উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৫)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৬)
আহানের রুমের খাটের উপর বসে বসে কিছুক্ষণ আগের লজ্জাজনক ঘটনার কথা ভাবছে চন্দ্রা। তাদের গাড়ি এই বাড়িতে আসার প্রায় সাথে সাথেই আরও একটা গাড়ি এসে থামে। সেই গাড়িতে ছিল আয়ান, তার সদ্য বিয়ে করা বউ আর মিষ্টার আব্রাহাম। বউয়ের সাথে আয়ানকে দেখে সে বুঝতে পারে, কেন আয়ান ভাইয়া তাদের বিয়েতে ছিল না। পাশাপাশি দুই ছেলের বউকে দাঁড় করিয়ে একসাথে বরণ করে মিসেস রুচি। তারপর সবার সাথে পরিচয় করানোর জন্য তাদের দুজনকে একসাথেই সোফাতে বসায়। সোফাতে বসিয়ে মিসেস রুচি যখন তাকে তার ঝা'য়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন সে তাকে দেখে মুগ্ধ নয়নে ভাবছিল, এতো সুন্দরও মানুষ হয়! তারপর যখন তার ঝা তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছো?" তখন সে উত্তরে ভালো আছি না বলে, বলেছিল, "তুমি খুব সুন্দর আপু। আমি ছেলে হলে এখনি তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম।" চন্দ্রার মুখে এমন কথা শুনে তিথি সব সবাই প্রথমে গোল গোল চোখে তার দিকে তাকায়, তারপর হা হা করে হেসে উঠে। তিথিও মুচকি হেসে বলে, "তুমিও খুব সুন্দর।" সবার হাসির শব্দে চন্দ্রার হুস ফেরে। সে কোথায় কি বলে ফেলেছে তা বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ছিঃ কি লজ্জা! মনে হতেই এখনো লজ্জা করছে তার। দরজা খোলার শব্দে দরজার দিকে তাকায় চন্দ্রা। আহান রুমে ঢুকে, রুমের দরজা লক করে দেয়।দরজা লক করে ঘুরে চন্দ্রার দিকে পা বাড়ায়। চন্দ্রাও বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। আহান ভাবে চন্দ্রা তাকে সালাম করার জন্য বিছানা থেকে নেমেছে। আহান মনে মনে ভাবে চন্দ্রা তাকে সালাম করার জন্য ঝুকলে সে চন্দ্রার দুইবাহু ধরে তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে, মুভির হিরোদের মতো বলবে, "তোমার স্থান আমার পায়ে না বউ, তোমার স্থান আমার বুকে।" এটা বলে সে চন্দ্রাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরবে।" এসব ভাবতে ভাবতেই সে চন্দ্রার দিকে আগাচ্ছিল। চন্দ্রাকে বিছানা থেকে বালিশ নিতে দেখে, আহানের কপালে ভাঁজ পড়ে। মনে প্রশ্ন জাগে, চন্দ্রা বালিশ দিয়ে কি করবে? চন্দ্রা বালিশটা আহানের দিকে ছুড়ে মারে। বালিশ এসে পরে আহানের মুখের উপর। বালিশটা হঠাৎ এসে পড়ায় আহান ধরতে পারে না। বালিশটা আহানের মুখে লেগে ফ্লোরে পড়ে যায়। আহান সামনে চন্দ্রার দিকে তাকাতে তাকাতে বললো
- কি করছো চন ,,,,,,,।
আহানে কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিন্দ্রা বিছানায় থাকা অপর বালিশটাও আহানের দিকে ছুড়ে মারে চন্দ্রা। কিন্তু এবার আহান তা ধরে ফেলে। বিছানায় বালিশ রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল
- কি করছো চন্দ্রা?
চন্দ্রা আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজে। পাশে টপে সাজানো ডালসহ রজনীগন্ধা ফুলগুলো থেকে একটা ডাল হাতে নেয়। তারপর চোখ মুখ রাগে লাল করে, আহানের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- শাস্তি দিচ্ছি আপনাকে, আমাকে মিথ্যা বলার জন্য।
বলেই রজনীগন্ধা ফুলের ডালের মাথার অংশ ধরে, ডালের অংশ দিয়ে মারে আহানের বাম হাতের বাহুতে এক বাড়ি। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের বাহু ঘষতে ঘষতে আহান বললো
- আউ, ব্যথা পাওয়া যায় তো চন্দ্রা।
চন্দ্রা রাগে চোখ মুখ লাল করে বললো
- তো আমি কি আপনাকে আদর করার জন্য মারছি!
বলেই আরও মারতে থাকে। আহান ডালের বাড়ি থেকে বাঁচতে এদিক ওদিক সরতে সরতে বললো
- আউ, সত্যিই ব্যথা পাচ্ছি আমি।
- পান ব্যথা। আপনি জানেন আমি এই কয়দিন কতো কষ্ট পেয়েছি।
কথাটা বলেই হাতের ডালটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে কেঁদে দেয় চন্দ্রা। আহান চন্দ্রার কাছে গিয়ে তার দু'গালে নিজের দু'হাত রেখে নম্র কন্ঠে বললো
- সরি, চাঁদ পরি আর এমন দুষ্টমি করবো না। প্লিজ, এবারের মতো মাফ করে দেও। প্লিজ চাঁদ পরি।
আহানের চন্দ্রাকে বার বার চাঁদ পরি বলে সম্মোধন করায়, সে ভ্রু কুঁচকে বললো
- চাঁদ পরি!
আহান মিষ্টি হেসে বললো
- হুম। প্রথমদিন তোমাকে দেখার পর থেকেই, আমি তোমাকে মনে মনে চাঁদ পরি বলে ডাকতাম। এখন থেকে তোমাকে এটা বলেই আমি ডাকবো। আর এটাই হচ্ছে আজকের এই স্পেশাল রাতে আমাকে পক্ষ থেকে তোমার গিফট। পছন্দ হয়েছে?
চন্দ্রা হাসি মুখে বললো
- হুম, খুব পছন্দ হয়েছে।
বলেই চন্দ্রা আহানের বুকে মাথা রাখে, আহানও পরম যত্নে নিজের বুকে আগলে নেয় তার চাঁদ পরিকে।
এদিকে,
ফুল দিয়ে সাজানো আয়ানের বিছানায় বসে অতুলের কথা ভাবছে তিথি। তার বিদায়ের সময় তার ভাইটা তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেলেছিল। এখনও নিশ্চয়ই ভাইটা একা একা বোনের রুমে বসে কান্না করছে। বাবা, মা আর বোনের অনেক আদরে বড় হয়েছে অতুল। যথেষ্ট স্বচ্ছল পরিবার ছিল তাদের। বাবা মা দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করত। ভাই বোন কখনো অভাব বুঝেনি। সুখী পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু তার বিয়ের জন্য সব নষ্ট হল। সে ভেবেছিল যেই বিয়ের টাকার জোগাড় করতে গিয়ে তার বাবা-মা মারা গিয়েছে, সেই বিয়েই সে করবে না। তাছাড়া সে চলে গেলে তার ভাইকে কে দেখবে? তবে সে যখন বুঝে যে, অতুল সে বিয়ে না করার জন্য নিজেকে অপরাধী ভেবে কষ্ট পাচ্ছে আর সেও আয়ানকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। তখন রাজী হয়ে যায়। ভাইয়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে তার। একবার ফোনে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। তার ফোনের চার্জ যে কখন শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সে জানতেই পারিনি। তাকে তার শাশুড়ি এই রুমে দিয়ে যাওয়ার পর সে যখন অতুলকে কল করার জন্য ফোন হাতে নেয়, তখন জানতে পারে তার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে সুইচ অফ হয়ে আছে। আশেপাশে কোথাও চার্জারও চোখে পরছে না, যে ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলবে। মনটা তার খারাপ হয়ে যায়। তার ভাবনার মাঝেই রুমের দরজা খুলে রুমে আসে আয়ান। কানে ফোন নিয়ে কারো সাথে কথা বলছে সে। রুমের দরজা লক করতে করতেই আয়ান ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বললো
- তুমি কিন্তু কালকে সকাল সকাল চলে আসবে। না হয় আমি সব ফেলে তোমাকে আনতে চলে যাবো।
ফোনের ওপাশের ব্যক্তি কি বলে তা শুনতে পায় না তিথি। তবে আয়ান ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটির কথা শুনে হেসে বললো
- ঠিক আছে। নেও তাহলে তোমার বোনের সাথে কথা বল। বেচারি ভাইয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।
কথাটা বলেই ফোনটা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নেও, অতুল কথা বল।
তিথি আয়ানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে, কানে ধরে জিজ্ঞেস করল
- কি করছিস ভাই?
ফোনের ওপাশ থেকে অতুল উত্তর দিল
- এই তো বসে আছি।
তিথি পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- আরিফ আছে সাথে।
অতুলের এখন বোনের সাথে অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করলেও, বলে না। শান্ত কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ ও ঘুমাচ্ছে। তুই আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করিস না আপু, আমি ঠিক আছি। কালকে সকালে চলে আসবো। তুই নিজের আর আয়ান ভাইয়ার খেয়াল রাখিস। ঠিক আছে।
তিথিও আর বেশি কথা বাড়ায় না। আরও কিছুক্ষণ কথা বললে সে কেঁদে দিবে। আর তা শুনে তার ভাইটাও কান্না করে দিবে। তাই ছোট করে বললো
- আচ্ছা। সাবধানে থাকিস।
- হুম্ম।
বলেই অতুল লাইন কেটে দেয়। তিথি কান থেকে ফোন নামিয়ে স্কিনের দিকে তাকালেই স্কিনে ভেসে উঠা লেখাগুলো দেখে বুঝতে পারে, আয়ান কলটা করেছে। আবাক হয়ে যায় সে। সে ভেবেছিল তার ফোনে ঢুকছে না বলে অতুল আয়ানের ফোনে কল করেছি। কিন্তু ,,,,,, আয়ানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- আপনি ফোন করেছেন?
আয়ান খাটে তিথির পাশে বসে বললো
- হুম, ছেলেটা একা একা যদি কান্না করে তাই।
তিথি আয়ানের দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বললো
- ধন্যবাদ তোমাকে আমার ভাইটাকে এতো স্নেহ করার জন্য, ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে দ্বিতীয় বাবা-মা দেওয়ার জন্য, ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে নতুন একটা ভাই আর বোন দেওয়ার জন্য, ধন্যবাদ তোমাকে বিপদের থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য, ধন্যবাদ তোমাকে আমার হাতটা সারা জীবনের জন্য ধরার জন্য, সবশেষে ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে ভালোবাসার জন্য।
আয়ান হেসে পকেট থেকে একটা আংটির বক্স বের করে। বক্স খুলে তার থেকে একটা খুব সুন্দর ডায়মন্ডের আংটি বের করে। তিথির ডান হাতে পরিয়ে দিয়ে, হাতের পিঠে একটা চুমু দিয়ে বললো
- ধন্যবাদ তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার জন্য।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৭)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন