উপন্যাস       :         রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৮)

স্নিগ্ধা সাথে ফোনে কথা বলেছে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে। এখন অলক সেভাবেই ডিভানে বসে ভাবছে, কিভাবে তার মা'কে না করবে। কিন্তু মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না। এখন তার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই এসবের মধ্যে তার স্নিগ্ধাকে আনা ঠিক হয়। এখন অনল যদি জানতে পারে যে, ফুফা-ফুপি এগুলো নিয়ে ঝগড়া করছে আর তা শুনে স্নিগ্ধা কান্না করছে। তাহলে তাকে আস্ত রাখবে না। দূর মাথায় মধ্যে যে তখন কি ঢুকেছিল যে, এমন একটা আইডিয়া বের হয়েছিল। এর থেকে ভালো ছিল কোন মেয়েকে টাকা দিয়ে নকল বিয়ে করে নেওয়া। হুম, গুড আইডিয়া। কিন্তু এই আইডিয়াটা আগে কেন যে মাথায় এলো না। দূর। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সে। কিন্তু এখন তো তার মা'কে না করতেই হবে। তাতে যা হওয়ার হোক। নিজের জন্য বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দিতে সে পারবে না। এক কাজ করলে কেমন হয় মা'র কাছে স্নিগ্ধার বেপারে সব বলে, বলবে ঘটক ডেকে তার জন্য পাএী দেখতে। এদিকে সে একটা মেয়েকে টাকা দিয়ে ঠিক করে রাখবে আর ঘটককে বলবে সেই মেয়ের ছবি মাকে দেখাতে। তারপর সেই মেয়ের সাথে নকল বিয়ে করে নিবে। গুড আইডিয়া। এখনি মা'র সাথে কথা বলে আসি। কথাটা ভেবেই অলক ডিবান থেকে উঠে দাঁড়ায়। তখনই দরজায় নক করে তাদের কাজের মেয়ে বলল
- ভাইজান খালাম্মা আপনেরে নিচে ডাকতেছে।
অলক অবাক হয়। মা তাকে এখন ডাকছে কেন? তাহলে কি মা সব যেনে গিয়েছে। ভালোই হলো তার কাজ কমে গিয়েছে। অলক নিচে নেমে আসে। বড় সোফাটাতে তার বাবা-মা খুশি খুশি মুখে বসে আছে। পাশের একটা সিঙ্গেল সোফাতে বসে আছে অনল। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। অনলের বিরক্তির কারণ অলক বুঝতে পারছে। কাজের সময় বিরক্ত করা তাদের ভাই-বোন কারোরই পছন্দ না। অনল নিশ্চয়ই এখন নিউ ডিজাইনের কাজ করছিল। তাই কাজের সময় এখানে ঢেকে আনাতেই তার এই বিরক্ত। কিন্তু তার বাবা-মা'র কেন এতো খুশি? স্নিগ্ধার কথা জানার পর তো তাদের দুঃখী হওয়ার কথা ছিল। অলক গিয়ে অন্য একটা সিঙ্গেল ফোফাতে বসে পড়ে। অলককে দেখে অনল বলল
- নেও ভাইয়া এসে পড়েছে। এখন তাড়াতাড়ি বল তোমার খুশির খবর। আমার কাজ আছে।
মিসেস সাবিদা হাসি মুখে অলকের দিকে তাকিয়ে বলল
- দাড়া বলছি, বলছি। তোর ফুফা-ফুপি অলকের সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে দিতে রাজী হয়ে গিয়েছে।
অলক বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
- হোয়াট! মাথা ঠিক আছে তোমার। কি আবোল-তাবোল বলছ।
মিষ্টার যাবেদ স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- আবোল-তাবোল বলবে কেন? তোর ফুফা মাএ আমাকে ফোন করে বলেছে যে তারা তাদের মেয়েকে তোর কাছে বিয়ে দিতে রাজী। আমরা যেন কালকে গিয়ে বিয়ে ডেট ফিক্সড করে আসি।
অলক মিষ্টার যাবেদের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল
- কিন্তু স্নিগ্ধা তো মাএই আমাকে কল করে বলল যে ফুফা বিয়েতে রাজী হয়নি। ফুফা আর ফুপি ঝগড়া করছে।
মিষ্টার যাবেদের মুখে কোন প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, মিসেস সাবিদা আর অনল অবাক হয়ে অলকের দিকে তাকায়। স্নিগ্ধা অলককে ফোন করেছে! পরক্ষণেই আবার ভাবে হয়তো তাদের ফোন করে পায়নি তাই, অলককে ফোন করেছে। মিসেস সাবিদা বলল
- হতে পারে ঝগড়া করতে করতে রাজী হয়ে গিয়েছে। ছাড় এসব কথা। কিভাবে রাজী হয়েছে তা আমাদের জানয়ে হবে না। রাজী হয়েছে এটাই অনেক।


অনল অবাক হয়ে বলল
- ছাড়বে মানে? স্নিগ্ধার সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিতে চাও কিভাবে তোমরা! 
মিসেস সাবিদা স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- কেন হতে পারে না। তোর ভাইয়া তো নিজেই সেদিন যুক্তি দেখিয়ে বলেছে স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার কথা।
অনল বিরক্ত হয়ে বলল
- মা ভাইয়া সেটা বিয়ে না করার জন্য বলেছিল।
মিসেস সাবিদা দৃঢ় কন্ঠে বলল
- সে যেটার জন্য বলে থাকুক। বিয়ে যখন করবে বলেছে, তখন করতেই হবে।
অলক মিসেস সাবিদাকে বলল
- মা প্লিজ তুমি বুঝা,,,,,,, 
অলকের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিসেস সাবিদা বলল
- আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না। হয় তুমি বিয়ে করবে। না হয়, আমাকে আর কোনদিন মা বলে ডাকবে না।
অলক একটু জোরে শক্ত কন্ঠে বলল
- মা!
মিসেস সাবিদা রাগী কন্ঠে বলল
- চুপ কর। সন্তানরা মায়ের জন্য কতো কিছু করে। আর তোমরা, মা'য়ের একটা সামান্য আবদার রাখতে পারছ না। আসলে তোমরা আমাকে ভালোবাসো না। যদি মাকে ভালোবাসাতে সম্মান করতে তাহলে মায়ের কথা একটু হলেও শুনতে।
বলতে বলতেই মিসেস সাবিদার চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে অলক বলল
- আমি রাজী। বিয়ের সব ব্যবস্থা কর মা।
মিসেস সাবিদা আড় চোখে অনলের দিকে তাকিয়ে বলল
- আর তোমার বোন কি করবে? সে কি আবার কোন নতুন বদ বুদ্ধি বের করবে, বিয়ে ঠেকানোর জন্য। তাকে বলে দেও প্রবাহকে বিয়ে না করলে, সে যেন আমার সাথে কথা না বলে।
অনল মিসেস সাবিদার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল
- আমিও রাজী মা।
মিষ্টার যাবেদ আর মিসেস সাবিদার মুখে পুনরায় সেই আগের হাসি ফুটে উঠলো।
🌦️
ডেস্কের লোকটার কাছ থেকে পেসেন্টদের নামের লিষ্টটা নিয়ে তাতে চোখ বুলোলিয়েই পাংশুমুখ করে ফেলে তামিম। পাংশুমুখে ডেস্কের লোকটার দিকে তাকাতেই ডেস্কের লোকটা অসহায় চোখে তাকায়। তামিম একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ডাকল
- মিস বিন্ধু খান।


বিন্ধু মিষ্টি হেসে উঠে, তামিমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
-  কেমন আছেন?
তামিমের বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, "এতোক্ষণ ভালো ছিলাম, এখন আর নেই।" কিন্তু তা না বলে, হাসার চেষ্টা করে বলল
- ভালো ম্যাম।
বিন্দু কপাল কুঁচকে ফেলল। উত্তরটা তার পছন্দ হয়নি। তামিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমি তো জানি, আপনার সাথে আপনার অর্থ স্যারের ভায়ের মতন সম্পর্ক। অর্থের মাকে আপনি খালাম্মা ডাকেন। কি ঠিক বললাম তো?
তামিম অবাক হয়। এই মেয়ে তার খোঁজ খবরও নিয়েছে। ভদ্র ভাবে উত্তর দিল
- জ্বি ম্যাম।
বিন্দু মিষ্টি করে বলল
- তাহলে আপনি আমাকে এখন থেকে ম্যাম না ভাবি ডাকবেন কেমন। ভাইয়ের বউ ভাবি।
তামিম গোল গোল চোখ করে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। তামিম কিছু বলছে না দেখে বিন্দু আবার বলল
- কি হলো ডাকবেন না ভাবি। নাকি ভাবি হিসেবে আমাকে পছন্দ হয়নি?
তামিম শান্ত কন্ঠে বলল
- না ম্যাম পছন্দ হয়েছে।
বিন্দু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল
- তাহলে ফটাফট ভাবি ডাকছেন না কেন? ফটাফট বলেন ভাবি। বলেন, বলেন।
তামিম ইতস্তত করে নিচু কন্ঠে বলল
- ভাবি।
- ভেরি গুড দেবরজি। চলুন এখন যাওয়া যাক। আপনার স্যার আবার বসে আছে।
বলেই বিন্দু কেবিনে ঢুকে পেসেন্টের সিটে বসে পড়ে। তামিমও নিজের জায়গায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। সে জানে, এখন বিন্দুর নামটা উচ্চারণ করলেই তার স্যার রেগে যাবে। তাই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে সাহস সঞ্চয় করছে। কয়েক সেকেন্ড সময় পার হয়ে গিয়েছে, তামিম এসে বসে আছে কিছু বলছে না দেখে অর্থ তামিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে তামিম পেসেন্টের ডিটেলস বলছো না কেন?
তামিম ক্ষীণ কন্ঠে বলল
- স্যার পেসেন্টের নাম মিস বিন্ধু।
আর কিছু বলার আগেই অর্থ পেসেন্টের দিকে তাকিয়ে বিন্দুকে দেখে রেগে গিয়ে বলল
- তোমাকে না বলেছি এই মেয়ের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিবে না। তারপর কেন নিয়েছো?
তামিম ভীত কন্ঠে বলল
- স্যার।
অর্থ রাগী কন্ঠে আবার বলল
- কি স্যার স্যার করছো? এক্ষুনি একে বের করো।
তামিম একদমে বলল
- উনি এই হস্পিটালের চেয়ারম্যান স্যারের মেয়ে।
অর্থ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- তো? 
তামিম কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। অর্থ আবার বলল
- আমার কাছে সব পেসেন্টই সমান। আর তাছাড়া আমি জয়েন করার সময় এমন কোন এগ্রিমেন্টে সাইন করিনি, যেখানে লেখা ছিল চেয়ারম্যানের মেয়ের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া ম্যান্ডেটরি।
বিন্দুর মুখে হাসি ফুটে উঠে। এতক্ষণে মুখ খুলে অর্থকে উদ্দেশ্য করে বলল
- উফ, আই লাভ ইউর পারসোনালিটি।


অর্থ বিস্ফোরিত চোখে বিন্দুর দিকে তাকায়। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বিন্দু বলল
- আজকে একটু কাজ আছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আসি।
অর্থের থেকে চোখ সরিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল
- বায় বায় দেবরজি।
বলেই বিন্দু কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। অর্থ রাগী চোখে তামিমের দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই তামিম বলল
- স্যার নেক্সট পেসেন্ট ওয়েট করছে আমি নিয়ে আসি।
বলেই সাথে সাথে এক প্রকার দৌড়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। অর্থ রাগে দপ করে চেয়ারে বসে পড়ে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন