উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪২)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৩)

সকাল থেকে কাজে কোন মনোযোগ নেই অভ্রের। কালকে রাতেও ঘুম হয়নি। মুরাদের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু। সত্যি বলতে তূবার বিয়ে সংসার এসব কিছু নিয়ে আগে সে ভাবেইনি। তূবা এভাবেই আসবে যাবে এর মধ্যেই তার চিন্তা সীমাবদ্ধ ছিল। তূবার বিয়ে হবে, সে অন্য কার ঘরে যাবে, তার সাথে দেখা হবে না এসব কথা ভাবতেই নিজেকে শ্বাসকষ্টের রুগী মনে হয় তার। হঠাৎ সাদা এপ্রোনের পকেটে থাকা ফোনটা টুট টুট শব্দ করে উঠলো। অভ্র পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে তূবার মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করে দেখে তূবা একটা ভিডিও সেন্ড করেছে। হঠাৎ তূবা তাকে কি ভিডিও সেন্ড করেছে তা দেখার জন্য ভিডিওটা ওপেন করতেই, ফোনের স্কিনে ভেসে উঠে তূবার মলিন মুখখানি। তূবার মুখটা দেখেই অভ্রের বুকে ব্যথা শুরু হয়। কালকেও তো মেয়েটাকে মোটামুটি ভালো দেখে এসেছিল। কোচিং করে কুহুর সাথে গল্প করতে করতে বের হচ্ছিল। ভিডিওতে তূবা ম্লান হেসে বললো

- কেমন আছো অভ্র ভাইয়া? আমি না আজকে তোমার ইচ্ছা পূরণ করবো। তুমি তো চাও আমি যেন তোমার কাছ থেমে দূরে থাকি। আজকে আমি তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আর কখনো আসবো না, তোমাকে ডিস্টার্ব করতে। যদিও আমার খুব খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার থেকে দূরে যেতে। সেই ছোট থেকে তোমার পাশে থেকে থেকে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে যে। তোমার মনে আছে অভ্র ভাইয়া ছোটবেলায় আমি আর তুমি মিলে পুতুল খেলতাম, রান্না বাটি খেলতাম, ফুটবল খেলতাম, লুকোচুরি খেলতাম আরও কতো খেলা খেলতাম। মনে পড়ে তোমার, তুমি আমাকে বই মেলায় নিয়ে যেতে। মেলায় ঢুকার আগে আমি বায়না করতাম ফুল কেনার জন্য, তুমি ফুল কিনে আমার মাথায় পড়িয়ে দিতে। সব সময় আমার সব আবদার পূরণ কর তুমি, আমাকে আগলে রাখ তুমি। ছোটবেলা থেকেই তুমি আমার কাছে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলে। মুখে তোমাকে ভাইয়া ডাকলেও, তোমাকে কখনোই আমি দীপক ভাইয়ার মতো ভাই ভাবতে পারিনি। কখনো এটাও মনে হয়নি যে তুমি আমার থেকে অনেক বড়। জানো খুব খুশি লাগতো এটা ভেবে যে আমি ছোটবেলা থেকেই আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে আছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোমার কাজিন হয়ে জন্মেছি বলেই, আমি তোমার হলাম না।

চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে তূবার। চোখ, মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। নাক টেনে, দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে তূবা আবার মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- আমি তো ছোট থেকেই তোমার সব কথা শুনি, এটাও শুনলাম। তোমাকে খুশি করানোর জন্য।
হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে একটা ট্যাবলেটের পাতা নেয় সে। পাতাতে থাকা সবগুলো ট্যাবলেট খুলে হাতে নেয়।অভ্র দেখার চেষ্টা করে এটা কোন ট্যাবলেটের পাতা। কিন্তু বুঝতে পারে না। তূবা সবগুলো ট্যাবলেট একসাথে মুখে দিয়ে পাশে রাখা তার পানির মগের সব পানি ডগ ডগ করে খেয়ে বললো
- খুব, খুব ভালোবাসি তোমাকে অভ্র ভাইয়া। ভালো থেকো তুমি।

ভিডিও শেষ হয়ে যায়। ভিডিওটি শেষ হতেই অভ্র তাড়াতাড়ি কল করে তূবার ফোনে। যান্ত্রিক কন্ঠস্বর খুব সুন্দর করে জানিয়ে দেয়, ফোনটি এখন বন্ধ আছে। অভ্র আরও কয়েকবার ফোন করে। কিন্তু বার বার ফোনের ওপাশ থেকে একই কথা ভেসে আসে। অভ্র দ্রুত পায়ে পার্কিং লটের দিকে যেতে যেতে মিসেস সোনালীকে ফোন করে। প্রথমবার রিং হয়ে কেটে যায়। কেউ রিসিভ করে না। গাড়ি চালাতে চালাতে আবার ফোন করে মিসেস সোনালীকে। মিসেস সোনালী ফোন রিসিভ করে বললো
- হ্যাঁ অভ্র বল।
অভ্র দ্রুত জিজ্ঞেস করল
- খালামনি তূবা কোথায়?
মিসেস সোনালী স্বাভাবিক কন্ঠেই উত্তর দেয়
- তূবাকে তো বাসায় দেখে আসলাম।
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- দেখে আসলে মানে তুমি কোথায়?
মিসেস সোনালী আবার উত্তর দেয়
- আমি তো তোদের বাসায়। একটু হালুয়া বানিয়েছিলাম তাই নিয়ে এসেছি। কেন? কি হয়েছে?
অভ্র মিসেস সোনালীকে এখনই কিছু বলতে চায় না। সে যা ধারণা করছে তা নাও হতে পারে। শুধু শুধু মিসেস সোনালীকে টেনশন দেওয়াটা ঠিক হবে না। তাই তাড়াহুড়ায় করে বললো
- এমনি। আচ্ছা রাখি।

বলেই অভ্র ফোনটা রেখে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। এদিকে অভ্র কল কেটে দিলেও মিসেস সোনালী কানে ফোন ধরেই বললো
- হ্যালো, অভ্র হ্যালো।
কান থেকে নামিয়ে চোখের সামনে ফোন এনে স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অভ্র কল কেটে দিয়েছে। রান্নাঘর থেকে একটা প্লেটে করে তিনটা পাটিসাপটা পিঠা নিয়ে, ডাইনিং রুমের ডাইনিং টেবিলের দিকে আসতে আসতে মিসেস মিতালী জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে আপা?
মিসেস সোনালী উত্তর দিল
- জানিনা রে। কিছুই তো বললো না অভ্র। শুধু জিজ্ঞেস করল তূবা কোথায়।
মিসেস মিতালী বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে, মিসেস সোনালী সামনে টেবিলের উপর প্লেটটা রাখতে রাখতে বললো
- ওই হবে হয়তো ও তূবাকে কিছু বলেছে, তাই তূবা রাগ করে ওর ফোন ধরছে না। এই আমার ছেলেটানা, শুধু মেয়েটাকে রাগ করাবে। তারপর তূবা রাগ করে কথা বন্ধ করে রাখলে, পাগল হয়ে যাবে। তুমি বাঁধ দেও তো ওদের কথা। চল আমাকে এই পাটিসাপটা পিঠাটা খেয়ে বলতো, কেমন হয়েছে?
মিসেস সোনালী পাশের চেয়ারটা টেনে বসে। পাটিসাপটা পিঠাটা এক কামড় খেয়ে বললো
- ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টিটা বেশি হয়ে গিয়েছে।


তূবার রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। তূবার পড়ার টেবিলের উপর পড়ে আছে ঘুমের ওষুধের খালি পাতা আর বিছানায় পড়ে আছে তূবার বন্ধ ফোন। তূবা রুমের কোথাও নেই। অভ্র দ্রুত পায়ে রুমের বারান্দা, ওয়াসরুমে খুঁজে। নেই, তূবা সেখানেও নেই। তূবার রুম থেকে বের হয়ে দৌড়ে তোয়ার রুমে যায় সে, সেখানেও কেউ নেই। একে একে দীপ্তি, দীপক আর মিসেস সোনালী রুমও চেক করে সে। কিন্তু তূবা বাসার কোথাও নেই। দৌড়ে নিচে নেমে বাসার কাজের মহিলাকে জিজ্ঞেস করে সে। সেও বলে জানিনা। এতো টেনশনে অভ্র বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিল। এখন হঠাৎ মতে পড়তেই দৌড়ে যায় দারোয়ানের কাছে। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই, জানতে পারে তূবা, তোয়া আর দীপক গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। অভ্র তোয়াকে ফোন করতে যাবে, তখনই মনে পড়ে তোয়ার ফোন তোয়ার রুমের বিছানার উপর দেখেছিল। অভ্র দীপককে ফোন করে। রিং হতে হতে যখন কেটে যাবে ঠিক তখনই দীপক কল রিসিভ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো
- হ্যালো অভ্র ভাইয়া।

অভ্র অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- হ্যালো দীপক, তূবা ,,,, তূবা কোথায়। 
ফোনের ওপাশ থেকে দীপক কঠিন স্বরে বললো
- তা জেনে তুমি কি করবে। তুমি তো চেয়েছিলে তূবা তোমার থেকে যেন দূরে থাকে। তাই থাকছে।
- দীপক এসব কথা বাঁধ দিয়ে বল তূবা কোথায়?
- কেন বাঁধ দিব? তুমি ,,,,,,
দীপকের কথার মাঝ পথেই অভ্র রেগে চিৎকার করে বললো
- দীপক! টেল মি হোয়ার ইজ শি।
অভ্রের ধমক শুনে পাশে দাঁড়ানো দারোয়ান সহ ফোনের ওপারে থাকা দীপক কেঁপে উঠে। অভ্র ধমক দিয়ে আবার শান্ত হয়ে যায়। ক্লান্ত কন্ঠে অনুনয় করে বললো 
- প্লিজ দীপক ভাই আমার। বল না তূবা কোথায়? ও, ও ঠিক আছে তো? দেখ ভাই আ ,,,, আমার হাত পা কাঁপছে। প্লিজ ভাই বল না, কোথায় আমার তূবাসোনা। বল না ভাই আমার তূবাপাখিটা কি ঠিক আছে?
দীপক ফোনের এপাশ থেকে অভ্রের হাত-পায়ের কাঁপা দেখতে না পেলেও, অভ্রের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ ঠিকই শুনতে পাচ্ছে সে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে শান্ত কন্ঠে দীপক বললো
- এলিজাবেথ হসপিটালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এ আছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।

চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৪)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন