উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪১)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪২)

ফর্সা গায়ে কালো রঙের সেলোয়ার-কামিজ। কমরের একটু উপর পর্যন্ত লম্বা থ্রি স্টেপ করে কাটা চুলগুলো খোলা। কপালে ছোট কালো টিপ। ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। পায়ে সব সময়ের সেই নুপুর জোড়ায় রিনিঝিনি শব্দ তুলে কিরণের সাথে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় কুহু। কাব্য গেটের পাশে দাঁড়িয়ে লতিফ মিয়া ছাড়া দ্বিতীয় যে দারোয়ানটা আছে তার সাথে কথা বলছিল। কুহুর নুপুরের শব্দ কানে যেতেই কাব্য দারোয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো রিকশার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কুহুর উদ্দেশ্যে বললো
- কুহু তুমি আর কিরণ এই রিকশায় উঠো। আমি পিছনের রিকশাটায় করে আসছি।
কুহু কপাল কুঁচকে বললো
- দুইটা রিকশার কি দরকার! একটাতেই তো উপর নিচে বসে যাওয়া যাবে।
কাব্য তাড়া দিয়ে বললো
- চাপাচাপি করার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি উঠো না হলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
কুহু আর কিছু না বলে রিকশায় উঠে বসে। পিছু পিছু কিরণও উঠে পড়ে। তারা রিকশায় উঠে বসলে কাব্য কুহুর দিকে তাকাতেই দেখে কুহুর ওড়নার শেষ প্রান্ত ঝুলে আছে। কাব্য কুহুকে ডেকে বললো
- কুহু ওড়না তুলে বস।

কুহুর কোন নড়াচড়া নেই। সে না শোনার ভান করে বসে আছে। কাব্য বুঝলো কুহু রাগ করেছে। এখন সে শত বললেও শুনবে না। তাই নিজেই ঘুড়ে গিয়ে ওড়নার প্রান্ত তুলে কুহুর কোলে তুলে দেয়। কুহু না ধরায় কাব্য তুলে দেওয়ার সাথে সাথে ওড়নার প্রান্তটা আবার পড়ে যায়। কাব্য আবার তুলে দিতে দিতে বললো
- ওড়নাটা ধর।
কুহু শোনে না। আগের মতোই স্থির হয়ে বসে থাকে। যার ফলে ওড়নাটা আবার পরে যায়। কাব্য এবার ডান হাতে কুহুর বাম হাত হালকা উঁচু করে তার নিচে ওড়নাটা রেখে দিতে দিতে নম্র কন্ঠে বললো
- ওনাদেরও তো কষ্ট হয়, এতোগুলো মানুষকে নিয়ে রিকশা টানতে। একটু বুঝার চেষ্টা করো কুহুরানী, প্লিজ।

কাব্যের কথায় কুহুর রাগ কমলেও সে কাব্যের সাথে কথা বলে না। চুপচাপ ওড়ানা ভালো করে ধরে বসে। য়আ দেখে কাব্য হালকা একটু হাসে। তারপর কিরণের দিকে তাকিয়ে বললো
- ভালো করে ধরে বসিছ।
কিরণ মিষ্টি হেসে মাথার ঝাকড়া চুলগুলো ঝাকিয়ে বললো
- আচ্ছা ভাইয়া।
কাব্য এবার রিকশা চালককের উদ্দেশ্যে বললো
- আস্তে ধীরে চালিও মামা।
রিকশা চালক হালকা হেসে বললো
- আইচ্ছা মামা।
বলেই রিকশা চালক রিকশা চালানো শুরু করে। কাব্য গিয়ে পিছনের রিকশায় উঠে বসলে সেই রিকশা চালকও রিকশা চালাতে শুরু করে। কুহুদের রিকশা আগে আগে আর কাব্যের রিকশা তার পিছু পিছু। কুহু চোখেমুখে বিরক্ত ভাব ফুটিয়ে কিরণের দিকে তাকিয়ে আছে। কিরণ অসহায় ভাবে বললো
- আমি কি করেছি ভাবি? আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?

কুহু অভিযোগের সুরে বললো
- ওনাদের কষ্ট হয়! আর আমি যে ওনার সাথে এক রিকশার ঘুরবো বলে, এক্সামের পড়া রেখে ট্রিটের উছিলায় উনার সাথে বের হয়েছি। ওনার জন্য সেই সকাল থেকে সাজগোজ করছি। দুটো প্রশংসা করবে তো দূরের কথা, তাকিয়েও দেখেনি। আমার এত খাটুনী, এতো কষ্ট, ওনার চোখেই পড়ে না। তোর ভাই আমার কষ্ট ছাড়া দুনিয়ার সবার কষ্ট বুঝে। সবার কষ্ট ওনার চোখে পড়ে।
কিরণ কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করল
- আচ্ছা ভাবি, তুমি ভাইয়াকে প্রপোজ করছো না কেন?

কুহু একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মলিন কন্ঠে বললো
- তোর কি মনে হয়, আমি ভালোবাসি বললেই তোর ভাইয়া আমাকে এক্সেপ্ট করবে? আরে তোর ভাইয়া তো বিশ্বাসই করবে না। আমি তাকে প্রপোজ করলে আমাকে বলবে, কাউকে পছন্দ করো? তাকে প্রপোজ করবে? এখন তোমার লেখাপড়ার বয়স। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার সময়। ব্লা ব্লা ব্লা ,,,,,,,। তাকে যে আমি প্রপোজ করতে পারি তা সে বিশ্বাসই করবে না। উল্টো এটা মনে করে কষ্ট পাবে যে তার গায়ের রং কালো বলে আমি তাকে প্রপোজ না করে, তার সাথে প্রপোজের প্রেক্টিজ করছি। কেন তোর ভাই বুঝেনা যে, ভালোবাসায় গায়ের রঙে কিছু আসে যায় না। কেন বুঝে না কারো প্রিয় হতে হলে সুন্দর গায়ের রঙ লাগে না, সুন্দর একটা মন থাকলেই হয়।

চোখ জোড়া পিটপিট করে নিজের কান্না আটকায় কুহু। কিরণ চোখের নোনা জল ছেড়ে দিয়ে বললো
- যদি চোখ, কিডনির মতো গায়ের রং ট্রান্সফার করা যেত। তাহলে আমি পৃথিবীর সবথেকে ফর্সা গায়ের রঙটা ভাইয়ার জন্য কিনে এনে ভাইয়াকে ট্রান্সফার করে দিতাম। আর না হয়, আমার গায়ের রঙটা ভাইয়াকে ট্রান্সফার করে দিতাম।
কুহু মিষ্টি হেসে কিরণের চোখের পানি মুছে দেয়। কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো
- কিছু ট্রান্সফার করতে হবে না। আমাদের ভালোবাসায় একদিন না একদিন তোর ভাই ঠিকই বুঝবে।


অভ্রের কেবিনে চলতে দুই বন্ধু অভ্র আর মুরাদের কথপোকথন। স্কুল লাইফ থেমে তারা দুজন বন্ধু। যদিও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতে পারে, তা কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। কারণ দুজন দুই রাজ্যের বাসিন্দা। অভ্র সারাদিন বই নিয়ে থাকতো আর মুরাদ খেলাধুলা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে, এই দুই প্রান্তের মানুষ বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল কলেজ একসাথে থাকলেও, কলেজের পর থেকে দুই বন্ধুর গন্তব্য আলাদা হয়ে যায়। অভ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ পড়ে আর মুরাদ যোগ দেয় আর্মিতে। এখন অভ্র ডাক্তার আর মুরাদ আর্মি অফিসার। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মুরাদ জিজ্ঞেস করল

- তা তূবার কি খবর?
অভ্র স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল
- জানিনা।
মুরাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- জানিস না মানে?
অভ্রের সোজাসাপ্টা উত্তর 
- কথা হয়নি ওর সাথে।
মুরাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল 
- কেন?
অভ্র শান্ত কন্ঠে বললো
- ওর পাগলামি ইদানীং আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
মুরাদ চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- তুই কি ডিজিটাল যুগের দেবদাস হওয়ার প্ল্যান করছিস না কি?
অভ্র কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো
- কি সব পয়েন্ট লেস কথাবার্তা বলছিস।

- পয়েন্ট লেস কথা আমি মোটেও বলছি না। বরং তুই যে সব কারণে তূবাকে নিজের সাথে জড়াতে চাচ্ছিস না, সেগুলো পয়েন্ট লেস। তুই কি পারবি তূবাকে ছাড়া থাকতে? এই যে তুই বললি তুই জানিস না তূবা কেমন আছে। কথাটা কি আদৌও সত্য! আমি জানি তুই লুকিয়ে চুরি করে ঠিকই সময় করে তূবাকে দেখে আসছিস। কষ্টটা দিচ্ছিস শুধু মেয়েটাকে।
অভ্র কোন কথা বলে না, চুপ করে থাকে। বলবে কি করে মুরাদের কথা যে সত্যি। তূবার সামনে না গেলেও, প্রতিদিন তূবার কোচিংএ গিয়ে তাকে দেখে আসে সে। মেয়েটাকে সে না দেখে থাকতে পারে না। একদমই পারে না। মেয়েটার বিষন্ন মুখটা দেখেও তার খুব কষ্ট হয়। কিন্তু ,,,,,,। মুরাদ আবার বললো
- যেখানে তূবাকে তুই নিজের আপন ফুফাতো ভাইয়ের সাথে দুটো কথা বললতে দেখলে রেগে যাস, সেখানে তুই কি পারবি অন্য কারো পাশে তূবাকে দেখতে? যেই তূবার থেকে দূরে থাকতে হবে দেখে তুই বিদেশে গেলিনা। পারবি তাকে অন্যের ঘরে পাঠিয়ে থাকতে। তূবার যার সাথে বিয়ে হবে সে নিশ্চয়ই তার বউকে দুদিন পর পর প্রমিকের বাড়ি আসতে দিবে না। এমনও হতে পারে সে তোর সাথে তূবার দেখা সাক্ষাৎই বন্ধ করে দিল। পারবি তো তোর তূবাসোনাকে ছাড়া বাঁচতে?
অভ্র ম্লান কন্ঠে বললো
- কিন্তু ও আমার থেকে অনেক ছোট। আমি ওর বড় ভায়ের থেকেও দুই বছরের বড়। ওর সাথে আমার বিয়ে হলে মানুষ কি বলবে।
মুরাদ বিস্মিত হয়ে বললো
- ভালোবাসায় বয়স কোন বিষয় হল! যেখানে তোদের মনের এতো মিল, সেখানে তুই বয়স ধরে বসে আছিস! আর প্লিজ আশেপাশের মানুষের কথা ভেবে নিজের আর তূবার জীবনটা নষ্ট করিস না। তূবা তোর না হলে, না তুই সুখী হবি আর না তোর তূবাপাখি সুখী হবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৩)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন