উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩০)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩১)

সময় এখন রাত বারোটা বেজে তিন মিনিট। সারাদিন মানুষের গমগম করা আহাম্মেদ ভিলা এখন শান্ত নিরব। রুমের কোন লাইট না জ্বললেও, পর্দা লাগানো না থাকায়, বাহিরের লাইটে তূবার অন্ধকার রুমের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। রুমের বিছানায় গায়ে গলা পর্যন্ত চাদর টেনে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে তূবা। বিছানায় তার মাথার পাশে বসে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অভ্র। তূবার কান্না থামছে না দেখে, অভ্র আদুরে কন্ঠে বললো
- এই তূবাসোনা আর কাঁদে না সোনা। দীপ্তি তো আবার কাল পরসু চলে আসবে।
তূবা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- কিন্তু আবার তো চলে যাবে। আপুনি তো আর এখানে থাকবে না।
অভ্র তূবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
- মেয়েদের তো শশুড় বাড়ি যেতেই হবে। এখন দীপ্তির চলে গিয়েছে, কিছুদিন পর তোয়ার যাবে। আবার দীপক বউ নিয়ে আসনে।
তূবা নাক টেনে বললো
- বাবা আপুর বিয়েটা আরও পরে দিত। আপু আরও কিছুদিন থাকতো আমাদের সাথে।
অভ্র বেড সাইড টেবিল থেকে একটা টিস্যু নিয়ে তূবার চোখ মুছতে মুছতে বললো
- মুরাদকে দিয়ে আমিও রোদ সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। ছেলেটা সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট।
তূবা কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- কিন্তু আপনি তো পছন্দ করে না।
অভ্র হালকা হেসে বললো
- করবে করবে দুদিন যাক। প্লিজ এবার তুই আর কান্না করিস না। ঠান্ডা লেখে যাবে তো।
তূবা জিজ্ঞেস করল
- তুমি আমাকে আপুনির সাথে যেতে বলনি কেন?
অভ্র চোখ দুটো ছোট ছোট করে তূবার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- দুদিন পর এক্সাম। এখন তুই বেড়ানোর চিন্তা করিস! এক্সাম শেষ হোক তারপর গিয়ে থাকিস। এখন ঘুমা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
তূবা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- তুমি বাসায় যাবে না?
অভ্র পুনরায় উত্তর দিল
- তুই ঘুমালে যাবো। এখন তাড়াতাড়ি ঘুমা তো।
তূবা আর কথা বাড়ালো না। অভ্রের ডানহাত নিজের দু'হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। অভ্র হালকা হেসে বাম হাত দিয়ে তূবার মাথায় হাত বুলতে থাকে।

চৌধুরী ভিলার বাসর সাজানো রোদের রুমে বসে বসে রাগে ফুসছে দীপ্তি। এই বাড়িতে আসার পর তাকে মিসেস রোমানা বরন করে রোদের এই সাজানো রুমে দিয়ে যায়। পুরো রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। পুরো রুমের সাদা সব ফার্নিচার লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো। ফ্লোরের সাদা কার্পেটের উপরও লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ সেভ আঁকা। সাদা সিলিং এর নিচে আটকে আছে টকটকে লাল লাভ সেভের বেলুন। সাদা কিং সাইজের বেডের উপরও গাঢ় লাল রঙের চাদর বিছানো। সে বিছানার উপর বধু বেসে বসে আছে দীপ্তি। সে ভেবেছিল বিয়েটা হয়ত সে পালিয়ে যাচ্ছিল বলে হঠাৎ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে সব কিছু এতো সাজানো গুছানো দেখে সে বুঝে, যে তার ধারণা ভুল। এতো কিছু তো আর হঠাৎ করে করা সম্ভব নয়। নিশ্চিত সব আগে থেকে প্ল্যান করা ছিল। রাগে এখন তার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই লোক তাকে না কি বিয়ে করতে চায় না। তার মা'র জন্য বাধ্য হয়ে বিয়ে করছে। এদিকে দেখ বাসর ঘর সাজিয়ে বসে আছে। করাচ্ছি তাকে বাসর। কথাটা মনে মনে বলেই বাঁকা হেসে খাট থেকে মেনে দাঁড়ায় সে।

নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে ইজি চেয়ারে বসে আছে মিষ্টার আফরান। তার বন্ধ চোখে ভাসছে দীপ্তির ছোট থেকে বড় হওয়ার সব স্মৃতি। তার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দীপ্তি সব থেকে চঞ্চল। তাই সব সময় মেয়েকে শাসন করতে হয়েছে, চোখে চোখে রাখতে হয়েছে। এখন আর তার মেয়েকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না। কষ্টের সাথে সাথে তার মনে আনন্দও হচ্ছে। মেয়েকে সে যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন বলে। মিষ্টার আফরান যখন ভাবনার ব্যস্ত, তখন কান্নার ফলে ফুলে লাল হয়ে যাওয়া চোখ মুখ নিয়ে রুমে ঢুকে মিসেস সোনালী। স্বামীর কাধে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো
- এতো যখন মেয়েকে ভালোবাসো তাহলে এতো জোর করে, এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে কেন? মেয়েটা লেখাপড়া শেষ করে জব করতে চেয়েছিল। আর দুটো বছর থাকতো।
মিষ্টার আফরান চোখ খুলে স্ত্রীর দিকে তাকায়। তার চোখ আর্দ্র। স্ত্রীর কাছ থেকে দীপ্তির এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দেওয়ার আসল কারণটা লুকিয়ে যায় সে। আসল কারণটা বললে তার স্ত্রী হয়তো মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই তিনি গম্ভীর কন্ঠে স্ত্রীকে বললো
- তোমার মেয়ের মতিগতির ঠিক নেই। এখন বলছে জব করবে পরে বলবে পিএইচডি করে জব করবে। এতো ভালো ছেলে হাতছাড়া করার কোন মানে হয় না।
মিসেস সোনালী পুনরায় বলল
- এংগেজমেন্ট করে রাখতে, না হয় কাবিন করিয়ে রাখতে। 
মিষ্টার আফরান কি বলবে আর ভেবে না পেয়ে বললো
- দেখ আমি যা করেছি বুঝে শুনেই করেছি।
তারপর চেয়ার থেকে উঠে বিছানা গিয়ে শুয়ে পরে। মিসেস সোনালী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুমের লাইটটা বন্ধ করতে যায়।

রুমের দরজা খুলে কপাল কুঁচকে ফেলে রোদ। পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার। দীপ্তিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রোদ ভাবে বৃষ্টি হয়তো দুষ্টুমি করে লাইট অফ করে রুম অন্ধকার করে রেখে গিয়েছে। সে ঠিক করে রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাবে। ভাবনা অনুযায়ী রোদ রুমে ঢুকে দরজা লক করে, লাইট জ্বালানোর জন্য সুইচবোর্ডের দিকে পা বাড়ায় মাএ। তখনই ঠুস ঠাস শব্দ শুরু হয়। দ্রুত হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে রুমের লাইট জ্বালায়। রুমের লাইট জ্বালাতেই শব্দের উৎস খুঁজে পায়। সাজানোর জন্য সিলিং এ যে বেলুন রাখা হয়েছিল তার থেকে। কেউ ফ্যান ছেড়ে দিয়েছে, তাই বেলুন সব টুইটার শব্দ করে ফুটে গিয়েছে। কিন্তু কে ফ্যান ছেড়েছে? রুমে তো শুধু, দীপ্তি! তখনই পাশ থেকে কেউ হা হা করে হেসে উঠে। পাশে তাকিয়ে দেখে দীপ্তি হাসছে। রোদ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- হোয়াট! আর ইউ আ চাইল্ড?
দীপ্তি উত্তর দিল
- চাইল্ড হলে তো ভালোই ছিল, নাবালিকা বিয়ের দায়ে আপনাকে জেলে পাঠাতে পারতাম।
- চাইলে এখনো কেস করতে পারো। কারণ হাতে পায়ে বা বয়সে বড় হলেও, বুদ্ধিতে তুমি এখনো বাচ্চা।
- আপনি কি আমাকে ইনডায়রেক্টলি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলছেন?
- এই যে দেখ, তুমি যদি বুদ্ধিমতী হতে তাহলে নিজে থেকেই বুঝে যেতে যে, আমি তোমাকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলেছি। আমাকে জিজ্ঞেস করতে হতো না।
দীপ্তি রাগী চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বলল
- আপনাকে আমি ,,,,,
রোদ দীপ্তিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো
- কিছু করতে পারবে না। কারণ রোদ চৌধুরীকে কিছু করতে হলে বুদ্ধি লাগে। যা তোমার নেই।
- আপনি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছেন?
- ধরে নেও তাই।
- ওকে, আই একসেপ্ট ইওর চ্যালেঞ্জ।
রোদ আর কিছু বলে না, বাঁকা হেসে চেঞ্জিং রুমে চলে যায়। দীপ্তি আগেই ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিল। রোদ ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে, দীপ্তি এতো বড় খাটের একপাশে মাথা আর একপাশে পা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ঠিক ঘুমাচ্ছে না, ঘুমের ভাণ করে পড়ে আছে। রোদ ভ্রু কুঁচকে দীপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো
- এভাবে পুরো বেড দখল করে ঘুমাচ্ছা কেন? সাইডে চাপ আমি শুব।
দীপ্তির কোন কথা বলছে না। রোদ আবার বললো
- আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি ঘুমাওনি। সাইডে চাপ।
দীপ্তি এবারও কোন কথা বলে না। নড়াচড়াও করে না। রোদ আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে না, ঝপাট করে দীপ্তিকে কোলে তুলে নেয়। দীপ্তি বড় বড় চোখ করে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো
- এই কি করছেন আপনি আমাকে কোলে নিচ্ছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি।
রোদ রুমের মধ্যে থাকা লম্বা সোফাটাতে দীপ্তিকে ফেলে দিয়ে বললো
- ভালো করে বলেছিলাম শুনলে না। এখন এখানে সারারাত ঘুমাও।
বলেই রোদ গিয়ে বিছানায় চার হাত-পা চার দিকে ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। দীপ্তি উঠে গিয়ে রোদকে সরাতে চায়, কিন্তু পারে না। তাই রাগে টেবিলের উপর থাকা জগের নিয়ে, তার মধ্যে থাকা পুরো পানি রোদসহ পুরো বিছানায় ডেলে দেয়। গায়ের উপর পানি পরতেই রোদ হুরমুড়িয়ে উঠে পড়ে, দীপ্তি দিকে তাকিয়ে বললো
- এটা কি করলে!
দীপ্তি হেসে বললো
- যেমন কর্ম তেমন ফল।
বলেই সে লম্বা সোফাতেই গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পরলো। রোদ উঠে গিয়ে টেবিলের উপর থাকা দুধের গ্লাসটা নিয়ে, পুরো দুধ দীপ্তির মাথায় ডালে। দীপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে রোদের দিকে তাকাতেই, রোদ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- যেমন কর্ম তেমন ফল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩২)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন