উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৭)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৮)
সূর্য মাত্রই পূর্বদিকে উঠেছে। আলোর অভাবে যা কিছু এতোক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো না, তা সব এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাইতুস সালাম জামে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে, হাটতে হাটতে বুয়েট ক্যাম্পাসের ছয় নং গেইট বা সাদা গেইট দিয়ে ঢুকে কাব্য। আজকে তার এখানে শেষ দিন। কালকে সকালে বাসায় চলে যাবে সে। আজকেই চলে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হলে আজকে তাদের সিনিয়রদের জন্য পার্টি রাখায় আজকে যেতে পারবে না। কালকে সকালে যাবে। আর হয়তো আসা হবে না। বাসায় থাকলে সে প্রতিদিন সকালে জীম করে। পরীক্ষার পড়ার জন্য সে এতোদিন জীম করতে পারেনি। তাই সে মসজিদ থেকে বের হয়ে আশেপাশে হাটার সিদ্ধান্ত নেয়। সাথে শেষ বারের মতো আশেপাশের জায়গাগুলো একটু হেটে দেখাও হয়ে যাবে। দুপাশে বড় বড় গাছগাছালির মাঝে প্রশস্ত রাস্তা। গাছের ডাল পাতার ফাঁক দিয়ে আসা সকালের মিষ্টি রোদ সাথে বিশুদ্ধ বাতাস মধ্যে হাটতে খুব ভালো লাগছে তার। হঠাৎ পকেটে রাখা ফোনটা ভেজে উঠলো। এতো সকালে তাকে কে কল করেছে? নিশ্চয়ই তার মা হবে। ছেলের কথা সকাল সকাল মনে পড়তেই কল করেছে। সেও ভেবেছিল মাকে কল করবে, তবে নাস্তার পর। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে সে।রিসিভ করতে গিয়ে দেখে স্কিনে "মা" লেখার পরিবর্তে ভাসছে "পাপন" লেখা। পাপন এতো সকালে তাকে কল করেছে কেন? কথাটা ভাবতে ভাবতেই কল রিসিভ করে কানে দেয় সে। ফোন কানে ধরে কথা বলবে তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে পাপন বললো
- আসসালামু আলাইকুম ভাই।
কাব্য শান্ত কন্ঠে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। এতো সকালে কল দিলে যে?
পাপন নম্র কন্ঠে বললো
- ভাই অতুল নামের ছেলেটা আছে না, যার সম্পর্কে আপনি খোঁজ নিয়েছিলেন।
কাব্য হাটতে হাটতে ছোট করে বললো
- হুম্ম।
- একটা মাইক্রো সেই ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় আহসানউল্লাহ হলের সামনে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটাকে খুব মেরেছে।
পাপনের কথা শুনে হাটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি! কোথায় ও এখন? মেডিকেল সেন্টারে নিয়েছিস?
পাপন শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- হ্যাঁ ভাই, এখন ও মেডিকেলেই আছে।
কাব্য ব্যস্ত কন্ঠে বলল
- আচ্ছা। তুই থাক ওইখানে।ল, আমি আসছি।
বলেই পাপনের উত্তর অপেক্ষা না করে কল কেটে, ফোন পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে হাটা লাগায় বুয়েট মেডিকেল সেন্টারের দিকে।
দোলাদের বাসার সামনে রাস্তার পাশে একটা সাদা রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি এসে থামে। গাড়ির ভিতর থেকে পর পর নামে কুহু আর তূবা। গাড়িটা রাস্তার পাশেই পার্ক করা থাকে। কুহু আর তূবা গেইটের কাছে এসে দেখে গেইটটা ভিতর থেকে বন্ধ। দোলা গেইটে হাত দিয়ে বাড়ি দেয়। ভিতর থেকে গেইট খুলে দারোয়ান বের হয়ে আসে। কুহু আর তূবাকে সে চিনে। তাই তাদের দেখেই দারোয়ান বললো
- দোলা ম্যাম তো বাসায় নেই।
কুহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কোথায় গিয়েছে?
দারোয়ান উত্তর দিল
- জানি না।
এবার তূবা জিজ্ঞেস করল
- কিছু বলে যায়নি?
দারোয়ান পুনরায় উত্তর দিল
- না। আজকে, সকালে অনেক ব্যাগ টেগ নিয়ে স্যার, ম্যাম তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে কোথায় জানি গিয়েছে বলতে পারবো না।
কুহু পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কবে ফিরবে?
দারোয়ান স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- তাও জানি না।
কুহ ছোট করে বললো
- ওহ।
কুহু আর তূবা বুঝলো দারোয়ানকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই তারা দারোয়ানকে আর কোন প্রশ্ন না করে ফিরে যাওয়ার জন্য পিছন ঘুরে পা বাড়ায়। তখনই পিছন থেকে একটা মেয়ে মিষ্টি কন্ঠে, কেউ ডেকে বললো
- কুহু আপু, তূবা আপু।
কুহু আর তূবা দাঁড়িয়ে যায়। তারা পিছনে ঘুরে দেখে, দোলাদের বাসার কাজের মহিলার বারো বছরের মেয়ে মিষ্টি তাদের দিকে দৌড়ে আসতে আসতে তাদের ডাকছে। মেয়েটা তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে তাদের দিকে একটা চার ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো
- এটা দোলা আপু তোমাদের দিতে বলে গিয়েছে।
তূবা মিষ্টির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে খুলে। এটা দোলার হাতের লেখা একটা চিরকুট। টানা লেখা দেখে বুঝা যাচ্ছে চিরকুটটা খুব দ্রুত লেখা হয়েছে। তূবা আর দোলা একসাথে দাঁড়িয়ে মনে মনে চিরকুটটা পড়তে থাকে।
তাতে লেখা -
আমি জানি তোরা আমাকে ফোনে না পেলে বাসায় আসবি। কিন্তু তোরা যতক্ষণে বাসায় আসবি ততক্ষণে আমি তোদের থেকে অনেক দূরে থাকবো। জানি না কোথায়। আমাকে বাবা-মা বলেনি। তাই তোদের জন্য এই চিঠিটা লিখে মিষ্টির কাছে দিয়ে গেলাম। বাবা-মা আমার আর অতুলের রিলেশনের কথা জেনে গিয়েছে। আর তার জন্য আমাকে দেশের বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে। জানিস অতুলকে তারা আমার চোখের সামনে খুব মেরেছে। আমাকে বলেছে আমি যদি তাদের কথা না শুনি আর তোদের বা অতুলের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখি, তাহলে অতুলকে মেরে দিবে। তাই বাদ্য হয়েই এখন আমি তাদের সাথে যাচ্ছি। তবে আমিও তোদের বেস্টু, এতো সহজে হার আমি মানবো না। আমি এখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তাই তারা আমার উপর জোর খাটাতে পারছে। আমিও প্রমিজ করছি আমি ফিরবো প্রাপ্তবয়স্ক, উচ্চশিক্ষিত যেদিন হবো, সেদিন ফিরবো। সেদিন আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না, কেউ না। অতুলকে বলিস তার প্রণয়িনীর জন্য অপেক্ষা করতে। তার প্রণয়িনী শুধু তার। অন্য কারো কখনোই হবে না। সে যেন ভেঙে না পড়ে নিজেকে যোগ্য করে তুলে। যাতে ভবিষ্যতে তাকে কেউ অযোগ্য বলতে না পারে, অসহায় পেয়ে মারতে না পারে। আরও অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু লেখার সময় নেই। ওয়াসরুমে যাওয়ার নাম করে এই অল্প সময়ে এতোটুকুই লেখতে পেরেছি। ভালো থামিস আমার এক্সটা কলিজা দুটো।
দোলা চিরকুটটা পড়া শেষ হতে না হতেই কুহুর ফোনে কল আসে। কুহু ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্কিনে দিকে তাকিয়ে, ফোনের স্কিনে ভাসছে বাংলা ফরমেটে লেখা "কাব্য" নামটা। কুহু কল রিসিভ করে শান্ত কন্ঠে বললো
- আসসালামু আলাইকুম, কাব্য ভাইয়া।
কাব্য ফোনের ওপাশ থেকে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কুহু অতুলকে কারা জানি মেরে আহসানউল্লাহ হলের সামনে ফেলে দিয়ে গিয়েছে।
কুহু স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
- আমরা জানি। অতুল ভাইয়া এখন কোথায়?
কাব্য কিছুটা অবাক হয়। মনে প্রশ্ন জাগে, কুহু এতো তাড়াতাড়ি খবরটা কোথা থেকে পেল? কিন্তু প্রশ্নটা এখন অপ্রয়োজনীয় ভেবে জিজ্ঞেস না করে, কুহুর করা প্রশ্নের উত্তরে বললো
- অভ্র ভাইয়ার হসপিটালে।
কেবিনের বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে অতুল। তার পাশে টুল নিয়ে আছে তিথি চোখে তার জল ছলছল করছে। তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান, আহান, অভ্র, কাব্য, কুহু আর তূবা। অতুলের হাতে দোলার লেখা সেই চিরকুট। এটা কিছুক্ষণ আগে এখানে উপস্থিত সবাইকে পড়ে শুনিয়েছে তিথি। আয়ান রাগী কন্ঠে বললো
- সামান্য তিনটা গার্মেন্টস এর মালিক হয়ে এতো সাহস! এর খবর ,,,,,
আয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাধা দিয়ে অতুল বললো
- না ভাইয়া তাদের কেউ কিছু বলবে না।
আহান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কেন?
অতুল উত্তর দিল
- ওনারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরেছে দেখে, আমরাও যদি তাই করি তাহলে আমাদের আর ওনাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় হলো। তাছাড়া ওনাদের দোষই বা কি? গরীব, এতিম ছেলের কাছে কোন বাবা-মা মেয়ে দিতে চাইবে? তার উপর ওনার আমাকে তেমন চিনেও না। আমি যে তাদের সম্পত্তির জন্য তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না, তারই বা নিশ্চয়তা কি? আমি নিজেকে যোগ্য করে তুলি, দোলাও প্রাপ্ত বয়স্ক হোক। তারপর আমি তাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। তখন যদি তারা রাজী না হয়, তারপর দেখা যাবে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৯)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন