উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৭)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৮)

পানি নিয়ে আসার কথা বলে দশ-পনেরো মিনিট আগে রেস্টুরেন্টে ভিতরে ঢুকে দীপক। এখনো আসার নাম নেই। এতোক্ষণ রাগ হলেও এখন চিন্তা হচ্ছে নীলার। আচ্ছা দীপকের কোন বিপদ হলো না তো? এই ভেবে গাড়ির জানালা দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে উঁকি দেয় নীলা। রেস্টুরেন্টে ভিরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পরক্ষণেই আবার ভাবে রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টে কী বা বিপদ হবে। হয়তো খাবার কিনছে। আরো কিছু সময় কেটে যায়। কিন্তু দীপক আসে না। নীলা আর বসে থাকতে পারেনা। গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখে লাইট অফ করা। দরজা থেকে জ্বলন্ত মোমবাতি আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানানো। এই রাস্তার শেষপ্রান্তে একটা টেবিল আর দুইটা চেয়ার দেখা যাচ্ছে শুধু আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। নীলা চিন্তা করতে থাকে তার কি ভিতরে ঢুকা ঠিক হবে? কিন্তু সে তো দেখেছে দীপক এই রেস্টুরেন্টেই ভিতরে ঢুকেছে। আর বের হলেও সে দেখতো। কারণ দীপক রেস্টুরেন্টে ঠিক সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্ক করেছে। তাও এখানে আছে কি না সিউর হওয়ার জন্য কাদের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে, দীপককে ফোন করে। ফোনটা রেস্টুরেন্টে ভিতরেই বাজছে। সিউর হওয়ার জন্য আবার ফোন করে। এবারও ফোন রেস্টুরেন্টের ভিতরেই বাজে। সে "দীপক স্যার" বলে ডাক দেয়। কিন্তু কোন মানুষের সারাশব্দ পায় না। দীপকের ফোনে ফোন দিতে দিতে মোমবাতি আর গোলাপের রাস্তা ধরে হাটতে থাকে। টেবিলের কাছে গিয়ে দেখে টেবিলের উপর একটা চকলেট কেক। যার উপর খুব সুন্দর মোমের তৈরি তিনটা গোলাপি রঙের গোলাপ ফুল। একটা চেয়ারে একটা সাদা রঙের টেডিবিয়ার। টেডিবিয়ারের হাতে লাভ সেভের লাল রঙের একটা কুশন। যার উপর সাদা সুতো দিয়ে "sorry" লেখা। সে মনে মনে ভাবে হয়তো কোনো পাগল প্রেমিক তার প্রেমিকার মান ভাঙানোর জন্য সাজিয়েছে। অজান্তেই সে মুচকি হেসে দেয়। মনে মনে ভাবে মেয়েটা কতো লাকি। আবার ভাবে যদি কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর জন্যই এগুলো সাজিয়ে থাকে, তাহলে দীপক পানির কথা বলে এখানে ঢুকলো কেন? আবার গেলই বা কোথায়? আবার দীপকের ফোনে ফোন দেয়। এবার তার ঠিক পিছন থেকে রিংটোন এর শব্দ হলে সে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে দীপক। ডানহাতে একটা লাল গোলাপ। যার পাপড়িতে সরি লেখা। আর বামহাতে বামকান ধরে তার দাড়িয়ে আছে। মুখটা দুঃখী দুঃখী করে বললো
- সরি। সরি। এতো এতো গুলো সরি। মাথা গরম ছিল। তাই রাগে সেদিন অনেক কিছু বলে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দেও। সরিইইইই।

এমন করে রাগ ভাঙালে কেউ কি আর রাগ করে বসে থাকয়ে পারে? না কখনোই পারে না। নীলাও পারেনি। মিষ্টি হেসে বললো
- আমি রাগ করে নেই। 


লিফট সেভেন ফ্লোরে এসে থামলে তোয়া লিফট থেকে বের হয়ে যায়। 7B লেখা দরজার সামিনে গিয়ে কলিং বেল বাজায়। সেদিনের পর থেকে নিশার সাথে আর কথা হয়নি তার। তার ফোনে ধরে না। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমু কোথাও এক্টিভ নেই। সেদিনের পরদিন থেকে দুইদিনের জন্য কলেজ অফ দিয়ে এক্সাম শুরু হয়ে যায়। এক্সামের সময় নিশা সে এক্সাম হলে ঢুকে যাওয়ার পর, কোথা থেকে জানি এসে হলে ঢুকতো আবার এক্সাম শেষ হওয়ার আগেই চলে যেত। তাই গত কালকে এক্সাম শেষ হতেই আজ নিশাদের বাসায় এসেছে সে। মিসেস শান্তি দরজা খুলে তোয়াকে দেখে খুশি হয়ে বললো
- আরে তোয়া যে।

তোয়া মিষ্টি হেসে বললো
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছো?
- ওয়ালাইকুম আসসালামু মা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
- জ্বি আন্টি ভালো আছি।
মিসেস শান্তি দরজার সাইডে দাঁড়িয়ে তোয়াকে ভেতরে ঢুকার জায়গা করে দিয়ে বললো
- ভিতরে এসো।

তোয়া বাসায় ভিতরে ঢুকলে। মিসেস শান্তি দরজা বন্ধ করে তোয়াকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গিয়ে বললো
- তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি।
- না আন্টি আমি এখন কিছু খাব না।
- তা বললে তো হবে না। তুমি বস আমি এক্ষুনি আসছি।
- আচ্ছা তাহলে আন্টি আমি নিশা কাছে যাই। নিশা কোথায়।
- নিশা তো একটু নিচে টেইলার্সে গিয়েছে। এখনি চলে আসবে। তুমি বসো।
বলেই মিসেস শান্তি রান্নাঘরে চলে যায়। তোয়া চুপচাপ সোফাতে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর মিসেস শান্তি একটা ট্রে'তে করে চা আর বিস্কুট নিয়ে আসে। ট্রে'টা টেবিলের উপর রেখে চায়ের কাপটা তুলে তোয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নেও খাও। 

তোয়া মিষ্টি হেসে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। মিসেস শান্তি জিজ্ঞেস করলো
- বাসার সবাই কেমন আছে?
তোয়া চায়ে চুমুক দিয়ে বললো
- জ্বি আন্টি ভালো।
- আম্মুকে নিয়ে আসলে না।

- আসলে আন্টি আজকে তো আমি হুট করে চলে এসেছি অন্য একদিন নিয়ে আসবো।
- হুম্ম গায়ে হলুদের দিনই কিন্তু তোমার আম্মুকে নিয়ে আসবে। আর তুমি কিন্তু গায়ে হলুদের আগের দিনই চলে আসবে। একবারে বৌভাতের পর যাবে।
তোয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
- গায়ে হলুদ বৌভাত! কার বিয়ে আন্টি?
মিসেস শান্তিও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
- এমা তুমি জানো না! নিশা তোমাকে কিছু বলেনি?
- না আন্টি? মনে হয় এক্সামের ব্যস্ততায় বলতে ভুলে গিয়েছে।
- এই মেয়েটাকে দিয়ে যদি কোনো কাজ হয়। নিজের বড় বোনের বিয়ের দাওয়াত বান্ধবীকে দিতে ভুলে যায় কেউ! আর পাএও তো তোমাদের ভার্সিটিরই টিচার।
তোয়া চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে জিজ্ঞেস করল
- ওয়াও তাহলে তো আমাদের পরিচিতই। ভাইয়ার নাম কি আন্টি?

- রিশান। রিশান সরকার।
তোয়া নামটা ঠিক শুনেছে কি না, তা সিউর হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলো
- রিশান স্যার?
- হুম্ম।

ছোট এই হুম্ম শব্দটা শুনে তোয়া শরীর যেন অবশ হয়ে যায়। সে আর কিছু বলতে পারে না। চুপ করে থাকে। মিসেস শান্তি আবারো খুশি খুশি মুখে বললো
- জানো তো রিশানের মা শিখা আর আমি স্কুল ফ্রেন্ড ছিলাম। স্কুলে থাকতে আমরা ঠিক করেছিলাম আমাদের ছেলেমেয়েদের একসাথে বিয়ে দিবো। আমরা বেয়ান হবো। শিখা বরকত মানে রিশানের বাবা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু শিক্ষিত হলেও রিশানের বাবা গরিব ছিলেন বলে শিখার বাবা রিশানের বাবাকে মেনে নেয়নি। শিখার অন্য যায়গায় বিয়ে ঠিক করে। তখন শিখা রিশানের বাবা সাথে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে আর ওর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। দুই-আড়াইমাস আগে নিউমার্কেটে গিয়ে শিখার সাথে দেখা হয়ে যায়। আর আমাদের পুরোনো ইচ্ছাটাও পুরোন করার সুযোগ পাই।

তখনই কলিং বেলের শব্দ হয়। মিসেস শান্তি সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললো
- ওই তো নিশা মনে হয় চলে এসেছে। তুমি বস আমি দরজাটা খুলে দিয়ে আসি।
মিসেস শান্তি দরজা খুলে দিতেই দুই হাতে চারটা শপিং ব্যাগ নিয়ে বাসায় ভিতরে ঢুকে নিশা। বাসায় ভিতরে পা ফেলতেই তোয়াকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বললো
- তুই এইখানে!

মিসেস শান্তি দরজা লাগিয়ে এসে নিশাকে বললো
- এই তুই কি রে ওকে বিয়ে দাওয়াত দিতে ভুলে গিয়েছিস।
নিশা মা'র কথায় কিছু না বলে শপিং ব্যাগ গুলো সোফাতে রেখে তোয়ার হাত ধরে টেনে বললো
- আয় আমার সাথে।
নিশা তোয়াকে নিজের রুমে এনে দরজা লক করতেই তোয়া বললো
- এইসব আমি কি শুনছি নিশা। আপুর সাথে ,,,,,,
তোয়া আর কিছু বলার আগেই নিশা অনুরোধ করে বললো
- ঠিকিই শুনেছিস। আর প্লিজ আমি যে রিশান স্যারকে ভালোবাসি এই কথা কাউকে বলিস না।

তোয়া উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
- এসব তুই কি বলছিস! রিশান স্যার কি জানে? উনি কি বিয়েতে রাজী?
- এতোকিছুর পড়েও তোর মনে হয় রিশান স্যার আমাকে পছন্দ করে। তাহলে শোন উনি রাজী। আর যথেষ্ট খুশিও।
- আর তুই? তুই কিভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের বড় বোনের স্বামী হিসেবে মেনে নিবি?

নিশা গিয়ে বিছানায় বসে পরে। তোয়া গিয়ে নিশার পাশে বসলো। নিশা মলিন মুখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- জানিস আমার জন্মের দিনই রোড এক্সিডেন্টে আমার বাবার মৃত্যু হয়। আত্নীয় স্বজন সবাই আমাকে অলক্ষ্মী বলতো। বলতো আমি নাকি আমার বাবাকে খেয়ে ফেলেছি, আমি নাকি আমার মা'র সাজানো সুখের সংসার ধ্বংস করেছি, আমার বোনকে বাবা হারা করেছি। শুধু দুজন মানুষ আমাকে কখনো খারাপ কথা বলেনি। আমাকে সব সময় আগলে রেখেছে। সব সময় সান্তনা দিয়ে গেছে। তাদের মতে আমি তাদের দুঃখের কারণ না। উল্টে আমি তাদের সেই দুঃখের দিনের এক টুকরো সুখ। সে মানুষ দুজন কে জানিস? আমার মা আর বোন। আমি কিভাবে সেই মানুষদের কষ্ট দিতে পারি বল? নিজের জীবনের বিনিময়েও আমি তাদের সুখ এনে দিতে চাই।

কথাগুলো বলেই নিশা কাঁদতে থাকে। তোয়া নিশার পিঠে হাত রাখতেই নিশা তোয়াকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে চোখের পানি ফেলতে থাকে। প্রিয় বান্ধবীর কষ্টে তোয়ার চোখ থেকেও অশ্রু ঝরে পড়ে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৯)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন