উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৮)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৩৯)

দীপকের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে নীলা। বিরক্তি আর সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর দীপকের দিকে তাকাচ্ছে সে। আর দীপক সে তো ফোন নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কি করছে আল্লাহ জানে! তিরিশ মিনিট হয়ে গেলো এখনো ক্লাইন্ট আসার নাম নেই। যে দীপক কি না পাঁচ মিনিট ক্লাইন্টদের আসতে লেট হলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। তার আজ তিরিশ মিনিট লেটেও কোন মাথা ব্যথা নেই! স্ট্রেঞ্জ! বুঝলাম অভি রহমান তার প্রানের বন্ধু। তাই লেট করলেও রাগারাগি করবে না। তাই বলে কি একবার ফোন করে জিজ্ঞেসও করবে না! কোথায় আছে? আসতে এতোক্ষণ লাগবে? আচ্ছা সত্যিই কি মিটিং আছে নাকি তাকে রেস্টুরেন্টে আনার জন্য সব সাজানো নাটক। কথাটা মনে আসতেই দুপুরের কথা গুলো ভাবতে থাকে নীলা।

আজকে দুপুর বারোটার পর -----------
দীপকের দিকে দুটো ফাইল এগিয়ে দিয়ে নীলা বললো
- স্যার আরকে কোম্পানির ফাইল গুলো।
দীপক ফাইল নিয়ে চোখ ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে বিশ মিনিট। তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো
- ওহ শিট। বারোটা বিশ বেজে গিয়েছে তাড়াতাড়ি চল।
নীলা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কোথায় যাবো স্যার?
দীপক তাড়াহুড়ো করে বললো
- মিটিং এ।
নীলা অবাক হয়ে বললো
- মিটিং এ! আমার জানামতে আজকে তো কোন মিটিং নেই স্যার!
দীপক হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গি করে বললো
- ওহ তোমাকে তো বলাই হয়নি। আজকে দুপুর সাড়ে বারোটায় অভির সাথে মিটিং আছে।
নীলা জিজ্ঞেস করল
- দু'দিন আগেই তো ডিল সাইন হলো, তাহলে আজকে আবার কিসের মিটিং?
দীপক দরজা দিকে পা বাড়িয়ে বললো
- ওই ডিলটা নিয়েই মিটিং। চল।
তারপর তারা এই রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে।
বর্তমানে ----------
কেটে গেল আরও মিনিট দশেক। রাগে মুখে জোর পূর্বক নকল হাসি ফুটিয়ে নীলা জিজ্ঞেস করল
- স্যার মিষ্টার অভি কি আসবে?
নীলার মুখে জোর পূর্বক নকল হাসি দেখে দীপক বুঝে যে সে রেগে আছে। ভীত মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে উত্তর দিল
- ফোন করে দেখছি।
দীপক অভির ইন্টারন্যাশনাল নাম্বারে ফোন করে। নীলাকে শোনানোর জন্য কলটা লাউড স্পিকারে দেয়। অভি ফোন রিসিভ করতেই দীপক বলে উঠলো
- কই তুই আর এতোক্ষণ লাগবে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক এ অবস্থিত এম্বাসিডর হোটেল এর লিফট থেকে বের হতে হতে অভি বললো
- সরি রে দোস্ত একটা কাজ পরে গেছে। কাজটা শেষ করেই আমি আসবো।
দীপক গম্ভীর কন্ঠে বললো
- তাড়াতাড়ি আয়, আমরা বসে আছি।
- আচ্ছা।
বলেই অভি ফোন কেটে দেয়। তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে বললো
- ওর, একটু লেট হবে। চলো আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেলি খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
কথা বলেই দীপক ওয়েটারকে ডাকে
- ওয়েটার।

নীলা আর কিছু বলে না। অভি যেহেতু ফোনে কথা বলেছে, তাই সে আর সন্দেহও করে না। কিন্তু সে কি আর জানে, তার সন্দেহই ঠিক ছিল। সে তো এটাও জানে না যে অভি দেশে নেই। আর দীপক অভিকে আগেই কল করে তার প্ল্যানের কথা বলেছে সাথে সে কল করলে এই কথাগুলো বলতেও বলে দিয়েছিল। ভাগ্যিস জানে না! জানলে দীপকের খবর ছিল।


- এই মেয়ে এখানে কি করছে?
রাগী কন্ঠে অভ্রকে প্রশ্ন করে তূবা। অতুলকে হসপিটালে দেখতে এসে, অভ্রের জন্য তার ফুফুর আনা সেই পাএীকে দেখেই রেগে যায় সে। তাই অভ্রের কেবিনে ঢুকেই রাগী কন্ঠে এই প্রশ্ন করে সে। অভ্র নিজের কেবিনে বসে একটা পেসেন্টের ফাইল দেখিছিল। হঠাৎ ঠাস করে কেউ কেবিনের দরজা খুললে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকায় সে। তার কেবিনে অনুমতি ছাড়া একমাএ তূবাই ঢুকতে পারে। আর তূবা যে আজকে হসপিটালে আসবে তা সে আগে থেকেই জানতো। কিন্তু তূবা এতো রেগে আছে কেন আর কোন মেয়ের কথা বলছে তা বুঝতে না পেরে অভ্র পাল্টা প্রশ্ন করল
- কোন মেয়ের কথা বলছিস তুই?
- তোমার ফুফুর ঠিক করা পাএীর কথা বলছি আমি।
- ওহ ডলির কথা বলছিস তুই। ও তো এই হসপিটালের ডাক্তার হিসেবে জয়েন করেছে।
- কে জব দিয়েছে?
- আমি দিয়েছি, ডলি খুব ভা ,,,,,

অভ্রকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে তূবা বললো
- দেখ আমি এই মেয়ের গুণাবলী আর শুনতে চাই না। অনেক শুনেছি তোমার ফুফুর কাছ থেকে। শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গিয়েছে। তুমি আজকেই একে এই হসপিটাল থেকে বিদায় করবে।
- দেখ তূবা সব সময় ছেলেমানুষী করলে হয় না। ডলির যোগ্যতা আছে দেখেই সে জবটা পেয়েছে।
- তোমার কি মনে হয় আমি কিছু জানি না। হসপিটালে কেউ একটা কাশি দিলে, তার খবরও যায় আমার কাছে। এই মেয়ে যে রোগী দেখার থেকে বেশি তোমার পিছু ঘুরে বেড়ায়, তাও আমি জানি। দেখ আমার এই মেয়েকে তোমার পাশে একদম সহ্য হয় না।  তুমি ওকে হসপিটাল থেকে বের না করলে আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিব।
এই ডলি নামক মেয়েটার উপর অভ্র নিজেও খুব বিরক্ত। মেয়েটা নিঃসন্দেহে খুব ব্রিলিয়ান্ট, কিন্তু কাজে তার কোন মনোযোগ নেই। আছে শুধু তার পিছন পিছন ঘুরার ধান্দায়। কিন্তু তূবা যেই অধিকার খাটাতে চাইছে, তাও সে দিতে চায় না। অভ্রের খুব রাগ হয়। মেয়েটাকে এতো বোঝানোর পর কেন যে বুঝতে চায় না। রাগী কন্ঠে বললো
- বলিস না যা।
অন্য একটা মেয়ের জন্য, অভ্র তাকে তার সাথে কথা বলতে না করে দিল! অভ্রের আদরে আহ্লাদে বড় হওয়া তূবা অভ্রের মুখ থেকে এমন কথা শুনে খুব কষ্ট পায়। আর কোন কথা সে বলে না। শুধু ছলছল চোখে অভ্রের দিকে একবার তাকিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে যায়।


গাড়ি পাঁচ মিনিট চলে তো দশ মিনিটই বসে থাকে। তিরিশ মিনিটের রাস্তা একঘন্টাও শেষ হয়নি। কিন্তু তাতে তার বিন্দুমাত্র বিরক্ত নেই, নেই কোন অভিযোগ। সে তো উল্টে মহাখুশি। মনে মনে ভাবে এই জ্যাম সারাদিনেও না ছাড়লে খুব ভালো হতো। ভাবতে গিয়ে গান গাওয়া শুরু করল
- এই জ্যাম যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
নীলা বিরক্ত নিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল, দীপকের মুখে এমন গান শুনে রাগী চোখে তার দিকে তাকায় সে। দীপক নীলার রাগী চোখ দেখে বোকার মতো হেসে বললো
- না মানে হঠাৎ গানটা মাথায় এলো তাই ,,,,

কথাটা পুরোটা না শেষ করে আবার হেসে সামনের দিকে তাকায়। সিগনাল ছেড়ে দেওয়া ধীরে গাড়ি চালাতে থাকে। নীলা রাগী কন্ঠে বললো
- স্যার অভি স্যারের জন্য শুধু শুধু বসে থেকে আর এই জ্যামে বসে থেকে আমাদের অনেক টাইম ওয়েস্ট হয়ে গিয়েছে। অফিসে অনেক কাজ পরে আছে। প্লিজ স্যার তাড়াতাড়ি চলুন।
দীপক গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো
 - তুমি পুরো আমার বাবার মতো কাজ পাগল। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় কি জানো? আমি আমার বাবার ছেলে না। তুমিই আমার বাবার মেয়ে। আচ্ছা এমন তো হতে পারে ছোটবেলা হসপিটালে আমরা এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছি।
নীলা দাতে দাত চেপে বললো
- না স্যার হতে পারে না। কারণ প্রথমত আমার জন্ম কোন হসপিটালে হয়নি, বাসায় হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত আমি আপনার থেকে এক বছরের ছোট।
দীপক নীলার কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো
- হুম্ম তাও তো ঠিক।

নীলা আবার জানালা দিয়ে বাহিরের চলন্ত গাড়ি দেখতে দেখতে ভাবতে থাকে, "দুনিয়াতে এতো কর্মঠ লোক থাকতে, তাকে এমন একটা অলস লোকের পিএই হতে হলো। যাকে ঠেলা গাড়ির মতো ঠেলে ধাক্কিয়ে চালাতে হয়।" হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করায় নীলা দীপকের দিকে তাকায়। দীপক রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করেছে। নীলা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
- স্যার এখানে গাড়ি পার্ক করছেন কেন?
দীপক সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বললো
- ঐ দেখ ফুচকা।
নীলা সামনে তাকিয়ে দেখে রাস্তার পাশে একটা ফুচকার গাড়ি। তা দেখে পুনরায় দীপকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- তো?
- তো আবার কি, আমার এখন ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। চল, চল।
বলেই দীপক গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নীলার রাগে দীপকের মাথাটা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এতো বড় একজন বিজন্যাসমেনের ছেলে এমন হয় কিভাবে? এখন নীলারও সন্দেহ হচ্ছে দীপক সত্যিই আফরান  আহাম্মেদের ছেলে তো?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪০)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন