উপন্যাস : রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান |
১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৮)
অলকের রুমে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার ঠিক মধ্যখানে বসে আছে স্নিগ্ধা। ওয়াটার প্রুফ মেকাপ হওয়ায় তা নষ্ট না হলেও চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। যা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখন কান্না না করলেও, কিছুক্ষণ আগে সে কান্না করেছে। আসলে আসার সময় আর গাড়িয়ে প্রচুর কান্না করেছে সে। তখন সবাই তাকে কতোকিছু বলে বুঝিয়েছে। এই বাসায় সব সময় যেমন থাকে, তেমনই ভাবেই থাকবে। যখন ইচ্ছা বাসায় আসবে, যাবে। কিন্তু তাও ওর কান্না থামেনি। কারণ যে যত কিছুই বলে বুঝাক না কেন সে বুঝে, বিয়ের পর সে আর নিজের বাসায় সেভাবে এসে থাকাতে পারবে না। বাবা-মা'র আদরের একমাত্র মেয়ে সে। বাবা-মা'কে খুব ভালোবাসে সে। এই বাসায় আগে এসে থাকলেও বাবা-মা'কে ছেড়ে এক সপ্তাহের বেশি কখনোই থাকিনি সে। আর অন্য কোথাও তো যায়ইনি সে। সেখানে এখন থেকে বাবা-মা'কে ছেড়ে তাকে এখানে থাকতে হবে। ভেবে নিজেকে কোনভাবেই কান্না করা থেকে আটকাতে পারেনি সে। কিন্তু এখানে আসার পর সে কান্না করেনি, মূলত কান্না করার সময়ই পায়নি। গাড়ি থেকে নামতেই মিসেস সাবিদা তাদের বরণ করে তাকে ড্রয়িংরুমে বসায়, সেখানে মেহমানরা তার সাথে গল্প করে, হাসি-ঠাট্টা করে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর মিসেস সাবনাজ নিজ হাতে তাকে একটু রসমালাই খাইয়ে দিয়ে অনলকে বলে তাকে রুমে নিয়ে যেতে। মিসেস সাবনাজের কথা মতো অনল আর বিন্দু মিলে তাকে এই রুমে বসিয়ে দিয়ে যায়। এই বাসায় বছরে আট-দশবার আসলেও, এই রুমে শেষ কবে এসেছিল তা স্নিগ্ধার মনে নেই। তাই তাকে এই রুমে বসিয়ে দিয়ে গেলে সে সব ভুলে, চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমটা দেখতে থাকে। বিশাল বড় রুমের মধ্যে তেমন কিছু নেই। রুমের দরজা খুলতেই সামনে রুমের ঠিক মাঝখানে একটা খাট। খাটের পিছনের দেয়ালে জানালা আর জানালার উপরে দিকে একটা এসি। এসিটা এখন চালু আছে। কারণ খাটের উপরে সিলিং এ থাকা ফ্যানটা লাল গোলাপ আর বেলিফুল দিয়ে সাজানো দেখে তা আপাতত ছাড়া সম্ভব নয়। খাটের সাথে লাগিয়ে ডানপাশে একটা ড্রেসিং টেবিল। রুমের ডানপাশের দেয়ালে একটা একটা বড় চার দরজার আলমারি। তারপর ওয়াসরুমের দরজা। বামপাশে একটা ডিভান। ডিভান আর ডিভানের সামনে একটা ডিম্বাকৃতি টেবিল। আর তার পাশেই বারান্দার দরজা। এই, রুমে আরও অনেক ফাঁকা যায়গা আছে। কিন্তু না আছে সেখানে কিছু আর না আছে সাদা রঙের দেয়াল জুরে কিছু। ফার্নিচারগুলোও খুব সাদামাটা। গোল গোল চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এগুলো দেখচ্ছিল স্নিগ্ধা। আর ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দ হয়। চোখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায় সে। সেদিকে তাকিয়ে দেখে অলক রুমে ঢুকছে। অলককে রুমে ঢুকতে দেখে তার হৃৎপিণ্ডটা লাফাতে শুরু করল আর সাথে তাকে ঘিরে ধরল ভয়, লজ্জা আর জড়তা। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে, রুমের খাটের কাছে এসে অলক চোখ দুটো ফ্লোরের দিকে স্থির রেখে দাঁড়িয়ে আছে। কিভাবে বা কি বলে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলা শুরু করবে, তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে সে। আচ্ছা ওকি প্রথমেই স্নিগ্ধাকে সরি বলে সব বলে দিবে কিভাবে, কি কারনে তাদের বিয়ে হয়েছে। নাকি অন্য কোন কথা দিয়ে কথা বলা শুরু করবে। তার ভাবনার সুতো কাটে স্নিগ্ধার কন্ঠস্বরে। শান্ত, ক্ষীণ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে স্নিগ্ধা বলল
- আস,,,,আসসালামু আলাইকুম অ,,,অলক ভাইয়া।
আসলে, এখানে বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় বিন্দু তাকে বলেছিস অলক আসলে তাকে সালাম দিতে। এটা নাকি একটা নিয়ম তাই সে শত লজ্জা করার শর্তেও অলককে সালাম জানায় সে। স্নিগ্ধার কন্ঠস্বর শুনে চোখ তুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকায় অলক। বউ সাজে পুতুলের মতো সুন্দর দেখতে স্নিগ্ধার মুখে ক্লান্তি আর ঘুমের ছাপ দেখে মায়া হচ্ছে তার। মনে মনে সে ভাবে যে, স্নিগ্ধার উপর দিয়ে আজকে এমনেই অনেক ধকল গিয়েছে। নিশ্চিত এখন ওর বিশ্রামের প্রয়োজন। যেহেতু ও নিজে থেকে এখনই কিছু জিজ্ঞেস করেনি, তাই এখন ওকে রাত জাগিয়ে এসব কথা বলা ঠিক হবে না। তাই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। অনেক রাত হয়েছে, ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পর। কালকেও আবার অনুষ্ঠান আছে।
এতোক্ষণ স্নিগ্ধার ভয় হচ্ছিল অলক এসে তাকে কি বলবে তা নিয়ে। যদিও সে জানে অনলের মতোই তার অলক ভাইয়াও তাকে স্নেহ করে। কিন্তু তাও একটা ভয় বুকটা চেপে রেখেছিল। অলকের স্বাভাবিক কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে তার ভয়টা কেটে যায়। শান্ত কন্ঠে সে বলল
- আচ্ছা।
বলেই ফ্রেশ হওয়ার জন্য খাট থেকে নামে সে।

বিছানায় শুয়ে গল্প করছিল দুই বান্ধবী অনল আর বিন্দু। কথার এক পর্যায়ে বিন্দু উৎফুল্ল কন্ঠে বলল
- জানিস আজকে পার্লারে স্নিগ্ধার আগে আমার সাজ কমপ্লিট হয়ে গেলে, ওকে পার্লারে রেখে আমি অর্থের বাড়ি গিয়েছিলাম।
অনল কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- অর্থ ভাইয়া তোকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে?
বিন্দু অলকের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি হেসে বলল
- দারোয়ানকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলিয়েছি যে আমি তামিম আর ওদিকে তামিম ভাইয়াকে ফোন করে বলেছি ফোনটা এক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখতে।
অনল আগ্রহ নিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- তারপর দেখা করার পর কি হলো?
বিন্দু নীরস কন্ঠে উত্তর দিল
- কি আবার হবে। সেই, পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে উনি আমাকে শাসালো আর আমি অবলা প্রেমিকা তাকে রোমান্টিক কথা শুনিয়ে এলাম।
অনল চোখ বড় বড় করে বলল
- তুই আর অবলা। আমার না, তোকে না অর্থ ভাইয়াকে অবলা মনে হয়।
বিন্দু মুখে নকল দুখী দুখী ভাব ফুটিয়ে বলল
- যদিও কথাটা ঠিক, কিন্তু তাও তুই আমার জানু হয়ে কথাটা বলতে পারলি।
- তা কিছু ভেবেছিস অর্থ ভাইয়াকে কিভাবে বিয়ে করবি?
- হুম প্ল্যান একটা আছে। তোর বিয়ের পর যেটা এক্সিকিউট করবো।
- আমার বিয়ে আটকানোর জন্য তুই কোন আইডিয়া পেলি না।
- আমার মতে আর বিয়ে আটকানোর চেষ্টা না করে, তুই প্রবাহ ভাইয়াকেই বিয়ে করে ফেল।
- তুইও আমাকে সেই বজ্জাতটাকে বিয়ে করতে বলছিস।
- দেখ ওনাকে বিয়ে না করলে পরে যদি ওনার থেকে আরও খারাপ কেউ পড়ে। উনি তোকে বিরক্ত করলেও খুব ভালোবাসে কিন্তু।
- ভালোবাসা। তুই জানিস এসবের উপর আমার কোন বিশ্বাস নেই।
বিন্দু অনলকে বুঝানোর চেষ্টা করে বলল
- তুলি আপুর সাথে যা হয়েছে সবার সাথে তো আর তাই রিপিট হবে না।
অনল কাঠ কাঠ কন্ঠে বলল
- আমি এতো কিছু ভাবতে চাই না। আমি বিয়ে আটকাতে না পারলেও বিয়ের পর ওনাকে ঠিকই ডিভোর্স দিব।
বিন্দু কথাটা শুনে মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলল, "আমার মনে হয় না কোনদিন তুই প্রবাহ ভাইয়ার থেকে ছাড়া পাবি। আর আমি চাইও না। আমি চাই তোর প্রবাহ ভাইয়ার সাথে ভালোবাসাপূর্ণ একটা সংসার হোক।"

স্নিগ্ধা ফ্রেশ হয়ে বের হলে, অলক ওয়াসরুমে যায় ফ্রেশ হতে। অলক ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে স্নিগ্ধা খাটের পাশে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে অলক নিজেও কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল
- কি হয়েছে না ঘুমিয়ে দাঁড়িয়ে আছো যে। কোন সমস্যা হচ্ছে? বল আমাকে। নাকি অনলকে ডেকে দিব।
অলকের প্রশ্ন শুনে স্নিগ্ধা মাথা নিচু ডানে বামে মাথা নেড়ে শান্ত কন্ঠে বলল
- না, না আপুনিকে ডাকতে হবে না। আসলে আমি কোন পাশে ঘুমাব?
অলক হাসিমুখে বলল
- তোমার যেই পাশে ইচ্ছে সেই পাশে ঘুমাও।
স্নিগ্ধা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আসলে, কলেজের বান্ধবিরা প্রায়ই হরর মুভি দেখে এসে গল্প করে। সে কখনোই এইসব হরর মুভি দেখেনি। তার অল্প অল্প ভূতের ভয় আছে। তার উপর সে একা ঘুমায়। কিন্তু বান্ধবীরা তাকে ভীতু বলে মজা করলে, সে ঠিক করে যে সে এবার হরর মুভি দেখবেই। কিন্তু তার আগে সে অল্প ভয়ের কিছু দেখবে। যাতে তার সাহস বাড়ে। সেই অনুযায়ী একদিন দুপুরবেলা ড্রয়িংরুমের টিভির ইউটিউব থেকে আহট দেখতে শুরু করে সে। প্রথমে যে পর্বটা দেখেছিল সেটা দেখে তার ভয় করেনি। তাই আরও একটা পর্ব দেখা শুরু করে। কিন্তু পরের পর্বটা দেখে ও খুব ভয় পেয়ে যায়। সেখানে ওয়াসরুমের বেসিনের কল থেকে ভূত বের হয়। তা দেখার পর থেকে অন্ধকারে ওয়াসরুম তার ভয় করে। এখন নতুন জায়গায় এসে ওয়াসরুমের দিকের সাইডে ঘুমাতে তার একটু ভয় করছে। তাই অলকের কথা শুনে খুশি হয়ে বলল
- আচ্ছা।
তারপর গিয়ে বিছানার বামপাশে শুয়ে পরে। অলকও লাইট অফ করে মাঝে অনেকটুকু জায়গা রেখে বিছানার ডানপাশে শুনে পরে। অলক বিছানায় শুতেই স্নিগ্ধা লজ্জায় নিজেকে আরও একটু গুটিয়ে নেয়। ভয়ের চিন্তায় অলকও যে তার সাথে ঘুমাবে সেই বিষয়টা এএতক্ষন অতটা খেয়ালই করেনি সে। এর আগে অলকের সামনে ঘুমালেও, অলকের সাথে বা নিজের বাবা ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে এক খাটে কখনো ঘুমায়নি সে। যদিও এর আগে গাড়িতে দু-একবার অলকের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল আর ঘুম থেকে উঠে হালকা লজ্জাও পেয়েছিল, কিন্তু সেই লজ্জা থেকে আজকের এই লজ্জা বেশি। বহুগুণ বেশি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন