উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৩)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৪)
গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে অভ্র তূবাকে জিজ্ঞেস করল
- এক্সাম কেমন হয়েছে?
তূবা অত্যন্ত প্রফুল্ল কন্ঠে বললো
- হয়েছে ভালোই। সে কথা পরে হবে। আগে শোন ,,,,,,
তূবার কথা শেষ হওয়ার আগেই অভ্র তূবার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
- সে কথা পরে হবে মানে! আগে বল সব আন্সার করেছিস?
- হ্যাঁ সব আন্সার করেছি। এবার শোন ,,,,,
অভ্র আবার তূবাকে মাঝ পথে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কত পাবি?
তূবার এবার রাগ উঠে যায়। সে কখন থেকে একটা কথা বলতে চাচ্ছে। আর অভ্র পরে আছে এই এক্সাম নিয়ে। অসন্তুষ্ট কন্ঠে বললো
- জানিনা, এক্সাম দিয়ে বের হয়ে হিসাব করিনি। বাসায় গিয়ে হিসাব করে তোমাকে বলবো। হয়েছে! এখন আমার কথাটা প্লিজ শুনবে।
অভ্র তূবার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে, গাড়ি চালাতে চালাতে বললো
- আচ্ছা বল তোর কি এমন কথা।
তূবা উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
- তুমি জানো চন্দ্রা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
অভ্র শান্ত কন্ঠে বললো
- হুম জানি। শুনে খুব রাগ উঠেছে।
তূবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন?
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে ড্রাইভ করতে করতে বললো
- তোর এক্সাম। আর তোর বাবা এখন বিয়ে নিয়ে পড়েছে। টপাটপ একটার পর একটা মেয়ে বিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মানে কোন দায়িত্ব জ্ঞান নেই।
তূবা মিষ্টি হেসে বললো
- আমার তো বেস ভালোই লাগছে। এতো এতো পড়ার মাঝে আপুদের বিয়ে খেতে।
অভ্র একনজর তূবার দিকে তাকিয়ে, পুনরায় সামনে তাকায়। ড্রাইভ করতে করতে বললো
- রেজাল্ট খারাপ হোক। তারপর বোঝাবো তোকে।
ফর্সা হাতে লাল লাকির লাল রঙের কলম ধরে খাতাতে কখন টিক আবার কখন কোন লাইনে গোল আঁকছে অতুল। খাতায় এখন অতুল কি করছে সে দিকে বিন্দু মাএ খেয়াল নেই দোলার। বাহিরে রিনিঝিনি বৃষ্টি হচ্ছে। শীত শীত আবহাওয়া। সামনে তার একমাত্র হোয়াইট ডেইরি মিল্ক বয়ফ্রেন্ড বসে আছে। এমন একটা মূহুর্তে প্রেম আলাপ না করলে কিসের প্রেমিকা সে। কিন্তু কি আলাপ করবে? এই ভোতা মুখর তো আবার ডায়বেটিস আছে। বেশি মিষ্টি কথা হজম হয় না। তাকে কষিয়ে একটা ধমক দিবে। এতো সুন্দর একটা মূহুর্তে তার ধমক খাওয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই। কি বলা যায়? হঠাৎ কিছু মনে হতেই দোলা তার মিষ্টি কন্ঠে ডেকে উঠলো
- স্যার ও স্যার।
খাতা দেখতে দেখতেই অতুল বললো
- হুম।
দোলা জিজ্ঞেস করল
- একটা প্রশ্ন করি?
খাতা দেখতে দেখতে অতুল ছোট করে উত্তর দিল
- কর।
অতুলের অনুমতি পেয়ে দোলা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- আপনার প্রিয় রং কি?
অতুল উত্তর না দিয়ে খাতা দেখতে দেখতে পাল্টা প্রশ্ন করল
- কেন? আমার প্রিয় রং জেনে কি করবে?
দোলা উৎফুল্ল কন্ঠে উত্তর দিল
- আমার দুই বান্ধবী আছে না, কুহু আর তূবা।
অতুল পেইজ উল্টিয়ে পরের পেইজে যেতে যেতে বললো
- হুম্ম।
- ওরা না ওদের বিয়ের দিন, ওদের বয়ফ্রেন্ডদের প্রিয় রঙের ড্রেস পড়বে।
একটু থেমে মাথা নিচু করে লাজুক কন্ঠে আবার বললো
- আর আমিও।
অতুল দোলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- মাইরের এর রং কেমন হয় জানো?
দোলা ডানে বামে মাথা নাড়ায়। তা দেখে অতুল বললো
- এখম তোমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলে যে রং হবে, বর্তমানে তাই আমার প্রিয় রং।
কথাটা বলেই অতুল আবার খাতা দেখাতে মন দেয়। দোলা মুখটা কালো করে বিরবির করে বললো
- মানুষের বয়ফ্রেন্ডরা গালে কিস দেয়। আর আমার বয়ফ্রেন্ড।
দোলার বিরবির করে বলা কথা অতুলের কানে গেলেই রাগি চোখে তার দিকে তাকায় সে। সাথে সাথে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে যায় দোলা। কিন্তু তার মন চুপ থাকে না। মনে মনে বলতে থাকে, "আনরোমান্টিক লোক কোথাকার। এটাও তো বলতে পারতো তোমার গালে কিস দিলে যে রঙ হবে, তাই আমার প্রিয়। দূর কি ভাবছি আমি গালে কিস দিলে কোন রং হয় নাকি। জোড়ে থাপ্পড় দিয়েই তো রং হয়। টকটকে লাল রং। লাল রং! দোলা আবার মুখ খুলে বললো
- তারমানে আপনার প্রিয় রং লাল।
অতুলকে ভ্রু কুঁচকে দোলার দিকে তাকায়। তা দেখে দোলা ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- না মানে। আপনেই তো বললেন আমার গালে থাপ্পড় দিলে যে রং হয়, তাই আপনার প্রিয় রং। এখন আমার গালে থাপ্পড় দিলে তো লাল হয়ে যাবে। তাই আপনার প্রিয় রং লাল।
- ইমপ্রেসিভ। এতো বুদ্ধি নিয়েও কিভাবে তুমি ম্যাথ ভুল করো বলতো? দশটা ম্যাথের মধ্যে দুইটা ভুল।
- মাএ দুইটা।
- দুইটা মাএ! স্টেন্ড আপ।
দোলা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো
- স্যার।
অতুল রাগি কন্ঠে বললো
- আই সেইড স্ট্যান্ড আপ।
দোলা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। অতুল খাতাটা দোলার দিকে একটু এগিয়ে দিয়ে বললো
- আমি এই দুইটা ম্যাথ তোমাকে এখন বুঝিয়ে দিব। তুমি ম্যাথ দুটো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝবে। দেন না দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আমাকে করে দিবে। এবার ভুল যেন না হয়।
দোলা রেগে বিরবির করে বললো
- আনরোমান্টিক প্রেমিক। রোমান্টিক কথা বার্তা তো দূর মিষ্টি করে কথা বলতেও যেন কষ্ট হয়।
- আমাকে বকা শেষ হলে ম্যাথে মনোযোগ দেও। এবার ভুল হলে কিন্তু কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো।
কথাটা বলেই অতুল দুটো ম্যাথই খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়। তারপর মান চেন্স করে করতে দেয়। দশ মিনিট পর দোলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ম্যাথ করে অতুলের দিকে খাতা দেয়। খাতা দেখে অতুল বললো
- হাত পাত।
- স্যার এবারও হয়নি! কিন্তু আমি তো অনেক মনোযোগ দিয়ে বুঝেছি আর ভালোভাবেই করেছি।
হাতের লাল কলমটার শেষ পান্তে ধরে অতুল বললো
- তোমাকে হাত পাততে বলেছি। হাত পাত।
দোলা হাত বাড়িয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু কলমের বাড়ির ব্যথা অনুভব করতে পাচ্ছে না। উল্টো মনে হচ্ছে হাতে কিছু আছে। চোখ খুলে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা সাদা এক ভাজ করা ছোট কাগজ। ভ্রু কুঁচকে অতুলের দিকে তাকায়। অতুল দুষ্ট হাসি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো
- আজ আসি।
বলেই অতুল বের হয়ে যায়। অতুল বের হতেই দোলা এক দৌড়ে নিজের বেড রুমের চলে যায়। রুমের দরজা লক করে হাতের কাগজটার ভাজ খুলে দেখে, তাতে লাল কালি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা -
" আমার প্রিয় রমনীর গায়ে জড়ানো সব রঙই আমার প্রিয়। হোকনা সেটা সাদা, লাল বা কালো। তাও যদি জিজ্ঞেস করো বিশেষ দিনে কোন রঙে তোমাকে দেখতে চায় এই মন? উত্তরে বলব আকাশের রঙে সেজো তুমি সেই শুভক্ষণ। সুবিশাল আকাশের সাথে মিলিয়ে হোক আমাদের একসাথে দীর্ঘ পথ চলার শুরু। "
চন্দ্রা হাসি মুখের ছবি আয়ানের সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে মিসেস রুচি বললো
- দেখ এটাই হচ্ছে সেই মেয়ে।
চন্দ্রার ছবির দিকে তাকিয়ে, মেয়েটাকে চিনতে না পেরে আয়ান জিজ্ঞেস করল
- সেই মেয়ে মানে? কোন মেয়ে?
মিসেস রুচি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল
- যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি, এটা সেই মেয়ে।
আয়ান অবাক হয়ে বললো
- আমার বিয়ে! এই মেয়ের সাথে!
মিসেস রুচি ভাবে আয়ান মেয়েকে দেখেনি ব্লে জিজ্ঞেস করছে। সে ছোট করে বললো
- হ্যাঁ।
আয়ান অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করেই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো?
মিসেস রুচি অবাক হয়ে বললো
- না জিজ্ঞেস করে বিয়ে কোথায় ঠিক করলাম! আহান তো বললো, ও না কি তোকে বলেছে। তুই রাজী।
আয়ান আগের থেকে দ্বিগুণ অবাক হয়ে বললো
- কি! আহান এই কথা বলেছে!
মিসেস রুচি ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
আয়ান শক্ত কন্ঠে বললো
- দেখ মা, আহান কি বলেছে, কেন বলেছে আমি তার কিছু জানি না। আর জানতে চাইও না। আমি সোজাসুজি বলে দিচ্ছি, আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। আর তাকেই বিয়ে করবো।
কথাটা বলেই আয়ান উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৫)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন