উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৫)
- মা তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে কেন পড়েছ বলতো?
চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল অলক। মিসেস সাবিদা অবাক হয়ে বলল
- এটা কেমন কথা তুই আমার একমাএ ছেলে। তোর বিয়ের কথা আমি ভাববো না!
অলক আগের মতন বিরক্ত নিয়ে বলল
- দেখ মা আমি বিয়ে করবো না। আর এই কথা তোমাকে আরো দুই তিন বছর আগে বলেছি। তাহলে এখন আবার এই টপিক তুলছ কেন?
অনল খুশি হয়ে মনে মনে নিজেকে সাবাস দিতে বলল, "বাহ অনল বাহ। দারুণ একটা আইডিয়া বের করেছিস। এবার তোর বিয়ে ক্যানসেল পাক্কা।"
মিসেস সাবিদা বিরক্ত নিয়ে বলল
- কারণ তুই না বিয়ে করলে তোর বান্দর ছোট বোন বিয়ে করবে না। এতো ভাল পাএ, এতো ভাল ফ্যামিলি পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। তার উপর বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন কিভাবে না করি। আর তাছাড়া দেখ বাবা আমার ও তো বয়স হচ্ছে। কবে কি হয়ে যায় বলা যায়। আমার তো ইচ্ছা আছে মেয়ের সাথে সাথে ছেলের সংসার, সন্তান দেখে যাওয়ার।
মিসেস সাবিদা মনে মনে বলল, তোর বোন বিয়ে করতে রাজী হলেও আমি হতে দিব না বাবা। তোকে বিয়ে করানোর এই একটাই সুবর্ণ সুযোগ। এটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
অলক ভ্রু কুঁচকে অনলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন? আমার বিয়ের সাথে তোর বিয়ের কি সম্পর্ক?
অনল দৃঢ়তার সাথে বলল
- দেখ ভাইয়া তুই বড়। তোর বিয়ে হবে আগে। এটাই নিয়ম। আমি এই নিয়ম ভেঙে তোর বিয়ের আগে কখনোই বিয়ে করবো না। না মানে না।
অলক আর পাল্টা কিছু বলে না। কারণ সে জানে, বলেও কোন লাভ হবে না। একটা বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকাতেই তার চোখ যার তার থেকে কিছুদূর টিভির সামনের সোফাতে বসে থাকা সিন্ধার দিকে। দুই কানের নিচে কালো দুটো রাবার ব্যান্ড দিয়ে দুটো জুটি করা। ফর্সা গায়ে গাড় সবুজ রঙের ঢিলেঢালা টি-শার্ট আর কালো রঙের প্লাজু। গলায় ঝুলানো তিন হাত লম্বা আর এক হাত প্রস্থের কালো ওড়না। পটেটো চিপস খাচ্ছে আর টিভিতে বার্বি মুভি দেখছে। কেউ দেখলে বলবে এই মেয়ে কলেজে পড়ে। আচ্ছা, মেয়েটার বয়স কতো? মাসখানেক আগে জন্মদিন ছিল। কিন্তু কতো বছরের? হুম্ম মনে পড়েছে আঠারো বছর বয়সের জন্মদিন ছিল। এই মেয়ের আঠারো বছর হয়ে গিয়েছে! তাহলে তো তার বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। আর কিছুদিন পর নিশ্চয় আম্মুর মতো আন্টিও ওর বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগবে। নাও দিতে পারে। একটা মাএ মেয়ে বলে কথা। এতো তাড়াতাড়ি কি তাকে নিজের কাছ ছাড়া করবে আন্টি। এসন হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে অলকের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসে।
অলককে চুপ থাকতে দেখে মিসেস সাবিদা মনে মনে ভাবলো, 'নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ'। তাই উৎফুল্ল কন্ঠে ছেলের উদ্দেশ্যে বলল
- তাহলে ঘটককে ফোন করে বলে দেই মেয়ে দেখতে।
অনল মনে মনে বাকা হেসে বলল, "আমাকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করানো। দাঁড়াও তোমাদের দেখাচ্ছি মজা।" মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল
- ঘটককে ফোন করতে হবে না।
ছেলেকে আবার বুঝানোর জন্য মিসেস সাবিদা বলল
- দেখ বাবা তুই কি আমাদের কথা একটুও ভাববি না।
মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই অনল চোখে মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল
- ভাইয়া তুই না বিয়ে করলে কিন্তু আমিও ,,,,,,,,,
অনলের কথা শেষ হওয়ার আগেই অলক বিরক্ত নিয়ে বলল
- আহা। আগে তো আমাকে কথা শেষ করতে দিবে। আমি ঘটককে বলতে না করেছি কারণ আমার পাএী পছন্দ করা হয়ে গেছে।
মিসেস সাবিদা খুশি হয়ে বলল
- সত্যি।
কিন্তু অনলের মাথায় এবার বাজ পড়লো। এতো তাড়াতাড়ি তার ভাই বিয়েতে রাজি হয়ে পাএীও ঠিক করে ফেললো? কিভাবে সম্ভব! কিন্তু তার এখন কি হবে? আরে, এই ভাইতো তার শেষ ভরসা ছিল। তার জানা মতে, তার ভাই তো কাউকে পছন্দ করে না। ইভেন তার ভাইকে সে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে প্রয়োজনের বেশি পাঁচ মিনিট কথা বলতে পর্যন্ত দেখেনি। তাহলে কিভাবে কি? নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে অনল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো
- কি? এতো তাড়াতাড়ি! আমি তো জানি তোর কারো সাথে কোন রিলেশন নাই। তাহলে?
অলক সোফায় হেলান দিয়ে আরাম করে বসে বলল
- সেটা বড় কথা নয়। কথা হলো সেই মেয়েকে যদি আমার বউ করতে পারো তাহলেই আমি বিয়ে করবো। এই মেয়েকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না।
মেয়েকে অলক কখন কিভাবে পছন্দ করেছে তা নিয়ে মিসেস সাবিদার বিন্দুমাএ মাথা ব্যথা নেই। তার ছেলে বউ পছন্দ করেছে সে এতেই অনেক খুশি। হাসি হাসি মুখে ছেলেকে বলল
- কে সে মেয়ে বাবা? তুই শুধু নামটা বল, বাকি সব দায়িত্ব আমার। আমি সে মেয়েকেই তোর বউ করে আনবো।
অনল মায়ের এক ভ্রু সামান্য উঁচু করে বলল
- পাক্কা প্রমিজ? আমি কিন্তু ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবো না। আর তোমরা যদি ওই মেয়েকে আমার বউ করতে না পারো তাহলে আবার অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করার কথাও বলতে পারবে না।
মিসেস সাবিদা দৃঢ়তার সাথে বলল
- আচ্ছা প্রমিজ। ওই মেয়েকেই তোর বউ করবো।
অলকের কথার ধরন শুনে অনলের চিন্তাটা কিছুটা কমে। তার ভাইয়ের মাথার মধ্যে কিছু তো অবশ্যই চলছে? নিশ্চিত এমন কাউকে বিয়ে করার কথা বলবে যাকে মা তার পুএবধু হিসেবে মেনে নিবে না। কোন কানা, লেংরা মেয়ে অথবা বড় রাস্তার মোড়ে থাকা সেই পাগলী মেয়েটা। বাসার কোন বুয়া টুয়ার নামও বলতে পারে। না জানি তার মা মেয়ের নাম শুনেই হার্ট অ্যাটাক করে। আল্লাহ রক্ষা করো। তবে সে এখন খুশি। সে তো চাইই তার ভায়ের বিয়ে না হোক। তাহলে তাকেও সেই হনুমানটার গলায় ঝুলতে হবে না। অনেক কষ্টে এই সুবুদ্ধিটা মাথায় এসেছে। এটা কাজে না দিলে সে শেষ। অলক কিছুটা নিচু সরে শান্ত কন্ঠে বলল
- মেয়েটা সিন্ধা।
অনল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- সিন্ধা! সিন্ধা কে?
অলক টিভির সামনের সোফাতে বসে থাকা সিন্ধাকে চোখের ইশারায় দেখিয়ে বলল
- ওদিকে যে মেয়েটা বসে বসে বার্বি মুভি দেখছে। তোমার বোনের একমাত্র মেয়ে, সিন্ধা।
মিসেস সাবিদা অবাক হয়ে বিরক্তের সাথে বলল
- কি? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। সিগ্ধা এখনো ছোট। আর তাছাড়া ও তোর বোন হয়।
অলক উঠে দাড়িয়ে বলল
- প্রথমত ও ছোট না। ওর বয়স আঠারো বছর হয়ে গিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত ও আমার ফুফাতো বোন আপন না। পৃথিবীতে অনেকেই ফুফাতো বোনকে বিয়ে করে। এতে এতো রিয়েক্ট করার কিছু নেই। তাছাড়া, তুমি প্রমিজ করেছো। এখন দেখ যদি সিন্ধার সাথে আমার বিয়ে দেও, তাহলেই আমি বিয়ে করবো। না হয় নাই।
কথাগুলো বলে সে আর না দাঁড়িয়ে গটগট করে হেটে নিজের রুমে চলে গেল। মিসেস সাবিদা মাথায় হাত দিয়ে বসল, কি করবে তিনি এখন। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না। অনল এখনো তার অবাকের মাত্রা কেটে উঠতে পারেনি। তার ভাই উল্টোপাল্টা কারো নাম নিবে এটা জানা থাকলেও, সিন্ধার নাম নিবে এটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।
আর এদিকে, যাকে নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে। সেই সিন্ধা, এখনো মনের আনন্দে চিপস খাচ্ছে আর বার্বি মুভি দেখে মিটিমিটি হাসছে।
🌦️
রাজধানী গুলশানে বিশাল যায়গা নিয়ে গঠিত খান ভিলা। বাড়িটির মূল ভিত্তি প্রায় আশি বছরের পুরনো হলেও সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে বাড়িটির সর্বত্র রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিক কারূকাজ করা উঁচু প্রাচীরের সমুখে গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পাওয়া যায় দুই প্রান্তে বাগান সমেত প্রসস্থ রাস্তা। রাস্তার শেষ প্রান্তে সাদা আকাশী রঙের তিনতলা বাড়ি। বাড়ির দ্বিতীয়তলায় স্টাডি রুম। যেখান থেকে বাড়ির পিছনে থাকা সুইমিংপুলটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেই রুমের একটা চেয়ারে বসে আছে বিন্দু। হাতে নীল রঙের একটা ফাইল। ফাইলটা খুলতে প্রথমেই অর্থের গম্ভীর মুখের পাসপোর্ট সাইজের ছবি দেখে মুখে একটা মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠে তার। সেকেন্ডের মধ্যে হাসিটার ইতি টেনে নিচের লেখা পড়তে থাকে সে। প্রথম পাতা উল্টিয়ে পরের পাতায় যায়। তৃতীয়পাতা পাতা পড়ে পড়ার সমাপ্তি ঘটায় সে। মাথা তুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করল
- ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কোথায়?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শক্তপোক্ত চেহারার বছর তিরিশের লোকটা আমতা আমতা করে বলল
- আসলে ম্যাম অর্থ মাহবুব স্যারকে ছোট থেকে তার মা একাহাতেই বড় করেছে। এই শহরে তাদের কোন আত্নীয় স্বজনও নেই। তাই এই তিন চারদিনে স্যারের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারিনি। শুধু সার্টিফিকেট থেকে বাবার নামটা জানতে পেরেছি। তবে আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি ম্যাম। সপ্তাহখাক্ষিকের মধ্যেই জেনে যাবো।
- অর্থের পুরো একসপ্তাহের শিডিউল যেন আমি ফ্রাইডের মধ্যে পেয়ে যাই।
- ওকে ম্যাম।
- আর প্রবাহ আহাম্মেদের সাথে কথা হয়েছে?
- জ্বি ম্যাম। প্রবাহ স্যারের পিএ বলেছে কালকে বিকেল পাঁচটায় স্যার আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করবে?
- ঠিক আছে, তুমি এখন যাও।
- ওকে ম্যাম।
লোকটি রুম থেকে বের হয়ে যায়। বিন্দু ফাইলটা আবার খুলে। ছবিতে অর্থের নাকের উপর নিজের তর্জনী আঙুল রেখে বাকা হেসে বলল
- বি রেডি মাই ডিয়ার।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন