু সরে উত্তর দিলো
- ঢাকায়ই চাকরি করবো বলে ঠিক করেছি।
কথাটা শুনেই মিসেস সম্পার মন খারাপ হয়ে গেল। শুভ্রকে নিজের সন্তানের মতন ভালোবাসেন তিনি। অনু ছাড়া আর কোন ছেলে মেয়ে নেই তার। শুভ্রকে নিজের ছেলের মতোই আদর যত্ন করে। তার দুই চোখের দুই মনি অনু আর শুভ্র। তিনি জানেন বছরখানিকের বেশি অনুকে তিনি তার কাছে রাখতে পারবে না। মেয়ে বড় হয়েছে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে। মেয়েকে তো তার বিয়ে দিতেই হবে। কিন্তু শুভ্র! সে তো ছেলে! তাহলে সে কেন তার থেকে দূরে যাবে? লেখাপড়ার জন্য সে ঢাকা যাক তাতেও তিনি রাজি ছিল না। কিন্তু মিষ্টার হাসিফ সরাসরি তাকে বলে দিয়েছে শুভ্রর যা ইচ্ছে সে তাই করবে। তাকে যেন কোনো প্রকার বাধা দেওয়া না হয়। তাই মিসেস সম্পা কিছুই বলতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ পর মিষ্টার হাছিব গম্ভীর কন্ঠে বলল
- অনুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে। চিন্তা করছি ভালো পাএ পেলে বিয়ে দিয়ে দিব।
কথাটা কানে যেতেই শুভ্র খাওয়া বন্ধ করে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অনুর দিকে। মেয়েটা মলিন মুখ করে তার দিকেই চেয়ে আছে। শুভ্র কিছু বলার আগে মিসেস সম্পা রাগ দেখিয়ে বলল
- একটামাএ মেয়ে আমার। এখনো লেখাপড়াই শেষ হয়নি। এখনই বিয়ে কেন দিতে চাইছ তুমি?
মিষ্টার হাছিব কঠিন কন্ঠে উত্তর দিল
- লেখাপড়া বিয়ের পরও করতে পারবে। কিন্তু ভালো ছেলে সব সময় পাওয়া যায় না। আর আমি আজকেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি না। দেখে শুনে ভালো ছেলে পেলে তবেই মেয়ের বিয়ে দিব। আর এই নিয়ে আমি কারো কোনো মতামত শুনব না।

সেদিনের পর থেকে আয়ান তিথির সামনে আসেনি। অন্য একটা গাড়ি নিয়ে এসে দূরে থেকে তাকে দেখে। আজও তেমনি স্কুল ছুটির কিছুক্ষণ আগে এসে গাড়িতে বসে থাকে সে। স্কুল ছুটির পর তিথি স্কুল থেকে বের হয়ে আশেপাশে একবার চোখ বুলায়। তারপর একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পরে। কিছুদূর রিকশা গেলে তিথি রিকশা থেকে নেমে রাস্তার পাশের দোকানে ঢুকে। ডাল, লবন আর আটা কিনে। দোকান থেকে বাসা দশ মিনিটের রাস্তা, দেখে বাসার দিকে হাটা শুরু করে সে। দুপুরের সময় রাস্তায় মানুষজনও কম। হঠাৎ একটা কালো গাড়ি এসে তার পাশে জোরে ব্রেক করে। সাথে সাথে দুইজন লোক গাড়ি থেকে নেমে তিথিকে জোর করে গাড়িতে উঠাচ্ছে দেখে আয়ান তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু আয়ান গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যাওয়ার আগেই, তিথিকে গাড়িতে তুলে গাড়ি যেতে থাকে। আয়ান আবার তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে কিডন্যাপারদের গাড়ি ফলো করতে থাকে। প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট পর কিডন্যাপারদের গাড়ি গিয়ে থামে নির্জন এলাকার ছয়তলা আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর সামনে। কিডন্যাপারা তিথিকে বিল্ডিং এর ভিতরে নিয়ে যায়। আয়ানও গাড়ি থেকে বের হয়ে লুকিয়ে বিল্ডিং এর মধ্যে ঢুকে কিডন্যাপারদের পিছু নেয়। কিডন্যাপারা তিথিকে বিল্ডিং এর পাঁচতালায় নিয়ে যায়। তিথি কিডন্যাপার মেয়ে দুটো থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে চিল্লিয়ে বললো
- কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে? ছাড়ো আমাকে।
তখনি একটা পুরুষালি কন্ঠ বললো
- আমার কাছে নিয়ে এসেছে জানেমান।
তিথি অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- মাসুদ তুমি! তুমি আমাকে কিডন্যাপ করিয়েছ? কেন?
মাসুদ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- কি করবো বলো জানেমান। প্রথম দেখাতেই যে তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। আমাকে তুমি বিয়ে করতে রাজি হচ্ছো না। আর আমি তোমাকে ছাড়া থাকতেও পারছিনা। আরও আগেই তোমাকে কিডন্যাপ করে আমার কাছে নিয়ে আসতাম। কিন্তু তোমাকে অন্য কোন লোক টাচ করবে তাও আবার কোন কিডন্যাপার তা কি হয়? তাই তো দুজন মেয়ে কিডন্যাপার খুঁজতে খুঁজতে লেট হয়ে গেল।
একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো
- নেও এগুলো পরে তাড়াতাড়ি পরে রেডি হয়ে নেও কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজি সাহেব চলে আসবে।
তিথি রাগ আর বিরক্ত নিয়ে বললো
- আমি তোমাকে বিয়ে করবো না আর কতোবার বললো।
বাকা হাসি দিয়ে মাসুদ বললো
- তোমাকে আমাকে বিয়ে করতে হবে জানেমান।
বলেই মাসুদ তিথির গাল স্পর্শ করার জন্য তিথির দিকে হাত বাড়ায়। ঠিক তখনি আয়ান মাসুদকে পিছন থেকে কাধ ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নাক বরাবর একটা গুসি দিয়ে আয়ান রাগে চিল্লিয়ে বললো
- তোর সাহস তো কম না। তুই আমার সামনে আমার তিথিকে টাচ করতে চাস, বিয়ে করতে চাস।
বলে পেটে গুসি মারে। মাসুদের সাথের লোক দুটো আয়ানকে থামাতে গেলে, আয়ানের বডিগার্ডরা তাকে বাদা দেয়। মাসুদের নাক ঠোঁট দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে তাও আয়ান থামছেনা। পুলিশ এসে আয়ানকে থামতে অনুরোধ করে বললো
- প্লিজ স্যার ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। আমরা ওকে আইনের আওতায় এনে সাজা দিবো।
আয়ান পুলিশের কথা না শুনে মাসুদকে মারতেই থাকে। তা দেখে তিথি আয়ানের কাছে গিয়ে আয়ানের হাত ধরে থামানোর চেষ্টা করে বললো
- কি করছেন থামুন, থামুন বলছি।
আয়ান থেমে পুলিশদের উদ্দেশ্য বললো
- অফিসার একে এখান থেকে নিয়ে যান।
পুলিশ অফিসার মাসুদকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠিয়ে দাড় করালেই মাসুদ কন্সটাবল থেকে পিস্তল নিয়ে চিল্লিয়ে বললো
- আয়ান।
বলেই আয়ানের বুক বরাবর গুলি করে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২১)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন