উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৮)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪৯)
বামদিকে সিঁথি করে হাতের চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে কুহু। বিছানা থেকে লাল রঙের জর্জেটের ওড়নাটা নিয়ে খুব ভালো ভাবে গায়ে জড়িয়ে আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে সে। সকালবেলা কাব্যের মন খারাপের কারণ জানতে এখন তাদের বাসায় যাচ্ছে সে। তার কিরণ বিবিসি এতোক্ষণে হয়তো স্কুল থেকে বাসায় এসে পরেছে। তার কাছ থেকেই তো জানতে হবে, কে তার কাব্যকে কি বলেছে। যার জন্য তার কাব্যের এতো কষ্ট পাচ্ছে? নিজেকে আয়নায় দেখে বিছানার কাছে যায় সে। ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিতে গেলেই দরজায় কেউ নক করে। তার দরজা পুরোটাই খোলা। তার খোলা রুমের দরজায় কাব্য আর কিরণ ছাড়া আর কেউ নক করে না। কাব্য নকের সাথে আরো একটা কাজ করে। শুকনো কাশি দেওয়া। রুমের সামনে আসতে আসতে শুকনো কাশি দেয় সে। তারপর দরজার সামনে এসে নক করবে। লোকটা এতো ভদ্র কেন? একটু অভদ্র হলে ক্ষতি কি? হুটহাট তার রুমে এসে তাকে অবাক করে দিবে। মাঝে মাঝে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে তাকে লজ্জায় ফেলে দেবে, কিন্তু না।
এই মহাভদ্র নিরামিষ লোক তার রুমের এক মাইল দূর থেকে তাকে জানিয়ে আসবে, যে সে আসছে। কেন যে সে ছেলে আর কাব্য মেয়ে হলো না। দূর ভালো লাগে না। ফোনের দিকে বাড়ানো হাতটা গুটিয়ে নেয়। সোজা হয়ে দাঁড়িয় পিছনে ফিরে তাকায় সে। তার ধারনাই ঠিক। দরজার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিরণ। ফর্সা গায়ে স্কুলের সাদা শার্ট আর গাড় নীল রঙের প্যান্ট। কাঁধের স্কুলের ভারি ব্যাগ, এলোমেলো চুল, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। যদিও তার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিনের তুলনায় আজকে সে বেশি ক্লান্ত। সেই ক্লান্তিটা শারীরিক পরিশ্রমের জন্য নয়। সেই ক্লান্তিটা মানসিক কষ্টের ফলে হয়েছে। শারীরিক দুর্বলতা থেকে মানুষ বেশি দুর্বল হয়ে যায় মানসিক কষ্ট পেলে। কিন্তু এতো এতো ক্লান্তি নিয়েও সে ঠায় মাথা নিচু করে কুহুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ তার ভাইয়া তাকে শিখিয়েছে কারো রুমে হুটহাট না ঢুকে, নক করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে। রুমের মালিক পারমিশন দিলে, তারপর রুমে ঢুকতে। কাব্যকেও আজ পর্যন্ত কারো রুমে নক ছাড়া ঢুকতে দেখেনি সে। এমনকি তার রুমে ঢুকার আগেও নক করে বলবে, "কিরণ রুমে আছিস।" তার মতো ছোট ছেলেকেও কতটা সম্মান করে তার ভাই। তাইতো বাবা-মা'র কথা না শুনলেও, তার ভাইয়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সে। কিরণের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার মন খারাপ। কেন খারাপ তাও কুহুর অজানা না। ভাইয়ের মন খারাপ দেখেই যে তার মনও খারাপ তা সে জানে। মাঝে মাঝে কুহুর খুব রাগ হয় কাব্যের উপর। তাকে যে তারা সবাই এতো ভালোবাসে সেদিকে খেয়াল না দিয়ে, সে কিছু নিকৃষ্ট মানুষের কথা নিয়ে মেতে থাকে। যাদের মন-মানসিকতা, চিন্তা-ধারা রাস্তার নিকৃষ্ট। মিষ্টি হেসে সে বললো
- আয় ভিতরে আয়।
কিরণ ভিতরে আসতে আসতে বললো
- আপু তোমার সাথে কথা আছে।
- আচ্ছা, আমি শুনবো। তার আগে তুই পাঁচ মিনিট বস। আমি আসছি।
কথাটা বলেই কুহু রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিরণ কাঁধের ব্যাগটা বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে রেখে বিছানায় বসে। কুহু রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে লেবু বের করে ছুড়ি দিয়ে কাটে। একটা গ্লাসে কাটা লেচু চিপে তাতে ফিল্টার থেকে ঠান্ডা পানি আর চিনি দেয়। চামিচ দিয়ে নেড়ে ট্রে'তে নিয়ে রাখে। পুনরায় ফ্রিজ খুলে সেখান থেকে মিষ্টার বেকারের এক পিচ চকলেট কেক বের করে, পিরিজে করে ট্রে'তে রাখে। টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে ট্রে'য়ের একপাশে ট্রায়াঙ্গেল সেপে ভাঁজ করে টিস্যুটি রেখে তার উপর চামিচ রাখে। তারপর ট্রে হাতে নিয়ে পা বাড়ায় রুমের দিকে। রুমে ঢুকে কিরণের সামনে বিছানায় ট্রে'টা রেখে বললো
- আগে খা। তারপর শুনবো তোর আর তোর ভাইয়ের মন খারাপ কেন?
কিরণ অবাক হয় না। তার মায়ের মতো কুহুও সব সময় তার মুখ দেখে বলে দিতে পারে, তার মন খারাপ নাকি ভালো। মায়ের পরে মায়ের মতো নাকি বোনেরা ভালোবাসে। তার নিজের কোন বোন না থাকলেও কুহুর কাছ থেকে সে সেই ভালোবাসা পেয়েছে। তাই তো তার সাথে ভালো কিছু হলে বা তার মন খারাপ হলে চলে আসে কুহুর কাছে বলতে। আর বিষয়টা যদি হয় তার ভাইকে নিয়ে তাহলে তো কোন কথাই নেই। কিরণ শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঠকঠক করে অর্ধেক শরবত খেয়ে ফেলে। তারপর গ্লাসটা ট্রেটে রেখে কেক নিয়ে খেতে থাকে। কুহু বিছানায় পা তুলে কোলের উপর বালিস নিয়ে আরাম করে বসে বললো
- আমি এখনি যেতাম তোদের বাসায়। তোর সাথে কথা বলার জন্য। সকালে তোর ভায়ের সাথে কথা হয়। তখনই বুঝতে পারি তার মন খারাপ।
কিরণ কেকসহ কামিচটা মুখে না দিয়ে কেকের পাশে রেখে বললো
- মামি এসেছে।
কুহু বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললো
- গতবারের টিকটিকির ডোজ কম ছিল যে এবার আবার এসে কাব্যকে কটুকথা শোনাচ্ছে?
- এবার শুধু কটু কথা শোনাচ্ছে না। সাথে ভাইয়ার জন্য পাএীও নিয়ে এসেছে।
- হোয়াট! কাব্যের জন্য পাএী?
- হুম্ম। তার চাচাতো ভাইয়ের একটা ইয়া মোটা খাটো মেয়ে আছে। নাম শিল্পা। সেই মেয়ের জন্য ভাইয়ার বিয়ের কথা বলে। ভাইয়ার জন্য সে নাকি কতো বলে টলে তার ভাইকে রাজী করিয়েছে। মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে। মেয়ের গায়ের রং ফর্সা। অনেক ভালো, ভদ্র। হাতের রান্নাও নাকি অনেক সুস্বাদু। মেয়েরা দুই বোন। মেয়েই বড়। ছোট বোন পরে ক্লাস নাইনে। মেয়েরদের সাভারে ছয় তালা বাড়ি আছে। এছাড়া আরও জায়গা জমি আছে। ঢাকার উত্তরাতেও নাকি ফ্লাট আছে। ভাইয়ার মতো কালো ছেলের কাছে যে তারা তাদের মেয়ে দিয়ে রাজি হয়েছে এই অনেক। যতই উচ্চ শিক্ষিত হোক না কেন। রাস্তায় বের হলে প্রথম নাকি মানুষ গায়ের রংটাই দেখে। তাই কোন মা-বাবাই না কি তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কালো মানুষ পছন্দ করে না। এর থেকে ভালো কোন মেয়েই না কি ভাইয়া জন্য পাবে না।
একটানা কথাগুলো বলে একটু থামলো কিরণ। তারপর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
- আচ্ছা আপু সত্যিই কি গায়ের রঙের ঊর্ধ্বে কিছু নেই।
- বলতো আমি তোর ভাইকে কবে থেকে ভালোবাসি?
- ছোটবেলা থেকেই তো তুমি আমাকে বলে আসছো তুমি আমার ভাবী হও। তাহলে নিশ্চয় তুমি ছোটবেলা থেকেই ভাইয়াকে ভালোবাসো।
- হুম্ম। ছোটবেলায় কি তোর ভাইয়া ফর্সা ছিল?
- না।
- ছোটবেলায় কি আমি জানতাম যে বড় হয়ে কাব্য বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে?
- না।
- তাহলে বলতো আমি কেন কাব্যকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি?
কুহুর কথা শুনে কিরণ ভাবতে বসলো, আসোলেই তো কুহু কেন কাব্যকে ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে? এই প্রশ্ন কখনো তার মাথাতেই আসেনি। তার ছোট মাথায় কুহু ছোটবেলা থেকে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, " তার মা যেমন বাবাকে ভালোবাসে, আন্টি যেমন অংকেলকে ভালোবাসে। ঠিক তেমনি কুহুও কাব্যকে ভালোবাসে।" সে তাই মেনে আসেছে সেই ছোটকাল থেকে। কখনো এটা নিয়ে কোন চিন্তা বা প্রশ্ন করেনি। ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে সে উত্তর দিল
- জানিনা। কেন ভালোবাসো ভাইয়াকে?
- কারণ বলতে গেলে শেষ হবে না। তোর ভাইয়ের সুন্দর একটা মন আছে। সে মানুষকে সম্মান করতে জানে। আমার চোখে সে পৃথিবীর সবথেকে সুদর্শন পুরুষ। তার হাসিটা আমার দেখা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর হাসি। তার চোখেজোড়ায় যেন পৃথিবীর সব মায়ার বাস।
কিরণের মতো কিশোরের সামনে প্রেম আলাপ করা ঠিক হবে না ভেবে কুহু থেমে যায়। কয়েক সেকেন্ড সময় নিরব থেকে আবার বললো
- ধর যদি তোর ভাই দেখতে অনেক সুন্দর হতো, ঠিক হিরোদের মতো। কিন্তু যদি নেশাখোর হতো, স্বভাবে রাগী হতো বা বখাটে হতো। তখন কি তুই তোর ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসতি?
- না।
- তাহলে তোর কি মনে হয় না মানুষের দৈহিক সৌন্দর্য কোন বিষয় না। মানুষের নম্রতা ভদ্রতা হচ্ছে আসল। তুই এসব বিকৃতি মস্তিষ্কের মানুষের কথা মাথায় নিস না। এদের কাজই হলো মানুষের নিন্দা করে বেড়ানো। সৌন্দর্য দেখতে হলে ভালো চোখ নয়, ভালো মন লাগে। যা এদের নেই। আর পাএী নিয়ে একদম ভাবিস না। আমি থাকতে আমার কাব্যকে কেউ বিয়ে করে ফেলবে এতোই সোজা না কি! মাথার চুল ছিঁড়ে বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে ফেলে দিয়ে আসবো না।
কুহুর শেষের কথাগুলো বলার ধরন দেখে কিরণের মুখে হাসি ফুটে উঠে। মন খারাপটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫০)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন