উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৫)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৬)
ভাইয়া উঠো। এই ভাইয়া, উঠো না।
তূবার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় দীপকের। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তূবা তার খাটের পাশে বসে তার হাত ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে তাকে ডাকছে। ঘুমের ওষুধের ফলে এখনো মাথাটা তার ভারি ভারি লাগছে। মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে আমার বনুটার?
তূবা মিষ্টি হেসে বললো
- উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো বাহিরে যাব।
দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল সাতটা বাজে মাত্র। ঘড়ি থেকে চোখ ঘুরিয়ে তূবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এতো সকালে কোথায় যাবি?
- বাসায় বসে পড়তে পড়তে মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে। তাই সকাল সকাল বাহিরের ঠান্ডা বাতাসে ঘুরতে যাব।
- তোর ডাক্তার বরকে বলেছিস? এতো সকালে ঠান্ডার মধ্যে ঘুরতে গিয়ে ঠান্ডা লাগলে, তখন তোর ডাক্তার বর তোর সাথে সাথে আমারও গর্দান নিবে।
- কি ভীতু তুমি!
- ভীতু না ভদ্র। অভ্র ভাইয়া আমার থেকে বড় দেখে, না হলে দেখ ,,,,,,
দীপককে আর বলতে না দিয়ে তূবা বললো
- আচ্ছা পড়ে দেখবো। আগে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো তো। লেট হয়ে যাচ্ছে।
বলেই তূবা দীপকের হাত ধরে তাকে বেড থেকে টেনে নামিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াসরুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। দীপক তূবার ঠেলা খেয়ে যেতে যেতে বললো
- আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি।
- দাঁড়াও।
দীপক দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরে বললো
- আবার কি?
তূবা কোন উত্তর দেয় না। গিয়ে আলমারি খুলে খুঁজে খুঁজে একটা নীল রঙের শার্ট আর একটা সাদা রঙের জিন্সের প্যান্ট বের করে। আলমারি লাগিয়ে দিয়ে শার্ট আর প্যান্টটা দীপকের হাতে দিয়ে বললো
- এই সব দাড়ি টাড়ি সব কেটে গোসল করে আসবে। একবারে হনুমানের মতো লাগছে তোমাকে। আমি এমন হনুমানকে নিয়ে ঘুরতে যাবো না।
দীপক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- হাটতে যাবো এগুলো পরে? হাটার জন্য তো টাউজার,,,
দীপকে আবারও কথা শেষ করতে না দিয়ে তূবা বললো
- আমি বলেছি এগুলো পরবে, মানে পরবে কোন কথা না। এবার যাও তো তাড়াতাড়ি।
বলেই দীপককে ঢেলে ওয়াসরুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
- দশ মিনিটের মধ্যে বের হবে।
- এস ইউ সে মাই ডিয়ার প্রিন্সেস।
তূবা মিষ্টি একটা হাসি দেয়। দীপকও হেসে ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। হাতের কাপড়গুলো রাখতে গেলেই তার চোখ পড়ে নীল রঙের শার্টের দিকে। মনে পরে যায়, আজ নীলার বিয়ে। কষ্টগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ঝরনা ছেড়ে দিয়ে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখ বেয়ে পড়তে থাকে কষ্টের নোনা জল। না পারছে সে তার কষ্টগুলো কাউকে বলতে আর না পারছে গলা ছেড়ে কাঁদতে। সে যে ছেলে শত কষ্টেও তার চোখে পানি মানায় না। তবুও অতিরিক্ত কষ্টের পানিগুলো যে আটকে রাখা যায় না। তাই ঝরনার পানির নিচে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ছাড়ছে সে। যাতে কেউ জানতে না পারে। আর ঝরনার পানিও খুব সংগোপনে তার সাথে দীপকের কষ্টের পানিগুলো লুকিয়ে ফেলছে। তাড়াও যেন চায় না দীপকের কষ্টগুলো কেউ দেখুক। দরজায় নক করে তূবা বললো
- ভাইয়া, ওয়াসরুমে আবার ঘুমিয়ে যেও না। তাড়াতাড়ি বের হও।
দীপক চোখ খুলে ফেলে নিজেকে সামলে ঝরনা বন্ধ করে। বেসিনের সামনে গিয়ে শেভিং ক্রিমের দিকে হাত বাড়ায়।
আন্টি আমাকে ডেকেছিলে।
দরজায় দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে কথাটা বলে কুহু। খাটে বসে কিরণের দিকে তাকিয়ে থাকা মিসেস কবিতা মাথা ঘুরিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ, ভিতরে এসো।
কুহু খানিকটা চমকে যায়। মিসেস কবিতা বরাবরই তার সাথে হাসি মুখে কথা বলে। এতোটা গম্ভীর হয়ে এর আগে কখনো তাকে কথা বলতে দেখেনি সে। আর না সে কখনো তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে। সে তো সব সময় তার মায়ের মতো করে তাকে তুই বলেই ডাকে, তাহলে আজ হুট করে এতো পরিবর্তন কেন? মিসেস কবিতার পাশে কিরণকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবে, হয়তো সে কিরণকে ভিডিও গেইম কিনে দিয়েছে বলে আন্টি রাগ করেছে। কিন্তু ভিডিও গেইম তো সে আগেও অনেকবার কিনে দিয়েছে। কখনো তো এমন গম্ভীর ভাবে কথা বলেনি তার সাথে। তাহলে আজ কেন? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কুহু মিসেস কবিতার সামনে গিয়ে দাড়াতেই তিনি গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কিরণ তোমাকে ভাবী ডাকে কেন?
কুহু অবাক চোখ করে কিরণের দিকে তাকায়। কিরণের দিকে তাকিয়ে দেখে কিরণ অসহায় মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার কুহু বুঝে নিশ্চয়ই কিরণ কোনভাবে ধরা পড়ে সব বলে দিয়েছে। আহারে তার পিচ্চি দেবরটা তার জন্য ভয়ে আছে। কিন্তু তার কোন ভয় নেই। সে তো চেয়েছিল সবাই জানুক। সে প্ল্যান করছিল বলার। তবে তা কাব্যকে। কিন্তু তার আগেই তার শাশুড়ি যেনে গেল। যাক খারাপ হয়নি। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। এবার তার শাশুড়িকে রাজী করাতে পারলেই হলো। যে করেই হোক তার শাশুড়িকে রাজী করাতেই হবে। প্রয়োজনে পা ধরে ঝুলে থাকবে। না রাজী হওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না। মিসেস কবিতা তার কন্ঠের গাম্ভীর্য বজায় রেখে আবার জিজ্ঞেস করল
- তুমি কি কাব্যকে বিয়ে করতে চাও? বউ হতে চাও আমার বড় ছেলের?
যদিও সে প্রস্তুত ছিল এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য। কিন্তু মিসেস কবিতার মুখ থেকে কথাগুলো তার কার্নপাত হতেই সে যেন বোবা হয়ে গিয়েছে। কথাগুলো যেন তার গলায় আটকে আছে। বেরই হচ্ছে না। সাথে যুক্ত হয়েছে লজ্জা। লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারছে না। নিজের উপর খুব জোর খাটিয়ে ছোট করে জবাব দিল
- জ্বি আন্টি।
মিসেস কবিতা কৌতুলহ নিয়ে প্রশ্ন করল
- কেন বিয়ে করতে চাস কাব্যকে? ভালোবাসিস কাব্যকে?
কুহুর লজ্জায় পরিমাণ এবার দ্বিগুণ হলো। কোন রকমে ছোট করে এবারও উত্তর দিল
- হ্যাঁ আন্টি।
কুহু খুব বিরক্ত এখন এই লজ্জার উপর। এখন তার শাশুড়িকে ইমপ্রেস করার জন্য কত ইম্পর্টেন্ট ইম্পর্টেন্ট কথা বলার আছে তার। কিন্তু সে এই ন্যাকামো লজ্জার জন্য কিছু বলতে পারিছে না। লজ্জার যদি কোন দৃশ্যমান বস্তু হতো, তাহলে সে নিশ্চিত এতোক্ষণে তাকে পিটায়ে চুলোর উপর বসিয়ে দিতো জ্বলার জন্য। এই মরার লজ্জার তো জ্বলে পুড়ে মরাই উচিত। লজ্জাকে বকে তার লাভই হয়েছে। লজ্জার পরিমানটা কিছুটা কমেছে। মিসেস মায়া পুনরায় প্রশ্ন করেন
- কেন? কেন ভালোবাসিস কাব্যকে?
কুহু মিসেস কবিতার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটা হালকা প্রসারিত করে শান্ত কন্ঠে বললো
- ওনার মতো মানুষকে কেউ কি ভালো না বেসে থাকতে পারে। উনি যেমন ব্রিলিয়ান্ট, তেমন একজন ভালো মনের মানুষ।
কুহুর কথা শেষ হতে না হতেই মিসেস মায়া আবার প্রশ্ন করলো
- আর গায়ের রং?
কুহু জোর দিয়ে বললো
- আমি ওনাকে ভালোবাসি। ওনার সব কিছুকে ভালোবাসি। ওনার চলা-ফেরা, কথা বলার ভঙ্গি, এমনকি ওনার গায়ের ওই কৃষ্ণবর্ণকেও আমি ভালোবাসি।
মিসেস কবিতা মলিন কন্ঠে বললো
- কাব্যকে বিয়ে করলে মানুষ অনেক কথা শুনাবে। পারবি মানুষের কথা হজম করতে।
কুহু দৃঢ় কন্ঠে বললো
- যারা খাঁটি সোনার রেখে হীরা মনে করে কাঁচ কুড়িয়ে বেড়ায়। পৃথিবীতে তাদের থেকে দুর্ভাগা আর কে আছে।তাদের কথা শুনে আমার মন ভাঙবে না। শুধু তাদের জন্য আফসোস হবে। চকচক না দেখে তারা এমন খাটি সোনা হাতছাড়া করল।
মিসেস কবিতা শক্ত কন্ঠে বললো
- আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এখনো ছোট আছো। তোমার মাকে তো এবার জানাতে হবে....
কতোটুকু বলে থামলেন তিনি। কুহু মিসেস কবিতার এমন কঠিন কন্ঠস্বর শুনে বিচলিত হয়ে উঠলো। মনে প্রশ্ন জাগলো, সে কি ব্যর্থ হয়েছে কাব্যের প্রতি তার ভালোবাসা বুঝাতে? মিসেস কবিতার কি তার কথা পছন্দ হয়নি? মিসেস কবিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় কুহুর সামনে। কিন্তু সেদিকে কুহুর খেয়াল নাই। কুহু মাথা নিচু করে ভাবছে এখন সে কি করবে। এখনই কি সে মিসেস কবিতার পায়ে ধরবে। না কি কাব্যকে আগে জানাবে? তার ভাবনার মাঝেই দুই গালে কারো উষ্ণ দুই হাতের ছোয়া পেয়ে চোখ তুলে সামনে তাকায় সে। কিছু বুঝে উঠার আগেই গালে হাত রাখা অবস্থাই তার কপালে ভালোবাসার পরস এসে দেয় মিসেস কবিতা। তারপর মিষ্টি হেসে বললো
- তার মেয়েটাকে আমি আমার বড় বউমা করতে চাই।
কুহুর দুই চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে সুখের নোনা জল। সে পেরেছে, সে পেরেছে। সে ব্যর্থ হয়নি তার ভালোবাসা বুঝাতে। মিসেস কবিতা কুহুর চোখের জল মুছে দিতে দিতে আদরে কন্ঠে বললো
- আমার লক্ষি বউমা কাঁদে না।
মিসেস কাবিতার মুখে বউমা ডাক শুনে কুহুর আবার লজ্জাটা বেড়ে গেল। কিন্তু এবার সে বিরক্ত হচ্ছে না। বকে লজ্জাকে তাড়াতেও চাইছে না। বরং সে চাইছে যতক্ষণ তার শাশুড়ি তার সামনে আছে, ততক্ষণ তার লজ্জাটা থাক। কারন শাশুড়ির মুখে প্রথম বউমা শুনে তার লজ্জা পাওয়ারই কথা। এখন লজ্জা না পেলে তো সে নির্লজ্জ বলে প্রমানিত হবে।
খুশিতে কিরণের চোখ ও চিকচিক করে উঠে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় সে। তার মা রাজি হওয়ায়। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার মা আর তার কুহু আপুর কথা শুনছিল আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছিল। তার মা যেন রাজী হয়ে যায়। নিজের জমানো পাচঁশ টাকা ভিক্ষুকদের দিয়ে দেওয়ার মানতও করেছে সে। কাব্যকে সে যেমন ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। কুহুকেও ঠিক তেমনি ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। তাকে কতো আদর করে। তার বোনের অভাব পূরণ করেছে। আর তার ভাইয়ের জন্যও তো কতোকিছু করে। তার ভায়ের খুশিতে, কতো খুশি হয়। তার ভায়ের কষ্টে, কতো কষ্টও পায়। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে তার ভাবী হিসেবে সে কখনোই মেনে নিতেই পারতো না। কোন ভাবেই না।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৭)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন