উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৬)
- মিস বিন্দু এইজ টুয়েন্টি সিক্স। গত থ্রাসডেটে এসেছিল। ওনাকে -১.২৫ R আর -১.৫০ L পাওয়ারের চশমা দেওয়া হয়েছে।
এসিস্ট্যান্ট এর কথা শেষ হতে না হতেই অর্থ মাথা তুলে পেসেন্টের দিকে তাকায়। হাসি মুখে পেসেন্টর সিটে বসে থাকা বিন্দুকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয় সে। সাত বছর ধরে সে রুগী দেখছে। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সব বয়সের রুগীই সে দেখেছে। কিন্তু এমন বিরক্তিকর পেসেন্ট, এর আগে একটাও দেখেনি সে। সে চেয়েছিল এই পেসেন্ট যেন তার কাছে আর না আসে। তাই ধৈয্য ধরে অনেকটা সময় নিয়ে ওইদিন চোখ পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু তা আর হলো না। সকাল সকাল এসে হাজির। বিন্দুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- নতুন কোন প্রবলেম হয়েছে?
বিন্দু হতাশ কন্ঠে বলল
- চোখের ডাক্তার হয়েও চোখের ভাষা বোঝেন না?
অর্থ কিছু বুঝতে না পেরে বলল
- হোয়াট!
বিন্দু অর্থের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
- ঢামে থেকে আবার টুকলি ফুকলি করে পাশ করেন নি তো?
এসিস্ট্যান্ট ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে। আজকে প্রায় দুই বছর ধরে সে অর্থের আন্ডারে কাজ করছে। প্রয়োজনের বেশি কথা বলা, অর্থ একদম পছন্দ করে না। আর অহেতুক কথা তো আরো না। সেখানে এই মেয়ের কথা শুনে তার অর্থ স্যার ,,,,,, অর্থের দিকে তাকিয়ে আরো একটা ঢোক গিললো সে। একেই তার পেসেন্ট তার উপর মেয়ে। তাই অর্থ চেয়েও বিন্দুকে কিছু বলতে পারছে না। নিজেকে শান্ত রেখে অর্থ বলল
- মিস বিন্দু আপনার কোন প্রবলেম থাকলে বলেন। না হয় আপনি আসতে পারেন। আরো অনেক পেসেন্ট ওয়েটিং এ আছে।
বিন্দু অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় বলল
- প্রবলেম আছে মানে! আমি প্রবলেম এ জর্জরিত হয়ে আছি। আর আপনি আস্ক করছেন প্রবলেম আছে নাকি। শুনুন গত বৃহস্পতিবার আপনাকে দেখে যাওয়ার পর থেকে আমার হার্টের, চোখের, ব্রেনের সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। বুকে ব্যথা করে। শ্বাসকষ্ট হয়। ঘুম আসে না। চোখ দুটো বন্ধ করলে আপনার চেহারাটাই দেখতে পাই। সারাদিন ব্রেনে শুধু আপনার কথাই ঘুর ঘুর করতে থাকে।
একটা মানুষ নিজের চোখ যতটা বড় করতে পারে, এসিস্ট্যান্ট ঠিক ততটা বড় করে তাকায় বিন্দুর দিকে। এই মেয়ের সাহস দেখে সে অবাক। এই গম্ভীর মুখ অর্থ স্যারের সামনে যেখানে সে সহ হস্পিটালের আরও অনেকেই কথা বলতে ভয় পায়, সেখানে বয়সে তার থেকে ছোট একটা মেয়ে অর্থ স্যারকে ইনডায়রেক্টলি তার প্রেমে পড়ার কথা বলে দিল। মেয়েটার প্রথম দিনের কর্মকাণ্ডে সে কিছুটা সন্দেহ করেছিল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে যে এই মেয়ে এভাবে তা প্রকাশ করবে তা সে ভুলেও ভাবেনি। অর্থ চরম বিরক্তি নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
- এসব ধরনের চিকিৎসা এখানে করা হয় না। আপনি কোন সাইকোলজিস্ট এর কাছে যান।
বিন্দু যুক্তি দেখিয়ে বলল
- অসুখ যায় জন্য হয়েছে মেডিসিন ও তো তার কাছে হবে। তাই না।
রাগে অর্থ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। তা দেখে এসিস্ট্যান্ট বেচারার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আর বিন্দু সে তো অর্থের রাগকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে। চোখ বন্ধ অবস্থায় তার অর্থকে দেখতে কেমন লাগছে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পর অর্থ চোখ খুলে শান্ত কন্ঠে এসিস্ট্যান্টকে বলল
- তামিম প্রেসক্রিপশন টাইপ কর। সব কিছু সেম থাকবে। আর ডেস্কে গিয়ে বলে দিও ওনার এপয়েন্টমেন্ট যেন আর না নেওয়া হয়।
তামিম বেচারা ঘাড় নেড়ে কাপাকাপা হাতে টাইপ করতে থাকে। আর বিন্দু একটা রহস্যময় হাসি হাসে।
🌦️
ঢং ঢং শব্দ করে দেয়ালে ঝুলানো বড় গোল্ডেন কালারের ঘড়িটা জানান দিচ্ছে যে এখন বেলা বারোটা বাজে। ঘড়িটা জানান দিলেও, না থেমে আগের মতো কাজ করতে থাকে অলক। একটার পর একটা ফাইল চেক করতে থাকে সে। তখন দরজায় কেউ নক করে। পেপারে চোখ রেখেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে অলক বলল
- কাম ইন।
দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকে অনল। সোজা গিয়ে অলকের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমি জানি তুই স্নিগ্ধাকে ভালো টালো কিছু বাসিস না। তাহলে কেন শুধু শুধু ওই বাচ্চা মেয়েকে এসবের মাঝে টানছিস?
অনলের কন্ঠ শুনে অলক চোখ তুলে তাকায়। অনলকে এখন এখানে দেখে একটুও অবাক হয় না সে। সে জানতো অনল আজকে তার অফিসে আসবে। পেপারের উপর হাতের পেনটা রেখে চেয়ারের হ্যান্ডেলের উপর দুই হাত রেখে হেলান দিয়ে বসে অনলের দিকে তাকিয়ে, তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে খুব শান্ত কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করল
- তুইও তো খুব ভালো করে জানিস আমি এসব বিয়ে টিয়ে কিছু করতে চাই না। তাহলে কেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাসালি?
অনল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল
- আমার তো এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। আমি বিয়ে করতে চাই না। আর ওই অভদ্র লোকটাকে তো স্বপ্নেও না। মাকে বললে শুনবে না। তাই আইডিয়া বের করে তোর বিয়ের কথা বলেছি। ভেবেছিলাম তুই বিয়ে করতে চাইবি না। আর আমারও ওই বজ্জাত লোকটাকে বিয়ে করতে হবে না। কিন্তু তাই বলে তুই ওই বাচ্চা মেয়েটাকে এসবে জড়াবি?
অলক আগের ভঙ্গিমায় বসেই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
- তোর কি মনে হয়, আমি না করলেই মা শুনতো? প্রতিদিন প্রতিঘন্টা তার ব্ল্যাকমেইল চলতো।
- অন্য কোন রিজন দেখাতি।
- অন্যসব রিজন আলরেডি দেখানো হয়ে গিয়েছে। কোনটাই কাজে দেয়নি। আর এর থেকে ভালো কোন আইডিয়া আমার মাথায় আপাতত নেই। এটাই বেস্ট আইডিয়া।
অনল কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- এটা কিভাবে বেস্ট আইডিয়া হয়?
- দেখ, মা আন্টিকে রাজি করাতে পারলেও আংকেল তার একমাত্র মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না। তাই সে ক্ষেত্রে আমার আর সিন্ধার বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনাও নাই।
অনল চিন্তিত কন্ঠে বলল
- কিন্তু তবুও স্নিগ্ধাকে এর মধ্যে আনা ঠিক হয়নি তোর। ও যদি এসব জানতে পারে।
অলক অনলকে আশ্বস্ত করে বলল
- আরে তুই এতো চিন্তা করছিস কেন। ওকে তো কেউ কিছু বলবে না। আর ও কিছু জানবেও না।
- দেখ ভাইয়া আমি চাইনা তুলি আপুর হিস্ট্ররি রিপিট হোক। আমি চাই না ও এসব বুঝুক।
- আর কতোদিন পারবি। বয়স যে আঠারো হয়ে গেল।
- যতোদিন ওকে অবুঝ রাখা যায় আমি রাখতে চাই। ভালোবাসা নামক আগ্নেয়গিরিতে আমি ওকে ফেলতে চাই না।
- তোর বিয়েটা হয়ে গেলেই মা আর আন্টি স্নিগ্ধার বিয়ের পিছন লাগবে।
- তাই তো আমি চাই যে আমার বিয়েটা না হোক। প্লিজ হেল্প কর না।
- চিন্তা করিস না। আমি সিউর ফুফা সিগ্ধার এখন বিয়ে দিবে না। আর নিজের মেয়ের থেকে দশ বছরের বড় ছেলের সাথে তো জীবনেও না।
- তাই যেন হয়। আংকেল যেন রাজী না হয়।
🌦️
রাত ১২ঃ৫৫। ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে অনল। স্বপ্নও দেখছে সে সবুজ ঘাসে ভরা বিশাল এক মাঠের মধ্যে শুয়ে আছে সে। শীতল হাওয়া ছুড়ে যাচ্ছে তাকে। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলো। সে সহ পুরো মাঠ নড়ছে। ঘুমটা ভেঙে গেল তার। কিন্তু ঘুমের রেশটা কাটেনি এখনো। বিছানায় মাথার বালিশের পাশে বাজতে থাকা ফোনটা বাজতে বাজতে থেমে গেল। একসেকেন্ড পর আবার বাজতে থাকলো। হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে লেখা নামটা না দেখেই রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
- হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বলল
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আহ, তোমার ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল অগ্নিকন্যা।
ঘুমের ঘোরে হার্ট অ্যাটাক ওয়ার্ডটা ছাড়া আর কোন কথাই বোঝেনি অলন। হার্ট অ্যাটাক ওয়ার্ডটার উপর ভিত্তি করে বলল
- হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তো ডক্টরকে ফোন করুন। আমাকে ফোন করেছেম কেন? আমি কোন ডাক্তার না।
প্রবাহ দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল
- বর হার্ট অ্যাটাক করুক, এটা চাচ্ছো! কেমন বউ তুমি?
কালকে রাতে অলক আর সিগ্ধাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সারারাত ঘুমাতে পারেনি। বাসায় ভায়ের সাথে কথাও বলতে পারেনি, যদি মা শুনে ফেলে সেই ভয়ে। আজকে অফিসে গিয়ে ভায়ের সাথে কথা বলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিল সে। কিন্তু এই ফোন কল তা আর দিল না। রাগ উঠে যায় তার। রাগে গজগজ করতে করতে বলল
- জীবনে একটা প্রেম করলাম না। আর তুই আমারে রাত-বিরাতে বরের কথা বলিস। আর একবার যদি ফোন করিস না, তাহলে তোকে আমি চারটা ঝগড়াটে মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দিব। তখন বুঝবি বিয়ে করা কতো মজার। যতসব কাম কাজ ছাড়া মানুষজন।
বলেই লাইনটা কেটে দেয়। ফোনটা সুইচ অফ করে বালিশের পাশে রেখে কাঁথা টেনে ফের ঘুমিয়ে পড়ে।
আর এদিকে,
প্রেয়সীর ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনতে কল করা প্রবাহ। ঘুম ঘুম কন্ঠের সাথে রাগী কন্ঠে একগাদা ঝাড় খেয়ে মলিন কন্ঠে বলল
- বউ তো নয় যেন আগুনের গোলা। নামটা শাশুড়ি আম্মা ঠিকই রেখেছে। অনল, মানে আগুন।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন