উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০১)
"আমার কাছে ছেলে মানে, গাম্ভীর্যের ভার।
আমার কাছে ছেলে মানে, শ্যামলকুমার।
আমার কাছে ছেলে মানে, রাগী এক মূর্তি।
আমার কাছে ছেলে মানে, যার হাসির আছে কমতি।
আমার কাছে ছেলে মানে, যার চোখে আছে চশমা। "
- এবার তুই না থামলে আমার হাতে উঠবে জুতা।
বিরক্তের সাথে কথাটা বলল অনল। অনলের কথা শুনে নিজের কবিতা লেখা বন্ধ করে তার দিকে তাকায় বিন্দু। চোখ মুখ কুচকে জিজ্ঞেস করল
- প্রবলেম কি তোর? নিজের মতন কি আমাকেও সিঙ্গেল মারতে চাস?
ভ্রু যুগল কুচকে অনল উত্তর দিল
- আমি কি তোকে বলেছি যে তুই বিয়ে করিস না, সিঙ্গেল থাক।
- এই যে আমার প্রেমের প্রথম স্টেপ কবিতা লেখায় বাধা দিচ্ছিস। প্রেম করার উদ্দেশ্যই তো এই কবিতা লিখছি। এটা লেখে এফবিতে ছেড়ে দিবো। তারপর এটা পড়ে আমার স্বপ্ন কুমার পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকুক না কেন, আমার কাছে চলে এসে আমাকে বলবে, "স্বপ্নকণ্যা আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি মাই লাভ?" আমি লাজুক ভজ্ঞিতে উত্তর দিবো, "ইয়েস মাই লাভ"। তারপর আমার বিয়ে করবো।
অনল চোখে মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে বলল
- তোর এই ফালতু কবিতা শুনে হিরো আলমও আসবে না, তোকে বিয়ে করতে।
বিন্দু তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বলল
- বিয়ে থেকে পালিয়ে বেড়ানো মেয়ে, তুই কি বুঝবি রোমান্টিক কবিতার মানে।
পরোক্ষনেই কৌতুহলি হয়ে বলল,
বাই দা ওয়ে আন্টি জননী বলল তুই নাকি ঘটককে গুনে গুনে পাঁচটা শর্ত দিয়েছিস। ছেলে শ্যামবর্ণের হতে হবে। ছেলের হাইট পাঁচ ফুট নয় বা দশ হতে হবে। ছেলে কর্মঠ হতে হবে। ছেলেকে বয়স আঠাশ থেকে বএিশের মধ্যে হতে হবে। আর একটা জানি কি?
একটু ভেবে আবার বলল
- হ্যাঁ মনে পরেছে, ছেলের পরিবার ছোট হতে হবে।
বিন্দুর কথা শেষ হলে, অনল স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- হ্যাঁ দিয়েছি।
বিন্দু কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তোকে তো কখনো গায়ের রং নিয়ে খুঁতখুঁত করতে দেখিনি। তাহলে হঠাৎ শ্যামবর্ণের পাএই কেন চাই?
- কারণ ছেলে যদি কালো হয়, তাহলে আমার মতো ফর্সা বউ পেলে সারাদিন বউকে নিয়ে নাচানাচি করবে। আবার ছেলে যদি বেশি সুন্দর হয়, তাহলে অনেক মেয়ে তার পিছন পিছন ঘুরবে। এতে আমার কোন সমস্যা না হলেও, আমার আশেপাশের মানুষগুলোর প্রচন্ড সমস্যা হবে। প্রতিনিয়ত স্বামীকে কিভাবে হাতে রাখা যায় সেই বুদ্ধি দিয়ে বেড়াবে। তাই সুন্দরও না কালোও না শ্যামবর্ণ চাই।
বিন্দু হাসতে হাসতে বলল
- কি লজিক রে বাবা। আর বাকিগুলো?
- তুই তো জানিস, ওই আকাশ ছোয়া ছয় ফুট লম্বা ছেলে আমার পছন্দ না। আমার উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। সেই হিসেবে এই হাইট ঠিক আছে। ছেলেকে কর্মঠ হতে হবে। বাপের কিছু থাকুক বা না থাকুক, ছেলেকে অবশ্যই ভালো কিছু করতে হবে। বাপের টাকায় খাবে আর বউয়ের পিছে পিছে ঘুরে ঘুরে প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান করবে তা হবে না। আর শুনেছি মেয়েরা নাকি ছেলেদের থেকে তারাতাড়ি বুড়ি হয়ে যায়। যদি আমি ছোট বা সমবয়সী ছেলেকে বিয়ে করি, তাহলে দেখা যাবে ছেলের আগে আমি বুড়ি হয়ে গিয়েছি। তখন ছেলে বুড়ি বউয়ের দিকে তাকাবে না। অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে আবার পরের কষ্টে কষ্টিত হওয়া মহিলারা এসে তাদের উদার মনের উপদেশ বাণী শোনাবে। আবার বুড়ো লোকরা বেশি বউ পাগল থাকে। তাই আমার থেকে দুই থেকে ছয় বছরের বড় ঠিক আছে।
একসাথে এতোটুকু বলে থামে অনল। বিন্দুর আর তর সইছে না বাকিটুকু শোনার। তাই অনল একটু থামতেই সে প্রশ্ন করলো
- আর লাষ্টের টা?
অনল আবার বলল
- বাড়ি ভর্তি একগাদা মানুষ থাকলে বক বক করে বাড়িকে মাছের বাজার বানিয়ে রাখবে তাই।
- বাট বিয়ে না করতে চাওয়া রমনী হঠাৎ ঘটককে পাএের বর্ণনা দিয়ে দিল, ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না।
- মা যে হারে এবার পাএ দেখা শুরু করেছিল। বল্টু পল্টু যাকে পাবে তার সাথেই এই মাসের মধ্যেই আমাকে বিয়ে দিয়ে ছাড়তো। তাই নিজে বুদ্ধি করে ঘটককে এই শর্তগুলো দিয়েছি। প্রথমত, এই শর্ত অনুযায়ী ছেলে খুঁজতে ঘটক বেটার কমপক্ষে ছয়মাস সময় লাগবে। আর দ্বিতীয়ত, এমন ছেলেকে বিয়ে করলেও প্রবলেম নেই। আমি স্বাধীন থাকতে পারবো।
ওয়েটার এসে দুই প্লেট ফ্রাইড রাইস আর দুই গ্লাস কোকাকোলা দিয়ে যায়। বিন্দু এক চামিচ ফ্রাইড রাইস মুখে পুরে জিজ্ঞেস করল
- তা সিপনও তো শ্যামবর্ণের, কর্মঠ, বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গয়েছে। বাবা-মা আর ছেলেই বাসায় থাকে। তাহলে, তাকে চান্স দিস না কেন?
অনল খাবার চিবাতে চিবাতে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়
- সিপন আমাকে পছন্দ করে। এখনই ছেলে আমার পিছনে যে পরিমাণ ঘুড় ঘুড় করে, বিয়ের পর আরো বেশি করবে। তাই।
বিন্দু চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- তো তুই কি চাচ্ছিস যে ছেলে তোকে ভালোবাসে না তাকে বিয়ে করতে?
অনল মুখের খাবারটা গিলে বলল
- কিছুটা তেমনি। মনে কর যে ছেলের বিয়ে, বউ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নাই। বাবা-মা'র চাপে পরে বিয়ে করেছে। নিজের বংশধর দরকার তাই বাচ্চা নিয়েছে। এমন ছেলে।
বিন্দু চোখে মুখে বিরক্ত নিয়ে বলল
- তুই যাস্ট ইম্পসিবল।
হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই প্রচন্ড পানি পিপাসা লাগে ইতির। পাশে ঘুমিয়ে থাকা মানবটির দিকে একনজর তাকিয়ে আস্তে করে বিছানা থেকে নামে সে। লাইট জ্বালালে যদি মানবটির ঘুম ভেঙে যায়, তাই রুমের লাইট জ্বালায় না। বারান্দায় জ্বালানো লাইটেই যে আবছা আলো বারান্দা থাই গ্লাস আর পাতলা পর্দা বেদ করে রুমে আসছে তাতেই সে সাবধানে আস্তে ধীরে হেটে বিছানার ওপরপাশে থাকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালছিল তখনি পাশে ঘুমানো মানবটি নড়ে উঠে। সেদিকে তাকাতেই হাতের গজ থেকে বেশি পানি পরে গ্লাস ভরে, পরতে থাকে। সেদিকে খেয়াল হতেই তাড়াতাড়ি জগটা সরাতে গিয়ে অসাবধানতায় জগের নিচের অংশের সাথে ধাক্কা খেয়ে গ্লাসটা নিচে পরে যায়। পানি ভর্তি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসটা নিচে পরতেই ঝনঝন শব্দ করে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। গ্লাস ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিশিরের। চোখ খুলে আবচ্ছা আলোয় ইতিকে ড্রেসিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে? কিসের শব্দ হয়েছে? আর তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
জিজ্ঞেস করে উত্তর জন্য অপেক্ষা না করেই শোয়া থেকে উঠে, বিছানা থেকে নামর জন্য পা বাড়ায়। নিশিরকে বিছানা থেকে নামতে দেখে ইতি তাড়াতাড়ি বলে উঠলো
- নিচে নেমো না। পানির গ্লাস পরে ভেঙে গিয়েছে।
নিশির ইতির কথা শুনে ফ্লোরের দিকে তাকায়। আবছা আলোতে অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে সেখানে পরে থাকা পানি আর কাচের গ্লাসের ভাঙা টুকরোগুলো। সেগুলোর দিকে এক নজর তাকিয়ে নিশির বলল
- তোমাকে কতবার বলেছি কিছু লাগলে আমাকে ডাকবে। কথা শোনো না কেন? তার উপর লাইটাও জ্বালাওনি।
ইতি কোন উত্তর দেয় না। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। নিশির অন্যপাশ দিয়ে ঘুরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। সাবধানে ইতির কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়। ইতি ক্ষীণ কন্ঠে বলল
- আমি হেটে যেতে পারবো।
নিশির শক্ত কন্ঠে বলল
- আমি জানি তুমি কতোটুকু কি পারবে। তোমার বলতে হবে না।
ইতি আর কিছু বলে না। নিশির ইতিকে খুব সাবধানে হেটে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে বলল
- আমি না আসা পর্যন্ত একদম উঠবে না এখান থেকে।
কথা বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইতি খুশি মনে চুপচাপ সেভাবেই বিছানায় বসে থাকে। নিশিরের এই শাসনগুলো খুব ভালো লাগে তার। কিছুক্ষণ পর একটা গ্লাস পানি আর একটা পলিথিন নিয়ে রুমে ডুকে নিশির। পানির গ্লাসটা ইতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
- নেও খাও।
ইতি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে গ্লাসের অর্ধেক পানি খেয়ে, নিশিরের হাতে গ্লাসটা ফেরত দেয়। নিশির পানির গ্লাসটা ওয়ারড্রবের উপর রেখে ইতির কাছে এসে বলল
- সুয়ে পর।
বলে ইতিকে ধরে সাবধানে সুয়িয়ে, তার গায়ে কাথা দিয়ে দেয় সে। তারপর গিয়ে ফ্লোরে পরে থাকা কাচের টুকরোগুলো তুলে পলিথিনে ভরতে থাকে। ইতি শোয়া থেকেই তা দেখে বলল
- কি করছো তুমি, রেখে দেও সকালে খালা এসে পরিষ্কার করবে নে।
নিশির কাচের টুকরোগুলো তুলতে তুলতেই বলল
- হ্যাঁ সেই আসায় ফেলে রাখি। আর সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের সব কাহিনি ভুলে নিজে পা দেও। তারপর একটা অঘটন ঘটুক।
ইতি জানে, নিশির এখন তার কোন কথাই শুনবে না। তাই সে চুপ করে আফসোস করতে থাকে, কেন যে সে সাবধানে কাজ করলো না। তাহলে নিশিরকে এই মাঝ রাতে এতোকিছু করতে হতো না। নিশির পলিথিনে সব কাচের টুকরো ভরে সেগুলো নিয়ে রান্নাঘরে রাখা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। রান্নাঘরের বারান্দা থেকে ঘর মোছার বালটি আর কাপড় নেয়। রান্নাঘর থেকে আধাবালতি পানি আর ঘর মোছার কাপড় নিয়ে রুমে ডুকে পুরো রুম মুছে। মোছা শেষ হলে বালটির পানি ফেলে দিয়ে, বালটিটা আবার আগের জায়গায় রেখে দেয়। ঘর মোছের কাপরটা গ্রিলে মেলে হাত ধুয়ে রুমে ডুকে। বারান্দায় মেলা গামছায় হাত মুছে পুনরায় রুমে ডুকে বিছানায় ইতির দিকে তাকাতেই দেখে ইতি এখনো ঘুমায়নি। গোল গোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে নিশির ভ্রু যুগল কুচকে বিছানার দিকে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করল - কি হয়েছে এখনো না ঘুমিয়ে তাকিয়ে আছো কেন?
ইতি শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়
- ঘুম আসছে না।
নিশির রুমের লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে বাম কাত হয়ে মাথার নিচে বাম হাত দিয়ে সুয়ে বলল
- এই সময় রাত জাগা ঠিক না। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমানোর চেস্টা করো।
- আচ্ছা।
নিশির ইতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ইতি চোখ জোড়া বন্ধ করে মনে মনে ভাবতে থাকে, "শুধুমাএ কর্তব্য পালন করতে গিয়ে যে লোকটা তার এতো যত্ন নেয়। তাকে ভালোবাসালে না জানি তার জন্য কতো কি করতো।" একটা দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করে চোখ বন্ধ করে, ঘুমানোর চেষ্টা করে সে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন