উপন্যাস         :         শরম 
লেখিকা          :         তসলিমা নাসরিন
গ্রন্থ               :         শরম 
প্রকাশকাল      :       

জনপ্রিয় লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বহুল আলোচিত উপন্যাস 'লজ্জা'। ১৯৯৩ সালে এটি বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশের প্রথম ছয় মাসেই বইটি পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বৈধ কপি বিক্রি হয়। এরপর ধর্মীয় মৌলিবাদিদের একতরফা বিতর্কের মুখে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালিন বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি লেখার কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছিল লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে। 

পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসের নায়কের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দেখা হয়েছিলো লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। সেই অনুভূতিকে পুজি করে তিনি লিখলেন নতুন উপন্যাস 'শরম'। এ উপন্যাসটি কবিয়াল পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো।
শরম || তসলিমা নাসরিন
শরম || তসলিমা নাসরিন

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

শরম || তসলিমা নাসরিন (পর্ব - ০৯)

হঠাৎ তিড়িং তিড়িং নাচতে শুরু করে বিশ্ব। নাচতে নাচতে জুলেখার গায়ের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। বিশ্বকে টেনে সরিয়ে অচিন্ত্য 'আমি আগে' বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অচিন্ত্যকে ধাক্কা দিয়ে সুব্রত।
কেউ খুব চিৎকার করছে না। মাতাল হলেও সাবধানতা আছে। কিন্তু কানপাতলে হুল্লোড়ের শব্দ ঠিকই শোনা যায়। ছেলেপুলেরা আড্ডা দিচ্ছে- লোকে এ রকমই জানবে বাইরে থেকে, যে রকম জানে। কে বুঝবে যে একটা মেয়েকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বাজারের মধ্যে একটা ঘরে? শামিমার কথা মনে পড়ে সুরঞ্জনের। ঘটনা নাকি ঘুরে ফিরে আসে। ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃত্তি হয়। তবে কি তাই হচ্ছে আজ? একই ঘটনা ঘটিয়েছিল সে অন্য দেশে। তবু সেই মেয়ে বেশ্যা ছিল। টাকা দিয়ে শরীর নেওয়াটা আইনত সিদ্ধ ছিল। আর আজ সে ধরে এনেছে একটা মুসলমান ঘরের বউকে। শামিমাকে ধর্ষণ করে সে কোনও শোধ সত্যিকার মেটাতে পারেনি। জুলেখাকে ধর্ষণ করলে মহব্বতকে শাস্তি দেওয়া যাবে। এ কথা বারবার ওরা বলছে। কথাগুলো তীরের মতো মগজে ঢুকছে সুরঞ্জনের। মহব্বতকে হাতের কাছে পেলে পেটে ছুরি বসাতে হবে। খুনোখুনিতে না গেলেও একটা বিরাট শাস্তি মহব্বত পেয়ে যাচ্ছে, তা হলো তার ঘরের বউটা নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে যার-তার হাতে নয়, রীতিমতো হিন্দু ছেলেদের হাতে। এরপর আরেকটা হিন্দুর গায়ে হাত তুলেছিস কি তোর গলা কেটে নেবো, মহব্বতের বাচ্চা মহব্বত। এ রকমই ব্যাপারটা তা এখন আর বুঝতে অসুবিধে নেই সুরঞ্জনের। এর জন্য, যত সে মদ খাচ্ছে, তত সে প্রস্তুত হচ্ছে। যত তার মাথা হাওয়ায় উড়ছে, বা গড়িয়াহাটে গড়াচ্ছে- তত উবে যাচ্ছে তার দ্বিধা। কিন্তু বারবার মেয়েটির মুখের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। জুলেখার শাড়ি-চাপা মুখের ভেতর থেকে গোঙানোর শব্দ ভেসে আসছে। সুরঞ্জনের চোখ তার গোঙানো মুখটির দিকে। অচিন্ত্য উঠতেই বিশ্ব ঝাঁপিয়ে পড়ল। জুলেখাকে উপুড় করে সে হি হি হি শব্দে ডাক ছাড়ছে, আর ছিঁড়ে কামড়ে যা করার করছে। জিনিসটা সবার কাছে এত সহজ মনে হচ্ছে যেন নিজের শোবার ঘরে বৈধ বউ-এর সঙ্গে বৈধ সঙ্গমে ব্যস্ত একেকজন। যেন এটা চাইলেও কেউ মনে করতে পারছে না, যে, কারও শোবার ঘর নয় এটি, ঘরে আরও দর্শক উপস্থিত, মেয়েটি কারও বিয়ে করা বউ নয়, মেয়েটি অন্যের বউ, মেয়েটির জাত-গোত্র আলাদা। চাইলেও যেন কেউ মনে করতে পারছে না, যে, বাংলাদেশের মতো দেশ নয় এটি, ওখানে সংখ্যালঘুদের ওপর যা ইচ্ছে করা গেলেও ভারতে করা যায় না। কেউ যেন বুঝতে পারছে না, ঘটনা জানাজানি হলে সারাজীবনের জন্য সবারই ফেরার হয়ে যেতে হবে, অথবা জেলে পচে মরতে হবে। অথবা মুসলমান গুণ্ডাদের মার খেয়ে মরতে হবে। সবাই সব ভুলে গেছে, বাস্তবতা থেকে ছিটকে পাঁচশ মাইল দূরে এসে বসে আছে, যেন এই গ্রহে তারা নেই, যে গ্রহে তাদের বাস। এ তো ডাল-ভাতের মত লাগছে। যেন সোনাগাছিতে বন্ধুরা মিলে কোনও বেশ্যার ঘরে ঢুকে সঙ্গম করছে আর হৈ চৈ করে ফুর্তি করছে। কেউ উচিত-অনুচিতের সামান্য প্রশ্ন তুলছে না। কেউ ভয় পাচ্ছে না। কেউ ভাবছে না, এর পরিণতি কী হতে পারে। শুধুই আনন্দের জন্য করে যাচ্ছে যা করছে, তার সব।


সুরঞ্জনের চোখ স্থির হচ্ছে। তার ঊর্ধ্বাঙ্গ, নিম্নাঙ্গ, পুরুষাঙ্গ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। একবার শুধু বলে সে, এনাফ। আস্তে। কেউ শুনতে পায় না। দ্বিতীয়বারের এনাফটি আরো একটু জোরে। নিস্তেজ শরীরটিতে আচমকা শক্তি ফিরে আসে। তৃতীয়বারেরটি চিৎকার করে। সুরঞ্জনের সজোরে বলা এনাফ শুনে হো হো করে হেসে ওঠে সুব্রত। সুরঞ্জন মুষ্ঠিবদ্ধ করতে থাকে। আর মদ খেতে থাকে। নিঃশব্দে। তার মনে হয় না তার চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটছে। যেন সে পত্রিকার পাতায় কোনও খবর পড়ছে। অথবা কোনও ডকুফিল্ম দেখছে। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে সেও বুঝি উপস্থিত ছিল তখন। ঘুম ভাঙলে অথবা ঘোর কাটলে সে টের পাবে সে আসলে দর্শক অথবা শ্রোতা গোছের কিছু।

সুব্রত টেনে মেয়েটাকে উঠিয়ে টেবিলে শুইয়ে দিল চিত করে। উরু দুটো দুদিকে ছড়িয়ে। মেয়ে এবার জোর খাটাচ্ছে। উঠে পড়তে চাইছে। কিন্তু সুব্রতর শক্ত শক্ত চড় তাকে নিথর করে দিল। সুব্রতর ধর্ষণ গায়ের চামড়া মুচড়ে মুচড়ে, স্তন কামড়ে কামড়ে। সুরঞ্জন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চায় সুব্রতকে। সুব্রত বদলে এমন জোরে ধাক্কা দেয় সুরঞ্জনকে যে দেয়ালে গিয়ে উল্টে পড়ে। মাথায় আঘাত লাগে জোরে। এবার সুরঞ্জন ছুটে এসে সেই হাতটাকে শক্ত করে ধরে, যে হাতটা চামড়া মোচড়াচ্ছিল। রেপ করছো, করো, বাড়তি কষ্ট দিচ্ছ কেন— সুরঞ্জন বোধহয় তা-ই বলতে চেয়েছিল। হাতটা ধরাই থাকে। সুব্রত এক ঝটকায় লিঙ্গ উঠিয়ে নিয়ে পতনটা ঘটালো সুরঞ্জনের শরীরে। সাদা বীর্য তার নীল জামাকাপড়ে তীরের মতো এসে বিধলো। এবার সুরঞ্জন লাগালো সুব্রতর নাক বরাবর এক ঘুষি। বললো - আর কেউ ওই মেয়েকে টাচ করবে না।


- মানে? গোপাল এগিয়ে এল। - আমার তো হয়নি।
- আর হওয়া হওয়ি না। খবরদার গোপাল, এক পাও এগোবি না।
- ও চান্দু। তোমার শখ হয়েছে তো তুমি আগে করে নাও। আমি পরে আসছি।
বলতে বলতে গোপাল বসে পড়লো মাটিতে বসেই গ্লাসে চুমুক। 
- আমি কিছু করবো না। সুরঞ্জন বললো।
- করবি না? অচিন্ত্য চোখ ছোট করে।
- উরেব্বাস। কেইসটা কী? গোপাল বলে। 
- ও তো মানুষ, না? ওতো একটা মানুষ! নাকি না? সুরঞ্জন চেঁচায়।
হো হো খিল খিল। ফ্যাক ফ্যাক। ছ্যাক ছ্যাক।
- শালা তো বিগড়ে গেল দেখছি। কী রে সুরঞ্জন, তোর বোনকে তো আর করছি না। 
অমনি ফ্যাকফ্যাক সবার। সুরঞ্জন এবার লাথি কষায় এলোপাতাড়ি সবার গায়ে। লাথি শেষ করে সুরঞ্জন নিজের গ্লাসটা তুলতে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়লো। পেছন থেকে সুব্রতর ভীষণ এক লাথি।
- বানচোত কোথাকার!

একজন আরেক জনের ওপর। একজনের ওপর তিনজন। সুরঞ্জন চিত হয়ে পড়ে আছে। তার গায়ের ওপর বিশ্ব ছড়ছড় করে পেচ্ছাব করছে। আর গোপাল মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুয়ে ধর্ষণে মন দিতে যেই না শুরু করেছে সুরঞ্জন শুয়ে থেকেই পা বাড়িয়ে নিজের পায়ে গোপালের পা পেঁচিয়ে হেঁচকা টান দেয়। গোপাল উল্টে পড়ে যায়।

সুরঞ্জন নিজেকে কোনওমতে তুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো বিশ্বর ওপর। কিন্তু শক্তিতে সে বিশ্বর সঙ্গে পারলেও সুব্রত আর অচিন্ত্য যখন বিশ্বর সঙ্গে হাত মেলায়, তখন পিঠে পেটে কোমরে লাথি খেয়ে তার পড়ে থাকতে হয় উপুড় হয়ে। হুঁশ আছে বলে নিজেরই মনে হয় না।

সব বেরিয়ে যায়। যাবার আগে শার্টের কলার ধরে সুরঞ্জনের মাথাটা ওপরের দিকে টেনে তুলে অচিন্ত্য বলে যায়, ওটাকে করে ফেলে দিয়ে - আয়। দেরি করিস না। কারো কাছে আমাদের কারও নাম উচ্চারণ করলে গলা কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেব, বলে দিলাম।

অনেকক্ষণ ওভাবে পড়ে থাকে। দরজা হাট করে খোলা। যে কেউ ঘরে ঢুকলেই বুঝবে কী ঘটেছে এই ঘরে। মেঝেয় জলের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস। আর ভুল করে ফেলে রাখা কারও কোমরের বেল্ট। সুরঞ্জন উঠে বসে জুলেখাকে বলে, — উঠুন, বাড়ি চলুন।
জুলেখা ধাতব কণ্ঠে বললো, - আপনি করবেন না কিছু?
সুরঞ্জন বলে- না।

মেয়েটি উঠতে চায় নিজে, পারে না। সুরঞ্জনকে উঠে মেয়েটাকে ধরে তুলতে হয়। তার সারা গায়ে ব্যথা। জায়গায় জায়গায় ক্ষত, কোনওটাতে রক্ত। ও নিয়েই সে জুলেখাকে সায়া-ব্লাউজ পরিয়ে দেয়, শাড়ি পরিয়ে দেয়। মেয়েটার সম্ভবত মাথা ঘোরায়, দাঁড়াতে গেলেই পড়ে যেতে নেয়। সুরঞ্জন জড়িয়ে ধরে রাখে। ধীরে ধীরে মেয়েটাকে নিচে নামিয়ে সে ট্যাক্সিতে তোলে। রাস্তার লোকেরা হয়তো ভেবে নেয় যে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে ভদ্রলোক। ভদ্রলোকই বটে আজ সুরঞ্জন।


পার্ক সার্কাসের গলিতে ঢুকে বাড়ির দরজার কাছে সিঁড়িতে জুলেখাকে রেখে সুরঞ্জন অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভেতর থেকে কেউ নিশ্চয়ই দরজা খুলে দেবে। স্বামী বা কেউ। ট্যাক্সিতে জুলেখাকে উঠিয়ে দিলেই জুলেখা বাড়ি ফিরে যেতে পারত, সুরঞ্জনেরও কোনও ঝুঁকি নেওয়া হতো না। কিন্তু ঝুঁকি যে আছে নিজে পৌঁছে দেওয়ায়, ভাবেনি। তাকে পুলিশ ধরতে পারতো, পাড়ার লোকেরা ঘেরাও করতে পারতো, মুসলমান গুণ্ডারা মেরে হাড়গোড় ভেঙে দিতে পারতো। ভাবেনি বা ভাবতে ইচ্ছে করেনি।

সেই রাতে সুরঞ্জন পার্ক সার্কাস থেকে সোজা শিয়ালদা স্টেশনে গিয়ে শিলিগুড়ির একটা টিকিট করে রাতের ট্রেনে উঠে পড়েছিল। কোথায় যাবে তার কোনও ঠিক ছিল না। না, সুরঞ্জন পুলিশের ভয়ে পালায়নি। সে নিজের ভয়ে পালিয়েছিল। নিজেকে সে ভয় পেয়েছিল। প্রচণ্ড সেদিন। মায়ার মতো একটা মেয়েকে সে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করালো। একবার শুধু তার শামিমার কথা মনে হয়েছিল। ওকে ধর্ষণ ছিল পুরোটাই তার মানসিক ব্যাপার। শারীরিক নয়। শামিমার সম্মতি নিয়েই সে উপগত হয়েছিল তার ওপর। একবার মনে হয় শামিমা এসেছে। বাকিটা সময় তার মনে হয়েছে, মায়াকে বোধহয় এভাবেই ধর্ষণ করেছিল ওরা ওখানে। না, ওদের ওপর রাগ করে সে জুলেখাকে পারেনি ধর্ষণ করতে। জুলেখাকে মনে হচ্ছিল মায়া। জুলেখাকে মনে হচ্ছিল মানুষ। মনে হচ্ছিল একটা নিরীহ সুন্দর মেয়ে। একটুও, একবারের জন্যও তারপর তাকে আর মুসলমান বলে মনে হয়নি। একবারও জুলেখার প্রতি ঘৃণা জাগেনি। নিজের প্রতি ঘৃণা জেগেছে। ওই চার চারটে ধর্ষকের প্রতি জন্মেছে ঘৃণা। অচিন্ত্যদের সঙ্গে সম্পর্ক সে মনে মনে জন্মের মতো চুকিয়ে ফেলেছে।

সম্পূর্ণ না ঘুমিয়ে জানালায় স্থির তাকিয়ে থেকে সুরঞ্জন শিলিগুড়ি পৌঁছোলো। পথে কারও সঙ্গে সে কথা বললো না। কিছু খেল না। পরদিন আবার ঠিক একইভাবে ফিরে এল। অচিন্ত্যর বন্ধু বিশ্বরূপ মিত্রের কি বিজেপি আর আরএসএসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক আছে? এই প্রশ্নটি হঠাৎ তার মনে উদয় হয়। শিলিগুড়ি থেকে খবরটা জানতে কলকাতায় নেমেই সে পার্টি অফিসে যায়। নথিপত্র ঘেঁটে বিশ্বর কোনও নাম পায় না। যে দু-একজনের সঙ্গে দেখা হয়, তারা বলে দেয়, বিশ্ব হিন্দুবাদী কোনও দলের সঙ্গে মোটেও জড়িত নয়। 

অফিসে একটা বয়স্ক লোক বসা ছিল, সুরঞ্জনকে বার কয়েক লক্ষ করে ধীরে ধীরে বললো- কারও ওপর রাগ করে পার্টি থেকে সরে যেও না, ভুল করবে। পার্টি তোমার দুরবস্থার সময় কাছে ছিল। ভবিষ্যতেও কাছে থাকবে। সুরঞ্জন জানে সেটা। কলেজের চাকরিটাও পার্টির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই পেয়েছিল। কোনও কথা না বলে সে বেরিয়ে যায়। 

জুলেখার বাড়িতে দুদিন পর সে যায়। দুপুরবেলা। বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে। জ্বরে জুলেখা কাঁপছে। প্রায় অচেতন। সেই রাতে বাড়ি ফিরে মহব্বত তাকে হাতের কাছে যা পেয়েছে, তাই দিয়ে মেরেছে। চোখের নিচে কালসিটে দাগ। ঠোঁট কেটে গেছে। পিঠে বুকে বাহুতে ঊরুতে থরে থরে রক্ত জমে আছে। ঘরে কোনও ওষুধ নেই কোনও ডাক্তার দেখেনি।


সুরঞ্জনকে, অদ্ভুত কাণ্ড, জুলেখা তাড়িয়ে দেয়নি বাড়ি থেকে। পাড়ার লোক ডাকেনি। পুলিশ ডাকেনি। তার ওই বিপদের দিনে সুরঞ্জনকেই সে সহায় ভেবেছিলো হয়তো। সুরঞ্জনকেই বলেছিলো সে রাতে কী ঘটেছিলো বাড়িতে।
- বাড়ি ফিরে দেখলো আমাকে। আমি কাতরাচ্ছিলাম যন্ত্রণায়। পাশের বাড়ির একজন এসে শুধু বলে গেল, ওকে তো হিন্দুরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যস।


চলবে.......

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ: 
জনপ্রিয় প্রথাবিরোধী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ১৯৬২ সালের ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এমবিবিএস পাস করেন। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সাল অবদি চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত ছিলেন। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লেখালেখি নয়তো চাকুরি ছাড়তে বললে তিনি লেখালেখি ছাড়েন নি। বরং সরকারি চিকিৎসকের চাকুরিটিই ছেড়ে দেন তিনি। তখন এই লেখিকাকে কেন্দ্র করে উগ্র মৌলবাদীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিলো পুরো দেশ। বেশ কিছু মামলাও হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। শেষে এককথায় বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করেন নারীমুক্তির অন্যতম অগ্রপথিক তসলিমা নাসরিন। এরপর তিনি নির্বাসিত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন