উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৬)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৭)
সকাল থেকে দুইটা মিটিং আর একের পর এক ফাইল চেক করতে করতে ক্লান্ত, বিরক্ত দীপক। কেউ কেবিনে নক করলে ফাইল চেক করতে করতে গম্ভীর কন্ঠে বললো
- কাম ইন।
নীলা কেবিনে ঢুকে দীপকের দিকে দুইটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো
- স্যার এই ফাইল দুইটাতে আপনার সাইন লাগবে। যদি ফাইল দুটো এখনি একটু চেক করে সাইন করে দিতেন, তাহলে ভালো হতো।
দীপক নীলার দিকে গোমরা মুখ করে তাকিয়ে বললো
- আরও দুটো ফাইল। আচ্ছা দাও, সাইন করে দিচ্ছি।
নীলা ফাইলটা এগিয়ে দিলে, দীপক ফাইল দেখতে দেখতে বললো
- টেবিলের উপরের ফাইলটা একটু দিও তো।
নীলা সোফার সামনের টেবিল থেকে ফাইলটা তুলতেই ফাইলের ভিতর থেকে কিছু পেপার নিচে পরে যায়। একটা পেপার গিয়ে পড়ে সোফার নিচে, সেটা তুলতে সোফার নিচে হাত দিয়ে "আউ" শব্দ করে উঠে সে।
শব্দ শুনে দীপক নীলার দিকে তাকিয়ে দেখে, নীলা তার বাম হাত ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। দীপক ব্যস্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে নীলার কাছে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে নীলা?
নীলা কিছু বলার আগেই দীপকের চোখ পরে নীলার বাম হাতের তর্জনী আঙুলের দিকে। সেখান থেকে ফোটা ফোটা করে রক্ত পড়ছে। ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে কিছু পেপার পড়ে আছে। যার মধ্যে একটাতে রক্ত মাখা পিন লেগে আছে। আসলে ওই পেপার গুলোর মধ্যে যে পেপারটা সোফার নিচে চলে গিয়েছিল, সেটা বের করে আনার জন্য নীলা সোফার নিচে হাত দেয়। পেপারটা একটু বেশি ভিতরের দিকে চলে গিড়েছিল। তাই সে তা ধরতে যতটা সম্ভব হাত সোফার নিচে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, একটু চাপ দিয়েই ধরতে যায়। তার হাত গিয়ে পড়ে পেপারটার বাম দিকে। যেখানে স্টাবলারের পিন উঠে ছিল, সেখানে আঙুল জোরে পড়তেই তা গেঁথে যায়। ব্যথা পেয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই "আউ" শব্দ করে উঠে সে। পেপারসহ হাতটা সোফার নিচ থেকে বের করে, টান দিয়ে পিন থেকে আগুল ছুটাতেই তা থেকে রক্ত পড়া শুরু করে। নীলা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো
- ওহ কিছু না স্যার। ওই একটু হাতে লেগেছে আর কি। সরি স্যার পেপারটা নষ্ট হয়ে গেল। আমি এখনি আবার কপি করে এনে দিচ্ছি।
এটা বলে পেপারটা ডান হাত দিয়ে আবার নিতে গেলেই, দীপক নীলার হাত ধরে ফেলে। নীলা চোখ তুলে দীপকের দিয়ে তাকাতেই দীপক রাগী কন্ঠে বললো
- একদম ওই পেপারে তুমি হাত লাগাবে না।
তারপর তাকে টেনে নিয়ে সোফাতে বসিয়ে দেয়। ফাস্ট এইড বক্স এনে তার মধ্যে থেকে স্যাভলন আর তুলো বের করে বললো
- হাত দেও।
নীলা বাধা দিয়ে বললো
- স্যার এগুলো দিতে হবে না। অল্প একটু কেটেছে, এমনিতেই সেরে যাবে।
দীপক কোন উত্তর দেয় না। নিজেই নীলার হাত টেনে নিয়ে খুব যত্ন করে ক্ষতস্থান পরিস্কার করতে করে, ব্যান্ডেজ করে দেয়। তা দেখে নীলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে ব্যথা পেলে তাকে কেউ এমন যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়নি। উল্টো সে তার ছোট বোনকে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। দীপক ব্যান্ডেজ করে নীলার দিকে তাকাতেই দেখে নীলা ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দীপক ভাবে হয়তো সে একটু জোরেই চেপে ধরেছিল, তাই হয়তো ব্যথায় নীলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে। দীপক ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো
- সরি, সরি। ব্যথা দিয়ে ফেলেছি। সরি সরি। এই দেখ কান ধরছি।
বলেই দুই কানে ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে যায়। ইচ্ছে করেই পরে যাওয়ার অভিনয় করে এদিক ওদিক দুলতে থাকে। তূবা যখন তার উপর রাগ করে তখন সে তূবার রাগ ভাঙানোর জন্য এমন করে। আর এখন করছে তার প্রিয়সীর কষ্ট দূর করতে। দীপকের অবস্থা দেখে নীলা হেসে ফেলে। আর তা দেখে দীপক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে তার প্রিয়সীর সেই মন মুগ্ধ কর হাসি।
মিষ্টার আফরান ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে গাড়িতে করে পাঠালেও, ভার্সিটিতে তাদের ইচ্ছা মতনই যাওয়ার নির্দেশ দেয় সে। ছোট থেকে গাড়িতে চরে বেড়ানো প্রকৃতি প্রেমি তোয়া এই অনুমতি পাওয়ার পর থেকে রিকশায় করেই বাহিরে যায় বেশি। আজকেও রিকশায় করে ভার্সিটিতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা খুঁজছিল সে। তখনই তোয়ার সামনে একটা সাদা গাড়ি এসে থামে। গাড়িটা দেখেই তোয়া চিনে ফেলে যে এটা অভির গাড়ি। অভি তোয়ার পাশের দিকের গাড়ির গ্লাসটা নামাতেই, তোয়া একটু ঝুকে ভিতরে অভির দিকে তাকায়। অভি হেসে বললো
- শুভ সকাল। উঠে এসো।
তোয়া দরজা খুলে গাড়িতে বসে বললো
- শুভ সকাল ভাইয়া। এতো সকালে এখানে?
অভি গাড়ি স্টার্ট করতে করতে বললো
- ভেবেছিলাম আজকে সারাটা সকাল তোমার সাথে কাটাবো। কিন্তু সামনে তোমার পরীক্ষা। এই সময়ের ক্লাসগুলো অনেক ইম্পটেন্ট। তাই ঠিক করলাম সারাটা সকাল না হোক। শুধু তোমার বাসা টু ভার্সিটি যাওয়ার টাইমটা না হয় কাটুক আমার সাথে। সকালটা না হয় অন্য কোনো দিন একসাথে কাটাবো।
তোয়া কৌতুহল দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- হঠাৎ আমার সাথে সকাল কাটাতে চাও কেন?
অভি বিরবির করে বললো
- আমি তো তোমার সাথে সারাটা জীবনই কাটাতে চাই।
তোয়া অভি বিড়বিড় করে বলা কথা না শুনতে পেয়ে, আবার জিজ্ঞেস করল
- হুম্ম? কিছু বললে ভাইয়া?
অভি গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই উত্তর দিল
- আসলে আমি অফিসের একটা কাজে বিকেলে থাইল্যান্ড চলে যাচ্ছি। তাই তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।
তোয়া মন খারাপ করে জিজ্ঞেস করল
- ওহ। কবে ফিরবে?
অভি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- সপ্তাহখানিক পর।
কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকার পর অভি আবার বললো
- তারপর তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব।
তোয়া অভির দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি সারপ্রাইজ? নতুন কোনো ভালো বই পেয়েছো? নাম কি?
অভি দীর্ঘনিঃশ্বাস গোপন করে। বইয়ের ছাড়া কি তার সাথে আর কোনো কথা এই মেয়ের মাথায় আসে না। তোয়া পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কি হলো বল?
অভি একগাল হেসে উত্তর দিল
- সারপ্রাইজ তো বলা যাবে না। সময় আসলে দেখতে পাবে।
ফোনের স্কিনে স্টেজের পাশাপাশি দুটো রাজকীয় চেয়ারে বসা তিথি আর চন্দ্রার ছবি দেখতে দেখতে অভ্রদের বাসার ভিতরে ঢুকছে তূবা। কালকে খুব ধুমধাম করে দুই ছেলের একসাথে রিসিপশন পার্টি করেছে মিষ্টার আব্রাহাম। সেদিন হসপিটালের আয়ানকে দেখে তূবা চিনেনি। সে জানতো চন্দ্রার মন্ত্রী আব্রাহাম খানের ছোট ছেলে আহান খানকে ভালোবাসে। আহান যে চন্দ্রার ভার্সিটির সিনিয়র তাও জানতো। আহান খানকে ছবিতে দেখলেও, আয়ান খানকে কখনো দেখেনি সে। তাই চিনতে পারেনি। কালকে তার ফুফাতো বোনের ঝা হিসেবে তিথিকে দেখে সে খুব খুশি হয়েছে। তিথি তাদের আত্নীয়। কথাটা দোলাকে জানাবে বলে তখনি দোলার ফোনে কল করে। কিন্তু দোলার ফোন বন্ধ বলে। রাতে বাসায় এসে আবার ফোন করে, তখনো ফোন বন্ধ বলে। আজকে সারাদিন ফোন করেছে ফোন বন্ধ। বিকেলে দোলাদের বাসার ল্যান্ডলাইন ফোন করেছে, কেউ রিসিভ করেনি। দোলার মা'য়ের ফোনে কল করেছে তাও বন্ধ বলছে। কুহুও সে কালকেই খবরটা বলেছে। কুহুও সারাদিন অনেকবার ফোন করেছে, কিন্তু কেউকে ফোনে পায়নি। তাই সে আর কুহু মিলে ঠিক করেছে তারা কালকে দোলাদের বাসায় যাবে। বাসার ড্রয়িংরুমে আসতেই অভ্রর ফুফুর কন্ঠস্বর কানে আসে তার। তিনি মিসেস মিতালীকে ফোনে কিছু দেখাতে দেখাতে বললো
- মেয়েটা কানাডা থেকে ডাক্তারি পাশ করেছে। দেখতে কতো সুন্দরী দেখেছো। আমাদের অভ্রের সাথে বেশ ভালো মানাবে।
তূবা বুঝে অভ্রের খালা মিসেস সাহানা নিশ্চয়ই অভ্রের জন্য মেয়ে দেখাচ্ছে মিসেস সোনালীকে। তার খুব বিরক্ত লাগে। নিজের ছেলে রেখে ভাইয়ের ছেলের বিয়ে নিয়ে এই মহিলার এতো মাথা ব্যথা কেন? নিজের ছেলেরও তো বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। এই ডাক্তার, সুন্দরী মেয়েকে তার ছেলের বউ বানাতে পারে না। যত্তসব।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৮)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন