উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৩)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৪)
পিটপিট করে চোখ খুলে তূবা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বেডে তার মাথার পাশে চোখ দুটো বন্ধ করে, হেলান দিয়ে বসে আছে অভ্র। অভ্রের ডানহাত তূবার মাথায় আর বাম হাতে তূবার বাম হাত নিজের বুকে চেপে ধরে আছে সে। বিগত কয়েক ঘন্টায় চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে, খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। অভ্রকে এভাবে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তূবার। ক্ষীণ কন্ঠে তূবা অভ্রকে ডাকলো - অভ্র ভাইয়া।
অভ্র সাথে সাথে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে তূবার দিকে তাকায়। মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকা তূবাকে দেখে, তার কপালে চুমু এঁকে দেয় অভ্র। তারপর খুব নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তূবাসোনা। কেমন লাগছে এখন? কোথাও কষ্ট হচ্ছে?
তূবা মাথা ডানে বামে নেড়ে বললো
- নাহ। আমি ঠিক আছি। কিন্তু তোমার মুখ খুব শুকিয়ে গিয়েছে। অনেক চিন্তা করেছ তুমি, না। সরি, আমার জন্য তুমি এতো কষ্ট পেলে।
কথাটা বলেই কান্না করে দেয় তূবা। অভ্র তূবার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো
- আমার তূবাসোনা ঠিক আছে, এখন আমিও ঠিক হয়ে যাবো। প্লিজ আর কাঁদে না তূবাসোনা। কাঁদলে ঠাণ্ডা লাগবে তো। সামনে তোর এক্সাম আছে না।
তখনই দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকে দীপক, তোয়া, দীপ্তি, চন্দ্রা, শুভ্রা আর মুরাদ। সবাইকে দেখে তূবা শোয়া থেকে উঠে বসে। দীপ্তি মিষ্টি হেসে তূবাকে জিজ্ঞেস করল
- এখন কেমন লাগছে?
তূবা মাথা নেড়ে উত্তর দিল
- ভালো।
দীপক অপরাধীর কন্ঠে অভ্রকে বললো
- তখনকার জন্য সরি ভাইয়া।
অভ্র দীপককে বললো
- উহু তোর কোন দোষ নেই। তূবাকে এই অবস্থায় দেখে তোর মাথা ঠিক ছিল না। তাই বলে ফেলেছিস।
তারপর মুরাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- নিয়ে এসেছিস?
তূবা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে অভ্রের দিকে। অভ্র কি নিয়ে আসার কথা বলছে, কিছুই বুঝতে পারছে না সে। মুরাদ উত্তর দিল
- হুম। বাহিরে বসিয়ে রেখে এসেছি।
অভ্র তূবার গায়ের ওড়নাটার শেষ প্রান্তটা মাথায় তুলে দিতে দিতে বললো
- ভিতরে নিয়ে আয় ওনাকে।
তূবা কৌতুহলী হয়ে অভ্রকে প্রশ্ন করল
- কে আসবে?
অভ্র তূবার দিকে তাকিয়ে বললো
- তোকে আমার সাথে সারাজীবনের জন্য যে বেঁধে দিতে পারবে, সে আসবে।
তূবা অভ্রের কথার মানে বুঝতে না পেরে, বোকার মতো অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুরাদের সাথে একজন হুজুর টাইপের লোক খাতাপত্র নিয়ে কেবিনে ঢুকে। লোকটি কেবিনে ঢুকেই অভ্রকে বললো
- আসসালামু আলাইকুম।
অভ্র লোকটির উদ্দেশ্যে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসুন।
লোকটি কেবিনে থাকা সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল
- বিয়ে পড়ানো শুরু করবো?
তূবা বড় বড় চোখ করে লোকটার দিকে তাকায়। মনে প্রশ্ন জাগে, বিয়ে পড়ানো শুরু করবে মানে! এখানে, এই হসপিটালে কার বিয়ে হবে? অভ্র উত্তর দিল
- হ্যাঁ শুরু করুন।
লোকটি মানে কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করল, অভ্রকে বললো
- বলুন কবুল।
অভ্র তূবার বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো
- কবুল কবুল কবুল।
পাশ থেকে মুরাদ অভ্রকে খোচা মেরে বললো
- এতোদিন বলতি বিয়ে করবি না। এখন কাজী একবার কবুল বলতে বললো আর তুই তিনবার বলে দিলি!
অভ্র কিছু বললো না শুধু হাসলো। কাজী এবার তূবাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- বল মা কবুল।
তূবা এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। তার সাথে অভ্রের বিয়ে হচ্ছে! এটা কি সত্যি, না কি স্বপ্ন! এই ভাবনায় এতোটা বিভোর হয়ে গিয়েছে যে কাজীর কথা তার কানে যায় না। দীপ্তি তূবার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে ডাকে
- তূবা।
তূবা ধ্যান ভেঙে মাথা তুলে দীপ্তির দিকে তাকায়। দীপ্তি শান্ত কন্ঠে বললো
- বল কবুল।
তূবা ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- কবুল।
দীপ্তি আবার বললো
- আবার বল কবুল।
তূবা আবার বললো
- কবুল।
দীপ্তি পুনরায় বললো
- আর একবার বল কবুল
তূবা পুনরায় বললো
- কবুল।
বলেই তূবা দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। কেবিনে উপস্থিত দীপ্তি, দীপক, চন্দ্রা আর তোয়ার চোখেও জল চলে আসে। তাদের আদরের ছোট বোনটার এতোদিনের ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে বলে। অভ্রের চোখও জলে চিকচিক করছে। আজ থেকে তার তূবাসোনার তার, শুধুই তার।
রাগী থমথমে চোখ মুখ নিয়ে অভ্রদের বাসায় ঢুকে মিষ্টার আফরান। তাকে দেখে অভ্র ছাড়া বাকি সবাই ভয়ে একটু নড়েচড়ে উঠে। অভ্র ছোটবেলা থেকেই একরোখা। কারো কথা শোনে না সে। আর ছোট থেকেই তূবাকে নিয়ে মিষ্টার আফরানের সাথে কথা কাটাকাটি করতে করতে এখন আর তাকে ভয় পায় না অভ্র। রাগী কন্ঠে মিষ্টার আফরান সোফায় বসা অভ্রকে বললো
- তূবা না হয় ছোট। কিন্তু তুমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ডাক্তার হয়ে কীভাবে এই কাজ করলে!
অভ্রের সোজাসাপ্টা উত্তর
- ভালোবাসি তাই।
মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- লজ্জা করে না নিজের বাপ খালুর সামনে এমন কথা বলতে?
অভ্র শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- লজ্জা মেয়েদের আর নাবালক ছেলেদের থাকে। আমি এর কোন টাই না। তাহলে আমি কেন লজ্জা পাবো?
মিষ্টার আফরান বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করল
- মেঝো মেয়েকে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে, মানুষ শুনলে কি বলবে ভেবেছ?
অভ্র উত্তর দিল
- একমাসে আপনি দুটো মেয়ের টপাটপ বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমার আর তূবার বেপারটা একমাস লুকিয়ে রাখি। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আপনি এই একমাসে তোয়ার বিয়ে দিয়ে দিতে পারবেন।
মিষ্টার আফরান রাগে দাতে দাত চেপে বললো
- মজা করছ আমার সাথে!
অভ্র কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- আপনি আমার খালু প্লাস শশুড়, ভাই বা শালা না যে আপনার সাথে মজা করবো।
মিসেস সোনালী মিষ্টার আফরানকে বললো
- তুমি ছেলেটাকে বকছ কেন? তোমার মেয়ের জন্যই তো অভ্র তাকে এতো তড়িঘড়ি করে বিয়ে করেছে।
মিষ্টার আফরান মিসেস সোনালী দিকে তাকিয়ে পুনরায় অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- এই অভ্রের দোষেই মেয়েটা আমার উচ্ছন্নে গিয়েছে। একমাস পর তূবার এইচ এস সি'র বোর্ড এক্সাম। সেই খেয়াল আছে তোমার?
তূবার দিকে না তাকালেও অভ্র জানে তূবা এখন মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র এক ভ্রু উঁচু করে মিষ্টার আফরানকে বললো
- আপনি দুই দুটো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ফেললেন তার বেলায় কিছু হলো না। আর আমি মাএ একটা বিয়ে করেছি, তাও কোন পার্টি টার্টি ছাড়া তাতেই আমার দোষ।
মিষ্টার আফরান বললো
- আমি ওর বিয়ে দিয়েছি না কি? আমি ,,,,,,,,
মিষ্টার আফরান আর অভ্রেত ঝগড়া থামার কোন নাম নেই দেখে, মিষ্টার আসাদ বললো
- আচ্ছা বলছিলাম কি আফরান বিয়ে যেহেতু করেই ফেলেছে, এসব বলে এখন লাভ নেই। সামনে তো তূবার এক্সাম। তূবার এক্সাম শেষ হোক। এর মধ্যে তোয়ার বিয়েও ঠিক কর। তারপর তোয়া আর তূবার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। এখন ওরা আগের মতো থাক।
মিষ্টার আফরান আর দ্বিমত করলা না।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে, তূবাকে বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে অভ্র প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে? গাল ফুলিয়ে আছিস কেন?
তূবাকে গাল ফুলিয়ে অভ্রকে বললো
- এটা তুমি ঠিক করলে।
তূবা কিসের কথা বলছে তা বুঝতে না পেরে অভ্র প্রশ্ন করল
- কি করেছি আমি?
- আমাকে বিয়ের কোন জামা কাপড় তো দূর একটা লাল ওড়নাও কিনে দিলে না।
- হঠাৎ করে বিয়ের ডিসিশন নিয়ে ফেলেছিলাম, তাই কিনতে পারিনি।
তূবা কোন কথা বলে না। গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে থাকে। তা দেখে অভ্র তূবা পাশে বসে বললো
- আচ্ছা বল তোর রাগ ভাঙানোর জন্য কি চাই?
তূবা উৎফুল্ল কন্ঠে বললো
- ঘুরতে যাবো?
অভ্র স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- আচ্ছা কাল বিকেলে নিয়ে যাবো।
- কাল বিকেলে না। আমি এখন ঘুরতে যাব।
- এখন! এই রাত দেরটায় তুই ঘুরতে যাবি?
- হ্যাঁ।
- কালকে নিয়ে যাবো প্রমিজ করছি। এখন এতো রাতে ঠান্ডার মধ্যে বাহিরে গেলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
- কিছু হবে না। আমি সোয়েটার পরে নাক, মুখ ডেকে যাবো। প্লিজ চল না।
অভ্র একটা শ্বাস ফেলে বললো
- আচ্ছা চল। বাসর রাতে বউয়ের আবদার বলে কথা মানতে তো হবেই।
বলেই অভ্র হেসে দিল। তূবাও লজ্জায় মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৫)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন