উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪০)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪১)
বোর্ডে লিখে লিখে পড়া বুঝাচ্ছে রিশান। অন্যদিনের মতো আজকে হাস্যজ্জল মুখ করে নেই সে। আজকে তার মুখটা গম্ভীর, ভীষণ গম্ভীর। তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিশা ভাবছে কালকের ঘটনা।
কালকে রিশানের কেবিন থেকে বের হওয়ার পর -------
নিশা তোয়াকে বললো
- আমার খুব ভয় হচ্ছে। চিঠিটা যদি অন্য কারো হাতে পরে যায়।
তোয়া দাত কেলিয়ে বললো
- পরলে তো ভালোই হবে। ভার্সিটির সবাই ধরে তোর আর রিশান স্যারের বিয়ে দিয়ে দিবে।
- ফাজলামি না আমি সিরিয় ,,,,,,,,,,
তোয়া নিশাকে আর বলতে দেয় না। নিশার ঠোঁটে সামনে নিজের আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলে। হাত ধরে টানতে টানতে রিশানের কেবিনের জানালার পাশে এনে দাঁড় করায়। তোয়া তাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে কেন তা বুঝতে না পেরে অবাক চোখে তোয়ার দিকে তাকাতেই, তোয়া ইশারায় কেবিনের ভিতরে দেখতে বললো। নিশা কেবিনের ভিতরে তাকিয়ে দেখে কেবিনের ভিতরে রিশান বসে বসে তাদের কেবিন ঢুকার আগে যেই বইটা দেখছিল সেই বইটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁট দুটো নেড়ে নেড়ে কিছু কিছু লাইন নিজের মনে আওড়াচ্ছে। নিশা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছে। কিছুক্ষণ পর রিশান বইটা বন্ধ করে পাশ থেকে অন্য একটা বই নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই তার চোখে পরে টেবিলের উপর রাখা সাদা রঙের খামটার দিকে। কৌতুহলী চোখে খামটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এটা কিসের খাম? কার খাম? এটাতো তার খাম নয়! খামটা এখানেই বা এলো কোথা থেকে? সে তো এটাকে আগে দেখেনি। পরক্ষনেই তার মনে পরে কিছুক্ষণ আগে তোয়া আর নিশা এসেছিল। আর ঠিক এখানেই নিশা তার বই খাতা সব বের করেছিল। হয়তো তখনি তার ব্যাগ থেকে পড়েছে এই খামটা। রিশান নিশাকে খামটা দিয়ে দিবে ভেবে হাতে তুলতেই তার চোখে পরে খামের উপর লেখা "প্রেমপএ" শব্দটির উপর। প্রেমপত্র! নিশা এখানে প্রেমপত্র রেখে গিয়েছে। তাহলে কি নিশা তাকে ,,,,,,,,। ভাবনাটা সম্পূর্ণ না করেই খামটা খুলে চিঠিটা পড়া শুরু করলো সে। খামটার খুলে এক এক লাইন করে পড়ছে আর তার চেহারার রং পাল্টাচ্ছে। তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। চিঠিটা পড়া শেষ হতেই একটান দিয়ে চিঠিটা ছিড়ে ফেলে সে। তারপর আরো কয়েকটা টান দিয়ে ছিড়ে কুটিকুটি করে পাশে রাখা ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দেয় সে। অবাক চোখে তাকিয়ে সবটা দেখে নিশা। তার পাশে দাড়ানো তোয়াও সবটা দেখে মিটি মিটি হাসছে। কিন্তু নিশা রিশানকে দেখায় সে এতোটাই মত্ত যে আশেপাশের আর কোন কিছুর দিকে তার খেয়াল নেই। রিশান টেবিলের উপর থেকে একটা বই নিয়ে বাহিরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিশাকে টেনে নিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পাশের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে তোয়া। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটিয়ে তোয়া বললো
- আল্লাহ চিঠি পড়েই এতো রাগ, তুই কোন ছেলে নিয়ে ঘুরলে স্যার কি করবে ভাব।
হাপাতে হাপাতে নিশা বললো
- এমনও তো হতে পারে, ওনার কেবিনে এমন আজেবাঝে চিঠি রেখে এসেছি দেখে উনি রাগ করেছে।
- এমন হলে তো চিঠি দেখেই স্যার রাগ করতো। কিন্তু স্যার তো চিঠি পড়ার পর রাগ করেছে।
- হয়তো উনি ভেবেছে তুই ওনাকে চিঠি দিয়েছিস। তাই খুশি ,,,,,,,,,,।
নিশা আর কিছু বলার আগেই তোয়া রেগে বললো
- আসলে আমারই ভুল হয়েছে। যে মানুষটি নিজেকে ভালোবাসে না। নিজেকে সবসময় হেয় চোখে দেখে, সে অন্যের ভালোবাসা কিভাবে বুঝবে!
কথাটা বলেই রাগ করে গেটের দিকে হাটা দেয় তোয়া। গেইড দিয়ে বের হয়ে রিকশা করে সোজা বাসায় চলে যায় সে। নিশা পিছন থেকে ডাকলেও শুনে না। অনেকবার ফোন করলেও রিসিভ করে না। সকালে ক্লাসে এসেও তার সাথে কথা বলেনি।
বর্তমানে ----------------
চোখে ঘুরিয়ে পাশে বসা তোয়ার দিকে তাকায় নিশা। তোয়া মনোযোগ দিয়ে খাতায় লিখছে। তার দিকে তাকাচ্ছে না। নিশা ভাবতে থাকে কিভাবে তোয়ার রাগ ভাঙানো যায়। এদিকে রিশান অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে নিশা ক্লাসে অমনোযোগী। কি যেন ভাবছে। মনে পড়ে যায় কালকের চিঠিটার কথা। মনে প্রশ্ন জাগে, নিশা সেই চিঠির ছেলেটির কথা ভাবছে? প্রশ্নটা মাথা আসতেই তার রাগ উঠে যায়। রেগে ধমকে বললো
- নিশা স্ট্যান্ড আপ।
রিশানের ধমকে নিশার ভাবনার সুতো কাটে। তোয়ার থেকে চোখ সরিয়ে রিশানের দিকে তারাতেই দেখে চোখ মুখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে সে। নিশা, তোয়াসহ ক্লাসের সবাই অবাক হয় রিশানের ধমক শুনে। রিশানকে সবসময় হাসিখুশি দেখেছে সবাই। গত দেড় বছরে কখনো কারোর উপর রাগ করতে বা কাউকে ধমক দিতে দেখেনি কেউ। রিশান আবার ধমকে বললো
- এই বেয়াদব মেয়ে তোমাকে দাঁড়াতে বলেছি না। কথা কানে যায় না।
নিশা তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে যায়। রিশান রাগী কন্ঠে বললো
- স্টুডেন্ট একটু ভালো দেখে টিচারদের কি সম্মান করতেও ভুলে গিয়েছ। টিচার ক্লাসে বুঝাচ্ছে তুমি অমনোযোগী, টিচার তোমাকে দাঁড়াতে বলছে আর তুমি বসে আছো।
নিশা মাথা নিচু করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- সরি স্যার।
রিশান আবারও রাগী কন্ঠে বললো
- সরি বললেই তো সব দোষ শেষ, তাই না!
তোয়া মলিন মুখে বললো
- আসলে স্যার ,,,,,,,,,,
তোয়াকে আর কিছু না বলতে দিয়ে রিশান বললো
- শাট আপ তোয়া। আমি তোমাকে কথা বলার পারমিশন দেয়নি।
তারপর নিশার দিকে তাকিয়ে বললো
- আর তুমি হয় দাঁড়িয়ে ক্লাস করো। না হয় ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও।
নিশা ক্লাস থেকে বের হয়নি। ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাস করে সে।
বিছানা নিয়ে প্রথম দিনের পর থেকে আর ঝগড়া করেনি রোদ আর দীপ্তি। সেদিন ঝগড়া করেই সারারাত ঘুম হয়নি দুজনের। তাই আর নিজের পায়ে কুড়াল মারার জন্য সেই কাজ আর করে না তারা। তবে এটা সেটা নিয়ে ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে তাদের মধ্যে। যেমন একটু শীত পড়ার পর থেকে রুমের ফ্যান ছাড়া আর অফ করা নিয়ে যুদ্ধ চলছে। দীপ্তির শীত বেশি আর রোদের গরম বেশি। তাই একটু শীত পড়ায় দীপ্তি রুমের ফ্যান ছাড়তে দেয় না, এসি তো কোন দূরের কথা। রুমের মধ্যে এখনো তাই চলছে। রোদ ফ্যান ছাড়ছে, দীপ্তি গিয়ে অফ করছে। আবার রোদ ফ্যান ছাড়লে। দীপ্তি সুইচের অফ করে দেয়। রোদ বিরক্ত হয়ে বললো
- দেখ দীপ্তি আমার খুব গরম লাগছে, ফ্যান ছাড়ো।
দীপ্তি পাল্টা বললো
- আমারও খুব শীত করছে।
- শীত করলে সোয়েটার পর!
- সোয়েটার পরলে গরম লাগে।
রোদ ফ্যানের সুইচের দিয়ে বললো
- আমার রুমের সব কিছু আমার ইচ্ছায় চলবে।
দীপ্তি ফ্যানের সুইচটা অফ করে বললো
- এখন এটা আমারও রুম। তো সব কিছু আমার ইচ্ছায় চলবে।
রোদ ঝট করে দীপ্তিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে, পাশে থাকা কম্বল দিয়ে দীপ্তিকে পেঁচিয়ে দেয়। দীপ্তি নিজেকে কম্বলের পেঁচ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে করতে বললো
- এই, এই ছাড়ুন বলছি। এটা কিন্তু চিটিং হচ্ছে। আপনি নিজের শক্তির অপব্যবহার করছে।
রোদ পাশে থাকা দীপ্তির ওড়না দিয়ে কম্বলে পেঁচানো দীপ্তিকে বাঁধতে বাঁধতে বললো
- পারলে তুমিও কর। না করেছে কে?
- খুলুন বলছি। না হয় কিন্তু আমি চিৎকার করবো।
- কর কোন সমস্যা নেই। তবে তার আগে জেনে নেও, এই রুমটা সাউন্ড প্রুফ।
- খুলুন না। খুলুনননন বলছি।
রোদ বাঁধা শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই, বিছানায় থাকা বালিশের উপর রাখা দীপ্তির ফোনটা ট্রিং ট্রিং শব্দ করে ভেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ভাসছে দীপকের নাম। দীপ্তি হাসি মুখে বললো
- এবার তো আপনাকে ছাড়তেই হবে।
রোদ দীপ্তির বাঁধন খুলে দিয়ে বললো
- যাও, দীপকের জন্য এবারের মতো বেঁচে গেলে।
দীপ্তি রোদকে ভেংচি কেটে, গিয়ে দীপকের ভিডিও কল রিসিভ করে। দীপকের কল রিসিভ করতেই স্কিনে দীপকের পরিবর্তে ভেসে উঠে তূবা আর তোয়ার ছবি। তূবার রুমের খাটে তোয়া বসে আছে আর তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে তূবা। চোখ মুখ লাল, চোখ ভর্তি পানি। দীপ্তি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে অভ্র ভাইয়ার তূবাপাখির? কান্না করছে কেন?
ফোনের ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে দীপক বললো
- অনেক কিছু।
দীপক দীপ্তিকে হসপিটালে তূবা আর অভ্রের কথোপকথন বললো। সাথে গত তিনিদিন ধরে যে অভ্র তূবার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি তাও বললো। সব শুনে দীপ্তি বললো
- নাহ এবার তো অভ্র ভাইয়ার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
দীপক প্রশ্ন করল
- কি করবি তুই?
দীপ্তি বাঁকা হেসে বললো
- সেটা কালকেই দেখতে পাবি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪২)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন