উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২০)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২১)

খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় তিথি। চোখ খুলে তাকাতেই হসপিটালের সাদা সিলিং দেখতে পায় সে। সে এখানে কেন, ভাবতেই অজ্ঞেন হওয়ার আগের কথা মনে পড়ে যায় তার। মাসুদ যখন আয়ানকে গুলি করতে যাচ্ছিল, তখন সে আয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে গুলিটা গিয়ে লাগে তিথির পিঠে আর সে জ্ঞেন হারায়। কেউ হাত ধরে রেখেছে অনুভব করতেই চোখ ঘুরিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে অতুল তার বেডের পাশে চেয়ারে বসে, তার ডান হাত নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে কপালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কান্না করেছে। কান্না তো করবেই এই বোনটা যে তার সব কিছু। তিথি নরম কন্ঠে আস্তে করে বললো
- ভাই।
তিথির নরম কন্ঠ কানে যেতেই অতুল চোখ খুলে তিথির দিকে তাকায়। তিথির সেন্স ফিরেছে দেখে তাড়াহুড়ো করে অতুল তিথির কাছে গিয়ে, তিথির মাথায় হাত দিয়ে বললো
- আপু। আপু। তুই ঠিক আছিস আপু। কোথায়ও কষ্ট হচ্ছে তোর।
তারপর কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে জোরে বললো
- ডাক্তার, নার্স।
এদিকে, তিথি গায়ে গুলি লাগার পর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার গেলে, তাড়াহুড়ো করে আয়ান তাকে এই হসপিটালে এডমিট করে। এই হসপিটালটা সব থেকে কাছে ছিল দেখেই, এখানে তিথিকে এডমিট করে সে। না হয় এমন সাধারণ একটা হসপিটালে কখনোই তার তিথিকে আনতো না সে। ডাক্তারের কেবিনে আয়ান রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো
- আপনি বলেছিলেন তিনটার দিকে জ্ঞেন ফিরে আসবে। এখন তিনটা বেজে পাঁচিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে। এখনো সেন্স ফিরেনি কেন? মনে রাখবেন আমার তিথির যদি কিছু হয় আমি এই হসপিটাল তো বন্ধ করে ছাড়বোই, সাথে আপনাদের প্রত্যেকের এমন অবস্থা করবো যাতে ভিক্ষা ছাড়া আর কোন কিছু করে না খেতে পারেন।
ডাক্তার আয়ানকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো
- স্যার, স্যার প্লিজ একটু শান্ত হোন আমরা দেখছি।
তখনি নার্স এসে বললো
- স্যার ৩০৯ নাম্বার কেবিনের পেসেন্টের জ্ঞেন ফিরেছে।
কথাটা শুনেই আয়ান দৌড়ে তিথির কেবিনে যায়। ডাক্তার আর নার্স ও পিছন পিছন যায়।

মেঘহীন পরিষ্কার আকাশ। চাঁদ উজ্জ্বলভাবে আলো দিচ্ছে। এই জ্যোৎস্নাময় রাতে একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খাচ্ছে শুভ্র। ঘুটি ঘুটি পায়ে ছাদে এসে তার ঠিক পিছনে দাঁড়ালো অনু। তার কমল কন্ঠে ডেকে উঠলো
- শুভ্র ভাইয়া।
অনুর কমল মিষ্টি কন্ঠ কানে যেতেই ঘুরে দাঁড়ায় শুভ্র। জ্যোৎস্নার কমল আলোতে দাঁড়িয়ে থাকা গোলাপি সেলোয়ার-কামিজ পরা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মেয়েটিকে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী মেয়ের খেতাব দিয়ে দেওয়া যায় নির্দ্বিধায়। শুভ্র একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ অনুর দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল
- কি? কিছু বলবি?
অনু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। শুভ্র ছাদের রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো
- বল, কি বলবি।
কথাটা বলেই শুভ্র একটা সুখটান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। অনু কিছু না বলে, মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অনু কিছু বলছে না দেখে কিছুক্ষণ পর শুভ্র আবার বললো
- কি হলো বল।
অনু মাথা তুলে শুভ্রকে বলতে যেয়েও থেকে যায়। বলতে পারে না। আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। শুভ্র হাতের সিগারেটটা ছুড়ে দূরে ফেলে দিয়ে বললো
- অনেক রাত হয়েছে আমি গেলাম। সকালে ঢাকা রওনা দেওয়া লাগবে।
কথাটা বলেই অনুর পাশ কেটে যেতে গেলেই তার শার্টের এক অংশে টান অনুভব করায় থেমে যায় সে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের দিকের শার্টের যেখানে টান অনুভব করেছিল সেখানে তাকাতেই দেখে, অনু তার শার্টের নিচের দিকের এক অংশ নিজের ডান হাতের তিন আগুল দিয়ে টেনে ধরে রেখেছে। মুখ তুলে শুভ্র অনুর দিকে তাকায়। শুভ্র তার দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। সাথে সাথে মাথা নিচু করে অনু বললো
- আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
শুভ্র তাড়া দেখিয়ে বলবো
- সেই কখন থেকে বলছিস কিছু বলবি। কিন্তু কি বলবি তা তো বলছিস না? কিছু বলার হলে তাড়াতাড়ি বল। ভোরে আবার ঢাকা যেতে হবে।
অনু শুভ্রের শার্ট ছেড়ে দিয়ে আমতা-আমতা করে বললো
- আমি ,,,,,, আমি তোমাকে ,,,,,,
শুভ্র অনুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
- তুই আমাকে? কি হলো বল?
অনু মাথা তুলে তাকিয়ে আবার আমতা-আমতা করে বললো
- আ ,,,, আমি তোমাকে ,,,,,,,,, 
আর বলতে পারলো না। পরের কথাগুলো তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। গলাতেই আটকে আছে। শ্যামারঙা মুখ লাল উঠেছে। শুভ্র খুব ভালো করেই জানে অনু ঠিক কি বলতে চাচ্ছে। সে চাচ্ছিল অনু যেন কথাটা না বলে। তাকে যেন কথাটা না শুনতে হয়। তাই সে তাড়া দেখিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু অনুর অবস্থা দেখে সে বুঝতে পারে, আজ কথাটা না বলে অনু তাকে ছাড়বে না। একটা নিশ্বাস ফেলে শুভ্র জিজ্ঞেস করলো
- ভালোবাসিস আমায়?
অনু আবাক চোখে শুভ্রের দিকে তাকালো। সে কিছু না বলতেই শুভ্র কি করে বুঝে ফেললো? কেউ কাউকে ভালোবাসলে নাকি তার চোখ দেখেই সব বুঝে ফেলে? তাহলে কি শুভ্রও তাকে ভালোবাসে? লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে যায় তার। শুভ্র আবার জিজ্ঞেস করলো
- কি হলো বল? ভালোবাসিস আমায়?
লজ্জা রাঙা মুখে এখনো সে কিছু বলতে পারছে না। লাজুক হাসি হেসে শুধু মাথা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অনু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে চোখ বন্ধ করে শুভ্র। সেকেন্ড সময় পর চোখ জোড়া খুলে বললো
- কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না।
কথাটা বলে অনুর দিকে না তাকিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়ে সে। একটা বার সে পিছনে তাকায়নি। তাকালোর প্রয়োজনও নেই। কারণ সে পিছনে না তাকিয়েই বলে দিতে পারে তার পিছনের সেই মেয়েটি এখন কাঁদচ্ছে।

ফর্সা গায়ে ইন করা নীল শার্ট সাথে কালো পেন্ট। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা। বা- হাতে একটা ঘড়ি। ক্লিন সেভ করা। চুলগুলো ডানদিকে সিঁথি করা। হাতে শীট আর বই। মুখে খুশির রেখা না থাকলেও মনে মনে বেশ খুশি নিয়ে ২০৩ নং ক্লাস রুমে ঢুকলো রিশান। ক্লাসে ঢুকেই সামনের সারিতে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগল সে। না নেই। তার পরের সারিতে চোখ বুলালো, না এটাতেও নেই। তার পরের সারি, তার পরের সারি। এভাবে প্রায় একমিনিট সময় ধরে পুরো ক্লাস রুমে খুঁজলো। কিন্তু পেল না। মুখটা ভাড় হয়ে গেল রিশানের। একটা কাজ থাকার ফলে আজ সকালে কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকে দেখা হয়নি রিশানের। ভেবেছিল ক্লাসে আজ একটু বেশিবার তার দিকে আড় চোখে তাকাবে। কিন্তু একি হায়! সে তো আজকে ক্লাসেই এলো না। কিন্তু কেন এলো না? আচ্ছা তার কোনো অসুখ-বিসুখ হয়নি তো? ঠিক তখনি ক্লাস রুমের দরজা থেকে কেউ বলে উঠলো
- মে আই কাম ইন স্যার।
রিশান তাকিয়ে দেখে তোয়া আর নিশা দরজা দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে। রিশানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো এই তো সে যাকে সে খুঁজছে। তার মায়াবিনী। যাকে একপলক দেখার জন্য সকালে ক্লাস না থাকলেও সে সকালে কলেজে চলে আসে। যার সাথে একটু বেশি কথা বলার জন্য, টানা দুইটা ক্লাস নেওয়ার পরও সে এই ক্লাসটা নিয়েছে। সে হাসি মুখে বললো
- টপার স্টুডেন্টরা লেট করলে হয়।
তোয়া হাপাতে হাপাতে বললো
- সরি স্যার। একচুয়ালি পলি ম্যামের সাথে ম্যাথের একটা প্রবলেম নিয়ে ডিসকাস করতে করতে লেট হয়ে গিয়েছে।
রিশান হালকা হেসে বললো
- ইসট ওকে। কাম ইন।
তোয়া আর নিশা ক্লাসে ঢুকে সিটে বসে পড়লো। রিশান আবার একবার তার মায়াবিনীকে দেখে পড়ানো শুরু করে দেয়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২২)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন