উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫১)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫২)
ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই তার চোখ যায় বেডের উপর রাখা টেডি বিয়ারের উপরে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে প্রতিরাতে এই টেডি বিয়ারটি হয়েছে তার কান্নার সঙ্গী। দীপকের থেকে তার কষ্টটা যেন বেশি। দীপক তো তাকে "ভালোবাসি" শব্দটি বলতে পেরেছে। নিজের কষ্টটা তাকে দেখাতে পেরেছে। কিন্তু সে? সে এতোই অভাগা যে, না পেরেছে ভালোবাসি বলতে আর না পেরেছে তার কষ্টটা দেখাতে। দীপকের কষ্টে ভরা মলিন মুখটা দেখলে যখনি তার ইচ্ছা করতো ভালোবাসি বলতে, তখনি তার মনে পড়তো তার মায়ের অপরাধী আর অনুরোধে মাখা সেই কথা গুলো।
বেশকিছু দিন আগে -------------
সময় এখন রাত আট বেজে দশ মিনিট। বিছানার মাঝখানে বসে বসে পড়ছিল নীলা। তিনমাস পর মাস্টাসের ফাইনাল এক্সাম। তখনি বিছানায় বইয়ের পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠে। নীলা পড়তে পড়তেই হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে দীপক ফোন করেছে। নীলা জানে দীপক কেন এখন ফোন করেছে। আজ শুক্রবার অফিস বন্ধ ছিল। সারাদিন দীপকের সাথে তার কোনো দেখা-সাক্ষাৎ বা কথা-বার্তা হয়নি। তাই এখন ফোন করেছে। এটা প্রতিটা ছুটির দিনই করে। প্রথম প্রথম বেপারটা না বুঝতে পারলেও পরে সে বুঝতে পারে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে রিসিভ করে, স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি এখন ফোন করেছেন কেন? কোন সমস্যা?
ফোনের ওপাশের থেমে দীপক উত্তর দিল
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। সারাদিন তোমার কন্ঠ শুনিনি তাই।
কথাটা শুনেও নীলা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি বললেন স্যার?
দীপক কথা ঘুরিয়ে উত্তর দিল
- না মানে কালকে কি কোন মিটিং আছে কি না তা জানার জন্য ফোন করেছি।
নীলা সোজাসাপ্টা বললো
- না স্যার কালকে কোন মিটিং নেই। ওকে স্যার আপনার জানা হয়ে গেছে এবার রাখি।
বলেই নীলা কলটা কেটে দেয়। এখন দীপকের মুখটা দেখতে কেমন হবে তা ভেবেই হেসে দেয় সে। হাসি থামিয়ে আবারো পড়ায় মন দেয়। কিছুক্ষণ পর নীলার রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় মিসেস শান্তি। দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ায় মগ্ন মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, পৃথিবীতে এর থেকে ভালো আর লক্ষী মেয়ে আর নেই। ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনে বড় হয়েছে। কিন্তু কখনো কোনো অসন্তোষ প্রকাশ করেনি, কোনো অভিযোগ করেনি, কোনো বায়না করেনি। উল্টো ছোট থেকেই নিজের ছোট বোনকে আদর যত্ন করে বড় করেছে। নিজে না খেয়ে বোনকে খাইয়েছে, নিজে টিউশনি করে দুই বোনের হাত খরচ চালিয়েছে। এখনো দিনরাত তাদের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কথাগুলো ভাবতেই চোখের কোনে পানি চলে আসে তার। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে সে। কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মনে হতেই মাথা ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকায় নীলা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি হেসে বললো
- আম্মা ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো।
মিসেস শান্তি গিয়ে বিছানায় মেয়ের পাশে বসে কাচুমাচু করিতে থাকে। কিভাবে মেয়েকে কথাটা বলবে তাই ভাবতে থাকেন তিনি। মাকে সংকোচ করতে দেখে নীলা জিজ্ঞেস করল
- কিছু বলবে মা?
মিসেস শান্তি অপরাধীর কন্ঠে বললো
- আমি তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করে ফেলেছি মা।
- কি কাজ মা?
- তোকে বলেছিলাম না কিছুদিন আগে রাস্তায় আমার ছোটবেলার বান্ধবী শিখার সাথে দেখা হয়েছে।
- হ্যাঁ।
- জানিস আমার আর শিখার সেই স্কুল থেকে ইচ্ছা আমার ছেলেমেয়ের সাথে শিখার ছেলেমেয়ের বিয়ে দিব। আর দেখ ভাগ্য ক্রমে শিখার ছেলে আছে আর আমার মেয়ে আছে। জানিস ওর ছেলেটা অনেক ভালো, ভদ্র। এখন একটা ভার্সিটিতে আছে। সামনের মাসে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করবে। সেখানে মাসে এক লাখ দশ হাজার টাকা বেতন। ফ্যামিলিতে মা ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই। আর তোর আন্টিও তোর ছবি দেখার পর পাগল হয়ে গিয়েছে, তোকে ছেলের বউ করার জন্য। তাই আমি ওদের এই শুক্রবার আসতে বলেছি।
তার বিয়ের কথা শুনতেই দীপকের হাসি মুখেটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। যদিও সে দীপককে পাওয়ার আশা কখনো করেনি, কিন্তু তাই বলে এখনই বিয়ে করার কথাও সে ভাবেনি। তাছাড়া তার ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে জব করে মা, বোনকে সুখের মুখ দেখাবে। তাও তো এখনো হলো না। মাকের দিকে তাকিয়ে নীলা বললো
- কিন্তু মা আমি তোমাদের জন্য এই সংসারের জন্য কিছু করতে চাই। আমি এখনি বিয়ে করতে চাই না।
- দেখ মা এই সংসারের কথা তো সারা জীবন ভেবেছিস, এবার নিজের চিন্তা কর মা। আর তাছাড়া নিশাটারও বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে। আমি চাচ্ছি সামনের বছরই ওর বিয়ে দিয়ে দিতে। মেয়েটা আমার এমনেই শ্যামলা। তার উপর যদি বয়স হয়ে যায় তা,,,,,
নীলা মলিন মুখে মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বললো
- মা এমন করে বলছো কেন? ও শ্যামবর্ণের হলেও ওর চেহাটা কতো মায়াবী, কতো সুন্দর, মেয়ে হিসেবে কতো ভালো, লেখাপড়ায় ভালো, রান্নাবান্নাসহ ঘরের সব কাজ পারে।
মিসেস শান্তি একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
- তা তো জানি রে মা। কিন্তু বিয়ের বাজারে মেয়েদের চেহারা বা গুনের চেয়ে চামড়ার কালারের মূল্য যে বেশি মা। আমি জানি তোদের কোন চাহিদা আমি পুরোন করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়েছিস তোরা। তাই আমি মরার আগে তোদের ভালো ঘরে বিয়ে দিয়ে যেতে চাই।
মা'য়ের কথা শুনে কষ্ট হয় নীলার। চোখ দুটো চিকচিক করে উঠে। মিসেস শান্তির ডান হাত নিজের দু'হাতে ধরে বললো
- মা এভাবে বলো না। তুমি তোমার সাধ্য মতন করেছ। আমার কাছে তুমি ওয়াল্ডের বেস্ট মা।
- তাহলে এই বেস্ট মায়ের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ কর মা। বিয়েতে রাজী হয়ে যা মা।
- আচ্ছা মা। তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বল, আমি রাজী।
মিসেস শান্তি মেয়ের দুই গাল নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে নিচু করে মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো
- আমার সোনার টুকরো মেয়ে।
তারপর মেয়েকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। নীলাও মাকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জল লুকায়। যে মা তাদের দুই বোনের জন্য নিজে সারাটা জীবন কষ্ট করলো, তার মুখে এমন হাসি ফোটানোর জন্য সে পৃথিবীর সব কষ্ট সইতে পারবে।
বর্তমানে -------------
- আপু মুড়ি খেতে আয়।
নিশার ডাকে ধ্যান ভাঙে নীলার। হাতের ভিজা তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে, রুম থেকে বের হতেই ড্রয়িং রুম থেকে টিভি শব্দ কানে আশে তার। নিউজে বলছে মন্ত্রী আব্রাহাম খানের বড় আয়ান খানকে কে খুন করার চেষ্টা করায় গাজিপুরের ডিম রিসোর্টের মালিক মনির সরকারের ছেলে মাসুদ সরকারকে আবারো চৌদ্দ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। টিভির আওয়াজ শুনতে শুনতে ড্রয়িং রুমে যায় নীলা। গিয়ে দেখে নিশা সোফার সামনে ফ্লোরে বসে বুট আর আলুর চপ দিয়ে মুড়ি মাখছে। নীলা নিশার পাশে বসে একটা আলুর চপ নিয়ে খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল
- এখন ভুট মুড়ি?
নিশা মুড়ি মাখতে মাখতে উত্তর দিল
- রোজার সময় যে বেশি হয়েছে সেগুলোই রান্না করেছি। শুধু বুট খেতে ভালো লাগবে না, তাই সাথে আলুর চপও বানিয়েছি।
নিশা মুড়ির বোলটা নীলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নেও মাখা শেষ, এবার খাও।
নীলা একমুঠো মুড়ি নিয়ে তৃপ্তিসহ খেতে খেতে বললো
- আহ! অমৃত। তোর হাতে জাদু আছে। তুই সেফ হলে পৃথিবীর বিখ্যাত সেফ হতি।
নিশা কিছু বলে না। শুধু মলিন হাসে আর মনে মনে ভাবে, যদি সে সেফ হতো তাহলে সত্যিই খুব ভালো হতো। রিশান নামক মানুষটার সাথে বোনের স্বামী হিসেবে পরিচিত হতো। তাহলে সেই মানুষটার প্রতি কোন ফিলিংস জন্মাতো না।
মিসেস শান্তি হাসি খুশি মুখে এসে সোফাতে বসতে বসতে নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- জানিস শিখা আর রিশান মিলে তোর জন্য সোনার গহনার সেট, নুপুর তো কিনেছেই সাথে সোনার তাজ, কোমরের বিছাও কিনেছে।
কথা শোনা মাএই নিশার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। চোখের কোনে জল চলে এলো। মা বোনের চোখের আড়ালে চোখের সাথে সাথেই চোখের জলটুকু মুছে ফেললো সে। নীলার মাথায় একটা কথা নাড়া দিয়ে উঠলো, সে তার মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে গিয়ে রিশানকে ঠকাচ্ছে না তো?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৩)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন