উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৪)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৫)
চলছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ। ঠান্ডা প্রায় নেই বললেই চলে। তাও অভ্র জোর করে তূবাকে সোয়েটার, মোজা পরিয়ে, মাথা সহ পুরো গায়ে চাদর পেঁচিয়ে নিয়ে বের হয়েছে। মেয়েটার অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাই অভ্রের এতো সাবধানতা। অভ্রের হাতে হাত রেখে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাটতে হাটতে, হাসি মুখে তূবা বললো
- রাতের নিরব রাস্তা কতো সুন্দর দেখেছ। আর তুমি আসতে চাও না।
- হুম, ঠান্ডা লেগে তোর নাকটা যখন লাল জোকারের মতো হয়ে যায় না, তখনও তোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। একবারে জোকারের মতো।
- হ্যাঁ আমি তো দেখতে জোকারের মতো, পেত্নীর মতো। আর সুন্দর হচ্ছে এই ডলি।
হঠাৎ মুখটা কঠিন করে গম্ভীর কন্ঠে অভ্র বললো
- তুই ঘুমের ওষুধ খাসনি, তাই না।
অবাক হয়ে অভ্রের দিকে তাকায় তূবা। অভ্র সামনের দিকে তাকিয়ে হাটছে। বিষ্মিত কন্ঠে তূবা জিজ্ঞেস করল
- তুমি কি করে জানলে?
- ডাক্তার আমি! তাছাড়া জন্মায় পর থেকে তোদের চার বান্দরকে দেখে আসছি।
তূবা মাথা নিচু করে অপরাধীর কন্ঠে বললো
- সরি। তুমি এতোটা অস্থির হয়ে যাবে বুঝতে পারলে এমনটা করতাম না। ভাইয়া আপুরাও পরে ভয় পেয়ে গিয়েছিল তোমার অস্থিরতা দেখে।
- প্ল্যানটা দীপ্তির ছিল, তাই না।
- হুম। তুমি আমার সাথে কথা বলছিলে না। আমি কান্না করছিলাম দেখে ভাইয়া ফোন করে আপুকে সবকিছু জানায়। আর আপু এই বুদ্ধিটা বের করে। প্লিজ আপুর উপর তুমি রাগ করো না।
- দীপ্তিকে একটা থ্যাংকস দিয়ে দিস।
তূবা আবার অবাক হয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্রও তূবার দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র হাসি মুখে বললো
- ওর জন্য আজকে আমার তূবাসোনা আমার বউ। ও এই প্ল্যানটা না করলে আমি আমার সাথে সাথে তোর জীবনটাও নষ্ট করতাম।
তূবা দাঁড়িয়ে যায়। বৃষ্টির মতো দু'চোখ বেয়ে সুখের অশ্রু ঝরে পড়তে থাকে। অভ্র তূবার সামনে দাঁড়িয়ে, তার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো
- যদি ঠান্ডা লাগেরে তূবা, তোর খবর আছে।
তূবা নাক টেনে বললো
- তুমি আপুকে থ্যাংকস দিয়ে দিও।
- আমি দিবো না।
- কেন?
- আমি দিলে তোর বান্দর বোনের সাহস আর বাঁদরামি বেড়ে যাবে।
- জানো তো, বাবার আর তোমার মধ্যে অনেক মিল আছে জানো।
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করল
- কিভাবে?
- এই যেমন আমাদের চার ভাইবোনকে বাবা বান্দর বলে, তুমিও বল। আমাদের চার ভাইবোনকে বাবা শাসন করে, তুমিও কর। আমাকের চার ভাইবোনকে বাবা অনেক ভালোবাসে, তুমিও বাসো। আমাদের চার ভাইবোনের বাবা প্রশংসা করে, তবে আমাদের সামনে করে না। তুমিও তাই কর। একবারে বাবার পারফেক্ট জামাই। কিন্তু এতো মিলের মধ্যেও, তোমাদের দুজনের মধ্যে মিল নেই কেন?
- কারণ তোর বাবা চিল্লায় বেশি।
তূবা ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- তুমিও তো।
অভ্র তূবার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো
- কি বললি!
তূবা কথা ঘুরানোর জন্য বলল
- বাদ দেও তো। চল হাটতে হাটতে একটা গান গাই
অভ্রও এখন এসব নিয়ে ঝগড়া করতে চায় না, তাই স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল
- কি গান?
তূবা থুতনিতে আঙুল দিয়ে বিজ্ঞদের মতো কিছুক্ষণ ভেবে বললো
- ভালোবেসে সখী।
- আচ্ছা, চল।
কথাটা বলেই অভ্র তূবার হাত ধরে আবার হাটা শুরু করে। সদ্য বিয়ে করা দম্পতি হাটতে হাটতে মিষ্টি কন্ঠে গান গাইতে ধরে -
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে
,
,
,
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে।
কেবিনের দরজা খুলে ঢুকলো বাবুল। হাতে তার একগুচ্ছ কাঁচা হলুদ রঙের পাতাসহ গাঁদা ফুল। টেবিলের উপর ফুল গুলো রেখে বাহিরে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই দেখে নীলা হাতে একটা বড় কাঠের স্কেল নিয়ে রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলাকে দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায় বাবুল। অবাক হয়ে ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
- ম্যা,,,,,,,ম্যাম আ,,,আপনি এই সময়ে এখানে?
নীলা রাগী কন্ঠে বললো
- ও তো তুই সে ব্যাক্তি যে প্রতিদিন ফুল দিয়ে যাস? মেয়েদের হাতের মার খেয়েছিস কখনো? এমন মার মারবো যে বাকি জীবনটা বিছানেতেই কাটাতে হবে।
কথাটা বলেই হাত উঁচিয়ে হাতের স্কেলটা উপরে তুলতেই বাবুল হন্তদন্ত হয়ে বললো
- ম্যাম এগুলো আমি দেইনি।
নীলা রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
- তুই আমার চোখের সামনে ফুল এনে রেখে বলছিস তুই দেসনি?
বাবুল ভীত কন্ঠে বললো
- প্লিজ ম্যাম বিশ্বাস করুন এগুলো আনি দেইনি। আম,,,,,,আমি তো শুধু স্যারের কথা মতো ফুল গুলো রেখে যাই।
নীলা পূর্বের ন্যায় রাগী কন্ঠেই জিজ্ঞেস করলো
- কোন স্যারের কথায়?
বাবুল অসহায় কন্ঠে বললো
- ম্যাম আমি বলতে পারবো না স্যার বকবে।
নীলা বাবুলের সামনে স্কেল ধরে বললো
- তুই এখন না বললে আমার হাতে মার খাবি প্লাস চুরির দায়ে জেলও খাটবি।
বাবুল বিনয়ী কন্ঠে বললো
- প্লিজ না ম্যাম।
নীলা ধমকে বললো
- তাহলে বল।
বাবুল আমতা-আমতা করে আস্তে করে বললো
- ছোট স্যার।
নীলা কথাটা শুনেও সিউর হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলো
- দীপক স্যার?
বাবলু মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়।
নিজের কেবিনে ঢুকে অবাক হয়ে যায় দীপক। টেবিলের উপর সেই গাঁদা ফুলগুলো পড়ে আছে, যেগুলো নীলাকে দেওয়ার কথা ছিল। বাবুলকে ডেকে পাঠিয়ে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে, টেবিলের উপর রাখা ফুলগুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে সে। দরজায় কেউ নক করতেই বাবুল এসেছে মনে করে, পিছন ঘুরে না দেখেই দীপক বললো
- কাম ইন।
দরজা খুলে কেউ ঢুকলেই দীপক জিজ্ঞেস করলো
- এই ফুলগুলো এখান কেন? এগুলো তো নী,,,,,,,
বলতে বলতে পিছনে ঘুরতেই দীপক চুপ হয়ে যায়। তার সামনে বাবুল না নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা দুই হাত ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করলো
- স্যার আপনি প্রতিদিন আমাকে ফুল দেন কেন?
দীপক একটা শুকনো ঢোক গিলে আমতা-আমতা করে বললো
- ক,,,,কোথায়। দেই না তো।
নীলা এক ভ্রু উঁচু করে বললো
- স্যার বাবুল আমাকে সব বলেছে।
- তাহলে তো লুকানোর কিছু নেই।
কথাটা বলেই দীপক নীলার সামিনে হাঁটু গেড়ে বসে গাঁদা ফুলগুলো সামনে ধরে বললো
- নীলা আই লা ,,,,,,,
তখনি কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো। দীপক বিরক্ত নিয়ে কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ফোন হাতে নিয়ে পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে কুহু। কিছুক্ষণ পর পর ফোনের সাইডের ছোট বাটনটা চেপে স্কিনে আলো ফুটিয়ে টাইম দেখছে। আবার পুনরায় ফোনের ছোট বাটনটা চেপে স্কিন অন্ধকার করে ফেলছে। খুব টেনশন হচ্ছে তার। টাইম হয়ে গেছে এখনো মেসেজ আসছে না কেন? খুব চিন্তা হচ্ছে তার। আজ কাব্যের রেজাল্ট দিবে। যদিও কাব্যের রেজাল্টে তার কিছু আসে যায় না। সে এখন কাব্যকে যতটুকু ভালোবাসে, কাব্যর রেজাল্ট ভালো বা খারাপ হলেও ঠিক ততটুকুই ভালোবাসবে। কিন্তু রেজাল্ট খারাপ হলে কাব্যর মন খারাপ হবে। তাই সে চায় না কাব্যের রেজাল্ট খারাপ হোক। মূলত সেই জন্যই সে এতো চিন্তা করছে। এই ছেলেটার কষ্ট যে সে সহ্য করতে পারে না। হঠাৎ টুটটুট করে ফোনে একটা মেসেজ আসলো। কুহু স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে ফোনের লক খুলে মেসেজটা ওপেন করল। মেসেজটা পড়ে খুশির ঠেলায় চিল্লিয়ে একলাফ দিয়ে রুমে রাখা বেতের সোফাতে উঠে যায়। তারপর ঠাস করে শব্দ হয়।
এদিকে,
কুহুর চিল্লানি আর কিছু ভাঙার শব্দ শুনে মিসেস মায়া দৌড়ে কুহুর রুমে যায়। রুমের দরজার সামনে যেতেই দেখে কুহু সোফা ভেঙে পড়ে আছে। তার হাত ছিলে গেছে। দুই পাও ছিলে গেছে। বাম পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। এই সোফা মিষ্টার সফিক বিয়ের সময় অন্যান্য ফার্নিচারের সাথেই কিনেছিল। এর বয়স প্রায় বাইশ বছর। এতো পুরোনো সোফা তিপ্পান্ন কেজির কিশোরীর হঠাৎ লাফিয়ে পড়ার ভার সইতে না পেরে ভেঙে যায়। মেয়ের পায়ে রক্ত দেখে অস্থির হয়ে যায় মিসেস মায়া। দ্রুত পায়ে কুহুর কাছে এসে হাত ধরে তাকে তুলতে তুলতে বললো
- তুই এটাতে লাফ দিয়েছিস কেন? ইস কতোখানি কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কি যে করিস না। আস্তে আস্তে নাম।
এক পায়ে ব্যথা রক্ত বের হচ্ছে। তাই কুহু মায়ের হাত ধরে নিচে নেমে অন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে খুশি মুখে বললো
- আরে পরে এগুলো নিয়ে চিন্তা কর। আগে খুশির খবর শোন। কাব্য ভাইয়ার ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে। ইয়েএএ।
বলেই কুহু একপায়েই লাফাতে থাকে। মিসেস মায়া অবাক হয়ে গেল মেয়ের কান্ড দেখে। সে নিজেও খুশি কাব্যের ভালো রেজাল্টের কথা শুনে। কিন্তু তাই বলে নিজের ব্যথা ভুলে নাচানাচি করার মতো খুশি! কিসের এতো টান মেয়ের কাব্যের প্রতি। আচ্ছ, কুহু আবার কাব্যকে পছন্দ করে না তো?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৬)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন