উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৬)
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে অলক। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ে কালো রঙের শেরওয়ানিতে খুব সুদর্শন লাগছে তাকে। কিন্তু মুখ লাল হয়ে আছে রাগে, বিরক্তিতে যার সবটুকুই তার নিজের উপর। রাগে হাত মুঠো করে ধরে সে। ঠিক তখনই ভেজানো দরজায় নক করে অনল জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া আসবো?
অলক ঘুরে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল
- আয়।
ভেজানো দরজা খুলে রুমে ঢুকে অনল। গাঢ় নীল লেহেঙ্গারে মেয়েটাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ। ভাইয়ের গায়ের কালো রঙের শেরওয়ানিটা দেখে মনে পড়ে যায় মা এই কালো রঙের শেরওয়ানি কিনতে রাজী ছিল না। কিন্তু কিছু বললে যদি বিয়ে করবে না বলে, তাই ভয়ে আর কিছু বলে না। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে মা কিছু বলেনি, ভাইকে কালো শেরওয়ানিতে খুব সুন্দর লাগছে। ভাইকে তাড়া দিয়ে অনল বলল
- তুই রেডি চল, মা বলেছে এখনি বের হয়ে যেতে। না হয় আবার লেট হয়ে যাবে।
কথা বলেই অনল ঘুরে দরজায় বাহিরে পা রাখতে যাবে তখনই তার কানে ভেসে আসে অলকের অসহায়, মৃদু কন্ঠস্বরে করা প্রশ্ন।
- কিছু করে কি বিয়েটা আটকানো যায় না?
অলকের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় অনল। স্থীর দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- এখন বিয়ে আটকাবি! তারপর কি করবি ভেবেছিস?
অলকের সহজ সরল উত্তর
- কি করবো মানে! বিয়ে বন্ধ হয়ে গেলে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। স্নিগ্ধা আগে যেভাবে চলতো সেভাবে চলবে আর আমিও।
অনল পুনরায় প্রশ্ন করল
- আর সমাজ?
অবাক কন্ঠে অলক জিজ্ঞেস করল
- মানে?
- অনুষ্ঠান ছোট করে হলেও কমপক্ষে দুই-তিনশো মানুষ তো বলেছেই খালু। আর রিসিপশনের অনুষ্ঠানের জন্যও কালকে পাঁচশো বারো জনকে বলা হয়েছে। তারা সবাই যখন জানতে পারবে বিয়েটা হচ্ছে না। তখন তারা নিজেদের মন মতো কাহিনী বানিয়ে ছড়াবে। হয়তো, ছেলের কোন মেয়ের সাথে রিলেশন আছে আর না হয় মেয়ের অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে। এই নিয়ে এলাকাজুড়ে নানান কথা চলবে। সেই সব কথা কেউ কেউ এসে ইনডায়রেক্টলি স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেস করবে। তখন মেয়েটার মনের অবস্থা কেমন হবে, তা ভাব। তারপরও যদি তোর মনে হয় তুই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবি তো করে দে।
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায় না অনল। অলক গিয়ে দপাস করে বিছানায় বসে পরে, দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। কি করবে এই চিন্তায় মাথায় যন্ত্রণা করছে তার। অনলকে একা নিচে নামতে দেখে মিসেস সাবিদা জিজ্ঞেস করল
- কিরে অলক কোথায়?
অনল উত্তর দেওয়ার আগেই, সিঁড়ি দিয়ে অলককে নিচে নামতে দেখে উনি নিজেই বলল
- ওই যে আসছে।
অনল ঘুরে তাকায় সিঁড়ির দিকে। ভাইকে দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সে। যদিও সে জানতো যা কিছু হয়ে যাক না কেন, তার ভাই স্নিগ্ধার কষ্ট হয় এমন কোন কিছু করবে না। কিন্তু তাও মাথার মধ্যে একটা ছোট আলপিন সমান চিন্তা রয়ে গিয়েছিল। এখন সে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলো।

উঠানে বিছানো পাটিবেত দিয়ে তৈরি শীতল পাটির মধ্যে বসে গল্প করছে ইতি, নিশির, নিশিরের বন্ধু পৃথিবী, মিষ্টার শওকতের চাচাতো ভায়ের ছেলে, যে নিশিরের বন্ধুও মাসুম ও তার বউ মিশু, ইতির চাচাতো দুই বোন ঝুমা আর রুমা, ইতির চাচাতো ভাই রতন, ইতির দুই বান্ধবী আনিকা আর তমা। মিশু, ইতি আর নিশিরের উদ্দেশ্যে বলল
- নিশির ভাই, ইতি তোমরা নাকি খুব সুন্দর গান করতে পারো। আমি তোমাদের গান এর আগে কখনো শুনিনি। একটা গান কর না, প্লিজ।
আনিকাও মিশুর কথায় সায় দিয়ে বলল
- হ্যাঁ, হ্যাঁ ইতি, নিশির ভাইয়া একটা গান করুন না। অনেকদিন হলো আপনাদের গান শুনিনা।
নিশির, ইতি কিছু বলার আগেই রতন উঠে দাঁড়িয়ে বলল
- আমি গিটার নিয়ে আসি।
কথাটা বলে সেকেন্ডের মধ্যে দৌড়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে থেকে গিটার এনে নিশিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
- নেও নিশির ভাইয়া এবার গান শুরু কর।
সবার কথা আর ফেলতে পারে না নিশির আর ইতি। নিশির হাসিমুখে গিটারটা হাতে তুলে নেয়। গিটার বাজাতে বাজাতে গান শুরু করল
- কিছু কিছু কথা বসে আছে ভিজে,
মিছি মিছি ব্যাথা হয় নিজে নিজে,
ঝরে যাওয়া পাতা জুড়ে বসে ডালে,
মেঘে মেঘে কথা শোনে সে আড়ালে।
ইতি তার সুমিষ্টি কন্ঠে গান শুরু করল
- আকাশ যখন গাইবে বলে,
আকাশ যখন গাইবে বলে বাদলেরই গান,
বাতাস তখন বইতে গিয়েও দেখায় অভিমান,
অভিমান…
আকাশ যখন ফিরতি পথে মন খারাপের সুর,
বাতাস তখন নীরব চিঠি পাঠায় বহুদূর,
বহুদূর…
সবার মুখে নিশির আর ইতির গানের প্রশংসা শুনে মিশু ভেবেছিল তাদের গানের গলা তুলনামূলক ভালো হবে। কিন্তু এতো ভালো সে কখনো ভাবেনি। মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে সে। নিশির গান করছে
- কিছু কিছু ধুলো জমে আছে কাঁচে,
ডাকনাম গুলো ভীষণই ছোঁয়াচে,
মরে যাওয়া জমি ভিজে গেলে জলে,
চারাগাছ গুলো কত কি যে বলে।
ছোটবেলায় একসাথে খেলা, ঝড়ের দিনে একসাথে আম কুড়ানো, ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় নিশিরের টিম জিতলে আনন্দে লাফিয়ে উঠা , পড়া একটু না বুঝলেই বই-খাতা নিয়ে নিশিরের কাছে চলে আসা, অনেক রাতে জানালার পাশে পড়ায় মগ্ন নিশিরকে গাছের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, নিশির ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছে শুনলে ছুটে গিয়ে তার সাথে গল্প করা এমন অনেক স্মৃতিচারণ করতে করতে ইতি গান গাইছে
- তোমার এমনি আসা, এমনি যাওয়া,
এমনি হাজার ছল, সাজিয়েছো যেনো,
তোমার এমনি খেলা, খেয়াল খুশি,
করছে কোলাহল, থামেনি এখনো।
চুপি চুপি দেয়াল জুড়ে, আঁকছি কত,
মন কেমনের খাতা,
চুপি চুপি জানতে গেলাম নিরুদ্দেশে,
মায়ার চাদর পাতা…
ইতি বাস্তবে ফিরে আসে নিশিরের কন্ঠস্বর শুনে। নিশির গেয়ে উঠলো
- আআআ… কিছু কিছু কথা বসে আছে ভিজে,
মিছি মিছি ব্যাথা হয় নিজে নিজে,
ঝরে যাওয়া পাতা জুড়ে বসে ডালে,
মেঘে মেঘে কথা শোনে সে আড়ালে।
তারপর নিশির আর ইতি একসাথে গান ধরল
- আকাশ যখন গাইবে বলে বাদলেরই গান,
বাতাস তখন বইতে গিয়েও দেখায় অভিমান,
অভিমান…
আকাশ যখন ফিরতি পথে মন খারাপের সুর
বাতাস তখন নীরব চিঠি পাঠায় বহুদূর,
বহুদূর…
গান শেষ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে ইতি। আর তার বন্ধ চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠে। নিশির আর ইতির মিষ্টি কন্ঠে গান শুনে মিসেস সাবনাজসহ আরও অনেকেই এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু একমাত্র মিসেস সাবনাজ ছাড়া কারো চোখেই ইতির চোখেই ওই এক বিন্দু জল ধরা পরে না। মিসেস সাবনাজের খুব কষ্ট হয় ইতির জন্য। কিন্তু তার যা যা করার সাধ্য ছিল তার সব সে করেছে, জোর করে তো ছেলে মনে ইতিকে বসিয়ে দিতে পারবে না। যদি পারতো তাহলে সে ঠিকই বসিয়ে দিত। এতে যে শুধু ইতি না, তার ছেলেটাও কষ্ট থেকে মুক্তি পেত। মনে মনে আবারও আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ যেন তার ছেলেমেয়েকে ক্ষমা করে দিয়ে, এই কষ্টের থেকে মুক্তি দেয়।

লাল ফিতার ওপারে থাকা বিন্দু বলল
- পঞ্চাশ হাজার টাকার এক টাকাও কম দিলে চলবে না।
বিন্দুর দিকে তাকিয়ে অনল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এই পিচ্ছি পিচ্ছি বাচ্চাদের নিয়ে এতো টাকা দিয়ে কি করবি তুই?
মিষ্টার মুস্তাফারা চার ভাই-বোন। তাদের মধ্যে মিষ্টার মুস্তাফা সবার বড়। তাদের সন্তানদের মধ্যেও স্নিগ্ধা সবার বড়। তারপর তার বড় চাচার পনেরো বছরের মেয়ে স্নেহা, আট বছরের ছেলে সৈকত, ছোট চাচার দশ বছরের মেয়ে বর্ষা, ফুফুর সাত বছরের ছেলে সাদ। যেহেতু কাছের আত্নীয়-স্বজন ছাড়া দূরের কেউ বা স্নিগ্ধার কোন বান্ধবীকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি তাই বিন্দু এই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়েই গেইট ধরে। তাই অনল উপরের প্রশ্নটা করে। বিন্দু হাসিমুখে উত্তর দেয়
- চকলেট খাবো।
অনল ছোট ছোট চোখ করে বিন্দুকে বলল
- এতো চকলেট খেলে দাতে পোকা ধরবে।
বিন্দু ফিচেল হাসি হেসে বলল
- প্রয়োজন হলে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগে থেকেই নিয়ে রাখবো। সেই চিন্তা তোকে করতে হবে না।
এই সব হাসি-তামাশা, এতো মানুষ হৈ হুল্লোড় সব কিছুই অলকের বিরক্ত লাগছে। কন্ঠে একরাশ বিরক্ত নিয়ে নিচু কন্ঠে অনলকে বলল
- অনল টাকা দিয়ে দে। আমার ভালো লাগছে না।
অনল আর বেশি কথা বাড়ায় না। পাছে যদি অলক বিয়ে করবে না বলে চলে যায়। বিন্দুও ব্যপারটা বুঝে আর বেশি দুষ্টুমি করবে না বলে ঠিক করে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন