উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৯)
বড় বড় ফোঁটার জল গড়িয়ে পড়ছে ইতির চোখ থেকে। বুকে জড়িয়ে রাখা ফটোফ্রেমটা নিজের সাথে আরও একটু জোরে জড়িয়ে ধরে, চোখটা বন্ধ করতেই চোখে ভেসে উঠে জীবনের সব চেয়ে কষ্টের দিনের কথা।
আজকে থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে --------
রাত আটটা পঁচান্ন মিনিট বাজে। রাজধানীতে এই সময় রাস্তাঘাট মানুষে পরিপূর্ণ থাকলেও, গ্রামে এই সময় সব কিছু থাকে নিরব নিস্তব্ধ। গ্রামের সকাল সকাল উঠে খেটে খাওয়া মানুষ, এই সময় সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরে। এমনই এক রাতে, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তখনো, টিনের ঘরের মধ্যে হারিকেন জ্বালিয়ে পড়ছিল ইতি। সামনে তার ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। তাকে অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তারপর পড়ালেখা শেষ করে, এই গ্রামের স্কুলে সে মাস্টারি করবে। তার শহরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার মা'র ইচ্ছে নেই। স্বেচ্ছায় ছেড়ে আসা সেই ঢাকা শহরে যাওয়ার। তার মা মিসেস আইরিন ছিল এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার মেয়ে। বাবা ছিল ব্যাংক কর্মকর্তা আর মা নার্স। চার বোনের মধ্যে সে ছিল তিন নাম্বার। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসার পাশের সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল এবং কলেজে পড়তো সে। যখন সে ক্লাস নাইনে পড়তো, তখন তার পরিচয় হয় মিষ্টার শিমুলের সাথে। তার স্কুলের পাশের এক বেকারির দোকানে কাজ করতো সে। তার থেকে বছর দু'য়ের বড় ছিল শিমুল। এটা সেটা কিনতে সে ওই দোকানে যেত। এভাবে তাদের পরিচয়, তারপর প্রেম। সে জানতো, তার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার কখনো শিমুলকে মেনে নিবে না। তাই তার আঠারো বছর বয়স হলে, শিমুলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে সে। চলে আসে এই দিনাজপুরের মহনপুরে শিমুলের বাড়িতে। বিয়ে করে ছোট একটা সংসার শুরু করে। শিমুল গ্রামের বাজারে একটা দোকান দিয়েছিল। তা দিয়ে তাদের সংসার খুব ভালোই চলছিল। দের বছর পর জন্ম নেয় ইতি। মেয়েকে নিয়ে বেশ হাসিখুশিতে কাটে পাঁচটা বছর। এক বৃষ্টির দিনে দোকান থেকে বাসায় আসার সময় বজ্রপাত মারা যায় শিমুল। মিসেস আইরিন ছিল খুবই শক্ত মনের মহিলা। স্বামীর অকালে মৃত্যু তাকে যেন আরও সহনশীল করে তুলে। স্বামীর বানানো সেই দোকান ভাড়া, নিজের কাঁথা সেলাই, মুরগী ডিম বিক্রি আর বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ করে মা মেয়ের চলে যেত। ভালো চলছিল সবকিছু। শুধু মাঝে মাঝে মিসেস আইরিন একটু অসুস্থ হয়ে যায় এই যা। স্বামীকে সে বড্ড বেশি ভালোবাসে। তাইতো তার কবর ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না সে। মাকে নিয়ে তার অনেক গর্ব হয়। অনেক ভালোবাসে সে তার মাকে। তাই সে মায়ের সব কথা সব সময় মেনে চলে। সে ভেবে রেখেছে সে চাকরি পেলে মা'কে আর কোন কাজ করতে দিবে না। সর্বক্ষণের জন্য একজন কাজের লোক রেখে দিবে। বাবার কবরের চারিদিকে ইট দিয়ে দেয়াল তুলে দিবে। এসব ভাবতে ভাবতে অন্যমনষ্ক হয়ে কখন থেকে মায়ের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে ছিল, তার খেয়াল নেয়। হঠাৎ বাতাসে টিনের চালের উপর গাছের শুকনো পাতা আর ঢাল পড়ার শব্দে, তার ধ্যান ভাঙে তার। ধ্যান ভাঙতেই আবার একমনে পড়তে থাকে সে। হঠাৎ খেয়াল করে অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে তার মা সিজদা থেকে উঠছে না। "মা" বলে ডাক দেয় সে। কিন্তু মিসেস আইরিনের কোন সারা শব্দ নেই। আবার ডাকে সে
- মা। এই মা।
কোন সারা শব্দ তো দূর নড়াচড়াও নেই। তার মা আবার অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে গেল না কি? সে চিন্তিত হয়ে বিছানা থেকে নামে। মা'র কাছে গিয়ে মা'র কাধ ছুয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডাকে
- মা। এই মা শুন ,,,,,
ইতির কথা শেষ হওয়ার আগেই, তার বিপরীত পাশে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মিসেস আইরিনের মৃত দেহ।
বর্তমান --------
নিজের সামনে কোন মানুষের অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ খুলে ইতি। তাকিয়ে দেখে তার সামনে নিশির দাঁড়িয়ে আছে। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে সে বললো
- আজকে এতো তাড়াতাড়ি এলে। রাস্তার জ্যাম ছিল না আজ।
আগের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই নিশির বললো
- তাড়াতাড়ি না আমি ঠিক সময়ই এসেছি।
ইতি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। বাহিরে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে দেখে বললো
- ওই দেখ, কখন যে রাত হয়ে গিয়েছে জানিই না।
নিশির ইতির পাশে বসে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- মা'র কথা মনে পড়ছে?
ইতির চোখ দিয়ে আবারও দু'ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মাথা হালকা উপর নিচে নাড়িয়ে উত্তর দিল
- হুম।
- জানো, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় আমার।
- কেন?
- তুমি সারাজীবন কষ্ট পেলে। ভালোবাসা পাওয়ার শেষ ভরসা ছিল স্বামী। তাও আমার জন্য হারালে। আমি অপরাধী। তোমার অপরাধী।
কষ্ট হলেও তা প্রকাশ না করে, খুব শান্ত কন্ঠে বললো
- উহুম এটা তোমার ভুল ভাবনা। তোমার সাথে বিয়ে না হলে, আমি আমার দ্বিতীয় বাবা-মা পেতাম না। আর তাদের ভালোবাসাও পেতাম না। আর রইল স্বামীর ভালোবাসার কথা ,,,,,,,, এটাই বললো, এর থেকে অনেক বেশি কষ্ট নিয়ে অনেক মেয়ে সংসার করে।
নিশির হাসার চেষ্টা করে বললো
- দাদী ঠিকই বলেছে তোমার মতো জীবন সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের বেপার। কিন্তু আমি ,,,,,,,
কথাটা আর শেষ করে না নিশির। ইতি নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আমার একটা কথা রাখবে?
- কি কথা বল। রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।
- বল ছিলাম কি পাঁচমাস হলে কোথাও যাওয়া যদি কঠিন হয়ে যায়। আমাকে এর আগে একবার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে। একবার বাবা-মা আর দাদীর কবরটা জিয়ারত করে আসতাম। বলা যায় না যদি ,,,,
ইতির কথা শেষ হওয়ার আগেই নিশির ধমকে বললো
- চুপ এই ধরনের কথা যেন আর না শুনি তোমার মুখে। তোমার ইচ্ছে করে বলে, আমি নিয়ে যাবো। অবশ্যই নিয়ে যাবো। কিন্তু এমন কথা বললে, কোথাও নিয়ে যাবো না।
ইতি জোর করে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- আচ্ছা আর বলবো না।
ফর্সা গায়ে লাল টকটকে গাউন। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটেও গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক, গলায়, কানে সোনার গহনা। মাথা লাল টকটকে ওড়না পরে, বিন্দুর সাথে নিজের রুম থেকে ড্রয়িং রুমে আসে সিগ্ধা। ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে আছে মিসেস সাবিদা, মিষ্টার যাবেদ, মিষ্টার মুস্তাফা, মিসেস সাইদা, অনল আর অলক। মিসেস সাবিদা সিগ্ধাকে দেখে হাসি মুখে বললো
- মাশাল্লাহ আমার মা'টাকে বেশ সুন্দর লাগছে তো। আসো মা আমার পাশে এসে বসো।
শান্ত মেয়ে সিগ্ধা, আস্তে ধীরে হেটে গিয়ে মিসেস সাবিদার পাশে বসে। আর তার অন্য পাশে আছে অলক। বিন্দু গিয়ে অনলের পাশে বসতেই অনল চেঁচিয়ে উঠে বললো
- এই তুই এখন আমার পাশে বসলি কেন? আমি না ছেলেপক্ষের লোক, তাই তুই সাজানোর সময় আমাকে সিগ্ধার রুমে ঢুকতে দিলি না। এখন কেন ছেলেপক্ষের পাশে এসে বসেছিল। যা, যা দূরে গিয়ে বস।
বিন্দু হাসি মুখে বললো
- রোল চেন্স। এখন আমি ছেলেপক্ষের লোক। আমার সহজ সরল আন্টিজননী তো কিছু জিজ্ঞেস করবে না। তাই আমিই করছি।
সিগ্ধার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো
- এই মেয়ে সিগ্ধা বল তোমার পুরো নাম কি?
সিগ্ধা বোকার মতো বিন্দুর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- তাসরিবা হোসেন সিগ্ধা।
বিন্দু সিগ্ধার উত্তর শুনে বললো
- গুড, খুব ভালো নাম। এবার বল তুমি কি কি রান্না করতে পারো।
সিগ্ধা মলিন মুখে বললো
- আপু, আমি তো কিছুই রান্না করতে পারি না।
বিন্দু হেসে বললো
- নো প্রবলেম আন্টি জননী সব শিক্ষিয়ে দিবে। তুমি বল কি কি খেতে পারো?
গোল গোল চোখ করে বিন্দুর দিকে তাকায় সিগ্ধা। এমন প্রশ্ন কেউ কাউকে করে বলে তার জানা ছিল না। অবুঝদের মতো বললো
- অনেক কিছু।
অলক ছাড়া বাকি সবাই হেসে উঠলো। অনল হাসি থামিয়ে বললো
- হয়েছে তোর আর প্রশ্ন করতে হবে না। মা আংটি দেও।
বিন্দু বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করল
- ওয়েট, বিয়ের ডেট কবে ফিক্সড করেছ? তা আগে বল?
অনল উত্তর দিল
- নেক্সট ফ্রাইডে।
মিসেস সাবিদা ব্যাগ থেকে দুটো আংটি বের করে। আসলে, অলক, সিগ্ধা দুজনের আংটিই মিসেস সাবিদা একসাথে আসার সময় মার্কেট থেকে কিনে নিয়ে এসেছে। বরের আংটির টাকাটে এখানে আসার পরে, মিষ্টার মুস্তাফা তাকে জোর করে দিয়ে দিয়েছে। এটা যেহেতু তাদের দেওয়ার কথা তাই তারাই দিবে। প্রথমে অলক সিগ্ধাকে, পরে সিগ্ধা অলককে আংটি পরায়। অনল আর বিন্দু মিলে অনেক ছবি তোলে। সবাই হাসি মুখে মিষ্টি মুখ করে। শুধু হাসি নেই যাদের ঘিরে এতো আয়োজন তাদের মুখে। অলকের মুখে রাগ, বিরক্ত। অপরাধবোধে মাথা নিচু করে আছে সে। আর সিগ্ধার চোখে একরাশ কৌতুহল। সে তো তার ভাইয়াকে বলেছিল সব কিছু ঠিক করে দিতে। তার বিয়ে নিয়ে যেন ঝামেলা না হয়। তার বিয়ে যেন এখন না দেওয়া হয়, তা ঠিক করতে। কিন্তু এ কি করল তার অলক ভাইয়া!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন