উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৯)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩০)
আজ দীপ্তি আর রোদের এংগেজমেন্ট। আহাম্মেদ ভিলাতে বাগানেই ছোট করে হবে দীপ্তি আর রোদের এংগেজমেন্ট। বাগানের মধ্যে খুব সুন্দর করে স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের সামনে সুসজ্জিত চেয়ারে বসে গল্প করছে তূবা, দোলা, কুহু আর কিরণ। কাব্যদের সবাইকে তূবা দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু কাব্য আসেনি। এক্সামের জন্য সে এখন হলে থাকে, বাসায়ই থাকে না। এই জন্য এক্সামকে সে দিনে চব্বিশ ঘন্টায় বিয়াল্লিশবার বকে। তাদের থেকে কিছুটা দূরে একটা বই নিয়ে কথা বলছে তোয়া আর নিশা। তাদের থেকে আরও কিছু দূর ফুড সাইডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে আর তার সাথে কথা বলতে আসা মেয়েদের সাথে টুকটাক কথা বলছে শুভ্র। দীপক আর অভি কোথায় কি লাগবে তার খেয়াল রাখছে। দীপকের নীলাকে আনার ইচ্ছে থাকলেও, অফিসের কিছু ইম্পর্টেন্ট কাজ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। অভ্র একটা ইমারজেন্সি কেসে হসপিটালের আছে। তার আসতে আরও ঘন্টা খানিক সময় লাগবে। বড় সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর রোদের পক্ষের লোকেরা এলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, রোদের বাড়ির সবাই এলেও এখনো রোদ আসেনি। বিষয়টা খেয়াল করতেই শুভ্রর ভ্রু কুঁচকে যায়। সেকেন্ডে সময়ের ব্যবধানে বাগানে এলো মিসেস সোনালী, মিসেস মিতালী, মিসেস আফিয়া আর চন্দ্রা। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। মিসেস সোনালী গিয়ে মিষ্টার আফরানকে সাইডে ডেকে তার কানে কানে কিছু একটা বললো। কথাটা মিসেস সোনালী মিষ্টার আফরানকে ভয়ে ভয়ে বললেও, কথাটা শোনার পর মিষ্টার আফরানের মুখে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। সে গিয়ে খুশ মেজাজে মিষ্টার সালমানের সাথে গল্প করতে লাগলো। এই বিষয়টা খেয়াল করার পর শুভ্রের কপালের ভাঁজ আরও গভীর হলো। চন্দ্রা এসে শুভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে নিচু সরে বললো
- প্ল্যান সাকসেসফুল।
মিষ্টার আফরানের দিকে তাকিয়ে থেকেই শুভ্র বললো
- না।
চন্দ্রা আবাক শুভ্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- মানে?
শুভ্র চন্দ্রা দিকে একনজর তাকিয়ে, পুনরায় মিষ্টার আফরানের দিকে তাকিয়ে বললো
- আংকেলকে দেখ। মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে শোনার পরও ওনার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। আর রোদ স্যার আসেনি, তা নিয়েও কোন মাথা ব্যথা নেই। আমি শিওর এর মধ্যে কোন রহস্য আছে। উনি নিশ্চয়ই ডাবল গেইম খেলছে। তা না হলে এখনো এতো শান্ত থাকার কথা না।
তারপর চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো
- তুই তাড়াতাড়ি তিরিং বিরিংকে ফোন লাগা, আমি রোদ স্যারের লোকেশন চেক করছি।
হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চার তালায় উঠে আহান। ফোর বি ফ্লাটের সামনে আসতেই একজন মহিলার কন্ঠ কানে ভেসে আসলো তার। মহিলাটি বাসার ভিতর থেকে জোড়ে জোড়ে বলছে
- দেখ এটা ভদ্রলোকের বাড়ি, এখানে এসব চলবে না।
এগিয়ে গিয়ে খোলা দরজায় দাড়াতেই আহান দেখতে পায়, ড্রয়িংরুমে তিথি আর অতুলের সামনে দুজন পুরুষ আর তিনজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। অতুল মহিলাটির দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি বলতে চাইছেন আপনারা?
একজন পুরুষ বললো
- বুঝতে পারছো না তুমি।
অতুল বিরক্ত নিয়ে বললো
- বুঝতে পারছি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি।
প্রথম মহিলাটি আবার বললো
- বলছি তোমার বোনের নাগর যে সকাল নেই, দুপুর নেই, রাত নেই এসে উঠছে সেই তার কথা বলছি।
অন্য পুরুষটি বললো
- তোমার বাবা-মা ভালো মানুষ ছিল। বাবা-মা বেচে থাকতে তোমাদেরও ভালোই দেখেছিলাম। তাই এখানে থাকতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো মনে হয় ভুল করেছি।
অতুল রেগে কিছু বলাতে যাবে, তখনি তিথি অতুলের হাত ধরে ইশারায় তাকে কিছু বলতে না করে নিজে শান্ত কন্ঠে বললো
- দেখুন উনি একজন ভালো মানুষ। ওনার সম্পর্কে এমন আজেবাজে কথা বলবেন না। আর আমরা এখানে টাকা দিয়ে থাকি, ফ্রিতে থাকি না।
অন্য একজন মহিলা সুর টেনে বললো
- দেখ দেখ নাগর পেয়ে মেয়ের সাহস কতো বেড়ে গিয়েছে।
অতুল রাগী কন্ঠে বললো
- চুপ আর একটা আজেবাজে কথা যদি বলেন তাহলে ,,,,,,
অতুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই অন্য পুরুষটি রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কি করবে হ্যাঁ?
এই লোকের কথার ধরন দেখে আহান বুঝলো যে উনিই বাসার মালিক। বাসার ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে আহান তাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- আপনার এই ছয় তলা বাড়ি আমি ছয় মিনিটে গুড়িয়ে দিব।
বাড়ি মালিক পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বললো
- কেরে তুই আমার বাড়ি ,,,,,
তার পিছনে আহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবাক হয়ে বললো
- স্যার আপনি!
স্বামীর এমন ভীত মুখ দেখে প্রথম মহিলা মানে বাড়ির মালকিন স্বামীকে জিজ্ঞেস করল
- কে উনি?
বাড়ির মালিক ভীত কন্ঠে উত্তর দিল
- উনি মন্ত্রী আব্রাহাম খানের ছোট ছেলে আহান খান।
আহান এবার বললো
- আর আপনারা এতোক্ষণ যাকে নাগর বলছিল তার পরিচয়টাও যেনে নিন? সে হচ্ছে আমার বড় ভাই। মন্ত্রী আব্রাহাম খানের বড় ছেলে আয়ান খান।
আসলে আয়ান বিদেশে বড় হয়েছে। লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরলে বাবার রাজনীতির সাথে যুক্ত না হয়ে, ব্যবসার দায়িত্ব নিয়েছে। তাই তাকে সচার আচার খুব বেশি মানুষ চিনি না। অন্যদিকে আহান ছোট থেকে দেশে থাকে, কলেজ লাইফ থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাই তাকে সবাই চিনে। বাড়ির মালিক অনুনয় করে বললো
- সরি স্যার আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে।
আয়ান রাগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই তিথি বললো
- আহান ছেড়ে দেও ওনাদের। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ওনারা আমাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করেছেন।
আহান আর বেশি কিছু বললো না। রাগে দাতে দাত চেপে শুধু বললো
- দ্বিতীয়বার যেন এই ভুল না হয়। এখন যান এখান থেকে।
তিনজন মহিলা আর দুইজন পুরুষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
আহাম্মেদ ভিলার বাগানে উপস্থিত সবাই অবাক চোখে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। বড়দের তুলনায় ছোটদের অবাকের মাত্রাটা যেন কয়েকগুণ বেশি। তারা স্বপ্নেও ভাবেনি আজকে এভাবে দীপ্তির রোদের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। তারা তো হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর ছিল যে আজকে এংগেজমেন্টটাই হবে না। সেখানে বিয়ে! দীপ্তি যে পালানোর প্ল্যান করেছিল এটা শুধু চন্দ্রা আর শুভ্র ছাড়া বাকিরা না জানলেও, সবাই জানতো যে দীপ্তি কিছু না কিছু করবেই। করেছিল তো দীপ্তি ঠিকই। তার প্ল্যান অনুযায়ী সে বাড়ির পিছনের দেয়াল টপকে বাসা থেকে পালায়। তারপর তার আগে থেকে বুক করা গাড়িতে উঠে যায়। কিন্তু অর্ধেক রাস্তায় গাড়ি থামলে কোথা থেকে যেন গাড়িতে রোদ এসে উঠে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই ফটাফট তার মুখ হাত বেধে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে যায় একটা ফ্ল্যাটে। সেখানে দুজন মেয়ে তাকে বউ সাজায়। তারপর তাকে বাসায় নিয়ে আসে। সে এখানে আসার কিছু সময় আগেই একজন কাজী এখানে এসে উপস্থিত হয়েছিল। পালানোর কোন পথ না থাকায় আর এতো মানুষের সামনে সিন ক্রিয়েট করাটা ঠিক হবে না দেখে, দীপ্তি চুপচাপ বিয়ে করে নেয়।
বাজছে বিদায়ের সুর। এই বাড়ি থেকে এখন দীপ্তির বিদায়ের পালা। ছলছল চোখ বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দীপ্তি বললো
- এভাবে আমাকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিলে, বাবা।
মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- তুমি যদি আমার মেয়ে হয়ে, আমার মান সম্মানের কথা না ভেবে, পালিয়ে যেতে পারো। তাহলে আমিও তোমার বাবা হয়ে, তোমাকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিতে পারি।
একটু থেমে আবার বললো
- তবে আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি। রোদ খুব ভালো ছেলে। আর তোমাকে সামলাতে পারবে খুব ভালো ভাবে। যত তাড়াতাড়ি পারো রোদকে মেনে নিয়ে সুখে সংসার কর।
তারপর রোদের দিকে তাকিয়ে বললো
- রোদ তোমাকে তো সব আগেই বলেছি আর নতুন করে কি বলবো। শুধু কতোটুকুই বলবো, মেয়েটা আমার একটু বেশিই বাদর। একে একটু দেখে রেখ।
রোদ নম্র কন্ঠে বললো
- আপনি একদম চিন্তা করবেন না বাবা। আমি সব সময় ওর খেয়াল রাখবো।
পাশ থেকে মিষ্টার সালমান বললো
- হ্যাঁ তুই চিন্তা করিস না। ও আমার বাড়ির মেয়ে না, বউ হয়ে থাকবে।
মিষ্টার আফরান আর দাঁড়ায় না, চলে যায় সেখান থেকে। মিসেস সোনালী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। পাশে থেকে জড়িয়ে ধরে তূবা আর তোয়াও কান্না করে দেয়। পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শান্তনা দিতে দিতে কান্না করছে মিসেস মিতালী, মিসেস আফিয়া, চন্দ্রা। দীপক, শুভ্র আর অভ্রর চোখেও জল চিক চিক করছে। এদিকে তার রাণী সাহেবার কান্না দেখে অভিও মুখটাও কালো হয়ে যায়। দীপ্তি অভিমানে কান্না করবে না বলে ঠিক করলেও, প্রিয় মানুষগুলো কান্না দেখে নিজেকে তার ধরে রাখতে পারে না। কান্নার ফলে তূবার ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। অভ্রের চিন্তা হয় বেশি কান্না করলে তূবার আবার ঠান্ডা না লেগে যায়। এদিকে মিষ্টার সালমানও অভ্রকে বলে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে দীপ্তিকে বুজিয়ে সুজিয়ে একটু গাড়িতে তুলে দিতে। তাই অভ্র দীপকে আর শুভ্রকে বলে দীপ্তিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে। চন্দ্রা আর তোয়াকে বলে দীপ্তির সাথে যেতে। তার মা'কে আর মিসেস আফিয়াকে বলে মিসেস মিতালীকে সামলাতে আর নিজে তূবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে। গাড়িতে উঠেও দীপ্তি কান্না করতে থাকে। পাশে বসা রোদ দীপ্তির দিকে টিস্যু এগিয়ে দেয়। দীপ্তির রোদের উপর প্রচন্ড রাখ থাকলেও, এই মুহুর্তে সে রোদকে কিছুই বলে না। চুপচাপ টিস্যু নিয়ে চোখে পানি মুছতে থাকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩১)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন