উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৩)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৪)

খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদ তারা বিহীন খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নীলা। চোখ দুটো অন্ধকার আকাশের দিকে স্থির থাকলেও মনের পাতায় ঘুরছে দীপকের সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্তের ছবি। কত পাগলামিই না করে দীপক তার জন্য। ক্লাইন্ডের সাথে মিটিং আছে বলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেত। অনেকক্ষণ ওয়েট করার পরও যখন কাইন্ড আসতো না। তখন সে রাগি চোখে তাকিয়ে ক্লাইন্ড কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলতো, হয়তো এই হয়েছে ওই হয়েছে নানান বাহানা দিয়ে খাবার ওর্ডার দিয়ে খেতে বসে যেত। কোথা থেকে যেন তার পছন্দের সব খাবারের নামও জেনে নিয়েছে। তার পছন্দের খাবারই সব সময় ওর্ডার করতো। তার স্ট্রিট ফুড পছন্দ। তাই রাস্তায় ফুসকা, বেলপুরিরি দেখলেই গাড়ি থামিয়ে খেতে চলে যেত। শুধুমাত্র তার দিকে বাজে নজরে তাকায়েছিল বলে তমাল শিকদারের
ডিল ক্যান্সেল করে দিয়েছে। তার একটু কিছু হলে অস্থির হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় ফাইলের স্টাবলারের পিন লেগে তার আঙুল কেটে যাওয়ার কথা। দীপক সব কাজ ফেলে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। তাকে খুশি করার জন্য কিভাবে কানে ধরে, এক পায়ে দাঁড়িয়ে দুলছিল। মনে পড়তেই আনমনেই হেসে দেয় সে। সব সময় তার খেয়াল রাখে। সব সময় তাকে আগকে রাখে মানুষটা। এমন মানুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। আর ভাগ্যতো তার বরাবরাই খারাপ। মাএ তিন বছর বয়সে বাবা মারা যায়। সংসারের হাল ধরার জন্য মা তাকে আর তার ছোট বোনকে রেখে চাকরি করে। যে বয়সে তার বাবা-মা তাকে রেডি করে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেই বয়সে তাকে তার ছোট বোনকে রেডি করে স্কুল নিয়ে যেতে হতো। যেই বয়সে তাকে খায়িয়ে, ঘুম পারিয়ে, গোসল করিয়ে দেওয়ার কথা। সেই বয়সে সে তার ছোট বোনকে খায়িয়ে দিতো, ঘুম পাড়াতো, গোসল করিয়ে দিত। যেই বয়সে অন্য মেয়েরা বন্ধু, বান্ধবিদের সাথে আড্ডা চাট করে, প্রেম করে বেয়ায়। সে বয়সে সে নিজের আর তার বোনের হাত খরচের জন্য টিউশনি করতো। এতো দূরভাগা মানুষের এতো সুখ আশা করাটা যে অপরাধ। তার দু'গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনা জল। সাথে সাথেই তা মুছে নেয় সে।

এদিকে,
রুমের লাইট অফ থাকলেও। বাহির থেকে আসা হালকা আলোতে সব কিছু আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। বালিশ থেকে মাথাটা হালকা তুলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা নিশার দিকে তাকায় তোয়া। নিজের মুখটা নিশার অনেক কাছে নিয়ে চেক করে ঘুমিয়েছে কিনা। শারিরীক, মানুষিক ক্লান্তিতে বেগোড়ে ঘুমাচ্ছে নিশা। আস্তে আস্তে খাট থেকে নামে তোয়া। আবছা আলোতে পা টিপে টিপে গিয়ে ভেজানো দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। নীলার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কিভাবে নীলাকে ডাক দিবে? ঘুমিয়ে থাকলে আস্তে আস্তে ডাকলে শুনবে না। আবার জোরে ডাকলে নিশা, মিসেস শান্তি বা অন্য কোন মেহমান উঠে যেতে পারে। কি করবে ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে দরজার লক ধরে ঘুড়াতেই দরজা খুলে যায়। তোয়া ডানে বামে মাথা নেড়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কি না। না কেউ নেই। টুপ করে রুমে ডুকে দরজা লক করে দেয় সে। রুমে লাইট জ্বালানো ছিল। তোয়া এদিক ঐদিক তাকিয়ে নীলাকে খুঁজে দেখে নীলা রুমে নেই। বারান্দায় দিকে এগোতেই দেখে নীলা বারান্দার রেলিঙের উপর দুই হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তোয়া গিয়ে নীলার পাশে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। নম্র স্বরে আস্তে করে ডাকে
- নীলা আপু। 

হঠাৎ পাশ থেকে কারো ডাক শুনে ঘাবড়ে গিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে, তোয়া তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাকে তাকাতে দেখে তোয়া আবার বলল
- সরি আপু তোমার পারমিশন না নিয়ে, রুমে চলে এলাম।
নীলা মিষ্টি হেসে বললো
- এতে সরি বলার কি আছে। আমি তোমার বোন না। আর বোনের রুমে আসতে আবার পারমিশন কিসের!
তোয়া মলিন মুখ করে বললো
- বোন! কিন্তু আমি যে তোমাকে বোন হিসেবে চাই না।
তোয়ার কথা শুনে কৌতুহলি চোখে তোয়ার দিকে তাকায় নীলা। তোয়া স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- ভাবি হিসেবে চাই আমি তোমাকে।

নীলা আবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- ভাবী! তুমি কি রিশানের বোন হও?
তোয়া শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- নাহ। আমি দীপক আহাম্মেদের বোন।
নীলা বিস্মিত চোখে তোয়ার দিকে তাকায়। তোয়া আবার বললো
- জানো আপু ভাইয়া যেদিন এসে বলেছে যে সে তোমাকে খুঁজে পেয়েছে, সেদিন থেকেই আমরা তিন বোন আর মা ভাইয়াকে কতো করে বলিছি তোমার ছবি দেখাতে। কিন্তু ভাইয়া দেখায়নি। বলতো আগে আগে দেখলে নাকি তার বউ বিয়ের আগেই পুরানো হয়ে যাবে। তাই একবার বিয়ে করে এনে পরে দেখাবে। 

একটু থামে তোয়া। নীলা আকাশে দিকে তাকিয়ে বারবার চোখের পলক ফেলে চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করছে। তোয়া পুনরায় বললো
- কাল রাতে আমি একজনের নামে ভাইয়ার কাছে বিচার দেওয়ায় জন্য ভাইয়ার রুমে যাই। ভাইয়াকে রুমে না পেয়ে চলে আসছিলাম। তখনি আমার চোখ যায় ভাইয়ার রুমের বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা একটা বিয়ের কার্ডের দিকে। কার্ডটা দেখতে তোমার বিয়ের কার্ডের মতো লাগছিল। কার্ডটা তোমার বিয়ের কি না তা দেখার জন্য কাছে গিয়ে কার্ডটা নিয়ে খুলে দেখি, এটা তোমার বিয়ের ছেঁড়া কার্ড। কিন্তু আমাদের বাসায় যেই বিয়ের কার্ড পাঠানো হয়েছিল সেটা তো আমার কাছেই আছে। আর সেটা ছেঁড়াও না। তাহলে এই কার্ড কোথা থেকে এসেছে? খামটা উল্টে নাম চেক করতেই দেখি সেখানে ভাইয়া নাম লেখা। আমাকে যেই কার্ডটা নিশা দিয়েছে সেটাতে আমার নাম লেখা। কিন্তু এটাতে ভাইয়ার নাম। নিশা ভাইয়াকে আলাদা করে কখনোই কার্ড দিবে না। আন্টিও যেহেতু আমার মাধ্যমে ভাইয়াকে চিনে, তাই সেও আলাদা করে ভাইয়াকে কার্ড দেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। বাকি রইলে শুধু তুমি। কিন্তু তোমাকে ভাইয়া কিভাবে চিনে? নিশা আর আন্টিকে ভাইয়া চিনে। কিন্তু তুমি লেখাপড়ার জন্য চট্টগ্রামে থাকার ফলে আমিই তোমাকে হাতে গোনা দুই-তিন বার দেখিছি। ভাইয়া দেখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আর ভাইয়ার সব বন্ধু-বান্ধবদেরও আমি চিনি। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে কিছুদিন আগে নিশা বলেছিল তোমার জব হয়েছে। আর ভাইয়ার জন্যও অফিসে নতুন পিএ ঠিক করা হয়। সেই থেকে ধারণা করি যে তুমিই ভাইয়ার পিএ। কিন্তু তোমার বিয়ের কার্ডটা এমন ছেঁড়া কেন? কিছু বুঝতে না পেরে ফোন করে পুরো ঘটনা আপুনির কাছে বলি। তখন আপুনির কাছে জানতে ভাইয়া যে মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে আর কেউ না তুমি, নীলা আপু। 

একটু দম নিয়ে তোয়া আবার বললো
- তোমার বিয়ে যে অন্য কারো সাথে হয়ে যাচ্ছে তা ভাইয়া আমাদের বলা তো দূরে থাক, একটু বুঝতেও দেয়নি। কেন জানো?
প্রশ্ন করে নীলার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তোয়া বললো
- কারণ ভাইয়া জানতো, আমাদের বললে আমরা জোর করে তোমাকে তুলে নিয়ে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।আপু প্লিজ চারটা জীবন নষ্ট করো না। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমাকে অনেক সুখে রাখবে। প্লিজ আপু প্লিজ ,,,,,,,

তোয়ার বলা "আপু প্লিজ চারটা জীবন নষ্ট করো না।" কথাটা নীলা কান দিয়ে শুনলেও, তার মাথা পর্যন্ত পৌছালো না। তার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে। যে মা তাকে এতো কষ্ট করে বড় করেছে, সে মায়ের কথা সে অমান্য করতে পারবে না। নীলা অনুরোধের কন্ঠে বললো
- প্লিজ তোয়া আমাকে অনুরোধ করো না। আমার দ্বারা সম্ভব না।
- নিশার জন্যও না?
নীলা কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করল
- নিশার জন্য মানে?
তোয়া একটা নিশ্বাস ফেলে উত্তর দিল
- নিশা আর রিশান স্যার একে ওপরকে ভালোবাসে।
নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি! তাহলে এতো কিছু হয়ে গেল কিন্তু ওরা কেউ কিছু বললো না কেন?

তোয়া নীলাকে একে একে নিশা আর রিশানের কলেজের সব কাহিনী, তোয়ার সাথে নিশার সেদিনের কথা, রিশানের সাথে কথা বলতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে নীলার নিজের উপর খুব রাগ হলো। ছিঃ ছিঃ ছিঃ সে কি করতে যাচ্ছিলো। সে তার আদরের ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষকে তার থেকে কেড়ে নিতে যাচ্ছিল। ভাবতেই নিজের গালে নিজের চড় মারতে ইচ্ছে করছে তার। কেন সে তার বোনের খবর রাখলো না? কেন সে তার বোনকে আগে জিজ্ঞেস করল না, যে সে কাউকে পছন্দ করে কি না? রিশানের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে নিশা সব সময় বলতো তার আর তার হবু বরের সাথে সেও যাবে তাদের বিয়ের শপিং করতে। কিন্তু রিশানের সাথে সে যেদিন শপিং করতে গিয়েছিল, সেদিন তাকে এতো করে বলা সত্তেও সে যায়নি। আর শপিংমলে যাওয়ার পর রিশানও তার পিছনে বার বার তাকিয়ে কাউকে খুঁজছিল। তখনও সে কেন কিছু বুঝলো না। নীলা অস্থির হয়ে বললো
- তোয়া আমাকে সব ঠিক করতে হবে।

বলেই রুমে ফিয়ে আসে। তোয়াও নীলার পিছন পিছন রুমে ডুকে। আশেপাশে খুঁজে বিছানার উপর থেকে ফোন নিয়ে রিশানকে ফোন করে। এখন যে রাত দুইটা বাজে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। ফোনটা হাতে নিয়ে রিশানের নাম্বার বের করে কল করতেই বন্ধ বলে। অস্থির হয়ে আবার ফোন করে, কিন্তু এবারেও বন্ধই বলছে। ধপাস করে বিছানায় বসে চোখের পানি ছেড়ে দেয় সে। তোয়া কাধে হাত রাখতেই কান্নারত চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- এখন কি হবে? রিশানের ফোন বন্ধ। কালকে বিয়ে।আমি কিভাবে এই বিয়ে আটকাবো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৫)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন