উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৬)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২৭)

নিজের কেবিনে ঢুকে বসতে না বসতেই, আবারও নীলার কেভিনে থাকা টেলিফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে না দেখেই, নীলা বুঝতে পারে কে কল করেছে। কলটা রিসিভ না করে, বিরক্ত নিয়ে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে সে। কয়েক সেকেন্ড পর টেলিফোনের রিংটোন টা বন্ধ হয়ে যায়। দুই সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বিরক্তিকর শব্দ করে বেজে উঠলো টেলিফোনটা। এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না সে। রাগে কটমট করে ঠাস করে দুই হাতের তালু টেবিলের উপর রেখে, উঠে দাঁড়ায় সে। ফোনটা রিসিভ না করে কেবিন  থেকে বের হয়ে যায় সে। কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা তার বসের কেবিনের দরজায় গিয়ে নক করে। দীপক তখন টেলিফোনে নীলাকে কল করছিল। কেউ দরজায় নক করাতে বিরক্ত নিয়ে বললো
- কাম ইন।

নীলা রাগে কটমট করতে করতে কেবিনের ভিতরে ঢুকে। রাগে চোখ-মুখ শক্ত করে দাতে দাত চেপে জিজ্ঞেস করল
- কিছু লাগবে স্যার?

দীপক চোখ তুলে নীলার দিকে তাকায়। কারনে-অকারণে বারবার ডাকাতে নীলা যে তার উপর রেগে বোম হয়ে আছে, তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে সে। কিন্তু কি করার, মন যে শুধু তাকে দেখতে চায়। ব্যস্ততা দেখিয়ে উত্তর দিল
- কফি নিয়ে এসো।

নীলা অবাক হয়ে বললো
- কফি!

দীপক স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- হ্যাঁ, কফি।

নীলা নিজের ডান হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে, টেবিলের উপর কিছুক্ষণ আগে তার দিয়ে যাওয়া সাদা রঙের সিরামিকের মগ ভর্তি কফি দেখিয়ে বললো
- কিছুক্ষণ আগে দিয়ে যাওয়া কফিটা এখনো
 আপনি খাননি স্যার।

দীপক কফির মগটা তুলে হাতে নেয়। ভালো করে ধরে অনুভব করে কাপটা ঠান্ডা হয়েছে কি না? যেই মেয়ে রে বাবা! কফি গরম থাকলে তার মাথায় ঢালবে এখন। না, কফিটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। তার এতক্ষণ কফিকে ফাইল দিয়ে বাতাস খাওয়ানো সার্থক হয়েছে। নীলার দিকে কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো
- ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। এটা ফেলে আর এক মগ বানিয়ে নিয়ে এসো।

নীলা চরম বিরক্ত নিয়ে কফির মগটা দীপকের হাত থেকে নিয়ে গটগট করে চলে যায়।

দোলার স্টাডি রুমে বসে আছে অতুল। আজকেই প্রথম এমন হয়েছে যে, অতুল দোলার আগে এই রুমে এসে বসে আছে আর দোলা আসেনি। চিন্তা হচ্ছে অতুলের, মেয়েটা কি বেশি অসুস্থ? পড়তে পারবে না? কিন্তু তার মা তো বললো পড়বে। সেদিন তো সে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। ১০৪° জ্বরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। সে না ধরলে হয়তো ফ্লোরেই পড়ে যেত? কিছু অপরাধবোধও হচ্ছে তার। সেদিন মেয়েটা অসুস্থতার জন্য ম্যাথ ভুল করেছিল। আর সে না বুঝেই মেয়েটাকে বকলো। অবশ্য তার দোষ কোথায়, সে তো আর জানতো না। সেদিন দোলাকে ডেকেও যখন কাজ হলো না। তখন তাকে ডিভানে শুয়িয়ে দিয়ে, নিচে গিয়ে তার মাকে ডেকে নিয়ে আসে। পরে তার মা'ই ফোন করে ডাক্তার ডাকে। ডাক্তারের সাথেই সে বের হয়ে চলে যায়। সারারাত বোনের পাশে বলে দোলার চিন্তা করেছে। মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে না কি? মেয়েটার জ্বর কমেছে না কি? ভোরের দিকে তো স্বপ্নও দেখেছে, মেয়েটা নীল একটা শাড়ি পড়ে খালি পায়ে সবুজ ঘাসে উপর হাটছে আর খিলখিল করে হাসছে। তারপর ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সকালে মিসেস রোমানাকে ফোন করে খবর নিয়েছিল, দোলা কেমন আছে আর আজকে পড়তে পারবে কি না? মিসেস রোমানা বলেছে, এখন ভালো আছে আর আজকে পড়তে পারবে। অতুলকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দোলা রুমে প্রবেশ করে। ফর্সা গায়ে কাঁচা হলুদ রঙের টপসের উপর ধূসর রঙের একটা চাদর পেঁচানো। সাথে ধূসর রঙের লং স্কার্ট। হাস্য উজ্জ্বল মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। দু'দিনেই চোখ মুখ শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। দেখে খুব মায়া হচ্ছে তার। দোলা এসে নিজের চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে, ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।

অতুল গম্ভীর কন্ঠে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। বস।

দোলা চেয়ারে বসে পড়লো। দোলার শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে অতুল শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- এখন কেমন আছো?

দোলা মাথা নিচু করে শান্ত কন্ঠে বললো
- ভালো।

অতুল টেবিলের উপর থেকে ম্যাথ খাতা বই নিতে নিতে বললো
- আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিব। তুমি যেহেতু অসুস্থ।

দোলা মাথা তুলে অতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে, মলিন মুখে অসহায় কন্ঠে বললো
- যখন হসপিটালের আপুকে দেখতে গেলাম, তখন আপনি হসপিটালে ছিলেন না। এক সপ্তাহ আপনার দেখা পাইনি। সেদিন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায়, আপনার পাশে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। আজও তাড়াতাড়ি চলে যাবেন বলছেন।

অতুল দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে, শান্ত কন্ঠে বললো
- দোলা তুমি আমার সম্পর্কে কিছু জানো না। আমি তোমার মতো ধনীর দুলাল না। আমার বাবা-মা ,,,,

অতুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই দোলা বললো
- আমি আপনার সম্পর্কে সব কিছু জানি। আপনার বাবা-মা কথা, তিথি আপুর কথা। এমনকি প্রথম যেদিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল। সেদিন আপনি কেন আপনার এতো মন খারাপ ছিল, তাও আমি জানি।

- তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। তোমার সাথে আমার মিলে না।

দোলা করুণ কন্ঠে বললো
- আমি ধনী পরিবারের মেয়ে বলে আমাকে দূরে ঠেলে দিবেন, স্যার। আমার বাবার টাকা আছে, এতে আমার কি দোষ বলুন।

- তোমার ফ্যামিলি আমাকে কখনো মেনে নিবে না।

- আচ্ছা আমি যদি সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে নিঃস্ব হয়ে যাই। তখন আপনি আমাকে মেনে নিবেন?

- কেন আমাকে চেয়ে, শুধু শুধু নিজের কষ্ট ডেকে আনছো।

- পৃথিবীর সবথেকে জটিল রোগ কি জানেন?

প্রশ্ন করে অতুলের উত্তরের অপেক্ষা না করে, দোলা নিজেই উত্তর দিল
- ভালোবাসা। আর আমি সেই রোগে আক্রান্ত এক রোগী। আর তার মেডিসিন হচ্ছেন আপনি।

- অল্প বয়সের আবেগ কিন্তু ধ্বংস বয়ে আনে।

- যদি আপনার আবেগে পড়তাম তাহলে, প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছিলাম। সেদিন থেকেই আপনার পিছনে ঘুর ঘুর করতাম।

অতুল আর কথা বাড়ায় না। ম্যাথ খাতাটা দোলার দিকে ঠেলে দিয়ে বললো
- আগের ম্যাথগুলো সব দেখ। কোনটায় কোন সমস্যা হলে বল। আমি আবার বুঝিয়ে দিব।

দোলা মনোযোগ দিয়ে ম্যাথ দেখতে থাকে। অতুল কিছুক্ষণ দোলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর দোলার ম্যাথ হোমওয়ার্ক খাতাটা নিয়ে হোমওয়ার্কগুলো চেক করতে থাকে।

অভ্রদের বাগানে তূবার জন্য অভ্রের বসানো দোলনায়  বসে পড়ছে তূবা। তখনি, বিশাল এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো
- তূবা, চল পার্কে থেকে ঘুরে আসি।

বই থেকে মুখ তুলে, বিশানের দিকে তাকিয়ে তূবা বললো
- এখন তো আমি পড়ছি ভাইয়া।

বিশাল অনুনয় করে বললো
- বেশিক্ষণ থাকবো না। একটু ঘুরেই চলে আসবো। আমি না বাসায় বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গিয়েছি। প্লিজ চল না।

বিশাল এমন করে বলছে দেখে তূবা আর না করতে পারলো না। তাছাড়া অভ্রের ফুফুগুলো খুব পাজী, ঝগড়াটে। যদি তার ছেলের অনুরোধ না রাখার অপরাধে, আবার এসে তার খালামনিকে কথা শোনায়। তাই সে বিশালকে বললো
- আচ্ছা তুমি দাঁড়াও। আমি বই খাতাগুলো রুমে রেখে খালামনিকে বলে আসছি।

বিশাল মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- আচ্ছা।

তূবা রুমে বই খাতা রেখে, মিসেস মিতালীকে বলে মিনিট খানেক পর বিশালের কাছে এসে বললো
- চল, বিশাল ভাইয়া।

বিশাল তূবার দিকে তাকিয়ে সামনে হাটা দেয়। গেইট দিয়ে বের হয়ে বিশাল তূবাকে জিজ্ঞেস করল
- রিকশা নিব?

তূবা উত্তর দিল
- এই দশ পনেরো মিনিটের রাস্তা। চল আস্তে আস্তে হেটে হেটে ঘুরে আসি।

বিশাল সায় দিয়ে হাটা লাগালো। বিকেলের মিষ্টি রোদ গায়ে লাগিয়ে হাটছে তারা। পাশাপাশি হাটতে হাটতে দুজনে নানান কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। আর এসবের মাঝে চলছে বিশালের তূবাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা। মেয়েটাকে কিশোর বয়স থেকে ভালোবাসে সে। তখন ছোট ছিল ভেবে কিছু বলেনি সে। তারপর তো সে কানাডায় চলে গিয়েছে। কানাডা থেকে এসেই সে নিজের মনের কথা তূবাকে বলবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু সামনে তূবার এইচএসি এক্সাম। তাই ঠিক করে এক্সাম শেষ হলেই তূবাকে তার মনের কথা খুলে বলবে। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের বউ করে নিবে তাকে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৮)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন