উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩২)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৩)
নিজের রুমের এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করছে চন্দ্রা। শুধু পায়চারি করছে না। কানে ফোন ধরে কাউকে কল করছে আর পায়চারি করছে। ট্রিং ট্রিং শব্দ হতে হতে কলটা যখন কেটে যাবে, ঠিক তখনি ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটি কল রিসিভ করে বললো
- হ্যালো চন্দ্রা বল।
চন্দ্রা ফোনের এপাশ থেকে মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আপনি এটা কি করে করতে পারলেন আহান ভাইয়া?
আহান পাল্টা প্রশ্ন করল
- কি করলাম?
চন্দ্রা রাগী কন্ঠে বললো
- আপনি জানেন না আপনি কি করেছে। কিভাবে আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে?
আহান স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- ওহ, ওটা আমি ঠিক করিনি। বাবা-মা'র তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তাই তারা তোমার সাথে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। আমি তো যাস্ট তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছি।
বিরক্তির সাথে চন্দ্রা প্রশ্ন করল
- আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আমি যে আপনাকে পছন্দ করি, তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। তাহলে আপনি কি করে তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলালেন?
- ওয়েল। আমি তো ভেবেছিলাম তুমিও খুব ইন্টেলিজেন্ট গার্ল। নিজে থেকেই বুঝে যাবে রিজনটা। যাই হোক যেহেতু তুমি নিজে থেকে বুঝনি তাই আমিই বলি। মনে আছে কেউ একজন ভার্সিটির গেইটে সবার সামনে আমাকে চড় মেরেছিল।
কথাগুলো বলতে বলতে আহানের সর গম্ভীর হয়ে যায়।চন্দ্রা অপরাধীর সরে বললো
- হ্যাঁ আমি না দেখে ,,,,,,
চন্দ্রা আর বলতে পারেনা, থেমে যায়। তার খুব কষ্ট, অপরাধবোধ হচ্ছে। আহান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- এটা তারই শাস্তি।
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো
- হোয়াট! আপনি আমার সামান্য এই ভুলটার জন্য আমাকে এতো বড় শাস্তি দিবেন!
আহান শক্ত কন্ঠে বললো
- পাবলিক প্লেসে আহান খানের গালে চড় দেওয়া, কোন সামান্য বেপার না।
- আমি ভুল করে ওটা দিয়েছি। আর তারজন্য আপনাকে সরিও বলেছি।
- তুমি আমাকে ভার্সিটির গেইটে অনেক স্টুডেন্টের সামনে চড় মেরেছ। ভার্সিটির অনেকেই বিষয়টা স্বচক্ষে দেখেছে। এখন যদি আমি তোমার সামান্য এই সরি এক্সেপ্ট করি, তাহলে তো জন প্রতি লোক এসে আমাকে চড় মেরে সরি বলে যাবে।
চন্দ্রা অনুনয় করে বললো
- আপনি আমাকে প্রয়োজনে অন্য যে কোন শাস্তি দিন। কিন্তু প্লিজ এই শাস্তি দিয়েন না। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।
- শুনেছি ভালোবাসলে নাকি মানুষ জীবন দিয়ে দিতে পারে। আর তুমি সামান্য আমার ভাইকে বিয়ে করতে পারবে না।
- জীবনে তো কাউকে ভালোবাসেননি, ভালোবাসলে বুঝতেন। নিজের ভালোবাসার মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা কতো সামান্য বেপার।
আহান চন্দ্রার কথা কানে না তুলে বললো
- তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমার ভাইকে বিয়ে করে দেখাও। মনে কর এটা তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা। বায়।
বলেই আহান ফোন কেটে দেয়। চন্দ্রা ফোন হাতে নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। ফ্লোরে বসেই কেঁদে ফেলে সে।
সামনেই কলেজের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। তাই আজ ক্লাস শেষে শপিং করতে এসেছে দুই বান্ধবী তোয়া আর নিশা। দুজনের বাজেটই খুব সামান্য। আর্থিক দিক থেকে নিশাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তোয়া ধনী পরিবারের মেয়ে হলেও, ছেলেমেয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা মিষ্টার আফরান কখনোই দিত না। আর তোয়ার এই বই পড়ার রোগের জন্য, সে আরও কম টাকা পায়। ডান কানে একটা বড় ঝুমকো আর বাম কানে একটা ছোট ঝুমকো ধরে তোয়া, নিশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কোনটা বেশি সুন্দর লাগছে?
নিশা কিছুক্ষণ দেখে উত্তর দিল
- বড়টা।
তোয়া দোকানের লোকটাকে বড় ঝুমকোটা দিয়ে বললো
- এটা প্যাক করে দেন।
বিল দিয়ে ব্যাগ নিয়ে দোকান থেকে বের হয় তোয়া আর নিশা। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই নিশা তোয়াকে বললো
- তোকে তো বলাই হয়নি, আপুর জব হয়েছে।
তোয়া খুশি হয়ে নিশার দিকে তাকাতে তাকাতে বলল
- রিয়েলি। কোথায় ,,,,,,, রিশান স্যার।
আগের কথা না শেষ করেই রিশানকে দেখে তোয়া তাকে ডেকে উঠে। তোয়ার কথা শুনে নিশাও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে পাশে তাকিয়ে দেখে, তাদের থেকে তিন চার হাত দূরে রিশার দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তোয়ার ডাক শুনেই দাঁড়িয়েছে। পরনে কলেজের সেই ফর্মাল ড্রেস। কলেজ থেকে মনে হয় বাসায় যায়নি। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চোখে মুখে একরাশ মায়া নিয়ে স্থির দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকিয়ে আছে নিশা। হঠাৎ করে শপিংমলে এসে তার মায়াবিনী দেখা পাবে তা ভাবতেও পারেনি রিশান। আজকে দুইটা ইন্টারভিউ থাকায় সকালের সব ক্লাস ক্যানসেল করতে হয়েছে তাকে। যেহেতু নিশাদের আজকের ক্লাসটা সকালে ছিল, তাই তাদেরও ক্লাস ক্যানসেল করতে হয়েছে। ইন্টারভিউ শেষ করে একটার দিকে কলেজে গিয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে নিশার সব ক্লাস শেষ হয়ে যায় তাই আর দেখা হয় না। কলেজের দুইটার দিকে একটা ক্লাস নিয়ে স্যালারি তুলে মার্কেটে চলে আসে। তোয়া নিশার হাত ধরে গিয়ে রিশানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বললো
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
নিশাও নম্র কন্ঠে বললো
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
রিশান হালকা হেসে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু।
তোয়া মুখে হাসির রেখা বজায় রেখে জিজ্ঞেস করল
- স্যার আপনার ইন্টারভিউ কেমন হয়েছ?
রিশান হাসি মুখেই উত্তর দিল
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তোয়া পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- স্যার শপিং করতে এসেছেন?
রিশান স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- হুম্ম। মার জন্য একটা শাড়ী কিনতে এসেছি।
তোয়া আবার জিজ্ঞেস করল
- আমরা হেল্প করবো স্যার?
রিশান খুশি হয়ে বললো
- তোমরা হেল্প করলে তো ভালোই হয়। চল।
তোয়া আর নিশা রিশানের সাথে শাড়ির দোকানে ঢুকতেই তোয়ার ফোনে কল আসে। তোয়া স্কিনে দীপকের নাম দেখে ফোন রিসিভ করে বললো
- হ্যালো ভাইয়া বল।
ফোনের ওপাশে থাকা দীপক অবাক হয়ে বললো
- আমি কি বলবো! তুই তো কল করলি। তাই তো কল করলি। আবার রিসিভ করতেই কেটে দিলি। আমি মিনে করিছি, তোর ফোনের ব্যালেন্স কম তাই তুই কেটে দিয়েছিস। তাই আমি কলব্যাক করলাম।
আসলে তোয়া ইচ্ছে করেই দীপককে কল করে কেটে দিয়েছে। সে জানতক দীপক কলব্যাক করবে, আর সে কারণ দেখিয়ে রিশান আর নিশাকে মার্কেটে রেখে চলে যাবে। যাতে দুজন একটু একা সময় কাটাতে পারে। তোয়া দীপকের কথার কোন জবাব না দিয়ে বললো
- হ্যাঁ, আমি আসছি।
কথাটা বলেই, দীপককে আর কিছু বলতে না দিয়ে টুস করে ফোনটা কেটে দেয়। রিশান আর নিশার কাছে গিয়ে বললো
- সরি স্যার। ভাইয়া ফোন করেছে আমাকে আর্জেন্ট যেতে হবে। কিন্তু চিন্তা করবেন না স্যার। কেনাকাটার বেপারা আমার থেকে নিশা ভালো পারে। ওই আপনাকে হেল্প করতে পারবে।
বান্ধবীর মতলব নিশা ঠিক বুঝতে পারে। কিন্তু এখানে সে তার কিছু বলার বা করার নেই। তাই সে চুপ থাকে। রিশান স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- ঠিক আছে তুমি যাও।
- থ্যাংক ইউ স্যার।
কথাটা বলেই তোয়া নিশার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যায়। রিশান নিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- চল শাড়ি দেখা যাক।
নিশা শান্ত কন্ঠে বললো
- জ্বি স্যার।
এদিকে,
তোয়ার ফোন আবার বেজে উঠে। তোয়া স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে দীপক আবার কল করেছে। তোয়া রিসিভ করে বললো
- হ্যাঁ ভাইয়া বল।
দীপক ফোনের ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করল
- এই তুই কোথায় আসছিস? অফিসে? কিন্তু আমি তো অফিসে নেই।
তোয়া হেসে বললো
- আমি তোর কাছে যাচ্ছি না। আসলে ,,,,,,
তোয়া পুরো ঘটনা দীপকে বুঝিয়ে বলতে থাকে।
পুরো শো-রুম ঘুরে ঘুরে খুটিয়ে খুটিয়ে শাড়ি দেখছে নিশা। নিজের ভালোবাসার মানুষের মা'র জন্য সবথেকে বেস্ট শাড়িটাই সে চায়। দামের কথাটাও মাথায় রেখেছে। আর তার পিছন পিছন হাটতে হাটতে তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখায় ব্যস্ত রিশান। নিশা একটা করে শাড়ি নিচ্ছে ভ্রু কুঁচকে নেড়েচেড়ে দেখছে। আবার রেখে দিচ্ছে। আজ সে বুঝলো কেন ছেলেরা মেয়েদের সাথে শপিং করতে আসে না। একটা শাড়ি কিনতে, অলরেডি দুই-তিনটা দোকান দেখে ফেলেছে। তাও একটা শাড়ি পছন্দ হয়নি। সে একা কিনলে এতোক্ষণে আট দশটা শাড়ি কিনে ফেলতো। জীবনের প্রথম সে কোন মেয়ের সাথে শপিং করতে এসেছে। তাও নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে। তাই এতোক্ষণ ঘুরতে তার খারাপের যায়গায় বেশ ভালো রাখছে। নিশি সাদা সুতো দিয়ে খুব সুন্দর কাজ করা ব্রাউন কালারের একটা সুতি শাড়ি হাতে নিয়ে বললো
- এটা সুন্দর। দেখুন স্যার, এটা আপনার পছন্দ হয় নাকি।
রিশানেরও শাড়িটা খুব পছন্দ হয়। সে মনে মনে বলে বাহ মায়াবিনীর পছন্দ তো খুব সুন্দর। সে শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো
- শাড়িটা খুব সুন্দর।
শাড়ি নিয়ে শো-রুম থেকে বের হয়ে রিশান বললো
- চল।
নিশা প্রশ্ন করল
- কোথায়? আরও কিছু কিনবেন?
রিশান হাসি মুখে উত্তর দিল
- নাহ। তুমি আমাকে হেল্প করলে। তাই থ্যাংকস জানানোর জন্য, তোমাকে এক কাপ কফি খাওয়াই। প্লিজ না কর না।
নিশা মিষ্টি হেসে বললো
- আচ্ছা স্যার, চলুন।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৪)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন