উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২১)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২২)

আজকে দীপ্তির ক্লাস দুপুর থেকে। তাই দুপুরের দিকে ভার্সিটিতে যায় সে। করিডরের দিয়ে হেটে ক্লাসে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে তার মুখ বেধে দেয়। হাত দিয়ে ছুটানোর চেস্টা করলে হাত বেধে দেয়। সে পিছন ঘুরে তাকানোর আগেই তার চোখ দুটোও বেধে দেয়। টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে, সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয়। পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে থাকে। দীপ্তি ছটপট করতে থাকে। মাথা দিয়ে ড্রাইভিং সিটে থাকা লোকটার গায়ে বারি দেয়। লোকটার শক্ত বাহুতে বারি লাগে। লোকটি কিছু বলে না। উল্টো লোকটার শক্ত হাতে মাথা দিয়ে বারি দেওয়ার ফলে তার মাথায় ব্যথা অনুভব করছে। কিন্তু সে তাও থামে না। আবার মাথা দিয়ে বারি দের। লোকটা এবারও কিছু বলে না। আবার বারি দেয়। লোকটা এবার ধমক দিয়ে বললো
- স্টপ ইট ষ্টুপিড।
কন্ঠটা পরিচিত মনে হচ্ছে, কিন্তু ধরতে পারছে না কে? মুখ বাধা থাকার কারনে সে জিজ্ঞেস করতে পারছেও না। তাই বার বার মাথা দিয়ে বারি দিতে থাকে। গাড়িটা এক যায়গায় থামিয়ে পাশে বসে থাকা লোকটি দীপ্তির হাতের বাধন খুলে দেয়। হাতের বাধন খুলতেই, দীপ্তি তাড়াতাড়ি প্রথমে তার মুখের আর তারপর তার হাতের চোখের বাধন খুলে। চোখের বাধন খুলে পাশে ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটাকে পিটানো উদ্দেশ্যে হাত মুঠো করে তার দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো
- শালা কিডন্যাপার এবার তোর খবর ,,,,,,,
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই পাশে বসা রোদের রাগে লাল হয়ে থাকা চোখ-মুখ দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলে সে। এর আগে কখনো সে রোদকে এতোটা রাগতে দেখেনি। রোদ দাতে দাত চেপে বললো
- হোয়াট ডিড ইউ সে!
দীপ্তি ভিতরে ভিতরে ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করে সাহসী ভাব নিয়ে বললো
- আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন কেন? দেখুন ভালোয় ভালোয় আমাকে ছেড়ে দিন, না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জোড় করে আপনাকে গণদোলাই খায়িয়ে পুলিসে দিব।
রোদ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো
- আমি তোমাকে কোথায় কিডন্যাপ করছি? আমি তো যাস্ট আমার বউকে তার শশুড় বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
দীপ্তি খুব ভালো বুঝতে পারছে যে সে, তার নিজের খোঁড়া গর্তে রোদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে গিয়ে নিজেই পড়ে গিয়েছে। দূর কেন যে এই অসভ্য লোকটার সাথে এই ধরনের ফাজলামো করতে গেল। কিন্তু রোদ জানলো কি করে? সে তো একটা রেস্টুরেন্টে বসে মিসেস রোমানার সাথে কথা বলেই ফোন বন্ধ করে দিয়েছিল। দীপ্তির ধ্যান ভাঙে রোদের কথায়। রোদ বাকা হেসে বললো
- কি ভাবছো আমি কি করে জানলাম। মনে রাখবে, তুমি যেই স্কুলের স্টুডেন্ট আমি তার হেডমাস্টার।
- কি চাই আপনার? আপনি আমাকে এভাবে এখানে ধরে নিয়ে এসেছেন কেন?
- আমি জানি আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই তুমি এই কাজটা করেছ। আমার মার সাথে দেখা করে সব কিছু স্বীকার করে সরি বলবে।
- যদি না বলি।
রোদ পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে। ভিডিও দেখে দীপ্তির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এটা শুভ্র যে সেইদিকে সিফাতকে ধমকিয়ে তার বাবাকে ফোন করিয়েছিল তার ভিডিও। রোদের দিকে তাকিয়ে দীপ্তি জিজ্ঞেস করল 
- আপনি এটা কোথা থেকে পেয়েছেন।
রোদ ফোনটা আবার পকেটে রাখতে রাখতে বললো
- সেটা তোমার না জানলেও চলবে। এখন তোমার যেটা জানা প্রয়োজন তা হল, এখন যদি তুমি আমার মা'কে সব খুলে না বল, তাহলে এই ভিডিও তোমার বাবার কাছে চলে যাবে।
- আমি রাজী। তবে মনে রাখবেন সময় আমারও আসবে।
রোদ হেসে গাড়ি স্টাট দিতে দিতে বললো
- সে যখন আসবে তখন দেখা যাবে।

অফিসে নিজের কেবিনে বসে ফাইল চেক করছিল অভি। হঠাৎ কেবিনের দরজা খোলার শব্দ তার কানে আসে। তার কেবিনে পারমিশন ছাড়া শুধুমাএ অল্প কিছুসংখ্যক স্পেশাল মানুষই ঢুকতে পারে। তাই দরজা খোলার শব্দটা কানে যেতেই অভি মাথা তুলে দরজার দিকে তাকায় তার কোন স্পেশাল মানুষটা এসেছে সেটা দেখার জন্য। মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু দীপক এসেছে। দীপককে দেখে অভি বললো
- ওহ, তুই এসেছিস।
দিপক চোখ মুখ কুঁচকে বললো
- এ কেমন কথা! এতোদিন পর বন্ধুকে দেখে কোথায় জড়িয়ে ধরে বলবি। দোস্ত এতোদিন পর এলি। তা না বলে বলছিস তুই এসেছিস!
অভি দাত কেলিয়ে বললো
- দোস্ত তোর বোনটাকে যদি সাথে করে নিয়ে আসতি। তাহলে তোর বোনকে ইম্প্রেস করার জন্য তোকে জড়িয়ে ধরে বলতাম আমার জানের দোস্ত তুই এসেছিস।
দীপক কেবিনে থাকা সোফাতে বসতে বসতে বললো
- শালা ধান্দাবাজ।
অভি আবারও দাত কেলিয়ে বলল
- একটু ভুল হয়েছে দোস্ত। শালা হবে না দুলাভাই হবে।
দীপক আড় চোখে তাকিয়ে বললো
- তোর কাছে বোন বিয়ে দিলেই না তুই দুলাভাই হবি।
অভি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
- দিতে হবে না। তুলে এনে বিয়ে করবো।
দীপক সোফাতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো
- তুই করবি তুলে এনে বিয়ে। সাত বছর হয়ে গেল। এখনো মনের কথাই জানাতে পারলি না।
অভি একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বললো
- চেয়েছিলাম তোর বোন নিজে থেকে বুঝুক। কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে সে গাধার বোন। যে কি না ঘন্টা পর ঘন্টা একটা মেয়ের সাথে থাকার পরও তার সাথে দুইটা কথা বলতে পারলো না, তার ফোন নাম্বারটা নিতে পারলো না।
দীপক সোফাতে সোজা হয়ে বসে। অভির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
- দোস্ত ওইটা মেয়ে না এটমবোম। যা ট্রেনে উঠেই একবার বাষ্ট হয়েছিল। তখন যদি আমি কিছু বলতাম নির্ঘাত আবার বাষ্ট হতো। আর আমার মতো নিরীহ ছেলেটা অকালে গণপিটুনি খেয়ে অক্কা পেত। 
অভি দীপকের দিকে তাকিয়ে  জিজ্ঞেস করল
- তা পরে সামলাতে পারবিতো এই এটমবোমাটা কে?
দীপক তার দুই হাত দিকে শার্টের কলার উঁচু করে ধরে বললো
- তুই কি মনে করিস এই দীপক আহাম্মেদকে হ্যাঁ।
অভি দাত কেলিয়ে বলল
- কি আবার, অভি রহমানের একমাত্র শালা।
দুই বন্ধু একসাথে হা হা করে হেসে দেয়।

বিকেল পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট। স্টাডি রুমে সামনে ম্যাথ বই খুলে বসে আছে দোলা। অপেক্ষা করছে অতুলের আসার। ঠিক যেমন আগের দুটো দিন করেছিল। কিন্তু অতুল আসেনি। কি হয়েছে অতুলের? আগে তো কখনো বন্ধ করেনি। কোন বিপদ আপদ হলো না তো আবার? চিন্তা হচ্ছে তার খুব। কিন্তু কি করা যায়? তার মা কালকে রাতে ফোন করেছিল। কিন্তু ফোনে ঢুকেনি। ফোন বন্ধ ছিল। খুব বড় সর কিছু হয়নি তো? বাবা মা ছাড়া ভাই বোন দুটোর এমনেই কতো কষ্ট। হঠাৎ মিসেস চৈতির স্টাডি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো
- দোলা, শোন তোমার স্যার আজকে আসবে না।
দোলা মিসেস চৈতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন মা?
প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, পরক্ষণেই ভাবে মা ভাবে তার স্যারের প্রতি বেশি কৌতুহল। তাই সে আবার বললো
- না মানে স্যার তো বন্ধ করে না। সামনে আবার এক্সাম তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
মিসেস চৈতির দুঃখিত কন্ঠে বললো
- ওর বড় বোন নাকি হসপিটালে। যেই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করা ছিল। সেই ছেলেকে রিজেক্ট করেছে দেখে সেই ছেলেই গুলি করেছে। ছেলে মেয়ে দুটোর কষ্টের শেষ নেই।
দোলার চিন্তা কমলেও কষ্ট বেড়ে যায়। দোলা মনে মনে ভাবে, কিভাবে জানা যাবে তিথি আপু কোন হসপিটালে আছে? তাহলে গিয়ে দেখে আসতে পারতো। হুম, কালকে কুহু বা তূবাকে বলবে খবর নিতে। তাই ঠিক হবে। দোলার ভাবনার মাঝেই মিসেস চৈতির আবার বললো
- আজকে নাকি তূবার আন্টিদের হসপিটালে সিফট করবে। কালকে ভাবছি একবার গিয়ে দেখে আসবো। এই সপ্তাহে অতুল পড়াতে আসতে পারবে না। পরের সপ্তাহে বেশি করে পড়িয়ে দিবে বলেছে। আমি আর না করিনি। তুই নিজে নিজে এই সপ্তাহটা পড়।
দোলা মনে মনে খুশি হয় এই ভেবে যে, সে হসপিটালের নাম জেনে গিয়েছে। আবার তার একটু মন খারাপ হয় অতুল এই সপ্তাহে পড়াতে আসতে পারবে না বলে। তবে কষ্ট পায় না। কারণ অতুলের এখন তার বোনের কাছে থাকা প্রয়োজন।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৩)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন