উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৭)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২৮)

নিজের রুমে যাচ্ছিলো দীপ্তি। তার রুমের সামনের রুমটা তূবার। যাওয়ার পথে দীপ্তি দেখে তূবার রুমের লাইট জ্বলছে। তা দেখে দাঁড়িয়ে যায় সে। হিসাব অনুযায়ী আজকে তূবার অভ্র ভাইয়াদের বাসায় থাকার কথা। তাহলে এখানে কি করছে? ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকে দীপ্তি। রুমে ঢুকে দেখে তূবা বিছানার উপর গাল ফুলিয়ে, বাম গালে বাম হাত দিয়ে বসে আছে। লম্বা চুল গুলো বাম দিকে সিঁথি করে, তার পিছনে বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ে গোলাপি রঙের টি-শার্ট আর মেরুন রঙের প্লাজু। চোখ দুটো স্থীর সামনে খোলা পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের পাতায়। অসম্ভব কিউট লাগছে এই গাল ফুলানি মেয়েটাকে। ইচ্ছে করছে ওই ফোলা ফোলা গাল দুটো টেনে আদর করে দিতে। অভ্র ভাইয়া যে কিভাবে এতো কিউট একটা মেয়েকে রিজেক্ট করে, তাই বুঝে উঠতে পারে না দীপ্তি। কেউ রুমে ঢুকছে বুঝতে পেরে, গালে হাত রেখেই ঘাড় ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকায় তূবা। দীপ্তিকে রুমে ঢুকতে দেখেই, চোখ ঘুরিয়ে আবার বইয়ের দিকে তাকায় সে। এখন তার মন খারাপ। আর মন খারাপ থাকলে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না তার। তাই মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে থাকে সে। দীপ্তি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি বেপার অভ্র ভাইয়ার তূবাসোনা আজকে এই বাসায়?

তূবা আড়চোখে দীপ্তির দিকে তাকায়। কিছু না বলে আবার চোখ ঘুরিয়ে, বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। দীপ্তি গিয়ে তূবার পাশে বসে মিষ্টি হেসে আদরে গলায় জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে তূবাসোনার? মন খারাপ কেন? মা বকেছে?

তূবা না সূচক মাথা নাড়ে। দীপ্তি আবার জিজ্ঞেস করল
- তাহলে অভ্র ভাইয়া বকেছে?

তূবা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। দীপ্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি! অভ্র ভাইয়া বকেছে? কিন্তু কেন?

তূবা গাল থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে বসে। দীপ্তির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে উত্তর দিল
- আজকে বিকেলে বিশাল ভাইয়া আমাকে বললো, উনি বাসায় বসে বসে বোর হয়ে গিয়েছে। তাই উনি পার্কে যেতে চায়। আমি না করলেও উনি শোনেন না। অনুনয় করে বলতে থাকে। তাই আমি উনাকে আর না করতে পারিনি। আমি রাজি হয়ে যাই। আমরা পার্কে ঘুরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলাম। অভ্র ভাইয়া হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরছিল। তখন উনি আমাদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে দেখে ফেলে। ধমকে আমাকে গাড়ি তুলে। গাড়িতেও অনেক বকা দেয়। বলে, আমি নাকি লেখাপড়া করিনা, সারাদিন আড্ডা দেই। তারপর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে, যতদিন বিশাল ভাইয়া ওই বাসায় থাকবে। ততোদিন যেন আমি ওবাড়ি না যাই। দীপ্তি খুশি খুশি মুখে বললো
- রিয়েসি।

তূবা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া আমাকে বকা দিয়েছে শুনে তুমি খুশি হচ্ছো!

দীপ্তি তূবার নাক টেনে জিজ্ঞেস করল
- আরে বোকা মেয়ে। ভেবে দেখ অভ্র ভাই তোকে বকা কেন দিয়েছে?

তূবা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- পার্কে গিয়েছি দেখে।

দীপ্তি মিষ্টি হেসে বললো
- উহুম। বিশাল ভাইয়া সাথে পার্কে গিয়েছিস দেখে।

তূবা অবাক হয়ে বললো
- তো!

- তো আমাদের ব্রিলিয়ান্ট অভ্র ভাইয়া, তোর সাথে বিশাল ভাইয়াকে দেখে জেলাস হয়েছে।

- জেলাস! তার মানে ,,,,,,,

তূবা আর বলতে পারলো না। অভ্র তাকে ভালোবাসে। কথাটা মাথায় আসতেই তাকে খুশির সাথে ঘিরে ধরেছে একরাশ লজ্জা। লজ্জায় ফর্সা গাল আর নাক লাল হয়ে গিয়েছে। দীপ্তি তূবার আরও একটু কাছে বসে বললো
- তার মানে অভ্র ভাইয়া তার তূবাসোনাকে ভালবাসে।

দীপ্তির কথায় তূবার লজ্জা যেন হাজার গুণ বেড়ে যায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে সে। দীপ্তি তূবার গালে হাত রেখে বলল
- ইসস এতটুকুতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমার বনুটা।

- আপুনি।

বলেই তূবা লজ্জা লুকানোর জন্য দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকায়। দীপ্তিও মিষ্টি হেসে নিজের আদরের ছোট বোনের মাথায় সস্নেহে হাত বুলায়।

ভার্সিটির গেইট দিকে কথা বলতে বলতে বের হয় দুই বান্ধবী তোয়া আর নিশা। রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ানোর দুই তিন সেকেন্ডে সময় পর একটা গাড়ি এসে থামে তাদের পাশে। গাড়ি থেকে বের হয়ে অভি নিশাকে জিজ্ঞেস করল
- কেমন আছো নিশা?

নিশা হাসি মুখে বললো
- ভালো। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?

অভিও হাসি মুখে উত্তর দিল
- ভালো।

নিশা তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- আচ্ছা আমি যাই।

তোয়া নিশাকে বললো
- চল তোকে নামিয়ে দিয়ে যাই।

অভিও তোয়ার কথায় সায় দিয়ে বললো
- হ্যাঁ, চল।

নিশা স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- না, আবার উল্টো রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। দশ মিনিটের রাস্তা। আমি একটা রিকশা দিয়েই চলে যেতে পারবো। আচ্ছা আসি তাহলে আপু ওয়েট করছে।

তোয়া আর বাধা না দিয়ে বললো
- আচ্ছা। সাবধানে যাস।
- আচ্ছা।

বলেই নিশা একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ে। অভি গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটের পাশের দরজা খুলে দিয়ে বললো
- চলুন মহারানী।

তোয়া মিষ্টি হেসে গাড়িতে উঠে। অভি তোয়ার পাশে দরজা, লাগিয়ে গাড়িতে উঠে। গাড়ি স্টার্ট দেয়। বেশ কিছু সময় পর তোয়া খেয়াল করে, গাড়িটা তারা প্রতিবার যেই রেস্টুরেন্টের যায় সেই রেস্টুরেন্টের দিকে না গিয়ে, অন্যদিকে যাচ্ছে। তোয়া অভিকে প্রশ্ন করল
- এদিকে কোথায় যাচ্ছি আমরা?

অভি ড্রাইভ করতে করতে উত্তর দিল
- নতুন একটা কফি হাউজ হয়েছে সেখানে।

- ওহ।

তোয়া আর কোন প্রশ্ন করল না। মিনিট পনেরো পর গাড়ি থামে। তোয়া গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। সামনে তাকিয়ে সামনে থাকা কফি হাউজের নামটা পরে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় তার। সামনের কফিশপের দরজার উপর বড় বড় ইংলিশ লেটার দিয়ে লেখা -

" হ্যাপি কাপল কফি"

গাড়ি পার্ক করে এসে অভি বললো
- চল।

তোয়া চোখ বড় করেই অভির দিকে তাকিয়ে বললো
- এখানে যাবো! কিন্তু এটা তো কাপলদের জন্য।

তোয়ার বড় করে রাখা চোখ দেখে, অভি একটু ভয় পেয়ে যায়। মেয়েটা আবার রেগে যাবে না তো। যদিও তোয়াকে সে আজ পর্যন্ত কখনো রাগতে দেখেনি। কিন্তু দীপকের কাছে শুনেছে, তোয়া একবার যার উপর রাগ করে। তার খবর আছে। আমতা-আমতা করে বললো
- আসলে অনেকের কাছে শুনেছি, এই কফি হাউজের কফি না কি অনেক ভালো। অনেকদিনের ইচ্ছে এখানে আসার। কিন্তু একা আসলে কেমন বেচারা বেচারা দেখায়। আর দীপকের সাথেও তো এসব যায়গায় আসা যায় না। মানুষ কি না কি ভেবে বসে। তাই তোমাকে নিয়ে এলাম।

অভির গোবেচারা মুখ দেখে তোয়ার খুব হাসি পায়। কিন্তু সে না হেসে স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- আচ্ছা, চল।

আহাম্মেদ ভিলার বিশাল বড় ড্রয়িং রুমের সোফালে বসে আছে মিষ্টার আফরান, মিসেস সোনালী আর তাদের চার সন্তান দীপক, দীপ্তি, তোয়া আর তূবা। খাওয়ার সময় মিষ্টার আফরান কথা বলা পছন্দ করেনা। তাই খাওয়া শেষ হলে তিনি সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডাকে। সবাইকে এখন এখানে ডাকার কারণ দীপ্তি আর মিসেস সোনালী কিছুটা অনুমান করতে পারলেও, বাকিরা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাই সবাই কৌতুহলী হয়ে বসে আছে। মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- আমার বিজনেস ফ্রেন্ড মিষ্টার সালমানকে তো তোমরা চিন।

দীপক স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- হ্যাঁ, আংকেলকে তো খুব ভালো করেই চিনি।

মিষ্টার আফরান কন্ঠে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো
- তার ছেলে রোদের জন্য দীপ্তিকে পছন্দ করেছে। ছেলে খুব ভালো, তাই আমি রাজী হয়ে গিয়েছি।
দীপক, তোয়া, তূবা অবাক চোখে দীপ্তির দিকে তাকায়। দীপ্তি সেদিকে তাকায় না। সে সামনে স্থীর দৃষ্টি রেখেই মনে মনে বলে, "কতো ভালো তা আমি জানি।"

মিষ্টার আফরান পুনরায় বললো
- এই শুক্রবার রোদের সাথে এংগেজমেন্ট।

এবার সবাই অবাক হয়ে মিষ্টার আফরানের দিকে তাকায়। দীপক অবাক হয়ে বললো
- আর মাএ দু'দিন পর! এতো তাড়াতাড়ি! সবাই মিলে আরও একটু সময় নিয়ে খোঁজ খবর নিলে ভালো হতোনা।

মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে বললো
- তুমি কি বলতে চাচ্ছো, আমি ছেলের সম্পর্কে কিছু না জেনেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি!

দীপক নম্র কন্ঠে বললো
- না বাবা আমি তা বলছি না। শুনেছি ছেলেটা বিদেশে বড় হয়েছে তাই।

মিষ্টার আফরান বিরক্ত নিয়ে বললো
- দেশে বড় হয়ে তোমরা সোনার খনি হয়ে যাওনি। 

দীপক মুখটা কালো করে চুপ হয়ে যায়। মিসেস সোনালী ছেলের পক্ষ নিয়ে বললো
- আহা, ছেলেটা তো ভুল কিছু বলেনি।

মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- বিগত পাঁচ ছয় মাস ধরে আমি রোদের সম্পর্কে সব খবরই নিয়েছি। রোদ বিদেশে একা একা থাকেনি। মা বোনের সাথে থেকেছে। আর সালমানও কিছুদিন পর পর যেত।

মিসেস সোনালী চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু অনুষ্ঠানের এতো আয়োজন এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে হবে?

মিষ্টার আফরান উত্তর দিল
- অনুষ্ঠান ছোট করে হবে। যাদের না বললেই নয়, শুধু তারা থাকবে। সময় আমি দিবো না। তোমার মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে হয় বিয়ে ভেঙেছে, না হয় ছেলেটাকেই গুম করে দিয়েছে।

বলেই সোফা থেকে উঠে গটগট করে নিজের রুমের দিকে চলে যায় তিনি।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৯)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন