উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৫)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৬)
লিফট থেকে বের হয়ে রাগে গটগট করে বড় বড় পা ফেলে হাটছে দীপক। তার পিছন পিছন একপ্রকার দৌড়ে আসছে নীলা। দীপক গাড়ির দরজা খুলবে এমন সময় নীলা দীপকের পিছনে দাঁড়িয়ে বললো - স্যার প্লিজ আর একবার ভেবে দেখুন। ডিলটা হলে অনেক ,,,,,,
নীলা আর কিছু বলার আগেই দীপক রেগে নীলার দিকে তাকিয়ে বললো
- এই ডিলটা সাইন করার জন্য তুমি এতো উঠে পরে লেগেছো কেন?
নীলা ভয়ে দুপায়ে পিছালে দেয়ালের সাথে তার পিঠ ঠেকে যায়। মাথা নিচু করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- স্যার ডিলটা সাইন হলে কোম্পানির অনেক লাভ হতো তাই।
দীপক নীলার মাথার দুইপাশের দেয়ালে দুই হাত রেখে, মাথা ঝুঁকায়। নীলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
- সত্যিই কি তাই? নাকি মিষ্টার তমাল শিকদারের সাথে বার বার দেখা সাক্ষাৎ করার জন্য। সে তার চোখ দুটো দিয়ে তোমাকে স্কেন করে দেখবে। তোমার সাথে ফ্লাট করবে। এগুলো তো তোমার ভালো লাগে তোমার তাই না।
নীলা মুখে ডিলটা সাইন করতে বললেও মনে মনে চাইছিল না মিষ্টার তমাল শিকদারের সামনে আবার যেতে। কিন্তু ডিলটা সাইন হলে কোম্পানির লাভ হতো। আর কোম্পানির একজন এমপ্লয়ি হিসেবে, তার উচিত কোম্পানির লাভের দিকে খেয়াল রাখা। তাছাড়া বড় স্যার যদি জানতে পারে দীপক ডিলটা সাইন করেনি, তাহলে দীপককে বকাজকা করবে। তাই সে দীপককে ডিলটার কথা ভেবে দেখতে বলেছে। কিন্তু সে কখনো ভাবেনি যে এই কথা বলাতে দীপক তাকে এতোটা খারাপ, এতোটা নিচ মনে করবে। রাগে, কষ্টে, অপমানে নীলার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। নীলা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই কেউ চিল্লিয়ে বললো
- মা দেখ ঐ আংকেল আন্টি পঁচা কাজ করছে।
কথাটা কানে যেতেই দীপক আর নীলা তাদের ডান দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা আট নয় বছরের বাচ্চা মেয়ে তাদের দিকে তর্জনী আঙুল তাক করে ডান দিকে তাকিয়ে আছে। একজন ৩৫-৪০ বছরের মহিলা মেয়েটার কাছে আসতে আসতে তাদের দিকে তাকায়। মুখে বিরক্ত ভাব ফুটিয়ে বললো
- আজকালকার ছেলেমেয়েদের লাজ্জ লজ্জা বলতে কিছু নেই।
তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে, রাগী কন্ঠে বললো
- আর তুই এতো পেকেছিস কিভাবে? চল বাসায় তোর খবর নিচ্ছি।
এই বলে মহিলাটি মেয়েটার হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে যায়। দীপক মহিলাটির কথার কোনো মানে বুঝতে পারছে না। সে তো নীলাকে বকছে। বাচ্চা মেয়ে এটাকে পঁচা কাজ বলেছে তাতে কোন সমস্যা নেই। বাচ্চা মানুষ না বুঝে অনেক কিছুই বলতে পারে। কিন্তু মহিলাটি তাদের লাজ্জ লজ্জাহীন বলল কেন? মাথা ঘুরিয়ে আবার নীলার দিকে তাকায় সে। নীলাও মাথা ঘুরিয়ে দীপকের দিকে তাকালো। বেপারটা এতোক্ষণে তাদের দুজনেরই বোধগম্য হয়। লজ্জায় নীলার ফর্সা গাল লাল হয়ে যায়। দীপকও তাড়াতাড়ি নীলাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে পরে। ড্রাইভিং সিটে বসে নীলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু নীলা গাড়িতে না উঠে হাটা লাগায়। দীপক নীলার পাশ দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে হর্ণ বাজায়, গাড়িতে উঠার জন্য। কিন্তু নীলা উঠে না আরও জোড়ে হেটে মেইন রোডে চলে যায়। দীপক গাড়ি নিয়ে মেইন রোড যেয়ে দেখে নীলা ততক্ষণে রিকশায় উঠে গিয়েছে।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে ধপাশ করে সোফাতে বসে পড়ে তিন বন্ধু চন্দ্রা, দীপ্তি আর শুভ্র। কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করতে বসছে সেই সকাল আটটায়, এখন বাজে বেলা দুইটা বেজে বাইশ মিনিট। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা তারা সেই সাউন্ড প্রুফ রুমে ল্যাপটপে সামনে বসে ইনফরমেশন কালেক্ট করেছি। তারা যা যা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে চেয়েছে সবই পেয়েছে, কিন্তু তাতেও তাদের মুখে হাসি রেখা নেই। কারণ রতন মিয়া নামের যেই লোকটাকে তাদের দরকার, সেই লোক সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে যে সে রাঙামাটিতে থাকে। এখন শুভ্রের কোন সমস্যা না থাকলেও, স্ট্রং কোন কারনে দেখাতে না পারলে চন্দ্রা আর দীপ্তি এতো দূরে যেতে পারবে না। দীপ্তি বিরক্ত নিয়ে বললো
- বুঝলাম ঢাকায় থাকতে পারছে না, তাহলে ঢাকার আসেপাশে থাকতো। সেই রাঙামাটি এখন কিভাবে যাবো?
চোখ দুটো বন্ধ করে সোফাতে হেলান দিয়ে বসা শুভ্র, চোখ দুটো বন্ধ রেখেই বললো
- বললাম তো তোদের যেতে হবে না। আমি একাই যাই।
দীপ্তি সোফায় হেলান দেয়া অবস্থায় ঘাড় ঘুরিয়ে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে, চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো
- তুই একা একা সব ক্রেডিট নিবি তা হবে না। তাই একা যাওয়ার কথা বাদ দিয়ে ভাব কিভাবে আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
শুভ্র খুব ভালো করেই জানে ক্রেডিটের জন্য না, শুভ্রের সুরক্ষার জন্য তাকে একা ছাড়তে চাচ্ছে না দীপ্তি আর চন্দ্রা। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মিনে হয় শুভ্রের। জীবনে সে অনেক কিছু যেমন হারিয়েছে, ঠিক তেমনি না চাইতেও অনেক কিছু পেয়েওছে। চন্দ্রা লাফিয়ে উঠে বললো
- আইডিয়া পেয়েছি।
চন্দ্রা লাফানো দেখে শুভ্র আর দীপ্তি সোজা হয়ে বসে। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি আইডিয়া?
চন্দ্রা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বললো
- হানিমুনে যাবো।
দীপ্তি চোখ ঘুরিয়ে বললো
- শুরু হয়ে গিয়েছে আমাদের জুলিয়েটের প্রেম প্রলাপ।
শুভ্র পুনরায় সোফায় হেলান দিতে দিতে বললো
- তুই হানিমুনে যাবি তা গিয়ে তোর ব্যা ব্যা করা ভেড়ারে না বলে, আমাদের শোনাচ্ছিস কেন।
চন্দ্রা কপাল কুঁচকে বললো
- আগে তো শোন। আমি শুধু আহানের সাথে হানিমুনে যাবো না। আমি, আহান, রোদ স্যার আর তোরা মিলে হানিমুনের যাবো রাঙামাটিতে।
শুভ্র আর চন্দ্রা অবাক হয়ে একসাথে জিজ্ঞেস করল
- কি?
মার সাথে ফ্রী হলেও। বাবাকে বাঘের মতো ভয় পায় দীপক। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নম্র কন্ঠে বললো
- বাবা আমায় ডেকেছিলে।
রুমের ভিতর থেকে মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ ভিতরে এসো।
দীপক রুমের ভিতরে ঢুকে বিছানার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। মিষ্টার আফরান বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। দীপক সামনে এসে দাড়াতেই মিষ্টার আফরান চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে। গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তুমি ডিলটা ক্যানসেল করেছ কেন?
ডিলটার কথা মনে হতেই মিটিং এর সময় মিষ্টার তমাল শিকদারের নীলার দিকে বাজে নজরে তাকানোর দৃশ্যটা চোখে ভেসে ওঠে। মুহুর্তের মধ্যে রাগে শরীর কেঁপে উঠে তার। দীপকের নীরবতা মিষ্টার আফরান রাগ বাড়িয়ে দেয়, রেগে ধমকে জিজ্ঞেস করল
- কি হলো চুপ করে আছো কেন? উত্তর দেও?
দীপক নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নম্র ভাবে উত্তর দিল
- আসলে বাবা মিষ্টার তমাল শিকদার লোকটা ভালো না। কেরেক্টারলেস। স্কুল পড়ুয়া নিজের মেয়ে থাকতেও অন্য মেয়েদের দিকে বাজে নজরে তাকায়।
মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে বললো
- আমি কি তোমাকে তোমার বোনের জন্য পাএ দেখতে পাঠিয়েছিলাম! যে তুমি কেরেক্টার নিয়ে পড়েছ।
দীপক মিষ্টার আফরানকে বুঝানোর চেষ্টা করে বললো
- আসলে বাবা খারাপ কেরেক্টারের লোকেরা তো খারাপই হয় তাই না। তাদের সাথে বিজনেস করাটা রিস্কের। তাই আমার ম ,,,,,,
দীপকের কথা শেষ হতে না হতেই মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো
- যাস্ট সেট আপ। তিরিশ বছর ধরে ব্যবসা করছি আমি। আর তুমি মাএ তিনদিন ধরে জয়েন করে আমাকে শিখাচ্ছ। কার সাথে বিজনেস করা উচিত আর কার সাথে না।
মিসেস সোনালী বারান্দায় ঝুলানো গাছগুলোতে স্প্রে করছিল। কানে তার স্বামী আর ছেলের সব কথা ঠিকই যাচ্ছিল। স্বামীর চিল্লাচিল্লি শুনে তিনি রুমে এসে বললো
- আহা ছেলেটাকে এভাবে বকছো কেন ও তো ,,,,,,
মিসেস সোনালীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে বললো
- তুমি চুপ কর। তোমার আদরেই ছেলে মেয়ে গুলো এমন বাদর হয়েছে। ছেলেরা বাবার ব্যবসায় হাত দিয়ে উন্নতি করে আর আমার ছেলে আমার ব্যবসা ডুবাতে বসেছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৭)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন