উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৪৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৬)

আরাফ নিজেকে উপর দিয়ে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখেছে।কিন্তু ভিতরে ভয় পাচ্ছে নবনি কিছু জেনে গেলো না তো।
নবনিঃকোথায় গিয়েছিলেন?
নবনির প্রশ্ন করার ধরনেই আরাফ কুপোকাত হয়ে যাচ্ছে।বাইরে যতই বীর হও না কেন ঘরে বউ এর প্রশ্নের সামনে স্বামীর পরাজয় নিশ্চিত।
আরাফঃএইতো একটু হাটতে গিয়েছিলাম।
নবনিঃএতো রাতে!!গাড়ি নিয়ে হাটতে বের হোন আপনি?
আরাফঃযা ধরা খেয়ে গেলাম।না না ধরা খাওয়া যাবে না।এখানে থেকে কেটে পরি।(মনে মনে)
আরাফ ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।নবনি উঠে যেয়ে পথ রোধ করে দাড়ালো।
নবনিঃআমার প্রশ্ন থেকে বাচতে আবারো পালাচ্ছেন?এর আগেও এমন একটা ভুল করেছিলেন।তার মাশুল সারাটাজীবন দিতে হচ্ছে।এখন আবারো এমন কিছু করবেন না যে
আরাফ নবনির মুখ চেপে ধরলো।
আরাফঃতুমি আমাকে সন্দেহ করছো?
নবনিঃআমি শুধু প্রশ্ন করছি।
আরাফঃবিশ্বাস থাকলে প্রশ্ন উঠে না।
নবনিঃপ্রশ্ন উঠার মানে এটা না যে বিশ্বাস নেই।বিশ্বাস না থাকলে যাচাই করতাম প্রশ্ন না 
আরাফঃকরো যাচাই।এটাইতো করার বাকি আছে!এতো দিনের ভালোবাসার পর ও এটাই প্রাপ্য ছিল আমার।
আরাফ নবনিকে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ধুম করে দরজা আটকানের আওয়াজ আসে।শব্দে বাবুরা উঠে পরে।নবনির মেজার আরো বিগড়ে যায়।
নবনি বাবুদের নিয়ে পুরো বিছানায় জুড়ে শুয়ে পড়ে।উদ্দেশ্য আরাফকে আজকে বিছানায় জায়গা দিবে না।আরাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এই অবস্থা দেখে।
আরাফঃদুই বাচ্চার মা হয়েও কাজ বাচ্চাদের মতো করো তুমি নবনি পাখি।
আরাফ এর রাগ কমে গেলো নবনির কান্ড দেখে। আরাফ মুচকি হেসে নবনির সামনে যেয়ে দাড়ালো। নবনি ঘুম এর ভান ধরে আছে।আরাফ একটানে নবনিকে নিজের বুকের উপর তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।
নবনিঃএই ছাড়েন আমাকে!আমাকে কেন তুললেন?
আরাফঃবিছানায় শোয়ার জায়গা ছিলো না তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বুকে নিতে হয়েছে।নাহলে আমার বয়েই গিয়েছে।আপনাকে বুকে নিবো।
নবনিঃহ্যা।আমাকে নিবেন কেন?এখনতো নতুন কেউ এসে পরেছে।যার কাছে এতো রাত করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে যান।
আরাফ মিট মিট করে হাসছে।কিন্তু নবনি সেটা দেখে নাই।আরাফ গম্ভীর গলায় বলে হ্যা।যাবোইতো ঘরে বউ জায়গা না দিলে ভালোবাসা না দিলে আমারতো যেতেই হয়।জানো আমি কিন্তু একটা মেয়ের কাছে গিয়েছিলাম।
নবনি আরাফ এর বুকে কামড় বসিয়ে দেয়।
আরাফঃআহহহ।শেরনী।
নবনিঃআবার বলেন তো। কি বলছিলেন।আমি ঠিক ভাবে শুনি নাই।
আরাফঃকিছু না। কিছু না।


নবনি আরাফ এর কামড় দেয়া জায়গায় চুমু খেল।
আরাফঃআহ।ব্যাথাটা কমে গেল।
নবনিঃতাইলে আবার দেই?
আরাফঃনায়ায়ায়ায়া
নবনিঃহা হা হা। হা হা হা।
আরাফ নবনিকে বুকে চেপে ধরলো।
আরাফঃখাটটা ছোট হয়ে গিয়েছে।বড় খাট আনতে হবে।
নবনিঃকেন?
আরাফঃএই যে বউ বাচ্চা শোয়ার পর আমার জন্য জায়গা থাকে না।
নবনিঃএই যে জায়গা আছে।আপনি কি এখন খাটের বাইরে?
আরাফঃতাই বুঝি।তাহলে আপনি প্রতিদিন বুকে ঘুমানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
নবনিঃকোনো সমস্যা?
আরাফঃনা তো।
নবনিঃআমার জানতে হবে আরাফ আপনি কই যান এতো রাতে।এর জন্য আপনার বুকেই ঘুমাতে হবে।যাতে আমাকে নামানোর সময় আমি জেগে উঠতে পারি।(মনে মনে)
আরাফঃআমার সাথে চালাকিতে পারবেনা বউ।আমি জানি এসব আমাকে ধরার ফন্দি আটতেছো।কিন্তু তুমি চলো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়।আমি যাবোই না এখন আর ওই জায়গায়।
নিলয় আর ওয়ারদা এখনো বাসায় ফিরে নেই।ওয়ারদা বায়না ধরেছে রাতের আধারে শহর ঘুরবে।নিলয় অনেক বোঝানের পর ও কোনো লাভ হয় নেই।খুব জিদ্দি মেয়েটা। সবসময় নিজের কথা আদায় করে নেয় নিলয়ের কাছে থেকে।
ওয়ারদাঃনীল শুনেন না।
নিলয়ঃনীল আবার কে?
ওয়ারদাঃকে আবার তুমি।
নিলয় আহম্মক হয়ে গেলো।
নিলয়ঃতুমি কি ওয়ারদা?
ওয়ারদাঃনা আমার ভুত।অবশ্যই আমিইইই।
নিলয়ঃনা।না। আমার ওয়ারদা মনে হয় হারিয়ে গিয়েছে।তুমি দাঁড়াও আমি খুজে আসছি।
ওয়ারদাঃনীল।
নিলয়ঃকিইই?
ওয়ারদাঃআই লাফ ইউ।
নিলয় হা হয়ে গেলো।বিয়ের এক বছর পর ওয়ারদা এই তিনটা ম্যাজিক ওয়ার্ড বলেছে।ওয়ারদার আচরন গুলো পুরোই অবাক করার মতো।
নিলয়ঃহুট করে কি হয়ে গেলো?
ওয়ারদাঃআমি আজকে আসার সময় এক জন লোককে দেখলাম তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।আপনি আমার সাথে কখনো এমন করেন নেই।সব সময় ভালোবেসেছেন।আর আমি মা হবো না জেনেও আমার প্রতি একটুকু ভালোবাসা কমে নেই  আপনার। তাই এখন থেকে আমিও আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসবো।অনেক গুলা।
নিলয়ঃহা হা হা।আচ্ছা। বেসো। অনেক গুলো ভালোবেসো।
ওয়ারদাঃওকে নীল।
নিলয়ঃহা হা হা। কেমন কেমন জানি লাগে নীল শুনলে। 


ওয়ারদাঃকেমন লাগে?
নিলয়ঃকেমন কেমন।
ওয়ারদাঃহি হি হি।চলেন আইস্ক্রিম খাবো।
নিলয়ঃনা ঠান্ডা লাগবে।
ওয়ারদাঃএকটু একটু প্লিজ?
নিলয়ঃআচ্ছা।একটুই কিন্তু। 
ওয়ারদাঃআচ্ছা।
নিলয় আর ওয়ারদা আইস্ক্রিম খাচ্ছে আর খালি রাস্তায় হাটছে।
ওয়ারদাঃআমার খুব করে স্বপ্ন ছিলো। আমার স্বামীর সাথে কোনো একদিন এই পথগুলো হেটে পাড়ি দিবো।
নিলয়ঃপা ব্যাথা করবে না?
ওয়ারদাঃউহুম।
নিলয়ঃপুরো শহর এখন গভীর ঘুমে পাড়ি জমিয়েছে।শুধু তুমি আর আমি জেগে বেড়াচ্ছি।
ওয়ারদাঃএটার মজা আপনি বুঝতে পারছেন না?
নিলয়ঃহুম।খুব মজা।অনেক টেস্টি!
ওয়ারদাঃহি হি হি।
নিলয়ঃতোমাকে এমন হাসতে খেলতেই ভালো লাগে জানো?
ওয়ারদা কিছুই বললো না।নিলয় ওয়ারদা মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেলো।
নিলয়ঃসারাজীবন এমনই থেকে ওয়ারদা।আমার বাচ্চা লাগবে না।আমার এই বাচ্চা ওয়ারদাকে নিয়েই সারাজীবন কেটে যাবে।বাবা না হওয়াটা আমি মেনে নিতে পারবো কিন্তু তোমাকে হারানোটা না।তুমি ছাড়া আমার কেই বা আছে বলো?
ওয়ারদা নিলয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে।
নিলয় ওয়ারদাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে।অনেক অনেক ভালোবাসি ওয়ারদা।অনেক অনেক। 
নিলয় এর মুখে ভালোবাসি কথাটা ওয়ারদার বুকে ধুকধুকানি বাড়িয়ে দেয়।১ বছর পর তার স্বামী কথাটা স্বীকার করেছে।
নিলয় আর ওয়ারদার মধ্যে ভালোবাসাতো ছিল কিন্তু ভালোবাসার বহিপ্রকাশ দুইজন এর একজন ও করতো না।একটা সম্পর্কে ভালোবাসাটা যত প্রয়োজন তার বহিপ্রকাশ থাকাটাও খুব দরকার।এতে সম্পর্ক দৃঢ় আর মজবুত হয়।আজ নিলয় আর ওয়ারদার বৈবাহিক জীবন ভালোবাসা নামক ছোয়ায় পরিপূণ হলো।
সকালবেলা~
আরাফ এর ফোন কখন থেকে বেজে যাচ্ছে।আরাফ নবনিকে বুকে জড়িয়ে দিব্যি ঘুম দিচ্ছে।নবনির ঘুম ভেংগে যায় শব্দে।
নবনিঃআরাফ।ফোনটা ধরছেন না কেন?
আরাফ হাত দিয়ে খুজে ফোনটা কানে দিলো।অপর পাশের লোকের কথা শুনে। আরাফ এর ঘুম উড়ে গেলো।


আরাফঃকিহহহহ?আমি আসছি।
আরাফ নবনিকে নামিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো।নবনি হতবাক হয়ে গেলো আরাফ এর কাণ্ডে।
নবনিঃকি এমন হলো?!
আরাফ ফিরে এসে নবনিকে বললো
বাইরে যাবে না একদম।বাচ্চাদের আর নিজের খেয়াল রেখো। আর লকেটটা গলায় দাও এখনই।বলে আরাফ বের হয়ে গেলো।
নবনি কিছুই বুঝতে পারলো না।কি হচ্ছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


৪৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন