উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৪)
ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল টি-শার্ট আর কালো টাউজার পরে
হাতে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় অলক। সিগারেটের পেকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে, পেকেটটা গ্রিলে আটকে রাখে। সিগারেটটা দুই ঠোঁটের মধ্যে রেখে একহাত দিয়ে লাইটার জ্বালায় আর অন্যহাত দিয়ে যাতে বাতাসে আগুন নিভে না যায়, তাই হাত দিয়ে আগুন টাকে ঘিরে রাখে। সিগারেটটা জ্বালিয়ে লাইটাও গ্রিলে রেখে, সিগারেটে একটা টান দেয় সে। মূহুর্তের মধ্যেই কাশি উঠে তার। ঠোঁট থেকে সিগারেটটা বের করে কাশতে থাকে অনল। কিছুক্ষণ পর কাশির থেমে যায়। কাশি থামলে পুনরায় সিগারেটটা মুখে দেয় সে। পুনরায় সিগারেটে টান দিতেই আবারও কাশি শুরু হয় তার। মুখ থেকে সিগারেটটা বের করে পুনরায় কাশি থামায় সে। কাশি থামতেই রেগে গিয়ে সিগারেট ছুরে রাস্তায় ফেলে দেয় সে। ছেলে হয়ে কেন যে সে সামান্য সিগারেট খেতে পারে না। রাগটা আরও বেড়ে যায় তার। তাই গ্রিল থেকে সিগারেটের পেকেট আর লাইটারটা নিয়ে তাও ছুরে ফেলে। জ্বলন্ত সিগারেটটা রাস্তার সাইডে পরলেও, জ্বলন্ত সিগারেটের থেকে তুলনামূলক ভারি হওয়ায় লাইটার আর সিগারেটের পেকেটটা গিয়ে পড়ে ঠিক রাস্তার মাঝখানে। নিজেকে উপর এখন নিজেরই খুব বিরক্ত হচ্ছে অলকের। কেন সেদিন সে ভালো করে আগে-পিছে না ভেবেই স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার কথা বলেছিল। মেয়েটা গায়ে হলুদের পুরোটা সময় তার পাশে বসে শুধু উসখুস করেছে। নিশ্চয়ই তাকে বিয়ের বেপারেই প্রশ্ন করতো। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পায়নি বলে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি। কিন্তু কাল! কালকে যখন তাকে একা পাবে তখন নিশ্চয়ই তাকে জিজ্ঞেস করবে। তখন কি উত্তর দিবে সে? চিন্তায় মাথাটা ধপধপ করছে তার। আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে না থেকে রুমের ভিতরে চলে যায় সে। যা হবে কালকে দেখা যাবে। কিন্তু এখন সে কিছুই ভাবতে পারছে না।

স্নিগ্ধার রুমের খাটে শুয়ে শুয়ে অনলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে স্নিগ্ধা আর বিন্দু। ঠিক তখনই স্নিগ্ধার রুমে থাকা দেয়াল ঘড়িটা ডংডং করে শব্দ করে উঠে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিন্দু দেখে রাত ঠিক বারোটা বাজে। হাতের থাকা ফোনের স্কিনে ভেসে থাকা অনলের দিকে তাকিয়ে বিন্দু বলল
- এই! রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। এখন আমার ঘুমাতে হবে, না হয় সকালে আবার চোখের নিচে কালি পরবে।
অনল এক ভ্রু উঁচু করে প্রশ্ন করল
- তোর কি সকালে বিয়ে নাকি? তোর চোখে কালি পড়ুক বা ছানি পড়ুক তো কি হইছে।
বিন্দু কপালে ভাঁজ ফেলে বলল
- তুই কি চাস প্রেম হওয়ার আগেই আমার ব্রেকআপ হয়ে যাক। সকালে আমি অর্থের সাথে দেখা করতে যাবো। আমাকে বেস্ট দেখতে হবে না।
অনল হেসে বলল
- বেচারা ডাক্তার। তোর ভয়ে লেজ ঘুটিয়ে পালাবে এবার।
বিন্দুও তাড়া দিয়ে বলল
- সে পালালে আমি ধরে নিয়ে আসবোনে। আপাতত তুই ফোন রেখে ঘুমা। আমিও আমার সুইট কিউট সিগ্ধা জানুর সাথে ঘুমাবো। গুড নাইট।
- আজই শুধু ঘুমা। কালকে থেকে আমার চোখের সামনেই থাকনে। শুড নাইট।
বলেই ধুম করে অনল লাইন কেটে দেয়। বিন্দু হাসতে হাসতে বলল
- বেচারি। ভাইয়ের বিয়ের জন্য আজকে এখানে আসতে পারলো না।
কথাটা বলেই তার পাশে শুয়ে থাকা স্নিগ্ধার দিকে তাকায় সে। স্নিগ্ধার মুখে হাসি। তবে হাসিটা কেমন যেন মলিন। এই মলিন হাসিটা সারাদিন পর এখন বিন্দুর চোখে পরলেও অনলের চোখে পড়েছে অনেক আগেই, তাইতো স্নিগ্ধাকে বুঝাতে বলেছে সে। অনল নিজেই হয়তো স্নিগ্ধার সাথে কথা বলতো কিন্তু বিয়ের এতো কাজের চাপ তাই সে বিন্দুকে বলেছে। মেয়েটা স্নিগ্ধাকে খুব ভালোবাসে তাই তো সবাই আগে স্নিগ্ধার মুখের মিষ্টি হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা মলিন হাসিটা সবার আগে তার চোখেই পড়েছে। সেই মলিন হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিন্দু আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে স্নিগ্ধা সোনা, মন খারাপ কেন?
স্নিগ্ধা চমকে যায়। সে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে তার মন খারাপের কথা যেম কেউ না জানে, তারপরও বিন্দু আপুনি কিভাবে জানলো। কিন্তু তারপরও সে মুখে কথাটা শিকার করে না। নিজের বিষ্ময় যতটা সম্ভব লুকিয়ে স্নিগ্ধা বলল
- কিছু হয়নি।
বিন্দু আর কিছু না বলে, উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তার ধারণা কোন ব্যাক্তি আলোতে যা বলতে পারেনা অন্ধকারে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারে৷ তাই সিন্ধাও যাতে তার মনের সব কথা নির্বিঘ্নে তাকে বলতে পারে তাই সে এই কাজ করে। বিছানায় গিয়ে স্নিগ্ধার দিকে কাত হয়ে শুয়ে বিন্দু বলল
- জানো আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো না আমাদের দেখলে খুব সহজেই বুঝে ফেলে আমাদের মনের কথাগুলো। আমরা যত চেষ্টা করি না কেন নিজের মনের মধ্যে হওয়া অনুভূতিগুলো তাদের থেকে লুকাতে পারি না।
স্নিগ্ধা মুখে কিছু না বলে, গোল গোল চোখ করে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু। বিন্দু বলতে থাকে
- অনলের নিজের কোন আপন বোন নেই। তাই তোমাকে আর তুলি আপুকে ও সবসময় নিজের বোনের মতো ভালোবাসে। আর তুলি আপুর চলে যাওয়ার পরে তোমার প্রতি ভালোবাসা যেমন বেড়েছে তোমাকে নিয়ে ভয় বেড়েছে তার দ্বিগুণ। তোমার মনের অবস্থা অনল অনেক আগেই বুঝেছে। তাই আমাকে তোমার সাথে কথা বলতে বলে। হয়তো নিজেই বলতো, কিন্তু তোমাকে বুঝাতে সময় লাগবে আর অলক ভাইয়ার বিয়ের জন্য তা সম্ভব নয়।
এতটুকু বলে বিন্দু পুনরায় থামে। তারপর পূর্ণ দৃষ্টিতে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- এখন বিয়ে করতে চাওনা? না কি অলক ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাওয়া। আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো।
স্নিগ্ধা ক্ষীণ কন্ঠে উত্তর দিল
- অনল আপুনি, তুমি আমার বড়। কিন্তু তোমাদের আগে আমার বিয়ে।
- সেই হিসেব করলে অলক ভাইয়া বড় তার আমাদের আগে বিয়ে করা ঠিক। যেটা তোমার ক্ষেত্রে তোমার মনে হচ্ছে ঠিক না। তাছাড়া আবার দেখ আমি অনলের থেকে সাড়ে তিন মাসের বড়। হিসেব মতো আমার বিয়ে আগে হওয়ার কথা। কিন্তু অনলের পর আমি বিয়ে করবো বলে ঠিক করেছি। তাহলে? আসলে বিয়ে বয়স বিবেচনা করে হয় না। আর বিয়ে তোমাকে করতেই হবে, আজ না করলেও, দু'দিন পরে হলেও বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। এটা তো তুমি কোনদিন আটকাতে পারবে না। তোমার অনল আপু এতো চেষ্টা করেও পারেনি, না। তাছাড়া অলক ভাইয়ার সাথে বিয়ে হলে তোমার অনেক সুবিধা আছে। যেমন ধর, তোমাকে অপরিচিত কারো কাছে যেতেও হচ্ছে না, নিজের পরিচিত ফ্যামেলিতেই থাকছো। তোমার বর মানুষ হিসেবে কেমন হবে, তোমাকে ঠিক কতটা সম্মান, শ্রদ্ধা করবে, তা নিয়েও তোমার ভাবতে হবে না। অলক ভাইয়াকে তুমি জন্মের পর থেকেই চিন।
- কিন্তু অলক ভাইয়া তো আমার ভাইয়া হয়।
- জানো আমার দাদা-দাদী কাজিন ছিল। তাদের এগারো বছরের রিলেশন ছিল।
- কিন্তু অলক ভাইয়ার সাথে আমার তো কোন রিলেশন নেই।
লজ্জা জড়তায় স্নিগ্ধার কন্ঠস্বর এতোটাই ক্ষীণ যে তার পাশে শুয়ে থাকা বিন্দুরও কথাটা বুঝতে বেগ পেতে হয়। বিন্দু এক ভ্রু উঁচু করে বলল
- নেই তো কি হয়েছে, বিয়ের পর হয়ে যাবে। তুমি আমাকে এটা বল বর হিসেবে অলক ভাইয়াকে তোমার কেমন লাগে?
বর হিসেবে অলককে কল্পনা করতেই লজ্জায় স্নিগ্ধার মুখ টকটকে লাল হয়ে যায়। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সে বলল
- জানিনা।
- ইস আমার লজ্জাবতী দেখ কেমন লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
হঠাৎ কিন্তু একটা মনে পড়ায় স্নিগ্ধা মুখ থেকে হাত সরিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- জানো আপু ওদিন ভাইয়া আমাকে কলেজ থেকে আনতে গিয়েছিল না।
- হুম্ম।
- তখন আমাদের কলেজের অনেক মেয়ে ভাইয়ার উপর ক্রাশ খায়।
- তারপর!
- পরে যেদিন আমি কলেজে গিয়েছিলাম, সেদিন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে ভাইয়া সিঙ্গেল নাকি। আমি না বললে। তারা আমাকে বলে ভাইয়ার ফোন নাম্বার দিতে।
- তো নাম্বার দিয়েছ তুমি?
- না। ভাইয়ার নাম্বার আমার তো মুখস্থ নেই, তাই ওদের দিতে পারিনি।
- ওদের নাম্বার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার চাইলে বলবে ভাইয়া খুব রাগী যদি কোনভাবে জানতে পারে যে তুমি ভাইয়ার নাম্বার কলেজের কাউকে দিয়েছ তাহলে তোমাকে মারবে আর তুমি যে অলক ভাইয়ার বউ তাও বলার প্রয়োজন নেই।
"অলক ভাইয়ার বউ" শব্দটা শুনে স্নিগ্ধার গাল পুনরায় লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। বিন্দু দুষ্ট হেসে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে বলল
- ওরে লজ্জারাঙা বউ। এখনই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর। না হয় কালকে ঘুমের জন্য লজ্জা পেতে পারবে না। পরে বাসর রাতে বউয়ের লজ্জা রাঙা মুখ দেখতে না পেলে অলক ভাইয়া মনে মনে আমাকে বকবে।
স্নিগ্ধার লজ্জার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। সে লজ্জায় বিন্দুর বুকে মুখ লুকায় আর বিন্দুও সস্নেহে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে নেয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন