উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫২)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৩)
কয়েকঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে একটা গেইটের সামনে। হন বাজলে দারোয়ান এসে গেইট খুলে দেয়। গাড়ি গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে তোয়া মাথা ডানে-বামে ঘুড়িয়ে দেখে উঁচু করে বাউন্ডারি দেয়া অনেকটুকু জায়গা জুরে, রাস্তার শেষ প্রান্তে সাদা রং করা খুব সুন্দর বড় একটা একতালা বাড়ি। বাড়িটির ডান দিকে বাঁধানো পুকুর। পুকুরের চারপাশে চার পাঁচটা নারিকেল গাছ। বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে আছে, বাড়ির পিছনের দিকে থাকা আম গাছ, কাঁঠাল গাছ। বামদিকে একটা বড় ঘর। তোয়া চিন্তা করতে থাকে এটা আবার কেমন ঘর, কোন দরজা জানালা নেই। সামনের অংশে আবার দোকানের মতো শাটার দেওয়া। কিছুক্ষণ পর তোয়ার মাথায় আসে এটা আসলে কোন মানুষের ঘর না, এটা গাড়ির ঘর। অভি বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে তোয়ার হাত ধরে টেনে তাকে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়। বাসার মধ্যে ঢুকেই তোয়া দেখতে পায় তিনজন লোক বসা। এদের মধ্যে কোট টাই পরা লোকটাকে তোয়া চিনে, অভির পিএ বারি। বাকি দুজনের একজনকে দেখে মনে হচ্ছে হুজুর, পরনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জমা, বড় বড় দাড়ি, মাথায় সাদা টুপি। অন্যজন কালো কোড প্যান্ট পরা। উকিলরা যেমন পরে। অভিকে বাসার ভিতরে ঢুকতে দেখে তিনজন দাঁড়িয়ে যায়। অভি তার পিএ বারিকে উদেশ্য করে জিজ্ঞেস করল
- সব রেডি?
পিএ বারি নম্র সরে উত্তর দিল
- জ্বি স্যার।
অভি সন্তুষ্ট হয়ে বললো
- ওকে ওয়েট কর, আসছি।
অভি তোয়াকে ভিতরের একটা রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় রাখা শপিং ব্যাগ থেকে একটা লাল বিয়ের ওড়না বের করে, তোয়ার মাথায় দিয়ে দেয়। তোয়া করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- প্লিজ ভাইয়া আমাকে যেতে দেও। তুমি কেন এমন করছ?
অভি রাগী কন্ঠে বললো
- এতো এতো গল্পের বই পড়েও তুমি এটুকু বুঝতে পারো না, আমি তোমার কাছে ঠিক কি চাই! তোমার মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগেনি যে, তোমাদের তিন বোনের মধ্যে তোমার জন্যই আমি এতোকিছু কেন করি? আমার তো গল্প নিয়ে কোন ইন্টারেস্ট নেই, তারপরও কেন আমি তোমার বলা বইয়ের কাহিনী এতো মন দিয়ে শুনি। কেন তোমাকে না দেখে বেশিদিন থাকতে পারি না। বল ভাবনি কখনো এসব?
তোয়া অনুনয় কন্ঠে বললো
- ভাইয়া এসব নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। এখন আমার যেতে হবে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে যেতে দেও।
- যতক্ষণ না আমাদের বিয়ে হচ্ছে ততক্ষণ তুমি কোথাও যেতে পারবে না।
- তুমি এমন কেন করছ? প্লিজ যেতে দেও না আমাকে।
- তাহলে বিয়ে কর আমাকে। আমি প্রমিজ করছি তুমি আমাকে বিয়েটা করলেই আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবো।
তোয়ার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না সে। বিয়ে না করলে অভি তাকে এখান থেকে যেতে দিবে না। এখান থেকে না গেলে নিশার জন্য সে কিছুই করতে পারবে না। আর এখান থেকে যেতে হলে অভিকে বিয়ে করতে হবে। অভিকে তার বিয়ে করতে কোন সমস্যা নেয়। সেও অনেক বছর আগে থেকেই অভিকে পছন্দ করে। অভিও যে তাকে পছন্দ করে তাও সে জানে। অভি তাকে ডায়রেক্ট কিছু বলেনি দেখে, সেও অভিকে কিছু বিলেনি। সে চেয়েছিল অভি আগে তাকে প্রপোজ করবে। তাই সে এতোদিন সব বুঝেও অবুঝের মতো রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে যে অভি রেখে গিয়ে তাকে বিয়ে করতে চাবে, তা সে ভাবেনি। এখন তার বাসায় যাওয়া খুব প্রযোজন। দীপ্তির সাথে কথা বলে তোয়াদের বাসায় যাওয়া দরকার। যেভাবেই হোক তাকে নীলা আর রিশানের বিয়ে আটকাতেই হবে। এখানে সময় নষ্ট করলে চলবে না। অন্য কোন উপায় নেই দেখে তোয়া বললো
- আচ্ছা চল।
অভি তোয়ার হাত ধরে তাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গিয়ে সোফাতে বসে। তারপর হুজুরকে উদ্দেশ্য করে বললও
- বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
হুজুর বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়। হুজুর কবুল বলতে বললে অভি শান্ত কন্ঠে বললো
- কবুল কবুল কবুল।
হুজুর এবার তোয়াকে কবুল বলতে বলতে, তোয়া একদমে বললো
- কবুল কবুল কবুল।
সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তোয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভি যখন তোয়াকে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে এসেছ, তখন সবাই ভেবেই নিয়েছিল যে মেয়ে রাজী না। অভি তাকে জোর করে বিয়ে করবে। কিন্তু এখন তো তা মনে হচ্ছে না। সবাই এভাবে বিয়ের বাকি কাজ রেখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে, সময় নষ্ট করছে বলে তোয়া উকিলকে উদ্দেশ্য করে বললো
- রেজিষ্ট্রেশন পেপারের কোথায় সাইন করাতে হবে, তাড়াতাড়ি দিন।
উকিল রেজিষ্ট্রেশন পেপার এগিয়ে দিলেন তাতে অভি, তোয়া সাইন করে। সাইন করা শেষ হতেই তোয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো
- এবার চল, আমাকে বাসায় ছেড়ে দিয়ে এসো।
অভি
- এখনি মাএ ,,,,,
অভির কথা শেষ হওয়ার আগেই তোয়া রাগী চোখে অভির দিকে তাকিয়ে বললো
- এখনি, চল।
অভি অবাক চোখে তোয়ার দিকে তাকায়। তোয়াকে এতো রাগতে সে আগে কখনোই দেখেনি। যদি দীপকের কাছ থেকে শুনেছে, যে তোয়া যেমন শান্ত ঠিক তেমনি রাগী। কিন্তু স্বচক্ষে আজকে প্রথম দেখা। তোয়া আবার রাগী কন্ঠে বললো
- কি হলো চল।
কেন জানি অভি আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পায় না। পা বাড়ায় বাহিরের দিকে।
রাত ১১ঃ৫৮ ছাদের দরজায় এসে দাঁড়ায় কাব্য। গায়ে কালো সুতোর কাজ করা খুব সুন্দর একটা সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। কিছুক্ষণ আগে কিরণ এটা তাকে দিয়ে বলেছে, কুহু না কি তাকে এটা দিয়েছে। আর বলেছে এখন এটা পড়ে ছাদে যেতে। তাই সে পাঞ্জাবিটা পরে ছাদে এসেছে। চারিদিকে অন্ধকার। ছাদে লাইট থাকলেও তা জ্বালানো নেই। আকাশে চাঁদের আবছা আলোতে অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক রমনীকে। কাব্য সামনে আগাতে নিলে তার পায়ের সাথে নরম কিছু লাগে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে দেখে বেলুন। মনে প্রশ্ন জাগে, ছাদে বেলুন কেন? হয়ত তাকে আবার অভিনন্দন জানাবে। কুহুর কাছে যেতে যেতে কাব্য শান্ত কন্ঠে ডেকে উঠে
- কুহু।
ঘুরে দাঁড়ায় কুহু। সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে যায় কাব্য। তার শরীর যেমন হঠাৎ স্থীর হয়ে যায়, ঠিক তেমনি তার হৃদয়ের লাফালাফি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখতে থাকে তার থেকে দুই তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুকে। ফর্সা গায়ে সাদা জামদানী শাড়ি। কানে ছোট এক জোড়া সাদা পাথরের টপ। চোখে কাজল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। মাথার চুলগুলো খোপা করে তাতে সাদা বেলি ফুলের মালা জড়ানো। দু'হাত ভর্তি সাদা রঙের কাচের চুড়ি। পায়ে রিনিঝিনি শব্দ করা সেই নুপুর জোড়া। হাতে মোটা লাল রঙের মোম নিয়ে মিষ্টি হেসে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে গেয়ে উঠে কুহু
- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার কাব্য। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
অবাক হয়ে যায় কাব্য। তার জন্মদিন তো কালকে তাহলে আজকে কুহু উইশ করছে কেন? ভাবতেই মনে পরে ঘন্টা ক্ষনিক আগে সে যখন খাবার খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল, তখন সময় ছিল রাত দশটা। তার মানে এখন রাত বারোটা বাজে। কুহুর কন্ঠ থেমে যাওয়ার সাথে সাথেই ছাদের লাইট জ্বলে উঠে। সাথে কাব্যের পিছন থেকে কতোগুলো কন্ঠস্বর গেয়ে উঠে
- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার কাব্য। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
কাব্য চমকে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তার পিছনে কিরণ, তার মা-বাবা, কুহুর মা-বাবা, তার মামা-মামী দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য এবার ছাদের আসেপাশে চোখ বুলোয়। পুরো ছাদে লাভ সেভের লাল আর সাদা রঙের বেলুনে ভরা। মিসেস কবিতা ছেলের মুখে নিজের হাতে বানানো মিষ্টি পুরে দিয়ে বললো
- আমার বাবার প্রতিটা দিন হোক সুখময়।
মিষ্টার সফিক ছেলের কাছে আসে। ছেলের মাথা হাত বুলিয়ে দোয়া করে, হাতে একটা গিফট বক্স দেয়। তারপর একে একে কিরণ, কুহুর বাবা-মা, কাব্যের মামা-মামি গিফট দিয়ে উইশ করে।
কুহু এসে কোমরে হাত দিয়ে বললো
- হয়েছে তোমাদের উইশ করা, এবার কেক কাটা হোক।
কিরণ কাব্যের হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো
- হ্যাঁ ভাইয়া চল চল কেক কাটবে।
বলেই কাব্যকে ছাদের মাঝে রাখা টেবিলের কাছে নিয়ে যায়। টেবিলের উপর বড় তিন তালা সাদা কেক। কেকের উপর থেকে লাল গোলাপ দিয়ে নিচ পর্যন্ত পেঁচানো সিঁড়ির মতো করে ডেকোরেশন করা। কেকের উপর স্টাইল করে লেখা -
HAPPY BIRTHDAY KABBO.
লেখার একপাশে কুহুর হাতের সেই লাল মোমটা বসানো।
এই বুড়ো বয়সেও এমন করে জন্মদিন পালন করায় কাব্যের কেমন লজ্জা লাগছে। অন্য বার তার জন্মদিন হয় কিন্তু ফ্যামিলিগত ভাবে খুব সাদামাটা ভাবে। মা'র হাতে রান্না করা তার প্রিয় খাবার, সন্ধ্যায় কুহুর হাতে বানানো কেক কাটা আর বাবা, কিরণ, আন্টি-আংকেলের দেওয়া গিফট দিয়ে। কিন্তু এবার যেন ফ্যামিলি গত ভাবেই খুব জাঁকজমক ভাবে তার জন্মদিন হচ্ছে। কিরণ কাব্যের দিকে ছুরিটা এগিয়ে দিয়ে বললো
- মোম নিভিয়ে কেক কাট, ভাইয়া।
কাব্য লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো
- এতো বড় ছেলের এভাবে জন্মদিন, মানুষ শুনলে হাসাহাসি করবে।
কুহু রেগে বললো
- কথা বাদ দিয়ে কেকটা কাটবে!
কাব্য আর কথা না বলে ফু দিয়ে মোম নিভিয়ে কেক কেটে, প্রথম টুকরো মা'কে খাওয়ার। তারপর একে একে সবাইকে খাওয়ার। সবার শেষে কুহু খাওয়ানোর সময়, কুহু কাব্যের আঙুল কামড়ে ধরে। কাব্য ব্যথা পেয়ে "আহ" বলে উঠে। তা দেখে কিরণ দাত কেলিয়ে বললো
- দেখেছ ভাইয়া কুহু আপু কি পরিমাণ রাক্ষস। থুক্কু রাক্ষসী। কেকের সাথে তোমার আঙুলও খেয়ে ফেলছে। এই রাক্ষসীর থেলে দূরে দূরে থেক ভাইয়া। না হলে কবে দেখবে আস্ত তোমাকেই গিলে খেয়ে ফেলেছে।
কুহু কোমরে শাড়ি গুজতে গুজতে বললো
- তবে রে দাঁড়া তুই।
কিরণ জানে এখন কুহু তাকে ধরতে পারলে একটা মারও মাটিতে পরবে না। সে দৌড় লাগায়। কুহুও কিরণের পিছনে ছুটে। পুরো ছাদময় দৌড়াতে থাকে দুজনে। আর ওদের এই ছোটাছুটি দেখে সবাই হাসতে থাকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৪)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন