উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৬০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬১)
দীপকের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল নীলা। তখনি বারান্দায় কিছু পড়ার শব্দ হয়। ভ্রু কুঁচকে বারান্দায় দিকে পা বাড়ায় সে। কিছুটা আগাতেই বারান্দায় কোন মানুষের অবয়ব চোখে পরে তার। এতো রাতে রুমে কে আসবে? তাও আবার বারান্দায় দিয়ে। নিশ্চয় এটা কোন চোর।
- দাঁড়া বেটা চোর বাবাজী তোর আজকে খবর আছে।
বিরবির করে কথাটা বলে, আসেপাশে চোখ বুলিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে সে। যেটা দিয়ে চোরকে পেটাতে পারবে। কিন্তু পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে তেমন কিছুই পেল না। আশে শুধু পানির কাচের জগ আর গ্লাস আছে। পানি ভর্তি জগতো আর চোরের মাথায় মারতে পারবে না। তাই পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে পর্দার পিছনে লুকিয়ে যায় সে। চোরটা যেই বারান্দার থাই গ্লাস টেনে রুমে ঢুকে, অমনি নীলা পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে চোরের মাথায় গ্লাসটা গিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে দেয় বাড়ি। বন্ধ চোখেই সে অনুভব করে চোরটা তার হাত ধরে ফেলেছে। যার ফলে সে হাত নাড়াতে পারছে না। আর চোরের মাথায়ও বাড়িও দিতে পারছে না। এখন কি হবে? চোরটা কি তাকে মেরে ফেলবে? আরে দূর কি যে ভাবছে সে। এসব ছেচড়া চোররা কি মানুষ মারে নাকি। মানুষ তো মারে ডাকাতরা। চোরটা এখন কি করবে পালাবে? নাকি তাকে বেঁধে সব কিছু নিয়ে পালাবে? তার ভাবনার মাঝেই কেউ তার হাত থেকে গ্লাসটা নিতে নিতে বললো
- কি করছিলে তুমি?
কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে। তাই চোখ খুলে সামনের দিকে তাকায়। তার সামনে কালো টি-শার্ট আর প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে দীপক। দীপককে এখন এইভাবে এখানে দেখে অবাক হয়ে বললো
- আপনি! আমি তো ভেবেছিলাম কোন ছিচকে চোর।
দীপক অবাক হয়ে বললো
- হোয়াট! আমাকে তুমি ছিচকে চোর বললে!
- এভাবে চোরের মতো রাতে বেলা বারান্দা দিয়ে আসলে যে কেউই চোর ভাববো। কেউ সাধু ভাববে না।
- তাই বলে ছিচকে চোর? ইন্টারন্যাশনাল চোর ভাবতে পারতে। তা না ছিচকে চোর!
নীলা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এখানে কি এমন অমূল্য রত্ন আছে যে ইন্টারন্যাশনাল চোর আসবে?
দীপক দুষ্ট হেসে বললো
- আছে তো দীপক আহাম্মেদের প্রিয়সি।
- আপনি বাসায় এসেছেন কেন? বাবা শর্ত ভুলে গিয়েছেন না কি?
- একেই বলে যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।
নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমার জন্য কেন আসেছেন?
- বউটা বাসর রাতে একা একা ভয় পাবে ভেবেই তো আসলাম।
- আমাকে আপনার বোকা মনে হয়।
- বোকাসোকা বউ। জানতো আমার খুব ইচ্ছে ছিল একটা বোকাসোকা বউ বিয়ে করার। কিন্তু কপালে ঝুটলো রণচণ্ডী।
- কি কি বললেন আমি রণচণ্ডী! দাড়ান আজকে আপনার খবর আছে।
কথাটা বলে নীলা দীপকে ধরতে গেলেই দীপক দৌড় লাগায়। নীলাও দীপকের পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে। পুরো রুম জুড়ে দৌড়াতে থাকে দীপক আর নীলা। কিন্তু নীলা দীপকের সাথে পারে না। দীপক খপ করে নীলার হাত ধরে ফেলে। টান দিয়ে নীলাকে তার কাছে নিয়ে আসতে চায়, তখনই ব্যালেন্স হারিয়ে দুজনেই খাটের উপর পড়ে যায়। বিছানায় দীপক নীলাকে বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ডাকলো
- নীলা।
দীপকের বুকে মাথা রেখেই নীলা উত্তর দিল
- হুম্ম।
দীপক আগের অবস্থায় থেকেই বললো
- ভালোবাসি, খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে।
নীলা দীপকের বুকে মুখ গুঁজে বললো
- আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে।
এদিকে,
দীপক বারান্দায় উঠলেই সেই মই নিয়ে, পাশে তোয়ার বারান্দায় লাগিয়ে মই বেয়ে বারান্দায় উঠে পরে অভি। বারান্দায় উঠে থাই গ্লাস খুলে রুমে ঢুকে পরে সে। অন্ধকার রুমে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোয়াকে খুঁজতে থাকে সে। রুমের কোনে তোয়ার পড়ার টেবিলের দিকে চোখ পরতেই, বাহিরের আবছা আলোতে তোয়াকে চেয়ার বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাতে দেখে সে। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সে। ভেবেছিল এখন এখানে এসে তোয়ার আভিমান ভাঙবে। কিন্তু সে তো ঘুমে বিভোর। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে টেবিলের পাশে গিয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই তার দৃষ্টি আটকে যায়। টেবিলে রাখা বইয়ের উপর দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে রেখে, তার উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তোয়া। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছে। চোখের চসমাটা এখনো চোখেই আছে। এই প্রথম তোয়ার ঘুমন্ত মুখ দেখেছে সে। তার মহারানীকে এখন ঘুমন্ত পরি মনে হচ্ছে তার। এতক্ষণ তার মনে হয়েছে, শুধু শুধু এতো কষ্ট করে এখানে এসেছে। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে এই এখানে আসাটা তার সার্থক। আস্তে আস্তে তোয়ার কাছে ঝুকে তার চোখ থেকে চসমাটা খুলে আস্তে করে টেবিলের উপর রাখে। তোয়াকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুয়িয়ে দেয়। বিছানায় তোয়ার পায়ের কাছে ভাঁজ করে রাখা বেড কভারটার ভাঁজ খুলে তোয়ার গায়ে দিয়ে দেয়। টেবিলের উপর রাখা সেই খোলা বইটা বন্ধ করে দিয়ে, রুমের জানালা সব পর্দা লাগিয়ে দেয়। সুইচ চেপে রুমের সিলিংয়ের চার কর্ণারে লাগানো ড্রিম লাইট চারটে জ্বালিয়ে দেয়। নিশব্দে আস্তে করে বিছানায় বসে একদৃষ্টিতে ঘুমন্ত তোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিছানায় তোয়ার দুই কাধের পাশে দুই হাত রেখে ঝুকে কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
- এগুলো কিন্তু ঠিক না রানী সাহেবা। একজন অবলা প্রেনিকের ঘুম কেরে আপনি শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন! এর জন্য কিন্তু রাজা সাহের চাইলেই আপনাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু দিবে না। কারন রাজা সাহেব যে তার রানীকে বড্ড ভালোবাসে।
- তুমি নাকি আন্টিকে বলেছ আমাকে বিয়ে করতে পারবে না?
কুহুর কন্ঠে করা প্রশ্ন শুনে পুশআপ করা বন্ধ করে দেয় কাব্য। কুহুর কন্ঠস্বর অনুসরণ করে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায় সে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কুহু। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। কাব্য উঠে দাঁড়ালো। ঘামে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে তার গায়ের নীল স্লীভলেস টি-শার্টটা। এতোমেলো চুলগুলো ঘামে ভিজে কপাল, কানের পাশে লেপ্টে আছে। অন্য সময় হলে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখতো সে। কিন্তু এখন মুগ্ধ নয়নে তাকানো যাবে না। এখন সে যে রাগ দেখাতে এসেছে। আর রাগ থাকা অবস্থায় মুগ্ধ নয়নে তাকালে তার রাগ, রাগ করে পালিয়ে যাবে।
তোয়ালে নিতে নিতে ছোট করে উত্তর করল
- হ্যাঁ।
- কেন?
- তোমার সাথে আমাকে মানায় না তাই।
- কেন মানায় না?
- তুমি নিজেও জানো কেন মানায় না।
- না আমি জানিনা। আমি শুধু জানি তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
- কুহু সব কিছু জোর খাটিয়ে হয় না।
- কি জোর খাটিয়ে হয়, আর কি হয় না তা আমি শুনতে চাইনা। তুমি এখন গিয়ে অন্টিকে বলবে যে তুমি বিয়ে করতে রাজি আছো, চল।
কথাটা বলেই কাব্যর হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলেই কাব্য এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ধমকের সুরে বললো
- কুহু আমি না বলেছি না।
কাব্য তার সাথে এমন ব্যবহার করবে তা তার ধারনার বাহিরে ছিলো। নিজের চোখকে যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এর আগে সে যত পাগলামি করত বা যতো আবদার করতো কাব্য চুপচাপ সব মেনে নিত। এখনো তার সাথে উচ্চস্বরে কথা পর্যন্ত বলেনি কাব্য। এই প্রথম কাব্য তার হাত ছাড়িয়ে দিল। এই প্রথম কাব্য তাকে ধমক দিল। কষ্ট হচ্ছে তার। খুব কষ্ট হচ্ছে। কাব্যের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো
- আমি তোমাকে ভালোবাসি কাব্য।
বুকটা কেপে উঠে কাব্যের। সেও যে কুহুকে ভালোবাসে। তাইতো অন্যসব প্রেমিক পুরুষদের মতো সেও চায় তার ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকুক। সুখে থাকুক। তার সাথে বিয়ে হলে যে কুহু ভালো থাকবে না। নিজেকে শক্ত করে কঠিন গলায় বললো
- এটা তোমার আবেগ।
কুহু তাচ্ছিল্যের সুরে প্রশ্ন করে
- শুনেছি আবেগ নাকি ক্ষনস্থায়ী হয়। তাহলে আমার আবেগটা এতো দীর্ঘস্থায়ী কেন?
- দেখ তুমি এখন আবেগে বাসছ। এখন তোমাকে কিছু বুঝালেও বুঝবে না। কিন্তু বুঝবে। ভার্সিটিতে এডমিট হলে সুন্দর সুন্দর ছেলে যখন প্রপোজ করবে তখন আফসোস হবে। কিন্তু দুইদিন পর যখন তোমার বন্ধু বান্ধবিদের সুন্দর সুন্দর বয়ফ্রেন্ড, হাসবেন্ড নিয়ে ঘুরতে দেখবে, তখন আফসোস হবে। মানুষ যখন কটু কথা শোনাবে তখন আফসোস হবে।
- তোমার কি ধারনা কখনো আমাকে কোন সুন্দর ছেলে প্রপোজ করেনি? করেছে। আর আমি রিজেক্ট করে দিয়েছি। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। অভ্র ভাইয়া আর অতুল ভাইয়া কি দেখতে কম সুন্দর? কোথায় আমার তো তাদের দেখে আফসোস হয় না। তোমার কি মনে হয় সামান্য চামড়ার কালারের জন্য আমি আফসোস করবো? চামড়ার রং দেখে কখনো ভালোবাসা হয় না। যদি হতো, তাহলে তো নিগ্রোরা কবেই দুনিয়া থেকে গায়েব হয়ে যেত। কারণ তাদের কেউ ভালোবাসতো না। কেউ বিয়ে করতো না। আর রইলো তোমার কটু কথার কথা। তোমার কি মনে হয় আমি ওইসব বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের কথা শুনে আফসোস করবো? এতোই ঠুনকো আমার ভালোবাসা? যে মানুষের সামান্য কথায় তা নষ্ট হয়ে যাবে।
- দেখ কুহ আমি এতো কথা বলতে চাই না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। আর এটাই আমার শেষ কথা, আমি আর কিছু বলতে চাই না।
কুহু ম্লান কন্ঠে বললো
- জানো আন্টি যখন রাজি হয়েছিল, তখন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমি ব্যর্থ প্রেমিকা না। কিন্তু এখন তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবথেকে ব্যর্থ প্রেমিকা আমক। যে না কি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেই ভালোবাসা বুঝাতে পারলো না।
কথাটা বলেই কুহু ছাদ থেকে নেমে যাই।
কুহুর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে কাব্য আনমনে বললো
- সখি ভালোবাসি খুব, এই মন প্রাণ উজাড় করে।
তাইতো পুশছি বেদনা, এই মনেতে খুব গোপনে।
ভালোবাসায় যে জোটেনা সখি কষ্ট বিনা অন্য কিছু।
সুখে থেকো সখি ছেড়ে দিয়ে এই অভাগার পিছু।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন