উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৫০)
সময় রাত ২টা।
নবনি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। সারাদিন এর ক্লান্তি নবনিকে গ্রাস করেছে।কিন্তু এই অন্ধকার রজনিতে যেখানে সবাই ঘুমিয়ে সারাদিন এর ক্লান্তি থেকে অবসাদ গ্রহন করছে সেখানে দুটো চোখ পেচা পাখির মতো রাত জেগে বসে আছে।
_না। আমার এভাবে বসে থাকলে হবে না।যার জন্য এতো কিছু করতে হলো আমার সেই ভালো নেই।আজকে অফিস এ তার চোখগুলোর নিচে পড়া কালো দাগ গুলো আমাকে জানান দিচ্ছে আমার পাখিটা ভালো নেই।তার আমাকে বড্ড প্রয়োজন।কেন আসলে তুমি আমার খুব কষ্টে গোছানো মনটাকে এলোমেলো করে দিতে।তোমার জন্য আমি আরাফাত চৌধুরীকে আড়াল করে রেখেছি।তুমি ভাবতে ও পারো না কাজটা আমার জন্য কত কষ্টকর ছিলো।কিন্তু এটাতো আমার করতেই হবে।কারন তুমি শুধুই আমার।তোমার এই উন্মাদ প্রেমিক সবকিছু করতে পারে তোমার জন্য।যা আরাফাত চৌধুরী পারবেনা।
লোকটা একটা কালো হুডি গায়ে দিয়ে বেড়িয়ে পরে।উদ্দেশ্য নবনিকে এক পলক দেখা।নবনির বাসার বারান্দায় একটা সিড়ি বেয়ে লোকটা উপরে উঠে যায়।
নবনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল ঘুমানের আগে।আরাফ যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই নবনির স্লিপিং পিলস নিতে হয়।মস্তিষ্ক আর মনকে আরাফ এর চিন্তা থেকে বের করে একটু ঘুম দেয়ার জন্য।তার এই কাজটা যে তার জীবনে করা ভুলগুলোর মধ্যে একটি হবে সেটা তার ধারনারও বাইরে।
লোকটা নবনির পাশে এসে বসে।
_তুমি এতো সুন্দর কেন?তোমায় ঘিরে আর কত পাগলামি যে আমাকে দিয়ে করাবে।যখন আরাফাত চৌধুরী নামক কাটা সরিয়ে ফেলেছি সেখানে বাকি আর কিছুই তোমাকে আমার থেকে দূর করতে পারবে না।খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার করে নিবো।
নবনির চুল গুলো কানের কাছে গুজে দিলো।নবনির কপালে ঠোঁট এর স্পর্শ বসিয়ে দিলো।নবনি এখনো গভীর ঘুমে। এবার লোকটার লোকটার চোখ পাশে থাকা বাচ্চাগুলো ওপরে পরলো।
_তোমরা অনেক কিউট।বাবুরা।তোমার আম্মুর খেয়াল রেখো।
লোকটা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।কিন্তু কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো।পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট না করে লোকটা সেখানে থেকে বেরিয়ে পরলো।
_আল্লাহ সহায় ছিলেন শব্দে ঘুম ভাংগে নেই।আমাকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে।একটা ভুল এর জন্য আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলবো।
নবনির সকালে ঘুম ভাংগে ফজর এর আজান শুনে।নবনি উঠে ফ্লোরে পা রাখতে পায়ে কিছু বিধে।
নবনিঃআহহহ।
নবনি ফ্লোরে খুজতে লাগে কি পায়ে লাগলো।মেহরাব আদ্রিতা হাটতে শিখছে তাদের পায়ে লাগতে পারে।নবনি খুজে ফ্লোর থেকে একটা আংটি পেলো।
নবনিঃআংটিটা কার হতে পারে?আমার রুমে কি করে আসলো!আরাফ এর আংটিতো না।আরাফ এর আংটি হলে আমি চিনতাম।তাহলে কার এটা?
নবনি আংটিটা যত্ন করে রেখে দিলো।
অফিসে~
তানভীরঃস্যার। এতো জোরে মারে কেউ?আমি সারারাত অজ্ঞান পরেছিলাম।
লোকটাঃতোমাকে জানে মেরে ফেলি নি তাই তো অনেক। কি করতে যাচ্ছিলে?নবনিকে দিয়ার কথা কেন বলছিলে?যদি ও একটু টের পেতো তাহলে আমার কাছে পৌছাতে তার একদিনও লাগতো না।
তানভীরঃসরি স্যার। ভুলে বলে ফেলেছি।
লোকটাঃতোমাকে আমি ভুল করার জন্য সাথে রেখেছি?বলদ একটা!
তানভীরঃবলদ বলবেন না স্যার।আমি মোটেও বলদ না।বলদ হলে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আপনার সুন্দর চেহারার ফুটেজ গুলো ডিলিট করতে পারতাম না।আমি না থাকলে কালকে নবনিতা ম্যাডাম ঠিকই আরাফাত চৌধুরীর কিডন্যাপারকে ধরে ফেলতো।আর কেটে টুকরো টুকরো করতো যে পরিমান ভালোবাসে তার স্বামীকে কালকেই সব বুঝে ফেলেছে।
লোকটাঃঅনেক মহান কাজ করেছো।আমাকে বাচিয়ে।আমিতো তোমাকে মাসে মাসে ঘুড়ে খাওয়ার জন্য বেতন দেই।আমার কাজ করার জন্য না।
তানভীরঃসরি স্যার।
লোকটা আনমনে কিছু একটা ভাবছে।
তানভীরঃকি হয়েছে স্যার?হুট করে মন খারাপ হয়ে গেলো কেন?
লোকটাঃকালকে কেবিনে তোমার নবনিতার ম্যামের চোখগুলো দেখে আমার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরন এর সৃষ্টি সেই রক্তক্ষরণ এর সৃষ্টি হয় সেটা বন্ধ করতে রাতে তার বাসায় গিয়েছিলাম। সেটা বন্ধতো হলেই না উলটা বাসায় যেয়ে নবনিতার বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে কষ্টগুলো আরো বেড়ে গেলো।
তানভীরঃআপনি এতো বড় রিস্ক না নিলেও পারতেন।কেউ জানতে পারলে আপনার এত দিনে পরিশ্রম পানি হয়ে যেত।
লোকটাঃহুম।
লোকটা পানির গ্লাসটা হাতে নেয়।
তানভীরঃস্যার কালকে আপনার হাতে একটা আংটি দেখেছিলাম সেটা কোথায়?
লোকটাঃওহ নো। কোথায় পড়ে গেলো!তোমার নবনিতা ম্যাম এর বাসায় না তো।
তানভীরঃকি জানি।
_কি হচ্ছে এখানে??
কন্ঠটা শুনে লোকটা আর তানভীর দুইজনই হকচকিয়ে গেলো।
নবনিঃআপনার এতো সকালে দুইজন একসাথে আমার কেবিনে কি করছেন?
তানভীরঃম্যাম আপনি! এতো সকালে কেন চলে আসলেন।এখনোতো অফিস আওয়ার শুরু হয় নেই।
নবনিঃআমার অফিসে আমি যখন ইচ্ছে আসতে পারবো সেটার জন্য তোমাকে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে?
তানভীরঃনা ম্যাম। আসলে।
নবনিঃআসলে নকলে পরে করো আগে সরে দাড়াও। তোমার পিছনে থাকা লোকটা চেহারা আমাকে দেখতে দাও।
তানভীরঃম্যাম আমরাতো।
নবনিঃসাইড হতে বলেছি।
তানভীর সরে দাড়ালো।
নবনিঃসালাম।
সালামঃহ্যা ম্যাম।ওই তানভীর স্যার কফি খাবেতো তাই দিতে এসেছিলাম।
তানভীরঃহ্যা হ্যা ম্যাম।
নবনিঃআপনার হাতেতো কফির কাপ দেখছি না?
তানভীরঃএই যে ম্যাম টেবিলে রাখা আছে।
নবনিঃতুমি এতো সকালে এখানে কেন?আর কালকে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলে?কতো কল করলাম ধরলেই না।
তানভীরঃআমার মা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।তাই মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।তাই তো আজকে সকালে এতো তাড়াতাড়ি এসে পরেছি।আমাকে চাকরি থেকে বের করবেন না।ম্যাম আমি অনেক অসহায়।
নবনিঃহইসে হইসে।
নবনি কফির মগটা হাতে নিলো।
নবনিঃকফিতে মুখ লাগিয়েছো?
তানভীরঃনা।
সালামঃআরে ম্যাম এটা পান করেন না।আমি আপনার জন্য আপনার ফেভারিটটা বানিয়ে নিয়ে আসি। আমাকে পাচ মিনিট দিন।
নবনিঃআচ্ছা যান।নিয়ে আসেন।
সালাম চলে গেলো।
নবনি কফির কাপে চুমুক দিলো।
তানভীর বেফ হয়ে যেতে নেয়।
নবনিঃতানভীর তুমি কোন কফি ফ্লেভারটা পচ্ছন্দ করো?
তানভীরঃব্লাক কফি ম্যাম।
নবনি মুচকি হাসলো।
নবনিঃআচ্ছা যাও।
নবনি কফি খেতে খেতে কাজ করছে।
সালামঃম্যাম আসবো?
নবনিঃহ্যা।
সালাম কফির কাপটা নবনির দিকে এগিয়ে দিলো।
নবনি এখনো ল্যাপটপে কাজ করছে।সালাম দাঁড়িয়ে নবনিকেক দেখছে।চোখের পলকও ফেলছে না যেন ফেললেই কোনো কিছু মিস হয়ে যাবে।
নবনি সালাম এর দিকে না তাকিয়েই বললো~
দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
সালামঃআপনিতো যেতে বলেন নেই ম্যাম।
নবনিঃআচ্ছা যান।
সালাম চলে যেতে নিলে নবনি উঠে কেবিনে হাটাহাটি করতে থাকে।ফ্লোরে পানি পড়েছিল নবনি খেয়াল করে নেই।আর পা পিছলে সালাম এর উপরে যেয়ে পড়ে।সালাম নবনির কোমর চেপে ধরে।
সালাম এর স্পর্শে নবনির সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে।
সালামঃআর ইউ ওকে ম্যাম?
নবনিঃহ্যা।আমাকে ছাড়ুন।
সালামঃকালকের মতো?
নবনিঃনায়ায়ায়া।উঠান আমাকে।
সালামঃআচ্ছা।
সালাম মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়।
সালাম যেতেই নবনি দরজা আটকে নিজের কেবিন এর সিসিটিভি অফ করে দেয়।তারপর সিসিটিভি ফুটেজ গুলো আবার দেখতে থাকে।
প্রথমেই নবনি যে জিনিসটা খেয়াল করে তাহলো কালকে যে বাইরে ফুলদানি পরেছিল সেই ফুটেজটা মিসিং আছে।
নবনিঃফুলদানি বাতাসে পরলে সেটাও তো রেকর্ড হওয়ার কথা সেটা নাই কেন?
তারপর নবনি বাকি ফুটেজগুলো দেখতে লাগলো।ফুটেজ এ একটা জিনিস খেয়াল করলো সালাম যখন নবনিকে কফি দিতে এসেছিলো কালকে তার হাতে আংটি ছিল।নবনি পার্স থেকে আংটি বের করে মিলেয়ে দেখলো।
হ্যা।এটাতো এই আংটিটাই। তার মানে সালাম আমার বাসায় আমার রুমে গিয়েছিল?কিন্তু কেন?!!
নবনি সালাম এর ফাইল চেক করে। সেখানে লিখা সালাম ১৬ দিন আগে এই অফিসে জয়েন করেছে।
তার মানে আরাফ এর নিখোঁজ এর পরপরই এই লোক অফিসে জয়েন করে।
হচ্ছেটা কি!! এই লোক এর মধ্যে ভেজাল আছে। কিন্তু কে এই লোক!কি উদ্দেশ্য এই অফিসে এসেছে?আরাফ এর সাথে এর কি শত্রুতা।কেন আরাফকে আড়াল করে রেখেছে।
আর তানভীর ও এর সাথে জড়িত আছে।যার হাতেনাতে প্রমান আমি একটু আগেই পেলাম।সকাল সকাল এরা দুই জন একসাথে কি করছিলো।
আরাফাত চৌধুরী কই আপনি?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৫১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন