উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৭)
- বল মা বিসমিল্লাহ কবুল।
কাজীর কথা শুনে কবুল বলতে গিয়ে স্নিগ্ধা আবিষ্কার করল ওর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। চোখ দিয়ে বইছে জলধারা। বিন্দু আর অনলসহ সেখানে উপস্থিত বিন্দুর চাচা, চাচি, ফুফু, মিষ্টার যাবেদও স্নিগ্ধাকে সান্তনা দেওয়া শুরু করে। শুধু মাত্র মিষ্টার মুস্তাফা ছাড়া। তিনি মেয়েকে সান্তনা দিবেন কি, নিজেকেই শান্ত রাখতে পারছে না। চোখ বেয়ে পড়ছে নোনা জল। অতি আদরের একটা মাত্র মেয়ে তার। মেয়েকে এখন বিয়ে দেওয়ার মোটেও ইচ্ছা ছিল না তার। স্ত্রীর কথাতেও তিনি কখনোই রাজী হতো না। যদি না সে সেদিন রাতে স্নিগ্ধার ফোনে বলা কথাগুলো শুনতো। কথাটা ভাবতেই তার চোখে ভেসে উঠে সেদিন রাতের কথা, যেদিন সে মেয়েকে অলকের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজী হয়েছিল।
সেদিন রাতে --------
মিষ্টার মুস্তাফা স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে ড্রয়িংরুমে থেকে রেগে মেগে বেডরুমে আসছিল। তাদের রুমের পাশের রুমটাই স্নিগ্ধার রুম। নিজের রুমের দরজার কাছে আসতেই মেয়ের রুম থেকে খুব ক্ষীণ কান্নার শব্দ শুনতে পান তিনি। এগিয়ে যায় মেয়ের রুমের দিকে। মেয়ের রুমের হালকা ভেজানো দরজার সামনে দাঁড়াতেই তার কানে আসে নাক টেনে টেনে স্নিগ্ধার বলা কথাগুলো
- প্লিজ অলক ভাইয়া, প্লিজ। তুমি সব ঠিক করে দেও। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
"অলক ভাইয়া" শব্দ জোড়া শুনেই অবাক হয় মিষ্টার মুস্তাফা। সে ভেবেছিল স্নিগ্ধা অনলের সাথে কথা বলছে। না হয় মিসেস সাবিদার সাথে কথা বলছে। কিন্তু তাদের রেখে অলকের সাথে কথা বলছে কেন? মেয়েকে তো এর আগে সামনা-সামনি কখনই প্রয়োজন ছাড়া অলকের সাথে কথা বলতে দেখেনি। ফোনে তো দূর। তাহলে আজ হঠাৎ কেন? পরক্ষণেই মাথায় আরও একটা কথা আসে শুধু কি আজকে স্নিগ্ধা অলকের সাথে কথা বলছে, নাকি আরও আগেও বলতো? আচ্ছা, ওদের মধ্যে প্রেমের কোন সম্পর্ক নেই তো? অলক কি তাহলে তার ছোট মেয়েটাকে বুলিয়ে ভালিয়ে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছে? কথাটা মনে হতেই খুব রাগ হয় তার। পুনরায় মাথায় আসে আরও একটা কথা, স্নিগ্ধা অলককে ভালোবেসে ফেললে তো তার এই রাজী না হওয়ায় মেয়েটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। তাই'ই কি মেয়েটা এমন কান্না করে অলককে সব কিছু ঠিক করতে বলছে? আচ্ছা, মেয়েকে কি গিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে সে অলকে ভালোবাসে কিনা? কিন্তু মেয়েটা যে পরিমাণ লাজুক, অন্তর্মুখী আর বাবাকে ভালোবাসে। সে রাজী না জানার পর, যদি তার খুশির কথা ভেবে মিথ্যা বলে।
- গুড নাইট।
স্নিগ্ধার কন্ঠস্বর শুনে মিষ্টার মুস্তাফা পুনরায় মেয়ের দিকে নজর দেয়। মেয়ে এখন কান্না করছে না, মুখে কোন চিন্তার ছাপও নেই। তাহলে তার ধারণাই ঠিক। স্নিগ্ধা অলকে ভালোবাসে। তাই তার আশ্বস্তে মেয়ের কান্না থেমে গিয়েছে। আর এদিকে সে বাবা হয়ে মেয়েকে কষ্ট দিচ্ছে।
বর্তমানে --------
হঠাৎ কাধে কেউ হাত দিলে বর্তমানে ফিরে আসে মিষ্টার মুস্তাফা। পাশে তাকিয়ে দেখে তার ভাই মাফুজ। মিষ্টার মুস্তাফা তাকাতেই মিষ্টার মাফুজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত, নরম কন্ঠে বলল
- ভাই তুইও এমন করলে কিভাবে হবে। যা গিয়ে মেয়েকে বুঝা।
মিষ্টার মুস্তাফা নিজেকে সামলে, চোখের জল মুছে মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। স্নিগ্ধা অনলের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। অনল স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ক্ষীণ আদুরে কন্ঠে বলল
- আপুনি এমন করে কান্না করছিস কেন? কান্না থামা, শান্ত হয়ে আমাকে বল কি হয়েছে। দেখ সবাই দেখছে। প্লিজ শান্ত হ আপুনি।
কিন্তু অনলের বুঝানো তে কোন কাজ হচ্ছে না। স্নিগ্ধা কেঁদেই যাচ্ছে। ড্রয়িংরুমে বসে থাকা অলকের কানে স্নিগ্ধার কান্নার শব্দ না আসলেও, সবাই স্নিগ্ধাকে যে বুঝাচ্ছিল তা তার কানে ঠিকই আসছে। আর নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। একবার উঠেই যাচ্ছিল বিয়ে বন্ধ করার কথা বলবে বলে। কিন্তু পরক্ষণেই এখানে আসার আগে অনলের বলা কথাগুলো মনে পড়তেই আবারও স্থীর হয়ে বসে যায় সে। তার পাশেই বসা ছিল সাদা শার্টের সাথে ধূসর রঙের সুট সেট পরা প্রবাহ। আজকে সে অনলকে জ্বালায়নি। অনলের থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই থেকেছে। মেয়েটা একটু প্রাণ খুলে মজা করুক ভাইয়ের বিয়েতে। এই মজা তো আর জীবনে দ্বিতীয়বার করতে পারবে না। জ্বালাতে তো সে সারাজীবনই পারবে। তাই আজকে দিনটা ছেড়ে দিয়েছে। শুধু এখানে আসার জন্য গাড়িতে উঠার আগে, সুযোগ বুঝে একবার অনলের কানের কাছে গিয়ে বলেছিল, "আমার আগুনটাকে আজকে পুরো আগুন লাগছে।" চোখ গরম করে অনল তার দিকে তাকালে, সে বুকে হাত দিয়ে পুনরায় বলেছিল, "এখানে আগুন ধরে গেল বউ।" তারপর অনল আর কোন কথা বলেনি। শুধু কটমট করে একবার তাকিয়ে, রাগে গটগট করে হেটে গাড়িতে উঠে গিয়েছিল। এই, আর কোন কথা অনলের সাথে বলেনি প্রবাহ। অলকের পাশেই থেকেছে পুরোটা সময়। এখনও সবাই স্নিগ্ধার রুমে গেলেও প্রবাহ অলকের পাশেই বসা ছিল। অলকের এই অস্থিরতা প্রবাহের চোখেও পরে। প্রবাহ অলকের পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলল
- এতো অস্থির হয়না। এই সময়ে মেয়েরা একটু কাঁদবেই। এটাই স্বাভাবিক বরং না কান্না করলে সেটা দৃষ্টিকটু দেখাতো। তার উপর স্নিগ্ধার বয়স অল্প। চিন্তা করো না। সবাই সেখানে আছে ওকে বুঝাচ্ছে। ও শান্ত হয়ে যাবে।
অলক প্রবাহের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। স্নিগ্ধা নিজেও জানে না কেন তার এতো কষ্ট হচ্ছে, এতো কান্না পাচ্ছে। আর মুখ ফুটে এই কথাটা অনলকে বলতেও পারছে না। কথা বলার সব শক্তি যেন ওর হারিয়ে গিয়েছে। মিষ্টার মুস্তাফা এগিয়ে গিয়ে বিছানায় মেয়ের সামনে বসে নরম স্বরে মেয়েকে ডাকল
- স্নিগ্ধা মা। তাকা আমার দিকে, মা।
স্নিগ্ধা আস্তে ধীরে মুখ তুলে তাকায় বাবা দিকে। লাল বেনারসি শাড়ি, গা ভর্তি সোনার গহনা পরে পুতুল বউয়ের মতো বউ সেজে থাকা মেয়ের চোখের জল দেখে বুকটা মুচড়ে উঠে তার। জন্মের সময় নিজের মাকে হারিয়েছে সে। ঘরে সৎ মা হয়ে আসে তার ছোট খালা। যদিও মৃত বড় বোনের ছেলে বলে, সৎ মা তাকে যথেষ্ট স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে। সৎ ভাই-বোনরা তাকে ভালোবাসে, নিজেদের আপন বড় ভাইয়ের মতনই সম্মান করে। কিন্তু তাও নিজের মায়ের সাথে তুলনা কি আর হয়? হয় না। অন্ততপক্ষে তার ক্ষেত্রে হয়নি। মায়ের ভালোবাসার অভাব রয়েই গিয়েছিল। তবে সেই অভাব পূরণ না হলেও মেয়ের ভালোবাসার মধ্যেই সে মায়ের ভালোবাসা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিল। তাই তো মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি নিজের থেকে দূর সরাতে চায়নি তিনি। কিন্তু নিজের খুশির জন্য মেয়েকে তো তিনি কষ্ট দিতে পারে না। নিজেকে সামলে ঠান্ডা আদুরে কন্ঠে মেয়েকে বলল
- মা আমার, তুমি না বাবার রাজকন্যা। আর রাজকন্যারা তো বড় হলে রাজপুত্রের কাছে গিয়ে সুখে শান্তিতে থাকে আর তা দেখে রাজকন্যার বাবাও সুখে শান্তিতে থাকে। তুমি চাওয়া তোমার বাবাও তেমন সুখে থাকুক।
স্নিগ্ধা উপর নিচে মাথা নাড়ে। মিষ্টার মুস্তাফা পুনরায় শান্ত কন্ঠে বলল
- তাহলে কবুল বল মা।
স্নিগ্ধা নাক টেকে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে করতে অনেক কষ্টে বলল
- বলতে পারছি না। কান্না পাচ্ছে।
বলে পুনরায় কান্না করে দেয় সে। মিষ্টার মুস্তাফা আদুরে কন্ঠে মেয়েকে বলল
- তুমি এতো কিছু মনে করোনা মা। ছোটবেলায় আমি তোমাকে মুখে মুখে পড়িয়ে পড়া মুখস্থ করাতাম না। মনে করো এখন তেমন তোমাকে পড়াচ্ছি। বল বিসমিল্লাহ কবুল।
স্নিগ্ধা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ছোটবেলায় বাবার মুখে পড়া শুনে পড়া পড়ার সেই স্মৃতি মনে করতে করতে ক্ষীণ, কান্নারত কন্ঠে থেমে থেমে বলল
- বিস,,,বিসমিল্লাহ ক,,,কবুল।
কাজী সাহেব পিছন থেকে বলল
- আবার বলতে হবে।
মিষ্টার মুস্তাফা পুনরায় মেয়েকে বলল
- আবার বল মা, বিসমিল্লাহ কবুল।
স্নিগ্ধাও শীর্ণ কন্ঠে পুনরায় বলল
- বিসমিল্লাহ কবুল।
কাজী সাহেব পুনরায় বলল
- আরও একবার বলতে হবে।
মিষ্টার মুস্তাফা আবার বলল
- একটু কষ্ট করে আর একবার বল মা, বিসমিল্লাহ কবুল।
স্নিগ্ধা ক্ষীণ কন্ঠে আস্তে-ধীরে বলল
- বিসমিল্লাহ কবুল।

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে মিষ্টার শওকত রুমের বিছানায় বসে থাকা মিসেস সাবনাজকে বলল
- এবার পুকুরের বেশ ভালো পরিমাণের মাছ হবে গো। রতনকে দিয়ে ভালোই করেছি। ছেলেটা অনেক কাজের আছে।
বিছানায় ফ্যানের নিচে বসে মিষ্টার শওকত পুনরায় বলল
- মানুষ কর্মঠ হলে যা করে তাতেই উঠে যেতে পারে। ছেলেটা মাছের চাষ করেই দেখবে সফল হবে।
কিন্তু এতো কিছু বলার পরও স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তিনি পূর্ণ দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখে, তার স্ত্রীর মুখটা মলিন। তাই দেখে শান্ত, নরম কন্ঠে তিনি প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে তোমার? কিছু নিয়ে খুব চিন্তা করছো মনে হয়?
উত্তর না দিয়ে মিসেস সাবনাজ স্বামীর দিকে তাকিয়ে দুখ ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- ইতির জীবনটা কি আমি নষ্ট করে দিলাম?
মিষ্টার শওকত অবাক হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন?
বিষণ্ন কন্ঠে মিসেস সাবনাজ উত্তর দিল
- ছেলেটা যে আজও ইতিকে ভালোবাসতে পারেনি। মেয়েটার চোখ দিয়ে যে আজও জল ঝরে।
- ইতিকে অন্যত্র বিয়ে দিলেই যে সুখি হতো তার নিশ্চয়তাই বা কি। নিশির ইতিকে ভালো না বাসলেও, ইতি যে নিশিরকে খুব ভালোবাসে।
- মেয়েটা এতো ভালো অথচ মেয়েটার ভাগ্যটা,,,,,,
কথাটা শেষ না করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন মিসেস সাবনাজ। মিষ্টার শওকত স্ত্রীকে সান্তনা দিয়ে বলল
- তুমি এতো চিন্তা করো না। বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনে বাঁধা তারা। দেখবে সময়ের সাথে সাথে নিশির ঠিকই ইতিকে ভালোবাসবে।
মিসেস সাবনাজ আশান্বিত কন্ঠে বলল
- তাই যেন হয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন