উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৯)
তানভীর সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে আসে।নবনি খেয়াল করে সিসিটিভি দেখতে থাকে।একটা পর একটা সবগুলো সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ফেলেছে।কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক।
নবনিঃএখানেতো তেমন কিছুই না।
তানভীরঃহ্যা।ম্যাম।স্যার যাওয়ার পর আমিক দেখেছিলাম।তেমন কিছু পাই নাই।
নবনিঃআরাফ এর সাথে তোমার শেষ কথা কবে হয়েছিল?
তানভীরঃযে দিন দিয়া ম্যাম কথাটা শেষ করার আগেই
বাইরে খুব জোরে শব্দ হলো।
নবনি বাইরে যেয়ে দেখে একটা ফুলদানি পরে আছে।নবনি ফুলদানিটা উঠিয়ে পাশে রেখে দেয়।
তানভীরঃকিছু পেলেন ম্যাম?
নবনিঃনা। ফুলদানিটা পড়া ছিল।কিন্তু বুঝলাম না পরলো কি করে?
তানভীরঃবাতাসে পরে গেছে হয়তো।
নবনিঃওহ।আচ্ছা আমি খান ইন্ডাস্ট্রিতে যাচ্ছি।তুমি এদিকটা দেখো।
তানভীরঃওকে ম্যাম।
নবনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।নবনি বের হতে কে জানি তানভীর এর মাথা বাড়ী মারলো।তানভীর জ্ঞান হারালো।
নবনি খান ইন্ডাস্ট্রির সব কাগজ ব্যালেন্স শিট চেক করেছে।এখানে কোনো গরমিল নেই।
নবনিঃআরাফ আমার বাবার বিজনেস ঠিক রাখতে যেয়ে নিজের বাবারটা গরমিল করে ফেলেছেন।
নবনি মলিন হাসলো।আপনি একটা পাগল।আমার সব কিছুর প্রতি যত যত্ন করেন নিজের সবকিছুতে ততই অবহেলা করেন।
নবনি উকিল ডাকে। কোম্পানির ওউনারশিপ জিজ্ঞেস করার জন্য।
লয়ারঃম্যাম। খান ইন্ডাস্ট্রি পুরোটা আপনার আর রাজ স্যার এর মধ্যে ৫০/৫০ করে বন্টন করা হয়েছে।
নবনিঃএটা কি আব্বু করিয়েছে?
লয়ারঃহ্যা।কিন্তু আরাগ স্যার সাথে এসেছিলেন। আর আমার মনে আছে আসাদ স্যার আরাফ স্যার রাজ স্যার আর আপনার মধ্যে ৩ ভাগে সম্পত্তি ভাগ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু আরাফ স্যার তা করতে দেন নেই।তার জন্যই বাধ্য হয়ে স্যার আপনাকে আর রাজ স্যারকে পুরোটা দিয়ে দিয়েছেন।
নবনিঃধন্যবাদ।আপনি যেতে পারেন।
আব্বু থাকলে এই ব্যাপারে আরো জানতে পারতাম।কিন্তু আব্বুও দেশের বাইরে গিয়েছেন।কি জানি কাজ আছে উনার।
নবনি আবার চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাক করে। নবনি কেবিন এ বসে ফাইল গুলো দেখছে।কালকে ইম্পটেন্ট মিটিং আছে।সেটা নিয়েই ভাবছে।
তানভীর এর কোনো খোজ নেই। ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।সারাদিন খোজ করেও নবনি কিছুই পায় নাই।এর জন্য মাথা প্রচন্ড খারাপ আছে। তাই তানভীর এর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালো না।
নবনিঃএখানে একটা ফাইল মিসিং আছে।স্টোর রুমে হবে হয়তো।তানভীর ও নেই যে পাঠাবো।এতো ইম্পটেন্ট ফাইল অন্য কাউকে পাঠানোও যাবে না।আমি নিজেই যেয়ে নিয়ে আসি।
নবনি স্টোর রুমে ফাইল খুজছে পাচ্ছে না।উপরে তাকে এখনও দেখে নেই।
নবনি একটা টুল এনে উপরের তাকটা দেখছে।
নবনিঃইয়েস পেয়ে গিয়েছি। এই ফাইলটাইতো।
নবনি ফাইলটা টান দেয় ওই ফাইলটার সাথে আরো কয়েকটা ফাইল বের হয়ে আসে। নবনি টাল সামলাতে না পেরে পরে যায়।
নবনিঃআল্লাহহহহহহহ।আমার কোমর!!
আপনি পরেন নেই ম্যাম।
নবনি চোখ খুলে দেখে সে একজন লোক এর কোলে।
নবনিঃহাউ দেয়ার ইউ।নামান আমাকে।
লোকটা নবনিকে ফেলে দিলো।নবনি খুব জোরে ব্যাথা পেলো।
নবনিঃআহ।আরাফ।
নবনির চোখের পানি গাল বেয়ে নিচে পড়লো।
লোকটার তাতে কোনো হেলদোল নেই।
নবনি উঠে দাড়ালো।
_ম্যানার্স নেই?ফালতু লোক।
_আমাকে ফালতু কেন বলছেন।একতো সাহায্য করলাম। তার উপর আমাকেই কথা শোনাচ্ছেন।
_এই আপনি সেই না?
_কোন সেই?
_ওই যে ওই লোকটা?
_কোন লোকটা?
_যে আমাকে সকালে কফি দিয়ে গেলেন?
_হ্যা।আমি কফি দিবো না তো কে দিবো!আমি এই অফিস এর কেয়ার টেকার।অফিস আর অফিস এর মানুষদের সেবা যত্ন করাই আমার কাজ।
_নাম কি আপনার?
_কাদের সালাম।সবাই আমাকে দেখলে সালাম দেয়।
_কিহ?
লোকটা পান চিবোতে চিবোতে বললো~
_মানে সালাম বলে ডাক দেয়।
_ভাব দেখেতো মনে হয় আপনি এই অফিস এর মালিক আর আমি কর্মচারী।গলা নামিয়ে চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।
_সরি ম্যাম।
আমার জন্য কফি পাঠান। নবনি নিজের কেবিনে চলে গেলো।
নবনিঃলোকটাকে কেমন জানি সন্দেহ লাগে।এই লোক ও তো আরাফ এর নিখোঁজ এর সাথে জড়িত না?
সালামঃম্যাম আসবো?
নবনিঃআসেন।
সালাম খুব বিশ্রিভাবে পান চিবোচ্ছে।
নবনিঃগেট আউট।আর কখনো আমার সামনে পান চিবাবেন না।অফিস এ পান সিগারেট একদমই এলাউ না।
সালামঃ কিন্তু আরাফ স্যারতো কিছু বলতেন না।তার থাকাকালীনতো এই নিয়ম ছিলো না।
নবনিঃএখন আরাফ নেই এই অফিসে। আমি আছি। আমি যা বলবো তাই হবে। Now get lost.
লোকটা একটা ভেটকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলো।
নবনিঃছিইই।কি বিশ্রি ঠোঁট।আরাদ এদেরকে সারাদিন কি করে সহ্য করতো।এই অফিসে সব কিছু গরমিল।
নবনি বাসার উদ্দেশ্য রাওনা দিলো।বাসায় আসার সাথে সাথে বাচ্চা গুলো কোলে এসে পড়ে নবনির।নবনিও এদেরকে বুকে নিয়ে শান্তি অনুভব করে।
নবনিঃবাবা।ওয়ারদা চলে গিয়েছে?
আদর চৌধুরীঃহ্যা।একটু আগেই নিলয় অফিস থেকে এসে নিয়ে গেলো।
নবনিঃযাক ভালো হয়েছে।মা খেয়েছেন?আপনি খেয়েছেন?
আদর চৌধুরীঃহুম।তুমিও খেয়ে নাও।
নবনিঃক্ষুদা নেই।
নবনি বাচ্চাদের নিয়ে উপরে চলে গেলো।আদর চৌধুরী পিছনে ডাকলেন।কিন্তু নবনি শুনলো না।
আদর চৌধুরীঃআজ আমি এক নতুন নবনিকে আবিষ্কার করলাম।অফিসে যেভাবে সবাইকে শাসাচ্ছিল।যেন আরাফ।নবনির মাঝে আরাফ এর ঝলক স্পষ্ট দেখেছি আমি।আরাফ নিজে নবনির গুন গুলো নিতে পেরেছি কি না জানি না কিন্তু নবনিকে নিজের মতো করে প্রস্তুত করেছে।
আরাফ এর পাশে এই নবনিকেই খুব মানায়।ঠিকই বলছিলো আরাফ সে এক বাঘিনীকে পচ্ছন্দ করেছে।
আদর চৌধুরী মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
নবনি বাবুদেরকে বসিয়ে বিছানায় গা মিলিয়ে দিলো।সারা শরীর ছেড়ে দিয়েছে কাজ করতে করতে।এতো কাজ। ইয়া আল্লাহ।আরাফ প্রতিদিন এই কাজগুলো কি করে করতেন!!আবার বাসায় এসে রেস্ট ও নিতেন না। আমাকে আর বাচ্চাদের সময় দিতে পারেন।
আরাফ এর শূন্যতা আমাকে প্রতি মূহুর্তে অনুভব করাচ্ছে উনি কি ছিলেন আমার জীবনে।
আমার সবটা জুড়ে তুমি আরাফ। আমার পুরোটা অস্তিত্ব তোমায় ঘিরে। এসে পরো না আরাফাত চৌধুরী। প্লিজ এসে পড়ো।
বাবুদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে নবনি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।তারপর বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়।বারান্দায় শো শো বাতাস চলছে।এখন আরাফ থাকলে উষ্ণতা ভরা বুকে আড়াল করে নিতো নবনিকে।কিন্তু সে তো নেই।আল্লাহ জানেন উনি কোন বিপদে আছেন।
নবনি তাহাজ্জদ এর নামায পড়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করে।
ইয়া আল্লাহ।সারা দুনিয়া জাহানের মালিক।তুমি চাইলে সব পারো।তুমি আমার স্বামীকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দাও।আমার সন্তান এর বাবাকে তুমি ফিরিয়ে দাও। আমার আর কিছুই লাগবে না তোমার কাছে।শুধু আরাফকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।আমি খুব অসহায়বোধ করছি।আল্লাহ।তুমি আমাকে রাস্তা দেখাও।
নবনি চোখ মুছে জায়নামাজ ভাজ করে জায়গা মতো রেখে দিলো।তারপর ঘুমাতে চলে গেলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৫০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন