উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৫)
বেলা দশটা তিরিশ। ফর্সা গায়ে সাদা টাউজার আর সাদা টি-শার্ট পরে খাবার টেবিলে এসে বসে আছে অর্থ। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো সাতটায় খেয়ে ফেললেও, শুক্রবার যেহেতু ছুটির দিন তাই সেদিন একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠে সে। আর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। অর্থকে খাবার টেবিলে বসতে দেখে এই বাসায় কাজ করা জরি অর্থের জন্য আটার রুটি আর পেঁপে ভাজি নিয়ে আসে। সেদিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয় অর্থ। প্রতিদিন তার মা খাবার দেয়। কিন্তু আজকে জরি খালা! তার মা আবার অসুস্থ না তো? চিন্তিত কন্ঠে অর্থ জরিকে জিজ্ঞেস করল
- জরি খালা মা কোথায়?
জরি স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- আফা রুমে আছে।
অর্থ অবাক কন্ঠে বলল
- রুমে!
তারপর উঠে রুমের দিকে যেতে যেতে ডাকে
- মা, মা।
ডাকতে ডাকতে রুমে এসে দেখে মিসেস সুরূপা বিছানায় বসে নিজের বাসায় পরনো সুতি শাড়ি ভাঁজ করছে। একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলে অর্থ বলল
- ওহ তুমি কাপড় ভাঁজ করছো। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার শরীর ভাল নেই।
মিসেস সুরূপা কোন কথা বলে না। ছেলের দিকে তাকায় পর্যন্ত না। আগের মতোই নিজের সুতি শাড়িটা ভাঁজ করছে সে। বিষয়টা খেয়াল করে অর্থ জিজ্ঞেস করল
- তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো মা?
মিসেস সুরূপা এবারেও চুপ। অর্থ মায়ের পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে, পায়ের পা জোড়া নিজের কোলের উপর নিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল
- ওমা মা, বল না কি হয়েছে। আমার টেনসন হয় তো।
- জরি, তোর আব্বাকে বল আমার চিন্তা না করে গিয়ে নাস্তা করতে। যে ছেলে আমার কথা শুনে না, তার আমার চিন্তা করা সাজে না।
মিসেস সুরূপা জরির নাম নিয়ে কথাটা বললেও কথাটা শুধু অর্থকেই শোনানোর জন্য বলেছে। কারণ মিসেস সুরূপা কথাটা এতোটাও জোরে বলে না, যে জরি শুনতে পারবে। অর্থর মাথায় এতোক্ষনে আসে তার মা কেন রাগ করেছে। সে মায়ের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল
- মা প্লিজ অন্য যে কোন কিছু করতে বল আমি করব, কিন্তু প্লিজ মা বিয়ে কথা বল না।
- জরি তোর আব্বাকে বল আমাকে ছেড়ে গিয়ে নাস্তা করতে।
- মা, ওমা তুমি রাগ করলে আমার কষ্ট হয় তো।
মিসেস সুরূপা শক্ত কন্ঠে বলল
- তাহলে আমার কথা শুনিস না কেন?
অর্থ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বলল
- মা এতো আপমানের পরও তুমি,,,,,
অর্থকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে মিসেস সুরূপা বলল
- ওদের কথা ধরে তুই বিয়ে না করে বসে থাকবি! তোর তো উচিত ওইসব মেয়েদের থেকে হাজার গুনে ভালো মেয়ে বিয়ে করে ওদেকে দেখিয়ে দেওয়া। তাছাড়া আমারও তো বয়স হয়েছে। সারাক্ষণ চিন্তা থাকে যদি আমার কিছু হয়ে যায় তখন তোকে কে ,,,,,
মিসেস সুরূপাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অর্থ অসহায় কন্ঠে বলল
- মা প্লিজ এমন কথা বল না। তুমিই তো আমার সব। আচ্ছা, যাও আমি মেয়ে দেখতে যাবো। তবে এবার কিন্তু মেয়েদের আমার সম্পর্কে সব কিছু আগে থেকেই বলে রাখবে। না হয় কিন্তু আমি যাবো না।
মিসেস সুরূপা হাসিমুখে সস্নেহে ছেলের গালে হাত বুলিয়ে বলল
- আচ্ছা ঠিক আছে বাবা আগে থেকেই সবকিছু জানিয়ে রাখবো। চল, চল খাবার ঠান্ডা হচ্ছে, খাবি চল।
অর্থ উঠে দাঁড়িয়ে বলল
- হ্যাঁ চল। খিদেও পেয়েছে আমার।
অর্থ আর মিসেস সুরূপা ডায়নিংরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জরি রুমের দরজায় এসে দাড়িয়ে বলল
- আব্বা কুদ্দুস ফোন করছে, নিচে নাকি তামিম মামা আইসা দাঁড়ায়ে আছে আপনারে নিচে যাইতে কইছে।
মিসেস সুরূপা জরিকে বলল
- তামিম নিচে কি করছে! ওকে বল বাসায় আসতে।
জরি মিসেস সুরূপাকে বলল
- আমি কইছিলাম, কিন্তু কুদ্দুস কইলো মামা নাকি উপরে আইতে পারতো না। কি বলে একটা সমস্যা হইছে।
অর্থ টাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল
- দাঁড়াও ওকে ফোন দিয়ে বলছি।
অর্থ ফোন করলে যান্ত্রিক মেয়েলি কন্ঠস্বর জানায় ফোনটা বন্ধ আছে। অর্থ কান থেকে ফোন নামিয়ে বলল
- ফোন বন্ধ! মা আমি নিচে গিয়ে দেখছি কি হয়েছে।
মিসেস সুরূপা চিন্তিত কন্ঠে বলল
- আচ্ছা যা।
অর্থ লিফট দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে তামিমকে খুঁজছে। তখনি পিছনে থেকে "ভাউ" করে কেউ শব্দ করে। চমকে গিয়ে পিছনের দিকে তাকায় অর্থ। হঠাৎ হওয়া ভাউ শব্দটাতে যতটুকু না চকমায় তার থেকে বেশি চমকে যায় তার পিছনের মানুষটাকে দেখে, অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল
- আপনি, এখানে?
অর্থের সামনে গাঢ় বেগুনি রঙের লেহেঙ্গা পরে দাঁড়িয়ে থাকা বিন্দু হাসিমুখে উত্তর দিল
- কি করব বলেন আজকে শুক্রবার, আপনি তো আজকে হসপিটালে যাবেন না। তাই আমিই আপনার বাড়িতে চলে এসেছি।
বিরক্ত হয়ে অর্থ ঘুরে দারোয়ানের চেয়ারের দিকে পা বাড়িয়ে মৃদু চিৎকার করে ডাক দেয়
- তামিম।
বিন্দু সেখানেই একইভাবে দাঁড়িয়েই অর্থকে উদ্দেশ্য করে বলল
- তামিম ভাইয়াকে ডেকে লাভ নেই। উনি এখানে নেই, বাসায় আছে। আমি দারোয়ানকে বলিছি আমার নাম তামিম।
বিন্দুর কথা শুনে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় অর্থ। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। ঘুরে বিন্দুর দিকে না তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে লিফটে উঠার জন্য আগাতেই বিন্দু দৌড়ে গিয়ে অর্থের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল
- এই, এই দাঁড়ান দাঁড়ান আমি এতো কষ্ট করে এতো সকাল সকাল সেজেগুজে আপনার কাছে এসেছি আপনার মুখ থেকে দুটো কমপ্লিমেন্ট শুনবো বলে আর আপনি আমাকে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন!
অর্থ রাগে নিজের ডান হাত দিয়ে বিন্দুর বাম বাহু চেপে ধরে। বিন্দুকে নিজের আরও একটু কাছে টেনে এনে রাগী চোখে বিন্দুর চোখের দিকে তাকিয়ে, দাতে দাত চেপে বলল
- আই স্টিল টলারেট ইউ, যাস্ট বিকজ ইউ আর আ গার্ল। বাট ডোন্ট ওভারস্টেপ ইউর বাউন্স। ইফ আই লুস মাই টেমপার ,,,,,,,,
বিন্দু অর্থের রাগের তোয়াক্কা না করে, অর্থকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হাসিমুখে শান্ত মিষ্টি কন্ঠে বলল
- ইউ লুক সো কিউট হোয়েন ইউ লুস ইউর টেমপার। আই লাভ ইউ ডাক্তার বাবু।
অর্থ হতভম্ব হয়ে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকে। সে রেগে দুটো কথা বললে যেখানে সবাই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে, সেখানে বিন্দুর মুখে এমন উত্তর শুনে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঠিক তখনই হাতে থাকা বিন্দুর ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বিন্দু দেখে স্নিগ্ধা ফোন করেছে। সকাল সাতটায় স্নিগ্ধাকে নিয়ে পার্লারে যায় বিন্দু। সোয়া নয়টার দিকে বিন্দুর সাজ শেষ হয়। যেহেতু বউ সাজাতে আরও সময় লাগবে। তাই বিন্দু স্নিগ্ধাকে সাজ শেষ হলে ফোন করতে বলে অর্থের সাথে দেখা করতে এখানে চলে আসে। অর্থের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল
- সরি ওয়ান সেকেন্ড প্লিজ।
তারপর ঘুরে কল রিসিভ করে কানে ধরে বলল
- হ্যালো স্নিগ্ধা সাজ কমপ্লীট?
ফোনের ওপাশ থেকে স্নিগ্ধা ছোট করে উত্তর দেয়
- হ্যাঁ আপুনি।
- আচ্ছা তুমি যাস্ট পাঁচ মিনিট বস আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
বলেই কলটা কেটে দিয়ে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে অর্থের উদ্দেশ্যে বিন্দু বলল
- সরি ডা,,,,,
পিছনে ঘুরে দেখে অর্থ লিফরের মধ্যে আর লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিন্দু লিফটের দিকে তাড়াতাড়ি আগাতে আগাতে বলল
- এই, এই দাঁড়াও।
কিন্তু বিন্দু যাওয়ার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বিন্দু সেখানেই দাঁড়িয়ে বিরক্তের সুরে বলল
- যা চলে গেল।
পরক্ষণেই মুখে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল
- আর মাত্র ক'টাদিন সোনা। তারপর আমার থেকে পালানোর আর কোন যায়গা থাকবে না।
- জ্বি স্যার আমি বলে দেব। এমন ভুল আর হবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে দৌড়িয়ে এসে বিন্দু পাশে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে ভীত সঙ্কুচিত কন্ঠে বলল
- ম্যাম স্যার বলেছে আপনাকে চলে যেতে আর আপনি যদি না যান তাহলে আমার চাকরিটা চলে যাবে, প্লিজ ম্যাম।
লোকটার ভীত মুখ, হাতের ফোন আর আসার সময় ফোনে বলা কথাগুলো শুনে বিন্দু বুঝে যে অর্থ লিফটে থেকেই দারোয়ানকে ফোন করে বকেছে। বিন্দু পার্স থেকে পাঁচশ টাকার একটা নতুন নোট বের করে দারোয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল
- এটা রাখ, আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন