উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৬)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৭)

এখন দীপকের কাছে সব কিছু পরিষ্কার। সকাল সকাল তূবা কেন তাকে নিয়ে বের হয়েছে? কেনই বা বাসার থেকে বের হওয়ার সময় তার মা তাকে নিজ হাতে মিষ্টি খায়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিল। কেন তূবা সকালে হেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে গাড়ি নিয়ে বের হতে বলেছিল। তারপর বায়না ধরে তাকে নিয়ে আসে বসুন্ধরা দীপ্তির অফিসে। কোনভাবে তারা জেনে গিয়েছে, আজকে তার ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে। তাই তাকে বিয়ে করানোর জন্যই তারা উঠে পড়ে লেগেছে। তারা ভাবছে, বিয়ে করলে হয়তো আস্তে আস্তে নীলাকে ভুলে যাবে। নীলাকে ভুলে গিয়ে এই মেয়ের সাথে সুখের সংসার করবে। মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় সে। ভালোবাসার মানুষকে কি ভুলা যায়? যায় না। বিয়ে করে একটা বন্ধনে নিজেকে বেঁধে, সংসার হয়। কিন্তু ভালোবাসা, তা কি হয়? বিয়ের অনেক বছর পেরিয়ে গেলে হয়তো, পাশের মানুষটার প্রতি মায়া জন্মে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সেই মায়া থেকে ভালোবাসাও জন্মে। কিন্তু তাই বলে কি প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে যায়? যায় না। মনের এক কোনে চুপটি মেরে ঠিকই সে বসে থাকে, জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস গোপন করে মেয়েটার দিকে তাকায় সে। মেয়েটা লাল বিয়ের শাড়ি পরে, লম্বা ঘুমটা দিয়ে সোফাতে মাথা নিচু করে বসে আছে। হাত ভর্তি মেহেদী আর লাল রঙের কাচের চুরি। সাথে দুইটা সোনার বালাও আছে। লম্বা ঘুমটার জন্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধু গলার সীতাহারের নিচের অংশটা দেখা যাচ্ছে। মেয়েটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে দীপক বললো
- এভাবে অচেনা একটা মেয়েকে, হুট করে কি বিয়ে করা যায়।


দীপ্তি দীপককে বললো
- অচেনা মেয়ে না। মেয়ে আমাদের পরিচিত। তোয়ার বান্ধবী নিশার বড় বোন।
দীপক দীপ্তির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
- নিশার বোনের না আজ বিয়ে? তোয়া তো ওখানেই গিয়েছে। এই এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড। তোরা কি আমার সাথে বিয়ে দিবি বলে ওকে বিয়ের আসর থেকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছিস?
অভি দাত কেলিয়ে বললো
- কিছুটা তেমনই।
দীপক অবাক হয়ে বললো
- মানে! তোদের মাথা ঠিক আছে তো!
অভি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো
- কিছুটা বলেছি, পুরোটা না।
দীপক বিরক্ত নিয়ে বললো
- ক্লিয়ারলি বলবি সব।
দীপ্তি দীপকে বললো
- তুই তো জানিস নিশা তার ভার্সিটির টিচার রিশান স্যারকে ভালোবাসে।
দীপক স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- হ্যাঁ জানি তো।
দীপ্তি একটা শ্বাস ফেলে বললো
- সেই রিশানের সাথেই নিশার বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

বিস্মিত চোখে লাল শাড়ি পরা মেয়েটার দিকে তাকায় সে। মেয়েটা এখনো আগের মতো মাথা নিচু করে বসে আছে। দীপক দীপ্তির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু রিশান স্যার না নিশাকে ভালোবাসে। তাহলে তার বোনকে বিয়ে করতে রাজী হলো কেন?


দীপ্তি শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- রিশান স্যারের বাবা নেই। আর উনি ওনার মাকে খুব ভালোবাসেন। তাই মা'র কথায় বিয়েতে রাজী হয়। কিন্তু সেই কথা নিশা বা তার ফ্যামিলির কেউই জানতো না। যেহেতু রিশান স্যার নিশাকে ভালোবাসার কথা বলেনি আর তার বড় বোনকে বিয়ে করতেও রাজী হয়েছে। তাই নিশা চুপ করে থাকে আর তোয়াকেও কাউকে ব্যপারটা বলতে না করে দেয়। কিন্তু প্রিয় বান্ধবীর কষ্টে তোয়া চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সেই টিচারের সাথে কথা বলতে তাকে রেস্টুরেন্টে ডাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা এই সম্পর্কে কথা বলার আগেই, তোর এই প্রাণের প্রিয় বন্ধু তোয়ার রোমিও তাকে অন্য ছেলের সাথে দেখে তার কোন কথা না শুনে, ইভেন তাকে কোন কথা বলার চান্স না দিয়ে জোর করে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে।

দীপক অবাক হয়ে বড় বড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে বললো
- কি! তুই তোয়াকে বিয়ে করেছিস আর আমাকে কিছু জানাসনি!
অভি মাথার পিছনের দিকে চুলকিয়ে হেসে বললো
- সরি দোস্ত, মাথাটা গরম ছিল।
দীপক এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল
- তোয়া তোকে কিছু বলেনি?
অভি মন খারাপ করে বললো
- সেদিন যে রেগে কথা বলেছে আর এখন তো আমার ফোনই ধরছে না মহারানী। মনে হচ্ছে, অনেক কাঠখড় পুড়াতে হবে।

দীপক হেসে বললো
- মনে হচ্ছে না, একদম শিউর থাক তুই। আগেই বলেছিলাম, সাবধানে থাকিস। দীপ্তি, তূবা রাগ করে  তাড়াতাড়ি, এদের রাগ ভাঙানোও যায় খুব সহজে। তোয়া সহজে রাগ করে না। আর একবার রাগলে খবর আছে। ঠিক হয়ে আমাকে না জানিয়ে আমার বোনকে বিয়ে করা, এখন বুঝ ঠেলা।


অভি মুখটা কালো করে দীপককে বললো
- বন্ধু হইছিস কোথায় সাহস জোগাবি, তা না উল্টো ভয় দেখাচ্ছে।
অভির কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। দীপক দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু রিশান স্যার যে তার মা'য়ের কথায় বিয়ে করতে রাজী হয়েছে, তা তোরা জানলি কিভাবে?

দীপ্তি পুনরায় উত্তর দিল
- তোয়া আর কোন উপায় না পেয়ে ভাবীকে সব কিছু খুলে বলে। আর তোর সম্পর্কেও সব কিছু বলে, তোকে বিয়ের কথা বলে। ও রাজী হয়ে যায়। তারা দুজন মিলে আন্টিকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে, সেও রাজী হয়ে যায়। আর রিশান স্যারের মা'কে সব কিছু খুলে বললে, রিশান স্যারের মা রিশান স্যারকে জিজ্ঞেস করলে, সে সব কিছু স্বীকার করে৷ তোয়া আমাদের ফোন করে সবকিছু বললে, ভোর সারে চারটার আমি শুভ আর চন্দ্রা গিয়ে ভাবীকে বাসার নিচ থেকে নিয়ে আসি। আর বউ সাজিয়ে কাজী নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।

দীপক আবার মেয়েটার দিকে তাকায়। আগের মতোই মাথা নিচু করে বসে আছে মেয়েটা। নিশাকে আর তার মাকে কয়েকবার দেখছে সে। নিশার মা খুব ভালো। একজন সাহসী, কর্মঠ মহিলা। নিশাও খুব শান্ত প্রকৃতির একটা মেয়ে। তার ফ্যামিলি সম্পর্কে সে সবই জানে। কিন্তু তার বোনকে কখনো দেখেনি সে। কি জানি কেমন হবে মেয়েটা? হয়ত নিশার মতোই শান্ত হবে। দীপকের ভাবনা মাঝেই অভি দীপকের কাধে হাত রেখে বললো
- দেখ দোস্ত নীলা যদি অন্য কাউকে ভালো না বাসত,  তাহলে আমি নিজে তাকে জোর করে এনে, তোদের বিয়ে দিতাম। কিন্তু ,,,,,,


থেকে যায় অভি। চন্দ্রা পাশ থেকে বললো
- জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। এভাবে জোর করলে তোরা কেউই সুখী হবি না।
দীপ্তি দীপকের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অসহায় কন্ঠে বললো
- ভাইয়া আমাদের তিন বোনের কোন ইচ্ছাই তুই অপূর্ণ রাখিসনি। আমাদের তিন বোনকে কখনো না বলিসনি। জানি আমাদের এবারের চাওয়াটা অনেক বেশি। তারপরও চাইছি, ভাইয়া প্লিজ তুই বিয়েতে রাজী হয়ে যা। মাও তাই চাই। প্লিজ ভাইয়া, প্লিজ।

তূবাও দীপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবদারের কন্ঠে বললো
- প্লিজ ভাইয়া তুমি রাজী হয়ে যাও। আমি প্রমিজ করছি, এরপর থেকে তোমার কাছে আর কোন আবদার করবো না। প্লিজ এই আবদারটা তুমি রাখ।
দীপক মিষ্টি হেসে তূবার গালে হাত দিয়ে বললো
- আবদার করবি না কেন, একশ বার করবি। আর আমি তোদের সব ইচ্ছা, আবদার পূরণ করবো।

তূবা খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল
- সত্যিই! তারমানে তুমি বিয়েটা করছো?
দীপক হাসি মুখে বললো
- হ্যাঁ, আমি বিয়ে করবো।


সেখানে উপস্থিত চন্দ্রা, দীপ্তি, শুভ্র, অভির মুখে হাসি ফুটে উঠে। কাজীও খুশি হলো। বিয়েটা হয়ে গেলে, সে বাড়ি যেতে পারবে বলে। কোন সকাল ছয়টায় তাকে বাসা থেকে তুলে এনে এখানে বসিয়ে রেখেছে। তূবা খুশি হয়ে দীপককে জড়িয়ে ধরে বললো
- থ্যাংক ইউ ভাইয়া। 
দীপকও তূবার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয়। শুভ এবার বললো
- তাহলে কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করুক।
 দীপক গম্ভীর কন্ঠে বললো
- না। 

সবাই দীপকের দিকে তাকায়। এখনই তো দীপক বিয়ে করতে রাজী হয়েছিল। এখন আবার না বলছে কেন? কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দীপক পুনরায় বললো
- তার আগে আমি ওর সাথে একটু একা কথা বলতে চাই।
দীপ্তি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- ভাবী তো তোর সম্পর্কে সবই জানে।
দীপক দৃঢ় কন্ঠে বললো
- তারপরও আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
অভি সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো
- আচ্ছা তোরা দীপ্তিদের রুমে গিয়ে কথা বলে নে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৮)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন