উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৭)
আজ পনেরো দিন যাবত আরাফ নিখোঁজ। আসমান জমিন এক করে আদর চৌধুরী আরাফকে খুজছেন।কিন্তু তার সকল চেষ্টাই বৃথা হচ্ছে। আরাফকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।নিলীমা চৌধুরীর শারিরীক অবস্থা খুব খারাপ।আরাফ এর চিন্তায় তিনি হাট এট্যাক করেছেন।
নবনি দিন দুনিয়া ছেড়ে নামাযে অনুগত হয়েছে।কারো সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।খাবারটাও বেচে থাকার জন্য খায়।ছেলেমেয়েদের কাজ আর নামাজ এই দুটোই তার নিত্যদিনে রুটিন।
একদিকে আদর চৌধুরীর পুরো পরিবার ভেংগে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।অন্য দিকে অফিস এ বেতন নিয়ে আন্দলোন হচ্ছে।আরাফ নাকি তাদেরকে বেতন না দিয়েই চলে গিয়েছে।আরাফ এর এতোদিনের পরিশ্রম এ গড়া মানসম্মান ধূলিসাৎ হওয়ার পথে।
এমন পরিস্থিতিতে আদর চৌধুরীর আরাফকে ভীষণ মনে পরছে।কারন তার হতচ্ছারা ছেলেটাই এই পরিবার এর ঢাল ছিলো। আরাফ না থাকায় বিপদ চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।
আদর চৌধুরীঃতুই কই চলে গেলি।আমি কয় দিক সামলাবো।বুড়ো বাবাকে কত কষ্ট দিবি আরাফ।আল্লাহ আমাকে রাস্তা দেখাও।
হঠাৎ আদর চৌধুরীর মনে পড়ে আরাফ যখন প্রথমবার নবনির কথা জানিয়েছিলো তখন বলেছিলো।
আরাফঃবাবা।তুমি জানো আমি এক বাঘিনীর প্রেমে পড়েছি।এই মেয়ে যেমন শান্ত থাকতে জানে তেমনি শিকার করতেও পারদর্শী। তাকে শুধু রাগিয়ে দিলেই হয়। থাবা দেয়া সে আগে থেকেই জানে।
আদর চৌধুরী মুচকি হাসলেন।
আদর চৌধুরীঃআমি জানি আমার কি করতে হবে।
আদর চৌধুরী নবনির রুমে আসেন।
আদর চৌধুরীঃআসবো মা?
নবনিঃহ্যা বাবা।আসেন।অনুমতি নিতে হবে না এটা আপনার ছেলে মেয়েরইতো রুম।
আদর চৌধুরীঃমা।কিছু কথা বলার ছিল।
নবনিঃজ্বি বাবা। বলেন।
আদর চৌধুরীঃতুমি এভাবে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলে আমার নাতিদের কি হবে?ওদেরকে কে দেখবে মা।তুমি তো এতো দুর্বল ছিলে না।আজ এত দুর্বল কি করে হয়ে গেলে?আরাফ ফিরে এসে এগুলো মেনে নিতে পারবে?ও তো খুব কষ্ট পাবে যে তার অনুপস্থিতিতে আমি তার আমানত গুলোর দেখাশুনা করতে পারি নাই।তুমি কি এটাও চাও?
নবনির চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি আদর চৌধুরীর হাতে পরলো।
আদর চৌধুরীঃশক্ত হও মা।আরাফ এর বাচ্চাদের জন্য শক্ত হও।অফিস এর অবস্থা ভালো না।যে যার মতো বিজনেস ডুবাতে চাচ্ছে।আরাফ অনেক কষ্ট করে খান ইন্ডাস্ট্রি আর চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিকে দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে।এটাকে ডুবতে দিও না।
নবনিঃআমি জানি বাবা।আরাফ না খেয়ে থেকে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়েছেন।আমি তার পরিশ্রম বৃথা হতে দিবো না।আমি কাল থেকে অফিস জয়েন করবো।
আদর চৌধুরী নবনির এর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যান।
পরেরদিন~
নবনি আদর চৌধুরীর সাথে অফিস এ প্রবেশ করে।
বাচ্চাদেরকে ওয়ারদার কাছে রেখে এসেছে।
অফিস এ যেয়ে দেখে যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।কাজ এর প্রতি কারো কোনো হেলদোল নেই।আরাফ এর পারসোনাল পিএ নবনির সামনে এসে দাঁড়ায়।
নবনিঃএখানে কি হচ্ছে?!!
কথাটা এতো জোরে বলে যে পুরো অফিস কেপে উঠে।
আদর চৌধুরী নবনির এই রূপ সম্পর্কে অপরিচিত।তিনি অবাক নয়নে নবনির দিকে তাকান।নবনির সেদিকে মনোযোগ নেই।সে চোখ গরম করে পিএর দিকে তাকিয়ে আছে।
নবনিঃফাইজলামি করতে অফিস এ আসেন?কিছুদিন বস না থাকায়।নিজেদেরকে বস ভাবতে শুরু করেছেন?
অফিসের সবাই চোখ নিচে করে দাঁড়িয়ে আছে।নবনির চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
নবনিঃব্যালেন্স শিট আনেন।দেখি কে কয় মাসের বেতন পায় নেই।আর যদি হিসেবে গরমিল পেয়েছি সবার নামে কেস করা হবে।আর আজকেই নতুন কর্মী নিয়োগ দিন।এরা চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির মতো নামকরা প্রতিষ্ঠান ডিজার্ভ করে না।
এবার নবনি কর্মীদের দিকে তাকায়।
এক মাসের বেতন না পেয়ে আপনাদের এই অবস্থা?এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার পর কোন ভালো প্রতিষ্ঠান আপনাদেরকি চাকরিতে নেয় আমিও দেখতে চাই।আমি আপনাদেরকে ফায়ার করলাম।
কথাটা বলে নবনি আরাফ এর কেবিন এর দিকে চলে গেলো।যে অফিসটা একটু আগে মাছের বাজার ছিল সেখানে নিশ্বাস এর শব্দ ও আসছে না এখন আর।সবার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে চাকরি হারানোর ভয়।
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তাদেরকে চাকরিতে রাখবে না যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে এই কোম্পানি থেকে বিতাড়িত করার সিল থাকে।কারন দেশের নামকরা কোম্পানির মধ্যে আরাফ এর কোম্পানি শীর্ষে অবস্থানরত একটি কোম্পানি।
আদর চৌধুরী মুচকি হাসছেন এদের অবস্থা দেখে।
নবনি আরাফ এর চেয়ারটায় হাত বুলায়।আজ এই চেয়ারটাও আরাফ এর শূন্যতা অনুভব করাচ্ছে।মনে পড়ে যায় যেদিন প্রথম বার নবনি এই অফিস এ খাবার নিয়ে এসেছিল।সেদিন আরাফ এই চেয়ারটাতেই বসে ছিল আর নবনিকে তার কোলে বসিয়ে ছিল।
নবনি মলিন হাসে।
আদর চৌধুরীঃনবনিতা।
নবনিঃহ্যা বাবা।
আদর চৌধুরীঃবাবা না।স্যার।বলো।বি প্রোফেশনাল। এখানে কোনো সর্ম্পক ম্যাটার করে না।শুধু যা ম্যাটার করে তা হলো লাভ আর ক্ষতি।মনে থাকবে?
নবনিঃইয়েস স্যার।
ম্যানেজার অফিসিয়াল ডকুমেন্টস নিয়ে আসে।
আদর চৌধুরীঃএই অফিস আমি দুই জন এর নামে ভাগ করে দিয়েছি।আরাফ এর নামে ৪৯ % শেয়ার।আর তোমার নামে ৫১% শেয়ার।
নবনিঃপুরোটা আরাফ এর নামে থাকলেই হতো বাবা।
আদর চৌধুরীঃএটা আরাফ এর সিদ্ধান্ত ছিল।আমি দুইজনকে সমান দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আরাফই আমাকে বলে তোমার নামে ৫১%দিতে।
নবনিঃকিন্তু কেন?
আদর চৌধুরীঃএটার উত্তরতো সেই আমাদের দিতে পারবে।তুমি সব কিছু বুঝে নাও। আমি বাসায় যাচ্ছি।মেহরাব আদ্রিতার চিন্তা করো না।আমি আছি ওদের সাথে।
নবনিঃআচ্ছা বাবা।
আদর চৌধুরী চলে যান।নবনি সব ডকুমেন্টস বুঝে নিতে শুরু করে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৪৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন