উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৮)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২৯)
ব্যস্ততার সাথে একটার পর একটা ফাইল চেক করছে দীপক। কেউ দরজায় নক করলে ফাইল দেখতে দেখতেই দীপক বলল
- কাম ইন।
নীলা দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকে হাতের ফাইলটা দীপকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- স্যার ফাইটা।
দীপক ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে নীলার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে নিলার হাত থেকে ফাইলটা নিল। তারপর হাতের ঘড়িটার দিকে একনজর তাকিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বললো
- চল।
নীলা কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- স্যার এখনই তো লাঞ্চ টাইম শুরু হবে। এখন কোথায় যাবো?
দীপকের সোজাসাপ্টা উত্তর
- রেস্টুরেন্টে।
নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- রেস্টুরেন্টে কেন? আজকে রেস্টুরেন্টে কোন মিটিং আছে? আমি তো জানি না।
দীপক কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- রেস্টুরেন্টে কি মানুষ শুধু মিটিং করতেই যায়!
নীলা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কি করতে যাবেন?
- সামনে একটা নিউ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হয়েছে। আজকে দুইজনে ওখানে লাঞ্চ করবো।
- সরি স্যার আমি যেতে পারবো না।
- কেন?
নীলা বিরক্ত হয়ে বললো
- দেখুন আমি আপনার পিএ। ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড না যে আমি আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে যাবো।
দীপক মিষ্টি হেসে ক্ষীণ সরে বললো
- হয়ে যাও না। না করেছে কে।
ক্ষীণ কন্ঠে বললেও কথাটা নীলা স্পষ্ট শুনতে পায়। কথাটা শুনে নীলা রেগে বড় বড় চোখ করে দীপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কী বলেলন?
দীপক ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো
- না মানে ফ্রেন্ড হতে বলছিলাম আর কি? আমরা তো ফ্রেন্ড হতেই পারি তাই না।
- থ্যাংকস ফর দা ওফার। বাট আমার অনেকগুলো ফ্রেন্ড আছে আর লাগবে না। এখন আমি আসি স্যার, না হয় লাঞ্চ টাইম শেষ হয়ে যাবে। আর আমাকে অভক্ত থাকতে হবে।
বলেই নীলা কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আর দীপক মুখ ভাড় করে চেয়ারে বসে পরে।
গলির রাস্তায় পুরি-সিঙ্গারা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে শুভ্র আর চন্দ্রা। এটা কোন দামী রেস্টুরেন্টে না। সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এখানে বেশি আসে। রেস্টুরেন্টেটা ঝকঝকে তকতকে না হলেও মোটামুটি পরিষ্কার। কাঠের চেয়ার, কাঠের টেবিলের উপর আবার লালের মধ্যে বিভিন্ন রঙের ফুলের রেকসিন বিছান। তার উপর একটা প্লাস্টিকের জগ আর তিনটে গ্লাস রাখা। একবারে কর্ণারের একটা টেবিলে যায় শুভ্র আর চন্দ্রা। একটা কাঠের চেয়ার টেনে বসতে বসতে শুভ্র, ওয়েটারের কাজ করা ছোট ছেলেটাকে ডাকে
- এই পিচ্ছি।
তের চোদ্দ বছরের ছোট ছেলেটা এসে শুভ্রের পাশে দাড়ালে শুভ্র বললো
- দশটা সিঙ্গারা আর পাঁচটা সমুসা নিয়ে আয়।
ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে তা দিয়ে চেয়ার মুছতে মুছতে চন্দ্রা বললো
- প্লেট টেট ভালো করে ধুয়ে নিয়ে আসবে কেমন।
আসলে চন্দ্রা একটু বেশি পরিষ্কার। শুভ্র আর দীপ্তি যেখানে সেখানে বসে, যেটা সেটা খেতে পারলেও চন্দ্রা পারে না। ছেলেটা মাথা ঝুলিয়ে চলে যায়। শুভ্র চন্দ্রার এসব দেখে অবস্থ তাই সেদিকে বিশেষ খেয়াল না দিয়ে বললো
- তোর ভ্যা ভ্যা করা ভেড়া দেশে আছে।
চেয়ারে বসে চন্দ্রা ভ্রু কুঁচকে বললো
- দেশেই তো থাকবে।
- উনি বিদেশে গিয়েছিল।
- কবে?
জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢালতে ঢালতে শুভ্র বললো
- তোর থাপ্পড় খাওয়ার পরেরদিন।
চন্দ্রা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন গিয়েছে?
- ওনার আন্ডারে কাজ করা ছেলেদের মধ্যে কিছু ছেলে ইলিগ্যাল কাজের সাথে যুক্ত ছিল। যার ফলে পার্টির নাম বদনাম হচ্ছিল। তাই উনি সুইজারল্যান্ড গিয়ে দুদিন পরে দেশে এসে পড়ে। এতোদিন ছদ্মবেশে ঘুরে ঘুরে তাদের ধরেছেন।
তখনি বাচ্চা ছেলেটা দুই প্লেটে দশটা সিঙ্গারা আর পাঁচটা সমুসা দিয়ে যায়। শুভ্র যেটা সামনে পেয়েছে সেটাই খপ করে মুখে পুরে দেয়। কিন্তু চন্দ্রা প্লেট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবগুলো সিঙ্গারা চেক করে, যেটা সব থেকে পরিষ্কার মনে হয়েছে সেটা হাতে তুলে নেয়। সেটা দেখে শুভ্র কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনি দীপ্তি এসে চন্দ্রার পাশের চেয়ারে ধপাস করে বসে। দীপ্তিকে এভাবে বসতে দেখে জিজ্ঞেস করল
- কিরে কি হয়েছে তোর?
দীপ্তি চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- কিছু হয়নি তবে হবে।
এবার শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি হবে?
দীপ্তি সোজাসাপ্টা উত্তর দিল
- বিয়ে।
শুভ্র আর চন্দ্রা একসাথে বললো
- হোয়াট!
দীপ্তি একটা সিঙ্গারা নিয়ে তা চোখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো
- তোদের বলেছিনা কালকে রোদের সাথে আমার এংগেজমেন্ট।
চন্দ্রা স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- হুম্ম তা ভাঙার জন্য তো তুই রোদ স্যারের কিছু ফেইক ভিডিও বানিয়েছিস।
দীপ্তি সিঙ্গারা খেতে খেতে বললো
- ওইসব ভিডিও দিয়ে কাজ হবে না। বাবা তার ক্লাসমেট সি.অই.ডি আফিসার বসীর সরকারকে দিয়ে পাঁচ ছয় মাস ধরে রোদ স্যারের সব খোঁজ খবর নিয়েছে। এখন আমি কিছু বললে বা দেখালে বিশ্বাস করবে না।
শুভ্র দুটো সিঙ্গারা খাওয়ার পর, সমসা নিতে নিতে বললো
- তাহলে ফেইক মেইল কর।
দীপ্তি খেতে খেতে বললো
- কাজ হবে না। বাবা অংকেলকে দিয়ে চেক করবে।
চন্দ্রা কোন সমসাটা সব থেকে বেশি ভালো তা চেক করতে করতে, চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- তাহলে কি করবি?
দীপ্তি স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- কি আর করবো, পালাবো।
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো
- হ্যাঁ!
শুভ্র চোখ দুটো ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- তুই সিরিয়াস?
দীপ্তি শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো
- হুম। তবে তোরা কিন্তু সেদিন বাসায় থাকবি, আমার সাথে যাবি না।
চন্দ্রা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন?
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল
- তোর প্ল্যানটা কি বল তো।
দীপ্তি জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এক ঢোক পানি খেয়ে বললো
- আমি ঢাকা টু কক্সবাজারের তিনটা টিকিট কেটেছি। আমার ফ্লাইট আগে। তোরা বাবার আশেপাশেই থাকবি। আমি প্ল্যানে উঠে ফোন করলে তোরা এয়ারপোর্টে চলে আসবি। আমার এক ঘন্টা পরের ফ্লাইটে তোরা কক্সবাজার চলে যাবি। তারপর সেখানে পার্টি হবে।
ফাঁকা রাস্তায় পার্ক করা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। তার দৃষ্টি স্থীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিথির দিকে। ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের জামদানী শাড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কানে ছোট ঝুমকো কানের দুল, দু'হাতে দুই মুঠো নীল রঙের কাচের চুড়ি, কোমরের নিচ পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো ডান কাধ দিয়ে সামনে এনে রাখা। স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে পশ্চিম আকাশে ঢোলে পড়া সূর্যটার দিকে। আয়ান মনে মনে কল্পনা করতে চেস্টা করে, তিথির এই সরু লম্বা নাকটায় ছোট নাক ফুল পড়লে তাকে দেখতে কেমন লাগবে। তার ভাবনার মাঝেই তিথি অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- এই সময়ের আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?
আয়ান তিথির দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখেই বললো
- হুম।
তিথি আকাশের দিকে তাকিয়েই পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- দেখে মনে হয় কোন চিত্রকর তার রঙ তুলির ছোঁয়া দিয়ে এঁকেছে। তাই না?
আয়ান তিথির দিকে তাকিয়েই পুনরায় উত্তর দিল
- হুম।
তিথি আয়ানের মুখে শুধু হুম হুম শব্দ শুনে আয়ানের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- হুম কি?
আয়ান মিষ্টি হেসে উত্তর দিল
- আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা খুব সুন্দর।
তিথি চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- আমি কি বলছি তা আপনি শুনেননি তাই না?
আয়ান ঠোঁটের হাসিটা আরও একটু প্রসারিত করে উত্তর দিল
- খুব শুনেছি। আমার প্রিয়সীর কথা কি আমি না শুনে থাকতে পারি। তবে সূর্য ডুবাটা দেখিনি। যেখানে নিজেই ডুবে আছি, সেখানে সূর্যের ডুবা আর কি দেখবো।
তিথি হালকা হেসে বললো
- আপনিও না।
আয়ান মুখটা বেজার করে বললো
- এই আপনি থেকে তুমিতে আসবে, প্লিজ। তোমার মুখে আপনি আপনি শুনলে না, নিজেকে তোমার দুরসম্পর্কের প্রেমিক মনে হয়।
তিথি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- দুরসম্পর্কের প্রেমিক আবার কি?
আয়ান উত্তর দিল
- প্রেমিক-প্রমিকা হওয়ার পর যাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক, তাদের বলে দুরসম্পর্কের প্রেমিক।
আয়ানের উত্তর শুনে তিথি হাসে। আয়ান আবার বললো
- এই তুমি বল না প্লিজ।
- তুমি।
- এভাবে শুধু তুমি না, একটা সেন্টেন্স বলে বল।
তিথি মাথা নিচু করে লাজুক কন্ঠে বললো
- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কয়েক সেকেন্ড সময় পার হয়ে গিয়েছে, আয়ান কিছু বলছে না। তাই তিথি মাথা তুলে আয়ানের দিকে তাকায়। আয়ান স্থীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি তাকানোর কিছুসময় পরই, আয়ান জোরে চিল্লিয়ে বললো
- আই লাভ ইউ তিথিইইইইইই। আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি।
তিথির চোখ দুটো ছলছল আর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩০)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন